দেশের সবচেয়ে বেশি বিক্রীত ওষুধগুলোর অন্যতম নাপা সিরাপ। এই ওষুধের দাম কয়েক মাস আগেও ছিল ১৮ টাকা। সরকার তা ২০ টাকা নির্ধারণ করেছিল। এই ওষুধটির দাম এরপর দফায় দফায় বেড়ে এখন ৩৫ টাকা হয়েছে। শুধু এটিই নয়, গত কয়েক মাসে সরকার-নির্ধারিত দাম উপেক্ষা করে আরও অনেক ওষুধের দাম ইচ্ছেমতো বাড়ানো হয়েছে। এর একটি গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ অপসোনিন কোম্পানির ওমিটিড-২০। কিছুদিন আগে এর দাম ছিল ৫০ টাকা। এরপর হয়েছে ৫৫ টাকা। এখন এই ওষুধ বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকায়। অ্যান্টিবায়োটিক সেফাক্লেভ-৫০০-এর দাম দুই দফায় বেড়ে হয়েছে ৬০ টাকা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের অক্টোবরে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবায় বহুল ব্যবহৃত ২০টি জেনেরিকের ৫৩ ধরনের ওষুধ দাম বাড়ানোর আবেদন অনুমোদন দেয়। সেখানে কোনো কোনো ওষুধের দাম বেড়েছে দ্বিগুণেরও বেশি, বৃদ্ধির হার ছিল ১৩২ শতাংশ পর্যন্ত। এরপর অন্যান্য ওষুধের দামও পাল্লা দিয়ে বাড়ছে। কোম্পানিগুলো কয়েক দিন পর পরই দাম বাড়িয়ে চলেছে। ফলে বাড়ছে মানুষের চিকিৎসাব্যয়।
এই অবস্থায় আজ পালিত হচ্ছে বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস। এবার দিবসটির প্রতিপাদ্য ‘সবার জন্য স্বাস্থ্য’। কিন্তু এভাবে ওষুধের দাম লাগামহীন বেড়ে চললে সবার জন্য স্বাস্থ্যসেবা কতটা নিশ্চিত করা যাবে, তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, স্বাস্থ্যসেবা মানুষের মৌলিক অধিকার। এভাবে কারণে-অকারণে ওষুধের দাম বৃদ্ধিতে মানুষের চিকিৎসাব্যয় আরও বাড়ছে। ফলে চিকিৎসাসেবা নিতে গিয়ে দরিদ্র থেকে দরিদ্রতর হচ্ছে মানুষ। কোম্পানিগুলো কীভাবে সরকারের অগোচরে দাম বাড়িয়ে চলেছে তার তদন্ত হওয়া উচিত বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।
খোদ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইউনিটের ‘বাংলাদেশ ন্যাশনাল হেলথ অ্যাকাউন্টস ১৯৯৭-২০২০ প্রতিবেদনে’ দেখা গেছে, দেশে চিকিৎসা খাতে ব্যক্তিগত খরচ আগের তুলনায় বেড়েছে। ২০১৫ সালে চিকিৎসাসেবা পেতে সাধারণ মানুষের পকেট থেকে খরচ হতো ৬৭ শতাংশ, যা ২০২০ সালে বেড়ে ৬৯ শতাংশ হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি খরচ হয় ওষুধ কিনতে। এদিকে জিডিপির হিসাবে বাংলাদেশে মাথাপিছু স্বাস্থ্যব্যয়ের হার ২ দশমিক ৫ শতাংশ, যা দক্ষিণ এশিয়ায় সর্বনিম্ন।
কোন ওষুধের দাম কতটা বেড়েছে
রাজধানীর মগজাবার, শাহবাগসহ কিছু এলাকায় ওষুধের দোকানগুলো ঘুরে আরও জানা গেছে, একমি কোম্পানির রিলাক্সেশনের ওষুধ টেনিলের দাম ছিল ৫০ টাকা। দুই দফায় বেড়ে এখন তা ৭০ টাকা। ভিটামিন ওষুধ নিউরো বি-এর দাম দুই দফায় ২৪০ টাকা থেকে বেড়ে ৩০০ টাকা হয়েছে। ২১০ টাকার ক্যালবো ডির দাম এখন ২৪০ টাকা। ওষুধ বিক্রেতারা বলছেন, তারা জানতে পেরেছেন ক্যালবো ডির দাম আবার বাড়বে। সেফোটিল প্লাস অ্যান্টিবায়োটিক প্রতি পিসের দাম কয়েক মাস আগেও ছিল ৩০ টাকা। দুই দফায় বেড়ে এখন তা ৩৭ টাকায় হয়েছে। কফ ও অ্যাজমার ওষুধ ডক্সিভা-২০০-এর দাম ৬০ টাকা থেকে দুই দফায় বেড়ে ৮০ টাকা হয়েছে। অ্যারিস্টো ফার্মার ব্যথানাশক ওষুধ নেসো-৫০০-এর দাম ১০০ টাকা থেকে দুই দফায় বেড়ে এখন ১৫০ টাকা। শিশুদের নাকের ড্রপ অ্যান্টাজল ১১ টাকা থেকে বেড়ে ১৯ টাকায় এবং বড়দের ড্রপ ১১ টাকা থেকে বেড়ে ২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এদিকে টাইপ-২ ডায়াবেটিসের ওষুধ লিনাগ্লিপ (৫ এমজি) ট্যাবলেট ছিল ৬০০ টাকা। এখন তা ৬৬০ টাকা। উচ্চ রক্তচাপের ওষুধ রুভাসটিন (৫ এমজি) এক বক্সের দাম ছিল ৩০০ টাকা। সেটি বেড়ে এখন হয়েছে ৩৬০ টাকা।
এসব ওষুধসহ আরও অনেক ধরনের ওষুধের দাম সাম্প্রতিক সময়ে দফায় দফায় বেড়েছে।
যা বলছেন ব্যবসায়ীরা
মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনে অবস্থিত একটি ওষুধ দোকানের স্বত্বাধিকারী নাম প্রকাশ না করার শর্তে দৈনিক বাংলাকে বলেন, ‘নিত্যপ্রয়োজনে যে ওষুধগুলো মানুষ বেশি খায়, সেগুলোর দাম দ্বিগুণ করা হয়েছে। কেন? ওষুধের কাঁচামালের দাম কি দ্বিগুণ হয়ে গেছে? মানুষ এদের কাছে জিম্মি হয়ে গেছে।’ তিনি জানান, মোস্ট রানিং (সবচেয়ে বেশি বিক্রীত) ওষুধগুলোর গত কয়েক মাসে দাম ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ বেড়েছে। বিষয়টি এমন দাঁড়িয়ে গেছে যে, কোনো এক কোম্পানির কোনো এক জেনেরিকের ওষুধের দাম বাড়লে সঙ্গে সঙ্গে ওই জেনেরিকের অন্যান্য কোম্পানির ওষুধের দামও বেড়ে যাচ্ছে।
শাহবাগের একটি ওষুধের দোকানের বিক্রেতা নাজিম উদ্দিন আহমেদ বলেন, একদিকে ওষুধের দাম বাড়ছে, অন্যদিকে মাঝেমধ্যেই বাজার থেকে ওষুধ উধাও হয়ে যাচ্ছে। এ যেন এক দাম বাড়ানোর খেলা। তিনি বলেন, খিঁচুনির রোগীদের বারভিট ইনজেকশনের দাম ছিল ১৩ থেকে ১৫ টাকা। পাঁচ-ছয় মাস ধরে বাজারে এই ওষুধ পাওয়াই যাচ্ছে না। যদিও কোথাও কোথাও পাওয়া যাচ্ছে, দাম হাঁকা হচ্ছে কয়েক গুণ।
শাহবাগের ওই দোকানেই দাঁড়িয়ে ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী রাজীব হাসান। তিনি জানান, তার বাবাকে নিয়মিত উচ্চমাত্রার কোলেস্টেরল, লিভার ও প্রোস্টেটের ওষুধ খেতে হয়। কয়েক দিন আগে পুরো মার্কেটে কোলেস্টেরলের বহুল প্রচলিত ওষুধ টিজিনর-১০ পাননি। ওষুধের দোকান থেকেই বলা হচ্ছিল, দাম বাড়ানো হয়েছে, তাই বন্ধ করে নতুন করে সাপ্লাই দেয়া হবে।
একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক তরুণ দৈনিক বাংলাকে বলেন, ‘বাবার ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, কিডনির সমস্যা এবং তিনি একাধিকবার স্ট্রোক করেছেন। দিন দিন ওষুধের দাম যেভাবে বাড়ছে, তাতে এখন খুব কষ্ট হয় চলতে।’ তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘ওষুধের দাম কেন এত বাড়ছে, সেটি খতিয়ে দেখার কেউ নেই এ দেশে!’
মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনের ওষুধের দোকানের মালিক মেহেদী হাসান দৈনিক বাংলাকে বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে ডলারের দাম এদিক-সেদিক হওয়ার পর পরই কোম্পানিগুলো যে হারে ওষুধের দাম বাড়ানো শুরু করেছে, তা ইতিহাসে বিরল। তিনি বলেন, কয়েক মাস আগে অ্যাকমি ল্যাবের টেনিল বিক্রি হতো ৫০ টাকায়। এরপর ৫৫ টাকা হলো। এক মাস না যেতেই এই ওষুধের দাম হলো ৭০ টাকা। ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর কেন ফাইল আটকে প্রশ্ন করল না, কেন এতবার দাম বাড়ানোর প্রয়োজন হলো?
মেহেদী হাসান বলেন, কোম্পানিগুলো যে যার ইচ্ছে অনুযায়ী দাম বাড়াচ্ছে। তাহলে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর কী করছে? তিনি বলেন, সরকার প্রেসক্রিপশনে ওষুধের জেনেরিক নাম লেখা বাধ্যতামূলক করুক।
দাম বাড়াতে ওষুধ কোম্পানির চাপ
কোম্পানিগুলোর সঙ্গে সরকারের ওষুধের দামসংক্রান্ত বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন এমন এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে দৈনিক বাংলাকে বলেন, দাম বাড়াতে কোম্পানির প্রচণ্ড প্রেসার ছিল। কিন্তু ডলারের দাম বাড়ার কারণে কত দাম বাড়লে সেটি ‘জাস্টিফাই’ হবে, সে বিষয়ে আলাপ হয়নি। সেই সঙ্গে কোম্পানিগুলো এত ক্ষমতাধর যে তাদের ওপর সরকারের ‘কন্ট্রোল’ কতখানি, সেটিও এখানে অনেক বড় বিষয়। ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ ইউসুফ গত ৪ জানুয়ারি বাংলাদেশ হেলথ অ্যাকাউন্সের এক অনুষ্ঠানে বলেন, অ্যাগ্রেসিভ মার্কেটিং থেকে সরে এসে ওষুধ কোম্পানিগুলো যদি খরচ কমিয়ে দেয়, তাহলে ওষুধের দাম কমে যাবে বলে মনে করি। একই সঙ্গে সংকট মোকাবিলায় বিভিন্ন কোম্পানি থেকে চিকিৎসকদের নেয়া বিভিন্ন উপহার কমিয়ে দিতে হবে। তবে সঙ্গে তিনি ডলারের দাম বাড়ার কারণে কিছুটা দাম বেড়েছে বলেও মন্তব্য করেন।
যা বলছেন বিশেষজ্ঞরা
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কাঁচামালের দাম ও ডলারের দাম বৃদ্ধির কারণ দেখিয়ে ওষুধ কোম্পানিগুলো একের পর এক দাম বাড়ালেও ওষুধের পেছনে তাদের মার্কেটিংয়ে খরচ কমায়নি। অথচ প্রয়োজন ছিল মার্কেটিং এবং অন্যান্য আনুষঙ্গিক খরচ সীমিত করে জনগণকে ন্যায্যমূল্যে ওষুধ সরবরাহ করা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. সৈয়দ আব্দুল হামিদ দৈনিক বাংলাকে বলেন, ওষুধ কোম্পানিগুলো যেভাবে এখন ওষুধের মেকওভার করে, সেটি একেবারেই অপ্রয়োজনীয়। একের পর এক ফুলের পাঁপড়ির মতো ভাঁজ খুলতে হয়। সেটি করতে গিয়ে দাম বেড়ে যায়। সঙ্গে রয়েছে মার্কেটিং পলিসি। চিকিৎসকদের উপঢৌকন তো এখন ওপেন সিক্রেট। এসব ব্যয় যদি কমানো যেত, তাহলে ওষুধের দাম কমত। অথচ এই খরচের পুরোটা দিতে হচ্ছে দেশের মানুষকে, যেটি অত্যন্ত অন্যায্য এবং অমানবিক।
বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব ডা. ইহতেশামুল হক চৌধুরী দৈনিক বাংলাকে বলেন, ‘আমার জানামতে, এক টাকা দামের একটি ওষুধের উৎপাদন খরচ ২৫ থেকে ৩০ পয়সা। কাজেই এভাবে ওষুধের দাম বেড়ে যাওয়ার কোনো কারণ নেই। কাঁচামালের দাম বেশি হওয়ার কারণে হয়তো ‘প্রফিট মার্জিন’ কমবে, কিন্তু ‘লস’ হওয়ার কোনো কারণ নেই।’
ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর যেসব ওষুধের দাম বেঁধে দিয়েছে, সেটিও মানছে না কোম্পানিগুলো। কোম্পানি কেন অধিদপ্তরের দাম মেনে নেবে না প্রশ্ন করে ডা. ইহতেশামুল হক চৌধুরী বলেন, এটি অধিদপ্তরের ব্যর্থতা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. ফিরোজ আহমেদ দৈনিক বাংলাকে বলেন, ডলারের দামের কারণে বৈশ্বিকভাবে সবকিছুর দাম বেড়েছে সেটি আমরা জানি এবং মানি। কিন্তু তার মানে এই না যে সবকিছু হাতের নাগালের বাইরে চলে যাবে, এটি হতে পারে না। সবকিছু একটি ‘লজিক্যাল ওয়ে’তে করতে হবে, যেন মানুষ ভোগান্তিতে না পড়ে। কোম্পানিগুলো নিজেরাই এভাবে দাম বাড়াতে পারে না। তাদের নিয়মের ভেতর আসতে হবে। ঔষধ অধিদপ্তরকে এটি কন্ট্রোল করতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. এ বি এম আব্দুল্লাহ দৈনিক বাংলাকে বলেন, ডলারের কারণে সবকিছুর দাম বেড়েছে। কিন্তু এভাবে ওষুধের দাম বাড়া অস্বাভাবিক। তিনি বলেন, ‘নিম্ন আয়ের মানুষ, নিম্ন মধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্তের সঙ্গে এটি অন্যায় হচ্ছে। যারা নানা ক্রনিক ডিজিজ অর্থাৎ দীর্ঘমেয়াদি ও অসংক্রামক রোগে আক্রান্ত, তাদের সব সময় ওষুধ খেতে হয়। যেমন ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ, কিডনি রোগ, স্ট্রোক, ক্যানসারে আক্রান্ত, তাদের সব সময় ওষুধ খেতে হয়। ওষুধের দাম বাড়ানো তাদের ওপর জুলুমের মতো। তাদের জন্য সমস্যাটা প্রচণ্ড আকার ধারণ করছে।’
অধ্যাপক ডা. এ বি এম আব্দুল্লাহ বলেন, ‘আমি অনুরোধ করব, সবকিছুর দাম বাড়লেও ওষুধের বিষয়ে যেন প্রশাসন নজর দেয়। দামের লাগাম টেনে ধরা দরকার। স্বল্প আয়ের এবং দীর্ঘমেয়াদি রোগে আক্রান্তরা নয়তো ওষুধ কিনতে পারবে না।’
যা বলছে ঔষধ প্রশাসন
জানতে চাইলে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের পরিচালক ও মুখপাত্র আইয়ুব হোসেন দৈনিক বাংলাকে বলেন, ‘অনুমোদন ছাড়া কেউ ওষুধের দাম বাড়াতে পারবে না। এটি একেবারেই কাম্য নয়, আমরা এ রকম কামনা করি না। ডলারের দামের কারণে সবকিছুর দাম বেড়েছে। ওষুধের দাম বাড়ানোর অনুমতিও আমরা দিয়েছি। কিন্তু একই ওষুধের দাম বারবার বাড়বে, এটি হতে পারে না। আমরা নিশ্চয়ই এটি চেক করব, এটি হতে পারে না।’
চিকিৎসা বিজ্ঞানে এ বছর নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের মেরি ব্রাঙ্কো, ফ্রেড রামসডেল এবং জাপানের শিমন সাগাগুচি। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কীভাবে নিয়ন্ত্রিত থাকে বা রাখা যায়, সে বিষয়ে তাদের গবেষণাকে স্বীকৃতি দিয়ে গতকাল সোমবার এ পুরস্কার ঘোষণা করে সুইডেনের ক্যারোলিনস্কা ইনস্টিটিউট।
স্টকহোম থেকে বার্তা সংস্থা এএফপি এ খবর জানায়।
‘পেরিফেরাল ইমিউন টলারেন্স’ বিষয়ক আবিষ্কারের জন্য এ তিন বিজ্ঞানীকে এবার চিকিৎসা বিজ্ঞানে নোবেল বিজয়ী হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে।
নোবেল জুরির ভাষ্য অনুযায়ী, তাদের আবিষ্কার ইমিউন সিস্টেমের কার্যপ্রণালী এবং কেন সবাই গুরুতর অটোইমিউন রোগে আক্রান্ত হয় না, তা বোঝার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।
নোবেল জুরি জানায়, তাদের গবেষণা একটি নতুন ক্ষেত্রের ভিত্তি স্থাপন করেছে এবং ক্যান্সার ও অটোইমিউন রোগের চিকিৎসায় নতুন সম্ভাবনার দুয়ার খুলেছে। একইসঙ্গে তাদের আবিষ্কার সফল অঙ্গ প্রতিস্থাপনেও সহায়ক হতে পারে।
৭৪ বছর বয়সি সাকাগুচি ১৯৯৫ সালে প্রথম গুরুত্বপূর্ণ একটি আবিষ্কার করেন। সে সময় অনেক গবেষক মনে করতেন, ‘সেন্ট্রাল টলারেন্স’ নামক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ক্ষতিকর ইমিউন কোষ থাইমাসে ধ্বংস হওয়ার কারণেই ইমিউন টলারেন্স তৈরি হয়। তবে সাকাগুচি দেখান, ইমিউন সিস্টেম আরো জটিল এবং তিনি এমন এক নতুন শ্রেণির ইমিউন কোষ আবিষ্কার করেন, যা দেহকে অটোইমিউন রোগ থেকে রক্ষা করে।
১৯৬১ সালে জন্মগ্রহণকারী ব্রাঙ্কো এবং ৬৪ বছর বয়সী রামসডেল ২০০১ সালে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কার করেন। তারা ব্যাখ্যা করতে সক্ষম হন কেন কিছু ইঁদুর বিশেষভাবে অটোইমিউন রোগে বেশি আক্রান্ত হয়।
জুরি জানায়, তারা আবিষ্কার করেছেন ওই ইঁদুরগুলোর জিনে একটি মিউটেশন রয়েছে। তারা সেটির নাম দেন ‘ফক্সপ৩’। তারা দেখান, মানুষের শরীরে এ জিনের সমতুল্য মিউটেশন হলে মারাত্মক অটোইমিউন রোগ ‘আইপিইএক্স’ দেখা দেয়।
দুই বছর পর সাকাগুচি এই আবিষ্কারের সঙ্গে নিজের আবিষ্কারকে যুক্ত করেন।
আগামী ১০ ডিসেম্বর আলফ্রেড নোবেলের মৃত্যুবার্ষিকীতে স্টকহোমে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে সুইডেনের রাজা কার্ল ষোড়শ গুস্তাফের কাছ থেকে তারা নোবেল পুরস্কার গ্রহণ করবেন। পুরস্কারের মধ্যে থাকছে একটি স্বর্ণপদক, সনদপত্র এবং ১২ লাখ মার্কিন ডলারের চেক।
আগামী সপ্তাহজুড়ে এ বছরের নোবেল পুরস্কারের মৌসুম চলবে। আজ মঙ্গলবার পদার্থবিজ্ঞান, আগামীকাল বুধবার রসায়ন, বৃহস্পতিবার সাহিত্য, শুক্রবার শান্তি এবং আগামী সোমবার অর্থনীতিতে নোবেল বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করা হবে।
দেশজুড়ে ডেঙ্গুর ভয়াবহতা বেড়েই চলেছে। এরই মধ্যে চলতি বছরে মৃত্যুর সংখ্যা ২০০ অতিক্রম করেছে।
ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় ৫০ হাজার ছুঁই ছুঁই। থেমে থেমে রোদ ও বৃষ্টির এমন আবহাওয়া এডিস মশার বংশ বিস্তারে উপযুক্ত বলে বিশেষজ্ঞরা অভিমত দেন। পাশাপাশি পূজোর ছুটিতে বাসাবাড়ি, অফিসে বংশবিস্তারের উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি হয়েছে। ফলে চলতি অক্টোবর মাসে ডেঙ্গু পরিস্থিতি ভয়াবহ হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞরা।
এদিকে গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে আরও একজনের মৃত্যু হয়েছে। একই সময়ে সারাদেশে ৩৭৪ জন ডেঙ্গুরোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। চলতি বছরের ৪ অক্টোবর পর্যন্ত মোট ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছে ৪৮ হাজার ৮৬৫ জন এবং মোট ২০৩ জনের মৃত্যু হয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য মতে, সেপ্টেম্বরে ডেঙ্গু ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১৫ হাজার ৮৬৬ জন এবং মারা গেছেন ৭৬ জন। চলতি বছরের সেপ্টেম্বরেই মোট রোগীর ৩৩ দশমিক ৪৪ শতাংশ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। আক্রান্ত ও মৃত্যুর উভয় দিক থেকেই সেপ্টেবর মাস চলতি বছরে আগের সব মাসকে ছাড়িয়ে গেছে।
চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে ডেঙ্গু আক্রান্ত হন এক হাজার ১৬১ জন এবং মারা যান ১০ জন। ফেব্রুয়ারিতে ডেঙ্গু আক্রান্ত হন ৩৭৪ জন এবং মারা যান তিন জন। মার্চ মাসে ডেঙ্গু আক্রান্ত হন ৩৩৬ জন। এপ্রিলে ডেঙ্গু আক্রান্ত হন ৭০১ জন এবং সাতজন মারা যান। মে মাসে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন এক হাজার ৭৭৩ জন এবং মারা যান তিন জন। জুন মাসে ডেঙ্গু আক্রান্ত হন পাঁচ হাজার ৯৫১ জন এবং মারা যান ১৯ জন। জুলাই মাসে ডেঙ্গু আক্রান্ত হন ১০ হাজার ৬৮৪ জন এবং মারা যান ৪১ জন। আগস্ট মাসে ডেঙ্গু আক্রান্ত হন ১০ হাজার ৪৯৬ জন এবং মারা যান ৩৯ জন।
ডেঙ্গুর ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতার ফলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসা ও ব্যবস্থাপনায় দেশের সব মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং বিশেষায়িত হাসপাতালের পরিচালক, জেলা সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক, সিভিল সার্জন, উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তাকে জরুরি ১২ নির্দেশনা প্রদান করেছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, থেমে থেমে বৃষ্টি হওয়ার কারণে সহজেই বিভিন্ন পাত্রে পানি জমে ডেঙ্গুর বংশ বিস্তারের উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি হয়। বাসা বাড়ির ছাদে কিংবা বেজমেন্টে, সড়কে, বাড়ির আনাচে কানাচে পড়ে থাকা পলিথিন, প্লাস্টিকের পাত্র, ডাবের খোসাসহ বিভিন্ন পাত্রে যে পানি জমে সেসব জায়গা থেকে এডিস মশার বংশ বিস্তার হচ্ছে। ফলে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা এবং মৃত্যু বাড়ছে।
বর্তমানে ডেঙ্গুর প্রকোপ প্রসঙ্গে রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) উপদেষ্টা ও সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. মুশতাক হোসেন বলেন, ডেঙ্গুর প্রকোপ চলমান আছে। বৃষ্টি থেমে যাওয়ার পর আরও দুই মাস আমাদেরকে ডেঙ্গুর ধকল পোহাতে হবে। এখন বৃষ্টি হচ্ছে, আবার রোদও আছে, এমন হলে ডেঙ্গু উৎপাদন হতেই থাকবে। ফলে এখন যে ডেঙ্গু পরিস্থিতি আছে, সেটা কমার লক্ষণ নেই, বরং বাড়ার আশঙ্কা আছে।
বর্তমান ডেঙ্গু পরিস্থিতি বিষয়ে জাহাঙ্গীরনগরবিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক এবং কীটতত্ত্ববিদ ড. কবিরুল বাশার গণমাধ্যমকে বলেন, কয়েকদিনের মধ্যে ডেঙ্গু বেড়ে যাবে। অনান্য বছর যেমন নভেম্বর ডিসেম্বরে ডেঙ্গুরোগী অনেক কমে যায়, সেটা এ বছর হবে না। চলতি মৌসুমের ডেঙ্গু আগামী বছরের জানুয়ারি পর্যন্ত বেশ ভালো থাকবে।
তিনি আরও বলেন, আমার মনে হচ্ছে আগামী কয়েকদিনের মধ্যেই ডেঙ্গু প্রকট আকার ধারণ করবে। কারণ পূজার ছুটির একটা বিষয় আছে, দীর্ঘ সময় ছুটি ছিল। সব বন্ধ থাকার কারণে বৃষ্টির মধ্যে এডিস মশা জন্মানোর সুযোগ পেয়েছে। ছুটির পর মানুষ যখন ফিরবে তখন সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ার ঝুঁকি আছে।
সর্বোচ্চ সংক্রমণ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহের ৭-৮ তারিখ কিংবা ১৫ তারিখ থেকে পিকে ওঠা শুরু করবে এবং সেটা নভেম্বরে গিয়ে ঠেকবে।
ডেঙ্গু প্রতিরোধে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জনগণকে সম্পৃক্ত করে, স্বেচ্ছাসেবকের সমন্বয়ে পরিষ্কার পরিছন্নতার জন্য যেভাবে কাজ করা দরকার, সরকার সেই দিকে যাচ্ছে না। গতানুগতিক পন্থায় কিছু রাসায়নিক ধোঁয়া দেওয়া হচ্ছে। ধোঁয়া নির্ভর মশা নিয়ন্ত্রণ কোনো দেশে কখনও সফল হয় না। কিছু মশা নিয়ন্ত্রণ হচ্ছে, আবার বাড়ছে, এভাবে পরিস্থিতির উন্নতি হবে না। মশা নিয়ন্ত্রণে আমাদের সমন্বিত পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
স্বাস্থ্যসেবা মানুষের অন্যতম মৌলিক অধিকার। এই সেবাকে জনগণের দৌঁড়গোড়ায় পৌঁছে দিতে সরকার ইউনিয়ন পর্যায়ে স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করেছে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, নওগাঁ সদর উপজেলার হাঁসাইগাড়ী ইউনিয়নের একমাত্র ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্র দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ থাকায় ইউনিয়নবাসী মারাত্মক ভোগান্তিতে পড়েছে।
এ ইউনিয়নের নয়টি ওয়ার্ডে বসবাস করেন প্রায় ৪০ হাজার মানুষ। গ্রামীণ ও প্রান্তিক মানুষের চিকিৎসার প্রধান ভরসা ছিল এই স্বাস্থ্য কেন্দ্রটি। ইউনিয়নের ভীমপুর বাজার সংলগ্ন স্থাপনাটিই একসময় মা ও শিশু স্বাস্থ্যসেবা, টিকাদান কর্মসূচি, পরিবার পরিকল্পনা পরামর্শ এবং প্রাথমিক চিকিৎসার কেন্দ্রস্থল ছিল। কিন্তু ভবনের ছাদ থেকে পলেস্তার খসে পড়া, দেয়ালে ফাটল সৃষ্টি এবং সামগ্রিক ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থার কারণে প্রায় দুই বছর আগে এটিকে পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়।
এরপরও সীমিত আকারে একজন চিকিৎসক বসে কেবল প্রেসক্রিপশন দিতেন। তবে হাসপাতালের ওষুধ আর সরবরাহ করা হতো না। একজন অফিস সহায়ক এবং পরিবার কল্যাণ পরিদর্শিকা মিলিয়ে কোনোভাবে সেবা চালু থাকলেও তা ছিল খুবই অপ্রতুল। অবশেষে চার মাস আগে চিকিৎসকসহ বাকি জনবলকেও অন্যত্র বদলি করা হয়। এর পর থেকেই পুরো স্বাস্থ্য কেন্দ্র তালাবদ্ধ হয়ে পড়ে। বন্ধ হয়ে যায় সবধরনের স্বাস্থ্যসেবা।
স্বাস্থ্য কেন্দ্রটি বন্ধ থাকায় ইউনিয়নবাসীকে চিকিৎসার জন্য প্রায় ২৫ কিলোমিটার দূরের জেলা শহরে যেতে হচ্ছে। এতে তাদের সময় ও অর্থের অপচয় ঘটছে, পাশাপাশি হয়রানির শিকারও হতে হচ্ছে। জরুরি মুহূর্তে চিকিৎসার অভাবে অসুস্থদের জীবন ঝুঁকিতে পড়ছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
স্বাস্থ্যকেন্দ্রের পাশের বাসিন্দা হাদেশ আলী প্রামাণিক বলেন, আগে সপ্তাহে অন্তত চার-পাঁচ দিন চিকিৎসাসেবা পাওয়া যেত। যদিও ওষুধ মেলেনি, কিন্তু চিকিৎসকের পরামর্শ পেতাম। এখন গত চার মাস ধরে সবকিছু বন্ধ। চিকিৎসার জন্য আমাদের দূর শহরে যেতে হচ্ছে।
অন্য এক বাসিন্দা আনিসুর রহমান বলেন, নারী ও শিশুর জন্য এই কেন্দ্র ছিল ভরসাস্থল। টিকাদান ও পরিবার পরিকল্পনার সেবা সহজেই পাওয়া যেত। কিন্তু এখন কেন্দ্র বন্ধ থাকায় গরিব মানুষ শহরে গিয়ে চিকিৎসা নিতে পারে না। অনেক সময় রোগীকে শহরে নেওয়ার পথে মারা যাওয়ার মতো ঘটনাও ঘটছে।
হাঁসাইগাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. জসিম উদ্দিন মোল্লা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা হওয়ার পর থেকে সেবার কার্যক্রম ধীরে ধীরে ভেঙে পড়ে। ইউনিয়ন পরিষদের একটি কক্ষে অন্তত প্রাথমিক সেবা চালু করার প্রস্তাব দিয়েছিলাম। কিন্তু পরিবার পরিকল্পনা কর্তৃপক্ষ তা বাস্তবায়নে আগ্রহ দেখায়নি। জনগণের চাহিদা অনুযায়ী এখানে নতুন ভবন নির্মাণ করে পর্যাপ্ত চিকিৎসক ও জনবল নিয়োগ দিতে হবে।
নওগাঁ পরিবার পরিকল্পনা উপপরিচালক গোলাম মো. আজম মন্তব্য করতে রাজি হননি।
নওগাঁ সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. ইবনুল আবেদীন বলেন, স্বাস্থ্যসেবা মানুষের মৌলিক অধিকার। ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্র এ সেবা প্রদানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নজরে আনা হয়েছে। দ্রুত সমস্যার সমাধানের জন্য উদ্যোগ নেওয়া হবে।
দেশে এডিস মশাবাহিত রোগ ডেঙ্গু পরিস্থিতি ভয়ংকর আকার ধারণ করছে। সেপ্টেম্বর মাসেই চলতি বছরে ডেঙ্গুতে সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, এ মাসে ৭৬ জনের মৃত্যু হয়েছে ডেঙ্গুতে। এমনকি বছরের একদিনে সর্বোচ্চ মৃত্যুর রেকর্ডও এই মাসে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরে এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে মৃত্যু হয়েছে ১৯৮ জনের। এর মধ্যে সেপ্টেম্বর মাসে মৃত্যু হয়েছে ৭৬ জনের। এ ছাড়া জানুয়ারিতে ১০, ফেব্রুয়ারি মাসে ৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। মার্চ ছিল মৃত্যুহীন।
এপ্রিলে ৭, মে মাসে ৩ জনের মৃত্যু হলেও বাড়তে থাকে জুন মাস থেকে। জুনে ডেঙ্গুতে ১৯ জনের মৃত্যু হয়। জুলাইয়ে সেই সংখ্যা গিয়ে দাঁড়ায় ৪১ জনে আর আগস্টে মৃত্যু ছিল ৩৯ জনের।
এদের মধ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে ৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ সময়ে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ৫৫৬ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে।
গতকাল মঙ্গলবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে পাঠানো ডেঙ্গুবিষয়ক নিয়মিত প্রেস বিজ্ঞপ্তি থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।
বিজ্ঞপ্তি থেকে জানা গেছে, চলতি বছরে এখন পর্যন্ত ৪৭ হাজার ৩৪২ জন ডেঙ্গুরোগী দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছে। এদের মধ্যে সেপ্টেম্বর মাসে চিকিৎসা নিয়েছে ১৫ হাজার ৮৬৬ জন।
এছাড়া চলতি বছরে ৪৪ হাজার ৭৯৬ জন ডেঙ্গুরোগী সুস্থ হয়ে হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পেয়েছে।
বাংলাদেশে প্রতি পাঁচটি মৃত্যুর একটি হৃদরোগজনিত বলে জানিয়েছে ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশ।
গতকাল সোমবার ‘প্রতিটি হৃদস্পন্দনই জীবন’ এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে বিশ্বের অন্যান্য দেশের সঙ্গে তাল মিলিয়ে ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশ সারাদেশে বিশ্ব হার্ট দিবস-২৫ উদযাপন করেছে।
হৃদরোগ বিশ্বের এক নম্বর প্রাণঘাতী অসংক্রামক রোগ, অথচ শতকরা ৮০ শতাংশ ক্ষেত্রেই হৃদরোগ ও স্ট্রোক প্রতিরোধযোগ্য– এই বার্তা পৌঁছে দিতে দিনব্যাপী আয়োজিত হয়েছে বিভিন্ন কর্মসূচি।
দিনের শুরুতে রাজধানীর মিরপুরে জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামের সামনে থেকে কয়েক শতাধিক মানুষের একটি বর্ণাঢ্য র্যালি বের করা হয়। র্যালিটি প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন হাসপাতাল অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউটের সামনে এসে শেষ হয়।
এরপর ফাউন্ডেশনের অডিটোরিয়ামে আয়োজিত গণমুখী সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশের সভাপতি অধ্যাপক খন্দকার আব্দুল আউয়াল রিজভী। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের বিশেষ সহকারী অধ্যাপক ডা. সায়েদুর রহমান।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন, দেশে অসংক্রামক রোগের প্রকোপ উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে। আমাদের জীবনাচরণে এমন কিছু পরিবর্তন এসেছে, যা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। হৃদরোগ প্রতিরোধে ব্যক্তি, সমাজ ও রাষ্ট্র– সবাইকে সচেতনতা বাড়াতে একসঙ্গে কাজ করতে হবে।
সেমিনারে স্বাগত বক্তব্য রাখেন ফাউন্ডেশনের মহাসচিব অধ্যাপক ফজিলা-তুন-নেসা মালিক। তিনি বলেন, অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণে সরকারকে সহায়তা করতে ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন সারা বছরজুড়ে গবেষণা, অ্যাডভোকেসি ও জনসচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করছে।
মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন হাসপাতাল অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউটের রোগতত্ত্ব ও গবেষণা বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. সোহেল রেজা চৌধুরী।
মূল প্রবন্ধে তিনি বলেন, বাংলাদেশে প্রতি পাঁচটি মৃত্যুর একটি হৃদরোগজনিত। গ্লোবাল বারডেন অব ডিজিজ স্টাডি ২০১৯ অনুযায়ী, মৃত্যু ও পঙ্গুত্বের প্রধান চারটি কারণের একটি তামাক। তাই হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে এখনই তামাক ব্যবহার বন্ধ এবং বিদ্যমান তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন দ্রুত সংশোধন করা জরুরি।
গণমুখী সেমিনারে আরও বক্তব্য রাখেন ফাউন্ডেশনের যুগ্ম-মহাসচিব নওশাদ হোসেন, পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) অধ্যাপক মো. ইউনুসুর রহমান ও অধ্যাপক তওফিক শাহরিয়ার হক।
বিশ্ব হার্ট দিবস উপলক্ষে আয়োজিত বৈজ্ঞানিক সেমিনারে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে প্রায় দেড় শতাধিক চিকিৎসক অংশগ্রহণ করেন।
এছাড়া ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে সারাদেশে আয়োজন করা হয় বিনামূল্যে হৃদরোগ নির্ণয় ক্যাম্প, সচেতনতামূলক পোস্টার ও লিফলেট বিতরণ কার্যক্রম। রাজধানীর বাইরেও ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশনের ৪৫টি অধিভুক্ত সমিতি (অ্যাফিলিয়েটেড বডি) বিভিন্ন স্থানে দিবসটি উদযাপন করে।
সেমিনার থেকে বলা হয়, একটি স্পন্দনও উপেক্ষা করবেন না। প্রতিটি হৃদস্পন্দনই জীবন। এখনই পদক্ষেপ নিন, জীবন বাঁচান।
আজ সোমবার, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫, বিশ্ব হার্ট দিবস উপলক্ষে রাজধানীর মহাখালীর ইউনিভার্সেল কার্ডিয়াক হাসপাতালে সফলভাবে অনুষ্ঠিত হলো দিনব্যাপী “ফ্রি হার্ট ক্যাম্প”। মহাখালী রাওয়া’র বিপরীতে হাসপাতাল প্রাঙ্গণে সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত এ ক্যাম্পে প্রায় পাঁচ শতাধিক রোগীকে বিনামূল্যে বিশেষায়িত চিকিৎসা পরামর্শ প্রদান করা হয়।
ক্যাম্পে আগত রোগীদের বিনামূল্যে বিশেষায়িত চিকিৎসা পরামর্শ প্রদান করেন –
প্রফেসর ডাঃ নাসির উদ্দিন আহমেদ (চিফ কার্ডিয়াক সার্জন), অধ্যাপক ডাঃ খন্দকার কামরুল ইসলাম (চিফ ক্লিনিক্যাল এন্ড ইন্টারভেনশনাল কার্ডিওলজিস্ট), অধ্যাপক ডাঃ অমল কুমার চৌধুরী (সিনিয়র ক্লিনিক্যাল এন্ড ইন্টারভেনশনাল কার্ডিওলজিস্ট), ব্রিগেডিয়ার জেনারেল অধ্যাপক ডাঃ মোহাম্মদ কামরুজ্জামান (সিনিয়র কার্ডিওভাসকুলার সার্জন), ডাঃ আশরাফুল হক সিয়াম (মিনিমাল ইনভেসিভ কার্ডিয়াক সার্জন), ডাঃ সানিয়া হক (ক্লিনিক্যাল এন্ড ইন্টারভেনশনাল কার্ডিওলজিস্ট), ডাঃ এম এ হাসনাত (ক্লিনিক্যাল এন্ড ইন্টারভেনশনাল কার্ডিওলজিস্ট ও মেডিসিন বিশেষজ্ঞ), ডাঃ রোমেনা রহমান (কার্ডিওভাসকুলার সার্জন) এবং ডাঃ আব্দুল জাব্বার জীবন (পেডিয়াট্রিক কার্ডিওলজিস্ট)।
এর পাশাপাশি দৈনিক প্রথম আলো'র অফিসে ও মহাখালী এসকেএস শপিং মলে বিশেষায়িত হার্ট ক্যাম্প করা হয় এবং একাধিক স্থানে স্ট্রিট ক্যাম্প করা হয়। তাছাড়াও হৃদরোগ সম্পর্কে জনগনের সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষে একটি কার্ডিয়াক ক্যারাভ্যান সারা ঢাকা শহর প্রদক্ষিণ করে।
একইদিনে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জেলরোডে অবস্থিত ইউনিভার্সেল মেডিকেল সার্ভিসেস লিমিটেডেও স্থানীয়দের জন্য “ফ্রি হার্ট ক্যাম্প” অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে রোগীদের চিকিৎসা পরামর্শ প্রদান করেন ইউনিভার্সেল মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক (কার্ডিওলজি) ডাঃ মোঃ নাজমুল হক (হৃদরোগ ও মেডিসিন বিশেষজ্ঞ)।
ক্যাম্পে আগত সাধারণ রোগীরা হাসপাতালের সব ধরনের পরীক্ষায় ২০% বিশেষ ছাড় এবং ইউনিভার্সেল হার্ট ক্লাবের মেম্বারগণ ৩০% ছাড় (শর্ত সাপেক্ষে) গ্রহণের সুযোগ পান।
বাংলাদেশে মৃত্যুর শীর্ষ ১০ কারণের মধ্যে ৪টিই ফুসফুস ও শ্বাসতন্ত্রজনিত রোগ, আর এর অন্যতম বড় কারণ তামাক। প্রতি বছর দেশে তামাকজনিত অসুখে প্রাণ হারাচ্ছে এক লাখ ৬১ হাজার মানুষ। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ মৃত্যু ঠেকাতে দ্রুততম সময়ে শক্তিশালী তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন পাস করা ছাড়া কোনো বিকল্প নেই।
গতকাল শনিবার বিশ্ব ফুসফুস দিবস উপলক্ষে ‘ফুসফুসের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় শক্তিশালী তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন’ শীর্ষক এক ওয়েবিনারে এসব তথ্য তুলে ধরেন ক্যানসার ও বক্ষব্যাধি বিশেষজ্ঞ, জনস্বাস্থ্যবিদ, সাংবাদিক ও নীতিনির্ধারকরা। দিবসটির এবছরের প্রতিপাদ্য ছিল— ‘হেলদি লান্স, হেলদি লাইফ’।
ওয়েবিনারে জানানো হয়, বাংলাদেশে ফুসফুস ক্যানসারে আক্রান্ত পুরুষ রোগীদের প্রায় ৮০ শতাংশই ধূমপায়ী। ফুসফুস ক্যানসার ছাড়াও তামাক ও পরোক্ষ ধূমপানজনিত গুরুতর রোগগুলোর মধ্যে রয়েছে— ক্রনিক অবস্ট্রাক্টিভ পালমোনারি ডিজিস (সিওপিডি), যক্ষ্মা ও হাঁপানি। গ্লোবাল অ্যাডাল্ট টোব্যাকো সার্ভে ২০১৭ অনুযায়ী, দেশে ৩ কোটি ৭৮ লাখ (৩৫.৩%) প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ সরাসরি তামাক ব্যবহার করে। কর্মক্ষেত্রে পরোক্ষ ধূমপানের শিকার হয় ৮১ লাখ মানুষ, আর গণপরিবহণে আক্রান্ত হয় আড়াই কোটির বেশি মানুষ।
বিশেষজ্ঞদের মতে, তামাক ব্যবহার ও পরোক্ষ ধূমপানের এই উচ্চ প্রবণতা বাংলাদেশের স্বাস্থ্য পরিস্থিতিকে মারাত্মকভাবে ঝুঁকির মধ্যে ফেলছে। বর্তমানে দেশে অসংক্রামক রোগে মৃত্যুর ৪০ শতাংশেরও বেশি ঘটে ফুসফুস ও হৃদ্রোগে, আর এ হার কমানোর সবচেয়ে কার্যকর উপায় হলো শক্তিশালী তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ২০২১ সালে এ বিষয়ে আইন সংশোধনের উদ্যোগ নিলেও খসড়াটি এখনো চূড়ান্ত হয়নি। ফলে দ্রুত সংশোধনীটি পাস করার আহ্বান জানানো হয় ওয়েবিনারে।
বাংলাদেশ ক্যানসার সোসাইটির সভাপতি অধ্যাপক ডা. গোলাম মহিউদ্দিন ফারুক বলেন, ফুসফুসসহ সব ধরনের ক্যানসারে চিকিৎসা ব্যয় ও মৃত্যুহার অত্যন্ত বেশি। অসুস্থ মানুষের আর্তনাদ নীতিনির্ধারকদের কানে পৌঁছাতে হবে, তাহলেই আইন সংশোধন অগ্রাধিকার পাবে।
বাংলাদেশ লাং ফাউন্ডেশনের মহাসচিব ডা. আসিফ মুজতবা মাহমুদ বলেন, ফুসফুসের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে হলে তামাক ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করতেই হবে।
ঢাকা ট্রিবিউনের সম্পাদক রিয়াজ আহমদ মনে করেন, গণমাধ্যমকে এই ইস্যুতে আরও সক্রিয় হতে হবে, যেন নীতিনির্ধারকরা বুঝতে পারেন তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন শক্তিশালীকরণের জরুরি প্রয়োজনীয়তা।
স্পটলাইটনিউজ২৪.কমের সম্পাদক মোর্শেদ নোমান বলেন, তামাক নিয়ন্ত্রণ নীতি প্রণয়নে গণমাধ্যম ইতিবাচক ভূমিকা রেখেছে এবং ভবিষ্যতেও রাখবে।
ওয়েবিনারে সভাপতিত্ব করেন প্রজ্ঞার নির্বাহী পরিচালক এবিএম জুবায়ের। প্রজ্ঞার ডিজিটাল মিডিয়া প্রধান মেহেদী হাসানের সঞ্চালনায় মূল উপস্থাপনা দেন কর্মসূচি প্রধান মো. হাসান শাহরিয়ার।
আগামী ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫, সোমবার, বিশ্ব হার্ট দিবস উপলক্ষে রাজধানীর মহাখালীর ইউনিভার্সেল কার্ডিয়াক হাসপাতাল আয়োজন করেছে দিনব্যাপী “ফ্রি হার্ট ক্যাম্প”। মহাখালী রাওয়া’র বিপরীতে হাসপাতাল প্রাঙ্গণে সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত এ ক্যাম্প চলবে।
ক্যাম্পে আগত রোগীদের বিনামূল্যে বিশেষায়িত চিকিৎসা পরামর্শ প্রদান করবেন দেশের স্বনামধন্য হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ও সার্জনবৃন্দ - প্রফেসর ডাঃ নাসির উদ্দিন আহমেদ (চিফ কার্ডিয়াক সার্জন); অধ্যাপক ডাঃ খন্দকার কামরুল ইসলাম (চিফ ক্লিনিক্যাল এন্ড ইন্টারভেনশনাল কার্ডিওলজিস্ট); অধ্যাপক ডাঃ অমল কুমার চৌধুরী (সিনিয়র ক্লিনিক্যাল এন্ড ইন্টারভেনশনাল কার্ডিওলজিস্ট); ব্রিগেডিয়ার জেনারেল অধ্যাপক ডাঃ মোহাম্মদ কামরুজ্জামান (সিনিয়র কার্ডিওভাসকুলার সার্জন); ডাঃ আশরাফুল হক সিয়াম (মিনিমাল ইনভেসিভ কার্ডিয়াক সার্জন); ডাঃ সানিয়া হক (ক্লিনিক্যাল এন্ড ইন্টারভেনশনাল কার্ডিওলজিস্ট) ডাঃ এম এ হাসনাত (ক্লিনিক্যাল এন্ড ইন্টারভেনশনাল কার্ডিওলজিস্ট ও মেডিসিন বিশেষজ্ঞ); ডাঃ রোমেনা রহমান (কার্ডিওভাসকুলার সার্জন) এবং ডাঃ আব্দুল জাব্বার জীবন (পেডিয়াট্রিক কার্ডিওলজিস্ট)।
একইদিনে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জেলরোডে অবস্থিত ইউনিভার্সেল মেডিকেল সার্ভিসেস লিমিটেড-এ স্থানীয়দের জন্য অনুরূপ “ফ্রি হার্ট ক্যাম্প” অনুষ্ঠিত হচ্ছে। সেখানে রোগীদের চিকিৎসা পরামর্শ দিবেন ইউনিভার্সেল মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক ( কার্ডিওলজি) ডাঃ মোঃ নাজমুল হক (হৃদরোগ ও মেডিসিন বিশেষজ্ঞ)।
ক্যাম্প এ আসা রোগীদের এনজিওগ্রাম এর সিডি ( যদি থাকে) নিয়ে আসার জন্য অনুরোধ করা হচ্ছে ।
রোগীরা ফ্রি সিরিয়াল নেওয়ার জন্য যোগাযোগ করতে পারবেন নিম্নোক্ত নম্বরে:
ঢাকা – ১০৬৬৭, ০১৮৪১৪৮০০০০
ব্রাহ্মণবাড়িয়া – ০১৭০৫৬৬৬৯৯৯, ০২৩৩৪৪২৭৮০৮
উল্লেখ্য, ক্যাম্পে আগত সাধারণ রোগীগণ হাসপাতালের সব ধরনের পরীক্ষায় পাবেন ২০% বিশেষ ছাড় এবং ইউনিভার্সেল হার্ট ক্লাবের মেম্বারগণ পাবেন ৩০% ছাড় (শর্ত সাপেক্ষে)।
জরুরি প্রয়োজনে যোগাযোগ
ব্র্যান্ড এন্ড কমিউনিকেশন বিভাগ
ইউনিভার্সেল কার্ডিয়াক হাসপাতাল
মহাখালী, ঢাকা
ফোনঃ ০১৮৩৬৯৯৯৯৫৫, ০১৯১২৮৬৫৪৬২
ই-মেইল: [email protected]
ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের (ডিএসসিসি) অঞ্চল -৫ আওতাধীন ৪৯ নং ওয়ার্ডের আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়, ধলপুর ও সংলগ্ন এলাকায় আজ রবিবার এডিস মশাবাহিত ডেঙ্গু রোগ প্রতিরোধে বিশেষ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ও মশক নিধনে চিরুণী অভিযান পরিচালনা করা হয়। ডিএসসিসি এবং ব্র্যাক স্বাস্থ্য কর্মসূচির যৌথভাবে আয়োজিত ডেঙ্গু প্রতিরোধ অভিযানে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জনাব মো. জহিরুল ইসলাম প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।
ডিএসসিসি আওতাধীন আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়, ধলপুর ও সংলগ্ন এলাকায় বিশেষ পরিচ্ছন্নতা অভিযানে ডিএসসিসির বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগ, স্বাস্থ্য বিভাগ, সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীবৃন্দ ও এলাকাবাসী অংশগ্রহন করে। প্রধান অতিথির বক্তব্যে ডিএসসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জনাব মো. জহিরুল ইসলাম বলেন, “প্রতিরোধমূলক অভ্যাসের শুরু হোক শৈশব থেকে। প্রতিটি শিক্ষার্থী যেন নিজের পরিবার ও প্রতিবেশীদের মধ্যে পরিচ্ছন্নতার সচেতনতা ছড়িয়ে দেয়।” তিনি বিদ্যালয়ে পর্যায়ক্রমে শিক্ষার্থীদের পরিচ্ছন্নতার কাজে যুক্ত করার পরামর্শ দিয়ে বলেন পরিচ্ছন্নতা যেন জীবনের অংশ হয়ে ওঠে। এ সময় তিনি ডেঙ্গু প্রতিরোধ অভিযানে অংশগ্রহণের জন্য ব্র্যাক স্বাস্থ্য কর্মসূচিকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করে বলেন প্রতিটি ওয়ার্ডে চিরুণী অভিযান পরিচালনা করা হবে।
ডেঙ্গু প্রতিরোধ অভিযানে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের সচিব মুহাম্মদ শফিকুল ইসলাম, প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা (অ.দা.) ড. নিশাত পারভীন, আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা-০৫ জনাব মোঃ আবু আসলাম, ব্র্যাক স্বাস্থ্য কর্মসূচির সিনিয়র প্রোগ্রাম ম্যানেজার ডা: নূর-ই-নাজনীন ফেরদৌসসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন।
কুমিল্লায় আবারো ঘরে ঘরে ডেঙ্গু জ্বরের প্রকোপ দেখা দিয়েছে। সরকারী হিসেবে সংখ্যাটা কম হলেও বেসরকারি হিসেবে প্রতিদিনই আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। সিটি করপোরেশন ও পৌসসভার মশক নিধন কর্মসূচির অপর্যাপ্ততার কারণে প্রতিনিয়ত বাড়ছে মশার উপদ্রব ও ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত সংখ্যা। নগরীতে প্রতিদিনই নতুন করে ডেঙ্গুরোগী শনাক্ত হওয়ায় জনমনে চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে। বিশেষ করে নগরীর ২৭টি ওয়ার্ডেই বাড়ছে এডিস মশার উপদ্রব ও ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা।
জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্য মতে, গত ২৪ ঘন্টায় নতুন করে ২০ জন ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। নতুন আক্রান্তদের মধ্যে শুধু মাত্র দাউদকান্দি উপজেলাতেই ১০ জন আক্রান্ত হয়েছেন। চলতি বছরের ১২ জুন থেকে ১৬ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত জেলায় আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৯৫৯০ জন। ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ৬ জন।
চলতি বছর জুন মাসে কুমিল্লা দাউদকান্দি পৌরসভায় ডেঙ্গু মহামারি আকার ধারণ করেছিল। সে সময় ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয়ে দোনারচর গ্রামের মান্নানের ছেলে ইউসূফ আলী, নাজির চৌধুরীর স্ত্রী মাকসুদা বেগম এবং রাসেলের স্ত্রী শাহিনুর আক্তার রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। সে সময় দাউদকান্দি পৌরসভার শুধু ৫ ও ৬ নম্বর ওয়ার্ডেই ৬ শতাধিক মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছিলেন৷ ওই দুই ওয়ার্ডে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হয়।
পরে জুলাইয়ের মাঝামাঝিতে এসে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা কমে আসে। তবে সেপ্টেম্বর দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে আবারো চোখ রাঙাচ্ছে ডেঙ্গুজ্বর। প্রতিদিনই বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা।
কুমিল্লা সরকারি কলেজের হিসাব বিজ্ঞান বিভাগের বিভাগীয় প্রধান সহকারী অধ্যাপক আনোয়ারুল হক জানান, তিনি গত তিন দিন আগে ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয়েছেন। জ্বর কমলেও তার শরীর দুর্বল। পরিবারে আরো দুজন জ্বরে আক্রন্ত। আনোয়ারুল হক আরো জানান, তার কয়েকজন সহকর্মী ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত। তারা বাসায় চিকিৎসা নিচ্ছেন।
শিক্ষক আনোয়ারুল হক জানান, সিটি করপোরেশন থেকে ডেঙ্গু সংক্রমনরোধে উল্লেখযোগ্য কোনো পদক্ষেপ নেই। ফগার মেশিন নিয়ে লোক দেখানো স্প্রে করে চলে যায়। যার ফলে কুমিল্লা নগরীতে ডেঙ্গু মহামারি আকার ধারণ করছে।
একই কলেজের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান সহকারী অধ্যাপক মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন জানান, ৮ দিন আগে তিনি ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয়েছেন। তার আরো তিনজন সহকর্মী আক্রান্ত। তারা বলছেন নগরীর মশক নিধন কর্মসূচি নেই বললেই চলে। ফলে এডিস মশার বংশবৃদ্ধি হচ্ছে ব্যাপকভাবে।
কুমিল্লা নিউমার্কেটর ব্যবসায়ী জুয়েল খন্দকার জানান, তিনি ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয়েছে। ওই মার্কেটের আরো অন্তত ৮ থেকে ১০ জন আক্রান্ত। তারা বাসায় চিকিৎসা নিয়েছেন। সরকারি হাসপাতালে রোগীর চাপ বেড়ে যাওয়ায় অনেকেই ঘরেই চিকিৎসা নিচ্ছেন।
কুমিল্লা নগরীর পশ্চিম বাগিচাগাও এলাকার বাসিন্দা আসিফ অরুনাভ জানান, তিনি ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয়েছেন। সিটি ও করপোরেশন ও জেলা স্বাস্থ্যবিভাগের মাত্রাতিরিক্ত উদাসীনতার কারণে কুমিল্লা নগরীতে ঘরে ঘরে ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়ছে।
কুমিল্লা সিটি করপোরেশনে মশক নিধন কর্মসূচিতে লোকবলের অভাব বলে স্বীকার করেছেন সিটি করপোরেশনের সচিব মোহাম্মদ মামুন।
তিনি জানান, নগরীর ২৭ ওয়ার্ডের জন্য ফগার মেশিন রয়েছে মাত্র ১০টি। স্প্রে মেশিন রয়েছে ২০টি। এ কাজে লোকবল রয়েছে ২০ জন। এত কম লজিস্টিক সাপোর্ট দিয়ে এত বড় সিটি করপোরেশন এলাকায় মশক নিধনের মত কাজ যথাযথভাবে করা সম্ভব নয়।
কুমিল্লা জেলা সিভিল সার্জন ডা. আলী নুর মোহাম্মদ বশির আহমেদ সচেতনতা বৃদ্ধি ছাড়া ডেঙ্গু সংক্রমণ কমানো সম্ভব নয়। জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ প্রতিনিয়ত সভা সেমিনার করছে। সবার উচিত বাড়ির আঙ্গিনা পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রাখা। জমে থাকা পানি ফেলে দেয়া। তাহলে ডেঙ্গু মশার জীবাণুবাহী এডিস মশার বংশবৃদ্ধি কমবে। ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্তও কমবে। এছাড়াও এমন পদক্ষেপ নিতে হবে সেক্ষেত্রে সিটি করপোরেশন ও পৌরসভাসহ ইউনিয়ন পর্যায়ে।
দুর্গাপূজার আর কয়েকদিন বাকি। উৎসবের আগে অনেকেই চান ত্বক হোক ঝলমলে ও সতেজ। কিন্তু ব্যস্ততার কারণে পার্লারে যাওয়ার সময় না পেলে চিন্তার কিছু নেই। ঘরোয়া পরিচর্যা, সঠিক খাদ্যাভ্যাস এবং পর্যাপ্ত বিশ্রামেই পাওয়া যাবে উজ্জ্বল ত্বক।
ত্বকের যত্নে করণীয়
ক্লিনজিং-টোনিং-ময়শ্চারাইজিং: প্রতিদিন দু’বার মাইল্ড ক্লিনজার দিয়ে মুখ ধুয়ে নিন। এরপর টোনার ব্যবহার করলে পোরস ছোট হয় ও ত্বক ফ্রেশ লাগে। সবশেষে নিজের ত্বকের ধরন অনুযায়ী হালকা ময়শ্চারাইজার লাগান।
স্ক্রাব: সপ্তাহে অন্তত দু’বার স্ক্রাব ব্যবহার করুন। ঘরোয়া উপায় হিসেবে চিনি–মধুর মিশ্রণ বা ওটস–দইয়ের প্যাক ব্যবহার করতে পারেন। এতে মৃত কোষ দূর হয়ে ত্বক উজ্জ্বল হয়।
ফেসপ্যাক: বেসন, দুধ ও হলুদের প্যাক ত্বককে ফর্সা ও দাগমুক্ত করে। মূলতানি মাটি তেল শোষে নিয়ে মুখকে সতেজ রাখে। সপ্তাহে অন্তত দুইবার ফেসপ্যাক ব্যবহার করুন।
হাইড্রেশন: প্রতিদিন কমপক্ষে ৮–১০ গ্লাস পানি পান করুন। ডাবের পানি, লেবু পানি বা গ্রিন টি শরীর থেকে টক্সিন বের করে ত্বক ঝলমলে রাখে।
ঘুম: প্রতিদিন অন্তত ৭–৮ ঘণ্টা ঘুমালে চোখের নিচের কালো দাগ ও ক্লান্তি দূর হয়। রাত জাগা এড়িয়ে চলুন।
খাবার: জাঙ্ক ফুড, ভাজাপোড়া কমিয়ে ফল, শাকসবজি, বাদাম ও দুধজাতীয় খাবার খান। ভিটামিন সি ও ই সমৃদ্ধ খাবার ত্বকের কোলাজেন বৃদ্ধি করে, বার্ধক্য প্রতিরোধ করে।
সানস্ক্রিন: বাইরে বের হলে অবশ্যই সানস্ক্রিন ব্যবহার করুন। সূর্যের ক্ষতিকর রশ্মি ত্বকের রং নষ্ট করে ও অকাল বার্ধক্য ডেকে আনে।
ঠোঁট ও হাত-পায়ের যত্ন: ঠোঁটে প্রতিদিন লিপবাম ব্যবহার করুন। রাতে নারকেল তেল বা মধু লাগাতে পারেন। নিয়মিত ময়শ্চারাইজার ব্যবহার করলে হাত-পাও হবে কোমল ও সুন্দর।
শয্যা সংখ্যা বাড়লেও সুযোগ-সুবিধা বাড়েনি কমলগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের। নিয়মিত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার অভাবে ময়লা-আবর্জনার দুর্গন্ধ বিপাকে ফেলছে রোগী, স্বজন ও দর্শনার্থীদের। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ভেতরে প্রবেশ করতেই চোখে পড়ে ছড়িয়ে থাকা ময়লা-আবর্জনা। সিঁড়ি থেকে শুরু করে ওয়ার্ড ও জানালার পাশে জমে আছে পলিথিন, পরিত্যক্ত খাবার, ব্যবহৃত সিরিঞ্জসহ নানান আবর্জনা। এসব ময়লা ফেলার জন্য নির্দিষ্ট ব্যবস্থা না থাকায় রোগী, স্বজন ও নার্সরাই জানালা দিয়ে বাইরে ফেলছেন, ফলে নিচে তৈরি হয়েছে ময়লার ভাগাড়। জরাজীর্ণ ভবনের ছাদ দিয়ে পড়ছে বৃষ্টির পানি, ধসে পড়ছে পলেস্তার। হাসপাতালজুড়ে রোগী ও তাদের স্বজনদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ ৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালে কাঙ্ক্ষিত সেবা পাচ্ছেন না রোগীরা। নামে ৫০শয্যা হাসপাতাল হলেও প্রয়োজনীয় জনবল না থাকায় রোগীদের চিকিৎসা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে চিকিৎসকদের। হাসপাতালের ১৩৬টি পদের মধ্যে কর্মরত আছেন ৮৬ জন। শূন্য রয়েছে ৫০টি পদ। সামান্য রোগ নিয়ে আসা রোগীদের চিকিৎসার জন্য পাঠানো হচ্ছে জেলা হাসপাতালে। চিকিৎসক ছাড়াও বিভিন্ন পদ শূন্য থাকায় সেবা নিতে আসা রোগীরা চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। ৭ বছর আগে এ হাসপাতালটি ৫০ শয্যায় উন্নীত হলেও প্রয়োজন অনুযায়ী জনবল নিয়োগ হয়নি।
গত রোববার দুপুরে এনসিপির স্থানীয় নেতাকর্মীদের নিয়ে মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে হঠাৎ করেই পরিদর্শনে আসেন জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সদস্য সচিব প্রীতম দাশ। হাসপাতালটি ঘুরে দেখেন এবং রোগী, তাদের স্বজন ও কর্তব্যরত চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলেন। হাসপাতালে অবস্থানকালে তিনি বিভিন্ন সমস্যার খোঁজখবর নেন। রোগীদের অভিযোগ শোনার পাশাপাশি চিকিৎসকদের কাছ থেকেও দৈনন্দিন কার্যক্রম ও সমস্যার কথা শোনেন তিনি। পরে হাসপাতাল পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন প্রীতম দাশ।
সাংবাদিকদের তিনি বলেন, কমলগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রতিদিন যে সংখ্যক রোগী আসেন, তার তুলনায় চিকিৎসকের সংখ্যা অনেক কম। পরিছন্নতাকর্মীও অপর্যাপ্ত। ৪ লাখ মানুষের সেবা দেওয়ার জন্য মাত্র ৫০ শয্যার এ হাসপাতালে পর্যাপ্ত জনবল নেই। এতে চিকিৎসা সেবার মানও মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, আমরা বিভিন্ন সময় শুনে আসছি এই হাসপাতালে রোগীদের দুর্দশার কথা। তারা নানা ভাবে আমাদের জানিয়েছে। এই প্রতিষ্ঠানটা আমাদের প্রতিষ্ঠান। আমাদের ভ্যাট ট্যাক্সের টাকা এটা চলে। শুতারাং এখানে যারা সেবাদান করছেন তাদের সবসময় মনে রাখতে হবে তাদের বেতনটা জনগনের টাকায় হয়। আমরা এখানে এসে যেটা দেখলাম ডাক্তারসহ অন্যান্য চিকিৎসক স্টাফ তেমন নেই। পাশাপাশি আরেকটা জিনিস আমরা লক্ষ করলাম, এখানে বর্তমানে যে পরিমাণে জনবল আছে সে পরিমাণে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে না। প্রতিটা ওর্য়াডে যে পরিমাণ ময়লা,আবর্জনা পাশাপাশি টয়লেটে ঢোকাই যায় না। রোগীরা এসে কি সেবা নিবে ভালো মানুষরাই রোগী হয়ে যাবে। যদি কোনো ব্যক্তি এখানে একটা রোগের জন্য চিকিৎসা নিতে আসেন, বাসায় গেলে পরবর্তিতে আরও ৫টা রোগের ওষুধ নিতে হবে।
তিনি বলেন, আমরা আশা করবো জেলা সিভিল সার্জনসহ সকল কর্মকর্তা এখানে এসে দেখে যান কি অবস্থা এই হাসপাতালের। দ্রত ব্যবস্থা গ্রহণ করুন। হাসপাতালে ঠিকমতো ওষুধ দেওয়া হয়না। সকাল থেকে আমার এখানে দাড়িয়ে দেখছি তেমন কোনো রোগী নাই। রেজিস্টার দেখানো হয়েছে অনেক রোগীকে ওষুধ দেওয়া হয়েছে, কিন্তু বাস্তবতার সাথে কোনো মিল নাই। ওষুধগুলো কোথায় যায়? এছাড়া এই হাসপাতালে রাতের বেলা মাদকসেবন হয়, বিভিন্ন অপকর্ম হয়। একটা হাসপাতালে এসব কি? প্রশাসন সহ সকলের কাছে আমাদের অনুরোধ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিবেন। এই হাসপাতালটা নিজেই দুখছে। হাসপাতালে অনেক জায়গায় লাইট নষ্ট হয়ে থাকায় অন্ধকার থাকে। বৃষ্টি হলে হাসপাতালের বেডের ওপর পানি পড়ে। আসলে এগুলো সমাধান না হলে বড় ধরনের ঝুঁকি তৈরি হতে পারে।
প্রীতম দাশ বলেন, আমরা এনসিপির পক্ষ থেকে দ্রুত স্বাস্থ্য বিভাগের সঙ্গে কথা বলব, যেন এখানে পর্যাপ্ত চিকিৎসক, নার্স, পরিছন্নতাকর্মী ও নিরাপত্তাকর্মী নিয়োগ দেওয়া হয়।
স্থানীয়রা অভিযোগ করে বলেন, এই হাসপাতাল কখনো ঠিক হবে না। কারো নজর নেই এখানে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হাসপাতালের আশেপাশে একাধিক ব্যক্তিরা জানিয়েছেন, হাসপাতালের দায়িত্বরত কর্মকর্তা মাহবুবুল আলম ভূঁইয়া ৬ বছর ধরে এই হাসপাতালে আছেন। কিন্তু এই ৬বছর ধরে হাসপাতালের কোনো উন্নতি হয়নি। বরং তিনি কোটি টাকার জায়গা জমি কিনেছেন এখানে। তার দুর্নীতির শেষ নেই।
স্থানীয় বাসিন্দা হাসনাত আলী অভিযোগ করে বলেন, একমাত্র সমাধান স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্মকর্তা মোহাম্মদ মাহবুবুল আলম ভূঁইয়া ও স্যানেটারী অফিসার দুলাল মিয়াকে এখান থেকে বদলি করলে সব ঠিক হয়ে যাবে।
এদিকে তারেক আহমদ নামে একজন ফেইসবুকে হাসপাতালের সমস্যা নিয়ে একজন সাংবাদিকের একটি পোস্টের কমেন্টে করেছেন। তিনি সেই কমেন্টে লিখেছেন ‘মানুষের চিকিৎসার সেবাকে জিম্মি করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়ে যাচ্ছে মোহাম্মদ মাহবুবুল আলম ভূঁইয়া। তাকে নিয়ে ঠিকমত নিউজ করেন সে দুর্নীতি করতেছে তার কারণে কোন এমবিবিএস ডাক্তার আসতে পারছে না, মহিলা ডেলিভারি রুম খুবই খারাপ অবস্থা এটাই নিয়ে কিছু কথা বলেন তারেক আহমদ।’
দায়সারা কথা বললেন কমলগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মোহাম্মদ মাহবুবুল আলম ভূঁইয়া। তিনি এই প্রতিবেদককে জানান, প্রথম শ্রেণির ডাক্তার এবং কনসালটেন্টসহ ১৯টা পদ আছে। তার মধ্যে ৮পদে লোক আছে। বাকিগুলো খালি।