মঙ্গলবার বেলা ২টা ৭ মিনিট। রাজধানীর পরীবাগ এলাকা। রাস্তার দুই ধারে চায়ের দোকান, ভাতের দোকান। হঠাৎ করেই চায়ের দোকানের সামনে থামানো একটি রিকশা থেকে চালক পড়ে গেলেন নিচে, অচেতন। তাকে ধরাধরি করে সেখানে শুইয়ে ফেলা হলো, মাথায় পানি ঢালা হলো অনেকক্ষণ, এরপর চোখ খুলে তিনি পানি খেতে চাইলেন। ধরে উঠিয়ে বসিয়ে পানি খাওয়ানো হলো এবং তার দিকে একটি টেবিল ফ্যান তাক করে দেয়া হলে তিনি খানিটকটা সুস্থবোধ করেন। তবে তখনো কথা বলার মতো অবস্থায় তিনি ছিলেন না। আশপাশের রিকশাচালকরা বললেন, এই গরমে রিকশা চালানো অত্যন্ত কষ্টকর, কিন্তু পেটের দায়ে রিকশা নিয়ে বের না হয়ে উপায় থাকে না।
গরমের কারণে অসুস্থ হওয়ার ঘটনা প্রায় প্রতিদিনই ঘটলেও দিন কয়েক আগে টাঙ্গাইলে স্কুলে ফুটবল খেলার কারণে এক শিক্ষার্থীর মৃত্যু সবার টনক নাড়িয়ে দেয়। গত ২৯ মে টাঙ্গাইলের সহদেবপুর ইউনিয়নের দ্বিমুখা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ছুনুটিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে খেলা শুরু হয় বেলা ২টায়। প্রচণ্ড গরম আর রোদের মধ্যে খেলতে গিয়ে পঞ্চম শ্রেণির রিয়া আক্তার মাঠে অসুস্থ হয়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেলে।
রিয়ার এই ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। তাতে দেখা যায়, হঠাৎ করেই রিয়া মাঠের ভেতরে দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থাতেই মাটিতে শুয়ে পড়ে।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মিজানুর রহমান জানিয়েছেন, অসুস্থ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে রিয়ার মাথায় পানি ঢাললেও জ্ঞান ফেরেনি। এরপর টাঙ্গাইল সদর জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসক রিয়াকে মৃত ঘোষণা করেন।
তবে এর আগেও হিটস্ট্রোকের আরও একটি ঘটনা সংবাদমাধ্যমে সাড়া ফেলে। গত ১১ মে পুরান ঢাকার জজকোর্টে শফিউল আলম ওরফে আলাউদ্দিন নামে এক আইনজীবীর মৃত্যু হয় হিটস্ট্রোকে।
চিকিৎসকরা বলছেন, প্রচণ্ড গরমে অসুস্থতা এমনকি মৃত্যুও হচ্ছে এখন। কেন হিটস্ট্রোক হচ্ছে- প্রশ্নে তারা বলছেন, স্বাভাবিক সময়ে শরীরের যে তাপমাত্রা থাকে, সেটা বেড়ে যায় রোদে গেলে। আর অত্যধিক তাপমাত্রায় শরীরের তাপমাত্রা আরও বেড়ে যায়। সাধারণত মানুষের স্বাভাবিক তাপমাত্রা হচ্ছে ৯৮ ডিগ্রি ফারেনহাইট। কিন্তু অনেক সময় ধরে রোদে থাকলে সেটা ১০৪ ডিগ্রি পার হয়ে গেলেই হিটস্ট্রোক হতে পারে। আর এর ফলে মানুষ অনেক সময় জ্ঞান হারান, মৃত্যুও হয় অনেকের।
তারা বলছেন, হিটস্ট্রোক একটি মেডিকেল ইমার্জেন্সি। সময় এসেছে এখন একে আলোচনায় আনার, এ নিয়ে চিকিৎসকদের জন্য পৃথক গাইডলাইন করার। যেমনটা করোনা, ডেঙ্গুর মতো পৃথক গাইডলাইন অনুসরণ করে চিকিৎসা দেয়া হয়।
হিটস্ট্রোকের লক্ষণ জানিয়ে তারা বলেন, বমি, দুর্বলতা এবং অবসাদ, মাথা ঝিমঝিম, চোখে ঝাপসা দেখা এবং এ সময় খিঁচুনি হতে পারে। সেই সঙ্গে হৃৎস্পন্দন বেড়ে যায়, বেশির ভাগ মানুষের শ্বাসকষ্ট হয়।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ বিভাগের পরিচালক ও মেডিসিন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. রোবেদ আমীন দৈনিক বাংলাকে বলেন, হিটস্ট্রোক একটি মেডিকেল ইমার্জেন্সি। এ নিয়ে এখন পৃথকভাবে চিকিৎসকদের জন্য গাইডলাইন করা দরকার।
হিটস্ট্রোক থেকে বাঁচতে গেলে অনেক কিছু করতে হবে মন্তব্য করে তিনি বলেন, যেমন গরমে চলাফেরা, পোশাক, পানি খাওয়ার মতো অনেক পরামর্শ রয়েছে। তার মধ্যে রয়েছে ঢোলা এবং সুতি কাপড়ের পোশাক পরা, সাদা রং হলে ভালো, কারণ সাদা রং তাপ শোষণ করে, দিনের বেলায় কালো রং এড়িয়ে চলতে হবে। সঙ্গে ছাতা, পানির বোতল নিতে হবে। ছাউনি এবং গাছের ছায়ায় থাকতে হবে।
তবে সবচেয়ে বেশি দেখা যায়, কোল্ড ড্রিংকস খাওয়ার ধুম। কিন্তু এটা করা যাবে না, এমনকি ফ্রিজের একেবারে ঠাণ্ডা পানিও নয়। ঠাণ্ডা পানির সঙ্গে মিশিয়ে অথবা একেবারে স্বাভাবিক পানি খেতে হবে। আর অনেক বেশি ঘাম হলে স্যালাইন খেতে পারে, কিন্তু সব সময় স্যালাইনও খাওয়া যাবে না। দিনে-রাতে একাধিকবার গোসল করতে হবে।
আর যারা কায়িক পরিশ্রম করেন, তাদের কাজের মাঝে নিশ্চয়ই ‘ব্রেক’ দিতে হবে, একনাগাড়ে কাজ করা যাবে না বলেন অধ্যাপক রোবেদ আমীন।
তবে কেউ হিটস্ট্রোকে আক্রান্ত হওয়ার পর তাকে যত দ্রুত সম্ভব চিকিৎসকের কাছে নিতে হবে, একেবারেই সময় নষ্ট করা চলবে না জানিয়ে তিনি বলেন, এটা মেডিকেল ইমার্জেন্সি।
এর আগে এমন তাপমাত্রা মানুষ দেখেনি মন্তব্য করে অধ্যাপক রোবেদ আমীন বলেন, দেশে এটা নতুন সমস্যা, একে এখন স্বাস্থ্য সমস্যা হিসেবে মেডিকেল ইমার্জেন্সি হিসেবে দেখতে হবে। তবে এ নিয়ে স্পেসিফিক কোনো গাইডলাইন নেই, সেটা করতে হবে।
এদিকে প্রিভেনটিভ মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী দৈনিক বাংলাকে বলেন, কারও হিটস্ট্রোক হয়েছে মনে হলেই তাকে দ্রুত গাছের ছায়ায় অথবা ঠাণ্ডা জায়গায় নিতে হবে, গায়ে পানি ঢালতে হবে। তাতেও জ্ঞান ফিরে না এলে একদম সময় নষ্ট না করে দ্রুত চিকিৎসকের কাছে নিতে হবে।
ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে আরও ১৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে চলতি বছর ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ৮৯৩ জনে। একই সময়ে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে আরও ২ হাজার ৮৬৫ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
শনিবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম থেকে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, গত ২৪ ঘণ্টায় (শুক্রবার সকাল ৮টা থেকে শনিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত) ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ২ হাজার ৮৬৫ জন। আক্রান্তদের মধ্যে ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৮১৪ জন আর বাইরের হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ২ হাজার ৫১ জন। একই সময়ে আক্রান্ত ১৪ জনের মৃত্যু হয়েছে।
অধিদপ্তরের তথ্যমতে, বর্তমানে দেশের বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে মোট ১০ হাজার ৫৭২ জন ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসাধীন আছেন। ঢাকার সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে বর্তমানে ৩ হাজার ৭৯৪ জন এবং অন্যান্য বিভাগের বিভিন্ন হাসপাতালে ৬ হাজার ৭৭৮ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি রয়েছেন। চলতি বছর ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে সারা দেশে এখন পর্যন্ত ১ লাখ ৮৪ হাজার ৭১৭ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন। এর মধ্যে ঢাকায় ৭৮ হাজার ১০৩ জন এবং ঢাকার বাইরে চিকিৎসা নিয়েছেন ১ লাখ ৬ হাজার ৬১৪ জন।
অধিদপ্তর আরও জানায়, আক্রান্তদের মধ্যে হাসপাতাল থেকে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ১ লাখ ৭০ হাজার ২৫২ জন। ঢাকায় ৭৩ হাজার ৭১৩ এবং ঢাকার বাইরে ৯৯ হাজার ৫৩৯ জন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন। চলতি বছর ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে এ পর্যন্ত ৮৯৩ জনের মৃত্যু হয়েছে।
দেশে ডেঙ্গুর প্রকোপ নজরে আসে ২০০০ সালে। এরপর সবচেয়ে ডেঙ্গু বেশি রোগী শনাক্ত হয় ২০১৯ সালে। কিন্তু চলতি বছরে সে রেকর্ড ভেঙে নতুন রেকর্ড হয়। গত ২১ আগস্ট ২ হাজার ১৯৭ জনকে নিয়ে সে দিন পর্যন্ত মোট রোগী হয় ১ লাখ ২ হাজার ১৯১ জন। ২০১৯ সালে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীর সংখ্যা ছিল ১ লাখ ১ হাজার ৩৫৪ জন এবং মৃত্যু হয় ১৭৯ জনের।
ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয়ে সারা দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় আরও চারজনের মৃত্যু হয়েছে। একই সময়ে জ্বরটি নিয়ে দুই হাজার ১৫৩ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
শুক্রবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, নতুন রোগীদের মধ্যে ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৬৬৭ জন আর ঢাকার বাইরের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন এক হাজার ৪৮৬ জন।
বর্তমানে দেশের বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে মোট ১০ হাজার ৭১ জন ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসাধীন। এর মধ্যে ঢাকার সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে বর্তমানে তিন হাজার ৬৫৮ জন এবং অন্যান্য বিভাগের বিভিন্ন হাসপাতালে ছয় হাজার ৪১৩ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি রয়েছেন।
নতুন রোগীদের নিয়ে চলতি বছর সারা দেশে এখন পর্যন্ত এক লাখ ৮১ হাজার ৮৫২ জন হাসপাতালে ভর্তি হলেন। এর মধ্যে ঢাকায় ৭৭ হাজার ২৮৯ জন এবং ঢাকার বাইরে চিকিৎসা নিয়েছেন এক লাখ চার হাজার ৫৬৩ জন।
আক্রান্তদের মধ্যে হাসপাতাল থেকে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন এক লাখ ৭০ হাজার ৯০২ জন।
এদিকে গত ২৪ ঘণ্টায় মারা যাওয়া চারজনকে নিয়ে চলতি বছর ডেঙ্গু কেড়ে নিল ৮৭৯ জনের প্রাণ। এর মধ্যে নারী ৫০৬ জন ও পুরুষ ৩৭৩ জন।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) বায়ু থেকে নাইট্রোজেন অপসারণ করে অক্সিজেন উৎপাদনকারী ভ্যাকুয়াম সুইং অ্যাডসর্পশন (ভিএসএ) পদ্ধতি জেনারেটরের উদ্বোধন করা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘সি’ ব্লকের সামনে উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ এ জেনারেটরের উদ্বোধন করেন।
এ সময় উপাচার্য মো. শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান প্রশাসন বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রয়োজনীয় সর্বাধুনিক প্রযুক্তিগুলো সংযোজন করতে তৎপর রয়েছে।’ এ সময় নার্সিং অনুষদের ডিন অ্যানেসথেশিয়া বিভাগের অধ্যাপক ডা. দেবব্রত বণিক উপস্থিত ছিলেন। বিজ্ঞপ্তি
কিউবার রাজধানী হাভানায় অনুষ্ঠিত হলো জি ৭৭ প্লাস শীর্ষ সম্মেলন। গত ১৫-১৬ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত এই সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতিনিধিত্বকারী দলের নেতৃত্ব দেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক।
সেখানে তার নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল গঠন করা হয়। দলের অন্য সদস্যরা হলেন, কানাডা ও কিউবার অনাবাসিক রাষ্ট্রদূত (হাইকমিশনার, অটোয়া) ড. খলিলুর রহমান, অটোয়াস্থ বাংলাদেশ হাইকমিশনের মিনিস্টার দেওয়ান হোসনে আইয়ুব ও অটোয়াস্থ বাংলাদেশ হাইকমিশনের প্রথম সচিব ও দূতালয় প্রধান হাসান আল বাশার আবুল উলায়ী।
সম্মেলনে ১১৬টি দেশ, ১২টি সংস্থা এবং জাতিসংঘ ব্যবস্থাপনা সংস্থার ১ হাজার ৩০০ জনেরও বেশি প্রতিনিধি অংশগ্রহণ করে। এতে ৩১জন রাষ্ট্র ও সরকার প্রধান, ১২ জন ভাইস-প্রেসিডেন্ট, কেবিনেট মন্ত্রীসহ অন্যান্য উচ্চ-পর্যায়ের সদস্য রাষ্ট্রের প্রতিনিধিরাও উপস্থিত ছিলেন। কিউবার রাষ্ট্রপতি মিগুয়েল দিয়াজ-ক্যানেল গত ১৫ সেপ্টেম্বর এ ৭৭প্লাস চায়না সামিটের চেয়ারম্যান ও কিউবার রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে সম্মেলনের উদ্বোধন করেন।
সম্মেলনের শুরুতে সদস্য রাষ্ট্রগুলো নিজ নিজ দেশের পক্ষে বিবৃতি দেয়। এর আগে আলোচনার মাধ্যমে ৪৭টি বিষয়সহ এ৭৭ প্লাস চীন গ্রুপের শীর্ষ সম্মেলনের রাজনৈতিক ঘোষণা গ্রহণ করতে সকল সদস্য রাষ্ট্রগুলো সম্মত হন। বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের প্রধান হিসেবে এবং প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে স্বাস্থ্যমন্ত্রী শীর্ষ এ সম্মেলনে গত ১৬ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশের কান্ট্রি স্টেটমেন্ট পাঠ করেন।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় করোনা মহামারি সংকট সফলভাবে পরিচালনা করেছিলেন এবং সংকট ব্যবস্থাপনার জন্য ওই সময়ে সংশ্লিষ্ট দেশগুলো থেকে সময়মতো ভ্যাকসিন এবং অন্যান্য সংশ্লিষ্ট সরঞ্জামাদি প্রাপ্তি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল।’
প্রাথমিকভাবে করোনা মহামারি ব্যবস্থাপনা অজানা ছিল, তাই মহামারি ব্যবস্থাপনার প্রাথমিক দিনগুলো মোকাবিলা ছিল চ্যালেঞ্জিং। এই অভিজ্ঞতাকে সামনে রেখে উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশের মধ্যে সকল সেক্টরে প্রযুক্তিগত জ্ঞানের আদান-প্রদান নিশ্চিত করার উপর তিনি জোর দেন।
তিনি তার বক্তব্যে আরও বলেন, ‘আমরা বর্তমানে প্রযুক্তিগত উন্নয়নের যুগে বাস করছি, যা জীবনযাত্রায় দ্রুত বৈপ্লবিক পরিবর্তন এনেছে। তবে প্রযুক্তিগত উন্নয়নের নেতিবাচক প্রভাব উন্নয়নশীল এবং দ্বীপ দেশগুলিকে জলবায়ু পরিবর্তন এবং সম্পদের ঘাটতির কারণে বিপর্যয়ের গভীরতার দিকে নিয়ে যাচ্ছে।’
মন্ত্রী বলেন, ‘প্রযুক্তিগত জ্ঞান শুধুমাত্র উন্নত দেশের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখা উচিত নয়। বরং প্রযুক্তিগত জ্ঞান উন্নত দেশসমূহ থেকে উন্নয়নশীল দেশের সাথে অবশ্যই দ্রুত সময়ে আদান প্রদান করতে হবে। তিনি সকল সদস্য রাষ্ট্রকে পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তিগত অগ্রগতির জন্য এগিয়ে আসার আহ্বান জানান এবং এ লক্ষ্যে ব্যাপক গবেষণামুলক পদক্ষেপ নেয়া উচিত বলে মতামত ব্যক্ত করেন।’
তিনি বাংলাদেশের কান্ট্রি স্টেটমেন্টে এসময় বলেন, ‘উন্নত দেশগুলোকে শুধুমাত্র উন্নয়নশীল দেশগুলোকে আর্থিক সহায়তা দিয়েই ক্ষতিপূরণ প্রদান করলে হবে না, প্রযুক্তিগত জ্ঞান অবশ্যই প্রদান করতে হবে।’
সম্মেলনে উপলক্ষে অটোয়াস্থ বাংলাদেশ হাইকমিশনের মিনিস্টার দেওয়ান হোসনে আইয়ুব ও প্রথম সচিব ও দূতালয় প্রধান হাসান আল্ বাশার আবুল উলায়ী ১৩ সেপ্টেম্বর কিউবার রাজধানী হাভানায় পৌঁছান। কিউবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সাথে সমন্বয় করে বাংলাদেশের কান্ট্রি স্টেটমেন্ট, প্রেটোকল ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ কার্যাবলী চূড়ান্ত করার মাধ্যমে বাংলাদেশের সফল অংশগ্রহণ নিশ্চিত করেন। শীর্ষ সম্মেলনের সময়, বাংলাদেশের প্রতিনিধিদলের প্রধান স্বাস্থ্যমন্ত্রী, ইয়েমেন, লিবিয়া, কিউবাসহ জাতিসংঘের জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক সচিবদের সাথেও দ্বিপাক্ষিক সাক্ষাত করেন।
সম্মেলন উপলক্ষে কিউবার রাষ্ট্রপতি, এ৭৭ প্লাস চায়না এর সদস্য দেশসমূহের রাষ্ট্র বা সরকার প্রধানগণ, কেবিনেট মন্ত্রী ও রাষ্ট্রদূতদের সম্মানে একটি নৈশভোজের আয়োজন করেন। নৈশভোজে স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও বাংলাদেশ হাইকমিশন, অটোয়া, কানাডার পক্ষে মিনিস্টার দেওয়ান হোসনে আইয়ুর অংশগ্রহণ করেন। শীর্ষ সম্মেলনের শেষ তথা দ্বিতীয় দিনে ৪৭-আর্টিকেল হাভানা চূড়ান্ত ঘোষণাপত্র গ্রহণ করা হয়।
ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে আরও আট জনের মৃত্যু হয়েছে। এসময় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে দুই হাজার ৮৮৯ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
আক্রান্তদের মধ্যে ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৭৮৯ জন আর ঢাকার বাইরের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন দুই হাজার ১০০ জন।
বৃহস্পতিবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বর্তমানে দেশের বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে মোট ১০ হাজার ২৮০ জন ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসাধীন আছেন। ঢাকার সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে বর্তমানে তিন হাজার ৬৯৬ জন এবং অন্যান্য বিভাগের বিভিন্ন হাসপাতালে ছয় হাজার ৫৮৪ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি রয়েছেন।
চলতি বছর ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে সারা দেশে এখন পর্যন্ত এক লাখ ৭৯ হাজার ৬৯৯ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন। এর মধ্যে ঢাকায় ৭৬ হাজার ৬২২ জন এবং ঢাকার বাইরে চিকিৎসা নিয়েছেন ১ লাখ ৩ হাজার ২৫৪ জন।
আক্রান্তদের মধ্যে হাসপাতাল থেকে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন এক লাখ ৬৮ হাজার ৫৪৪ জন। ঢাকায় ৭২ হাজার ৩৩৭ এবং ঢাকার বাইরে ৯৬ হাজার ২০৭ জন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন।
চলতি বছর ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে এ পর্যন্ত ৮৭৫ জনের মৃত্যু হয়েছে।
করোনাভাইরাসের কারণে অনেকেই অ্যালঝাইমার্সে আক্রান্ত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ। এ রোগ সম্পর্কে যথেষ্ট জ্ঞান অর্জন এবং সচেতন হওয়া প্রয়োজন বলেও জানিয়েছেন তিনি।
অধ্যাপক শারফুদ্দিন বলেছেন, ‘অ্যালঝাইমার্স বা ডিমেনশিয়া একটি জটিল নিউরো ডিজেনারেটিভ রোগ। এ রোগের মূল লক্ষণ হচ্ছে সব জিনিস ভুলে যাওয়া, কিছু মনে রাখতে না পারা। পরে সেটা বাড়তে বাড়তে কথা বুঝতে না পারা, ভাষা চিনতে বা বলতে না পারা, মুড সুইং, হারিয়ে যাওয়ার সমস্যা বাড়তে থাকে। তাই এই রোগ সম্পর্কে যথেষ্ট জ্ঞান এবং সচেতনতা প্রয়োজন।’
বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় বিশ্ব আলঝাইমারস (ডিমেনশিয়া) দিবস উপলক্ষ্যে বিএসএমএমইউর নিউরোলজি বিভাগ আয়োজিত শোভাযাত্রায় উপাচার্য ডা. শারফুদ্দিন আহমেদ এসব কথা বলেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের বি ব্লক থেকে শুরু হয়ে বটতলা, এ ব্লক, টিএসসি প্রদক্ষিণ করে বর্হিবিভাগ-২ পার হয়ে বর্হিবিভাগ-১-এ গিয়ে শোভাযাত্রাটি শেষ হয়।
উপাচার্য এ সময় বলেন, ‘করোনার পর অনেক মানুষ এ রোগে আক্রান্ত হয়েছে। করোনার পর আমরা অনেক রোগী পেয়েছি যারা মোবাইল হাতে কল দিয়ে গিয়ে কাকে কল দিতে হবে সেটি ভুলে যায়। এ রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের পরিবারের সদস্যরা সহযোগিতা করে সে দিকে নজর দিতে হবে। এছাড়া যারা ভুলে যান, তারা কখন কী করতে হবে সেটি ডায়রিতে লিখে রাখতে পারেন। প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।’
অ্যালঝাইমার্স কী
বিএসএমএমইউর এ শোভাযাত্রায় বক্তারা বলেন, ‘অ্যালঝেইমারস একটি স্নায়ুক্ষয়জনিত রোগ। সাধারণত ষাটোর্ধ্ব ব্যক্তিরা এই রোগে বেশি আক্রান্ত হয়ে থাকেন। তবে কম বয়সেও অনেকে আক্রান্ত হন। এই রোগের প্রধান লক্ষণ হিসেবে দেখা যায়, ব্যক্তির স্মৃতিশক্তি খুব দুর্বল হয়ে যায়। মস্তিষ্কের বিভিন্ন কার্যক্ষমতাও লোপ পায়।’
এ সময় আরও বলা হয়, ‘প্রতি তিন সেকেন্ডে একজন করে এই রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। দিন দিন গোটা বিশ্বে এই রোগ বেড়েই চলেছে। তাই সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে ২১ সেপ্টেম্বর বিশ্বজুড়ে পালিত হয় অ্যালজাইমার্স ডে।’
১৯০১ সালে প্রথমবার একজন জার্মান মনোবিদ অ্যালয়েজ অ্যালঝাইমার্স এই রোগটিকে চিহ্নিত করেন। তার নাম অনুসারে রোগটিকে অ্যালঝাইমার্স বলা হয়। এর আগের শতাব্দীতে ৪৫ থেকে ৬৫ বছর বয়সীদের মধ্যেই এই রোগ সবচেয়ে বেশি পাওয়া গেছে। ১৯৮৪ সাল থেকে অ্যালঝাইমার্স ডিজিজ ইন্টারন্যাশনাল, এই রোগে আক্রান্ত মানুষদের চিকিৎসায় সাহায্য করছে এবং একই সঙ্গে সচেতনতাও তৈরি করছে। ১৯৯৪ সালে সংস্থাটি ২১ সেপ্টেম্বর মাসের ২১ তারিখ বেছে নেয় বিশ্ব অ্যালঝাইমার্স দিবস হিসেবে। এ দিনটিতেই বিশ্বজুড়ে পালিত হয় অ্যালঝাইমার্স ডে বা বিশ্ব অ্যালঝাইমার্স রোগ দিবস।
সূর্যের হাসি নেটওয়ার্ক গত ১৪ সেপ্টেম্বর সারা দেশে তাদের ১৩৪ ক্লিনিকে জরায়ুমুখ ক্যানসার বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে কাউন্সিলিং সেশনের আয়োজন করেছে। এই কাউন্সিলিং সেশনে ২ হাজার ৫০০ নারী অংশগ্রহণ করেন।
এই ধরনের সচেতনতা কার্যক্রম ভয়াবহ জরায়ুমুখ ক্যানসার প্রতিরোধ ও দ্রুত রোগ নির্ণয়ে সহায়ক হবে। বিজ্ঞপ্তি
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) প্রথমবারের মতো শিশু কিডনি রোগীদের জন্য সিএপিডি ক্যাথিটার ইনসারশন চিকিৎসাসেবা কার্যক্রমের উদ্বোধন করা হয়েছে।
গত সোমবার সকাল ৯টায় শহীদ ডা. মিলন হলে প্রধান অতিথি হিসেবে এই প্রশিক্ষণ কর্মসূচির উদ্বোধন করেন উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ। সিঙ্গাপুর ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি হাসপাতালের অধ্যাপক ডা. হুই কিম ইয়াপ, শিশু সার্জন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. বিদ্যাধর মালীসহ ৫ জন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণকারী চিকিৎসকদের মাঝে প্রশিক্ষণ প্রদান করেন। বিজ্ঞপ্তি
ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে আরও ২১ জন মারা গেছেন। যা একদিনে সর্বোচ্চ সংখ্যক মৃত্যু। এ সময় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ৩ হাজার ১৫ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এরআগে চলতি মাসের ২ তারিখে একদিনে সর্বোচ্চ ২১ জনের মৃত্যুর তথ্য জানিয়েছিল স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
বুধবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, গত ২৪ ঘণ্টায় (মঙ্গলবার সকাল ৮টা থেকে বুধবার সকাল ৮টা পর্যন্ত) আরও ৩ হাজার ১৫ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। একই সময়ে আক্রান্ত ২১ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে চলতি বছর ডেঙ্গুতে মোট ৮৬৭ জন মারা গেছেন এবং হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১ লাখ ৭৬ হাজার ৮১০ জন। আক্রান্তদের মধ্যে ঢাকার হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৮৫৭ জন আর ঢাকার বাইরের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৩০২৫ জন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, বর্তমানে দেশের বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে মোট ১০ হাজার ২৬৩ জন ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসাধীন আছেন। ঢাকার সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে বর্তমানে ৩ হাজার ৮১৯ জন এবং অন্যান্য বিভাগের বিভিন্ন হাসপাতালে ৬ হাজার ৪৪৪ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি রয়েছেন।
অধিদপ্তর আরও জানায়, চলতি বছর ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে সারা দেশে এখন পর্যন্ত ১ লাখ ৭৬ হাজার ৮১০ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন। এর মধ্যে ঢাকায় ৭৫ হাজার ৮৩৩ জন এবং ঢাকার বাইরে চিকিৎসা নিয়েছেন ১ লাখ ৯৭৭ জন। আক্রান্তদের মধ্যে হাসপাতাল থেকে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ১ লাখ ৬৫ হাজার ৬৮০ জন। ঢাকায় ৭১ হাজার ৪২৬ এবং ঢাকার বাইরে ৯৪ হাজার ২৫৪ জন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন। চলতি বছর ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে এ পর্যন্ত ৮৬৭ জনের মৃত্যু হয়েছে।
এর আগে ২০২২ সালে ডেঙ্গুতে দেশের ইতিহাসের সর্বোচ্চ ২৮১ জন মারা যান। ওই বছরের ডিসেম্বরে ডেঙ্গুতে ২৭ জনের মৃত্যু হয়। একই সঙ্গে আলোচ্য বছরে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন ৬২ হাজার ৩৮২ জন।
ঢাকার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) পেটে ও বুকে জোড়া লাগানো আবু বকর ও ওমর ফারুক নামে দুই শিশুর দেহে সফলভাবে অস্ত্রোপচার হয়েছে। অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে শিশু দুটিকে আলাদা করা হয়েছে। ৭৮ দিন বয়সী ওই শিশুরা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
বুধবার সকাল সাড়ে ৮টায় বিএসএমএমইউর কেবিন ব্লকের অপারেশন থিয়েটারে এ অস্ত্রোপচার করা হয়।
জানা গেছে, গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গিপাড়া পৌরসভার ৩নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা ভ্যানচালক শহর আলী খানের মেয়ে চায়না বেগম এবং আল আমিন শেখের ঘরে চলতি বছরের ৪ জুলাই জোড়া লাগা নবজাতক জন্ম নেয়। জন্মের পর জটিলতা দেখা দিলে ৫ জুলাই তাদের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিশু সার্জারি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. এ.কে.এম জাহিদ হোসেনের অধীনে ২০১ নং কেবিনে ভর্তি করা হয়। পেটে জোড়া লাগানো যমজ এ দুই নবজাতকের চিকিৎসার সমস্ত দায়িত্বভার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গ্রহণ করেন।
বিএসএমএমইউর বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দল আবু বকর ও ওমর ফারুকের পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে বুধবার সকাল সাড়ে ৮টায় অস্ত্রোপচার করার সিদ্ধান্ত নেয়। এ অস্ত্রোপচারে শিশু সার্জারি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. এ. কে. এম জাহিদ হোসেনের নেতৃত্বে শিশু সার্জারি বিভাগের অধ্যাপক ডা. রুহুল আমিন, সহকারী অধ্যাপক ডা. কে. এম. সাইফুল ইসলাম, মেডিকেল অফিসার ডা. উম্মে হাবিবা দিলশান মুনমুন এবং নার্সিং অনুষদের ডিন ও অ্যানেসথিয়া বিভাগের অধ্যাপক ডা. দেবব্রত বনিক, এনেসথিয়া বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. দেবাশীষ বণিক এবং নার্সিং ইনচার্জ মেহেরুন্নেসাসহ অন্যান্যরা অংশ নেন।
চিকিৎসকরা জানান, আবু বকর ও ওমর ফারুকের লিভার ও বুকের হাড় সংযুক্ত ছিল। পোস্ট অপারেটিভে এ দুজন শিশু বিশেষজ্ঞদের নিবিড় তত্ত্বাবধানে রয়েছে। এ শিশু দুজনের শারীরিক অবস্থা এখন পর্যন্ত শঙ্কামুক্ত।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আমাদের দেশের সার্জনরা এ ধরনের জটিল রোগের চিকিৎসা সেবা দিতে সক্ষম। এরকম জটিল রোগের চিকিৎসার জন্য বিদেশ যাওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই। স্বল্প খরচে দেশেই বিশ্বমানের চিকিৎসা সেবা দেয়া সম্ভব।’
ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে আরও ৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে চলতি বছর ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৮৪৬ জনে। এর আগে সেপ্টেম্বরের প্রথম দিন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ৪ জনের মৃত্যু হয়।
মঙ্গলবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের ডেঙ্গুবিষয়ক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
অধিদপ্তর জানায়, রোববার সকাল ৮টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন আরও তিন হাজার ২৭ জন।
আক্রান্তদের মধ্যে ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তির সংখ্যা ৮৪৬ জন ও ঢাকার বাইরের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তির সংখ্যা ২১৭৮ জন।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বর্তমানে দেশের বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে মোট ১০ হাজার ১০২ জন ডেঙ্গুরোগী ভর্তি আছেন। ঢাকার সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে বর্তমানে তিন হাজার ৮১৪ জন ও অন্যান্য বিভাগের বিভিন্ন হাসপাতালে ছয় হাজার ২৮৮ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি রয়েছেন।
চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ১৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন এক লাখ ৭০ হাজার ৭৬৮ জন। তাদের মধ্যে রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতালে ৭৪ হাজার ১২৭ জন ও ঢাকার বাইরের হাসপাতালগুলোতে ৯৬ হাজার ৬৪১ জন ভর্তি হয়েছেন।
বছরের একই সময়ে আক্রান্তদের মধ্যে হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পেয়েছেন এক লাখ ৭৩ হাজার ৭৯৫ জন। তাদের মধ্যে ঢাকার বাসিন্দা ৭৪ হাজার ৯৭৬জন এবং ঢাকার বাইরের ৯৮ হাজার ৮১৯ জন।
এর আগে ২০২২ সালে ডেঙ্গুতে দেশের ইতিহাসের সর্বোচ্চ ২৮১ জন মারা যান। ওই বছরের শেষ মাস ডিসেম্বরে ডেঙ্গুতে ২৭ জনের মৃত্যু হয়। একই সঙ্গে আলোচ্য বছরে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন ৬২ হাজার ৩৮২ জন।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) বিশ্ব এফেরিসিস সচেতনতা দিবস -২০২৩ পালিত হয়েছে। মঙ্গলবার সকাল ৯টায় দিবসটি উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা ও আলোচনা সভার আয়োজন করে ট্রান্সফিউশন মেডিসিন বিভাগ।
আমেরিকান সোসাইটি ফর এফেরেসিস প্রতি বছর সেপ্টেম্বর মাসের তৃতীয় মঙ্গলবার বিশ্ব এফেরেসিস সচেনতা দিবস পালন করার নির্দেশনা দিয়ে থাকে। এফেরেসিস ডোনার এবং এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞ এবং অন্যান্যদের ধন্যবাদ জ্ঞাপনের উদ্দেশ্যে এ দিবসটি পালিত হয়। বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো বিএসএমএমইউয়ের ট্রান্সফিউশন মেডিসিন বিভাগের উদ্যোগে দিবসটি পালিত হলো।
এফেরেসিস মেশিন বা প্লাটিলেট মেশিন দিয়ে এক জন ডোনারের কাছ থেকে ২৫০ মিলির মতো ব্লাড নিয়ে মেশিনে প্রসেসিং করে প্লাটিলেট বের করে ব্লাডের বাকী অংশটুকু আবার ডোনারের শরীরে পুশ ব্যাক করে দেয়া হয়।
এফেরেসিস সচেতনা দিবস উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বিএসএমএমইউ উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ বেলুন উড়িয়ে বর্ণাঢ্য র্যালীর উদ্বোধন করেন। পরে ট্রান্সফিউশন মেডিসিন বিভাগের ক্লাস রুমে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপাচার্য বলেন, ‘প্রতিটি দিবসের উদ্দেশ্য থাকে জনসচেতনতা সৃষ্টি করা। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭২ সালের ৮ অক্টোবর ট্রান্সফিউশন মেডিসিন বিভাগ উদ্বোধন করেছিলেন। বিভিন্ন রোগের চিকিৎসার ক্ষেত্রে ও রোগীদের জীবন বাঁচাতে রক্তের বিরাট অবদান রয়েছে। সে কারণেই বঙ্গবন্ধু জনসাধারণের রক্তদানে যেমন এগিয়ে আসার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেছিলেন, একই সাথে রক্ত নিয়ে গবেষণার প্রয়োনীয়তাও অনুভব করেছিলেন। বিএসএমএমইউতে শিক্ষক, শিক্ষার্থীরা বর্তমানে রক্ত নিয়ে অনেক গবেষণা করছেন। ফলে রক্তের মাধ্যমে বর্তমানে অনেক জটিল জটিল রোগের সেবা বাংলাদেশেই দেয়া সম্ভব হয়েছে।
‘সে কারণেই বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান প্রশাসন গবেষণার ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়েছে। গবেষণা খাতে বরাদ্দ কয়েকগুণ বৃদ্ধি করা হয়েছে। এই গবেষণার সুফল হিসেবে রোগ প্রতিরোধে যেমন ভূমিকা রাখবে, তেমন সর্বাধুনিক চিকিৎসা সেবা প্রদানের মাধ্যমে রোগীদের রোগ নিরাময়ে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে।’
উপাচার্য এ সময় তার বক্তব্যে মানুষকে স্বেছায় রক্তদানের মাধ্যমে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘রক্তদানে কোনো ক্ষতি নেই বরং রক্তদানে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে। তবে রক্তদানের ক্ষেত্রে নিরাপদ রক্ত সঞ্চালনের বিষয়টি মনে রাখতে হবে। বিএসএমএমইউতে নিরাপদ রক্তদানের আধুনিক ব্যবস্থা রয়েছে।’
আলোচনা সভায় অধ্যাপক ডা. আয়েশা খাতুন, সহযোগী অধ্যাপক ডা. আতিয়ার রহমান, সহকারী অধ্যাপক ডা. সোনিয়া শারমিন, গবেষণা সহকারী ডা. খান আনিসুল ইসলাম, মেডিকেল অফিসার ডা. ফিরোজা বেগম, ডা. সুর্বণা সাহা, ব্লাড প্রোগ্রাম অফিসার ডা. নাদিয়া শারমিন তৃষা, কাউন্সিলর ও মিডিয়া সেলের সমন্বয়ক সুব্রত বিশ্বাস, চিফ রেসিডেন্ট ডা. খাদিজাতুল কোবরা, সিনিয়র রেসিডেন্ট ডা. মেহেদী হাসান, ডা. রনি রায় প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
বিএসএমএমইউয়ের ট্রান্সফিউশন মেডিসিন বিভাগের এফেরেসিস ইউনিটে বিগত দশ বছর ধরে
এফেরেসিস প্লাটিলেট ডেঙ্গুসহ অন্যান্য রোগীদের জন্য ব্যবহৃত হয়। বর্তমানে এফেরেসিস প্লাটিলেট ডেঙ্গু রোগীদের জীবন রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। বিশেষ করে যেসকল ডেঙ্গু রোগীর এফেরেসিস প্লাটিলেটের প্রয়োজন হয়। এই বিভাগ থেকে করোনাকালে কনভালেসেন্ট প্লাজমা সংগ্রহ এবং কোভিড-১৯ চিকিৎসার জন্য সরবরাহ করা হয়েছে। বন্ধ্যাত্বসহ অন্যান্য রোগীদের জন্য স্টেম সেল সংগ্রহ ও চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহ করা হচ্ছে।
ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে ১৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে চলতি বছর ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৮৩৯ জনে। একই সময়ে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৩ হাজার ৮৪ জন।
সোমবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের ডেঙ্গু বিষয়ক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, গত ২৪ ঘণ্টায় (রোববার সকাল ৮টা থেকে সোমবার সকাল ৮টা পর্যন্ত) ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে দেশের বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৩ হাজর ৮৪ জন। আক্রান্তদের মধ্যে ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৮৯৪ জন। ঢাকার বাইরের হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ২১৯০ জন।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বর্তমানে দেশের বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে মোট ১০ হাজার ৩২ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি আছেন। ঢাকার সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে বর্তমানে ৩ হাজার ৮৬১ জন এবং অন্যান্য বিভাগের বিভিন্ন হাসপাতালে ৬ হাজার ১৭১ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি রয়েছেন।
অধিদপ্তরের তথ্যমতে, চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ১৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১ লাখ ৭০ হাজার ৭৬৮ জন। তাদের মধ্যে রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতালে ৭৪ হাজার ১২৭ জন। ঢাকার বাইরের হাসপাতালগুলোতে ৯৬ হাজার ৬৪১ জন ভর্তি হয়েছেন। সুস্থ হয়ে হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফিরেছেন ১ লাখ ৫৯ হাজার ৮৯৭ জন। তাদের মধ্যে ঢাকার বাসিন্দা ৬৯ হাজার ৬৯২ জন এবং ঢাকার বাইরের ৯০ হাজার ২০৫ জন।
দেশে ডেঙ্গুর প্রকোপ নজরে আসে ২০০০ সালে। এরপর ২০২২ সালে ডেঙ্গুতে দেশের ইতিহাসের সর্বোচ্চ ২৮১ জন মারা যান। ওই বছরের শেষ মাস ডিসেম্বরে ডেঙ্গুতে ২৭ জনের মৃত্যু হয়। ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন ৬২ হাজার ৩৮২ জন।