‘নয়ন তোমারে পায় না দেখিতে, রয়েছ নয়নে নয়নে।’ মায়াবী কাজল কালো চোখ নিয়ে মানুষের রোমান্টিকতার শেষ নেই। পাশাপাশি অঙ্গ হিসেবেও চোখের গুরুত্ব অপরিসীম। কারণ, বহির্জগতের সঙ্গে মানুষের সংযোগ রক্ষায় চোখ অন্যতম ভূমিকা পালন করে থাকে। একজন দৃষ্টিহীন মানুষই কেবল বুঝতে পারে চোখের কত মূল্য! তাই দৃষ্টিশক্তি অক্ষুণ্ণ রাখার জন্য চোখের যত্ন নেয়ার বিকল্প নেই। সারা বিশ্বে অন্ধত্ব প্রতিরোধ ও নিবারণে জনসচেতনতা বৃদ্ধি এবং রাষ্ট্রীয়পর্যায়ে পলিসি বিনির্মাণে আরও উদ্যোগ তৈরির লক্ষ্যে প্রতিবছর অক্টোবর মাসের দ্বিতীয় বৃহস্পতিবার ‘বিশ্ব দৃষ্টি দিবস’ পালন করা হয়। এ বছরও আগামীকাল ১৩ অক্টোবর আন্তর্জাতিকভাবে দিবসটি পালন করা হবে। সেই দিবস এবং চোখের গুরুত্ব নিয়েই আজকের ‘স্বাস্থ্যকথার’ সব আয়োজন। লিখেছেন চক্ষু বিশেষজ্ঞ ডা. আতিকুল হক।
দৃষ্টিহীনতা বা অন্ধত্ব চোখের নানান রোগের কারণে হতে পারে। এর মধ্যে বেশির ভাগ রোগই প্রতিরোধযোগ্য। সচেতনতা বৃদ্ধি এবং চক্ষু রোগের সেবাকে সাধারণ মানুষের জন্য সহজলভ্য করার মাধ্যমে বেশির ভাগ অন্ধত্ব প্রতিরোধ করা সম্ভব। সমস্যা হচ্ছে আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশে প্রান্তিকপর্যায়ে চক্ষুসেবার অপ্রতুলতা প্রকটভাবে বিদ্যমান। এই সমস্যা নিরসনে প্রান্তিকপর্যায়ে চক্ষুসেবাকে বিস্তৃত করার জন্য বাংলাদেশ সরকারের ‘ন্যাশনাল আই কেয়ার প্রজেক্ট’-এর অধীনে প্রতিটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ‘ভিশন সেন্টার’ স্থাপন করা হচ্ছে। পাশাপাশি নানান বেসরকারি সংস্থাও কাজ করে চলেছে। প্রতিরোধযোগ্য চোখের অসুখের কারণে একটি মানুষও যেন অন্ধ না হন- এ লক্ষ্যেই এসব কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। এ সব উদ্যোগের পাশাপাশি নিজেদেরও চোখের অসুখগুলো সম্পর্কে ধারণা এবং কোথায় এ সব অসুখের সঠিক চিকিৎসা পাওয়া যাবে তা জানতে হবে। চোখের সাধারণ কিছু রোগ সম্পর্কে দৃষ্টিপাত ও তার মাধ্যমে এই কাজকে আরেকটু এগিয়ে নেয়াই আজকের আলোচনার উদ্দেশ্য।
নবজাতক ও শিশুদের চোখের রোগ
নবজাতক শিশুদের চোখের রোগগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে, চোখ ওঠা বা কনজাংক্টিভাইটিস, রেটিনোপ্যাথি অব প্রিম্যাচুরিটি (আরওপি), জন্মগত ছানি, জন্মগত গ্লুকোমা, রিফ্র্যাক্টিভ এরর বা চোখের পাওয়ারের সমস্যা, অলস চোখ, ট্যারা চোখ, চোখে আঘাত পাওয়া ইত্যাদি। এর প্রায় সবই যথাসময়ে ডায়াগনোসিস হলে চিকিৎসায় ভালো করা সম্ভব। যেসব বাচ্চা প্রিম্যাচুর তাদের অবশ্যই জন্মের এক মাসের মধ্যে চক্ষুবিশেষজ্ঞ দিয়ে চোখ পরীক্ষা করিয়ে নেয়া উচিত। কারণ, আরওপি একটি নিরাময়যোগ্য রোগ। কিন্তু সঠিক সময়ে ডায়াগনোসিস না হলে অন্ধত্ব নিশ্চিত। এ ছাড়া প্রতিটি শিশুকে স্কুলে ভর্তি করার সময়ই একবার অন্তত চোখের দৃষ্টিশক্তি পরীক্ষা করিয়ে নেয়া উচিত। ট্যারা চোখ নিয়েও আমাদের সমাজে রয়েছে নানান কুসংস্কার। যার ফলে অনেকেই এর চিকিৎসা করান না। কিন্তু সঠিক সময়ে চিকিৎসা গ্রহণ করলে এটা নিরাময়যোগ্য। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে বাচ্চাদের খেলাধুলার সময়ে চোখে আঘাত পাওয়া। মাঝে মাঝে এসব আঘাত এমন মারাত্মক হয় যে, চোখ অন্ধ হয়ে যায়। তাই সুচালো, ধারালো বা এই ধরনের ঝুঁকিপূর্ণ খেলনা বাচ্চাদের দেয়া উচিত নয়। বাচ্চাদের চোখের যেকোনো সমস্যায় নিবন্ধিত চক্ষুবিশেষজ্ঞ ছাড়া চিকিৎসা নেয়াও উচিত নয়।
অনেকের ধারণা যে ছানি এবং গ্লুকোমা এসব বয়স্কদের রোগ। কিন্তু বাচ্চাদেরও এসব রোগ হতে পারে। সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসা না করালে স্থায়ীভাবে বাচ্চা অন্ধ হয়ে যেতে পারে, যা পরে চিকিৎসায় তেমন একটা লাভ হয় না। দেশের সরকারি বিভিন্ন হাসপাতালে এসব চিকিৎসা ও অপারেশন প্রায় বিনামূল্যে করা হয়ে থাকে। এর মধ্যে রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে অবস্থিত জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল অন্যতম, যেখানে বাচ্চাদের সব রোগের চিকিৎসা প্রায় বিনামূল্যে পাওয়া যায়।
এ ছাড়া বর্তমানে আরও একটি সমস্যা মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। সেটি হচ্ছে শিশুদের মাত্রাতিরিক্ত মোবাইল ফোন বা ইলেকট্রনিক ডিভাইস ব্যবহার। গবেষণায় দেখা গেছে, যে সব শিশু মাত্রাতিরিক্ত ডিভাইস ব্যবহারে আসক্ত তাদের মানসিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত হওয়া ছাড়াও চোখের পাওয়ারজনিত সমস্যার ঝুঁকি বেড়ে যায়। এ বিষয়ে অভিভাবকদের আরও সচেতন হতে হবে যেন একদম ছোটবেলা থেকেই এই অভ্যাস তৈরি না হয়।
প্রাপ্তবয়স্কদের নিরাময়যোগ্য চক্ষুরোগ
১. চোখের ছানি বা ক্যাটারেক্ট- এটি বয়স্কদের অন্যতম একটি রোগ যার কারণে চোখের দৃষ্টিশক্তি মারাত্মকভাবে কমে যায়। বয়সজনিত এবং আরও কিছু কারণে আমাদের চোখের স্বচ্ছ লেন্সটি ঘোলা হয়ে যায়। এটাই ক্যাটারেক্ট বা ছানি রোগ। এই রোগের চিকিৎসা হচ্ছে যথাসময়ে ছানি অপারেশন করানো। বর্তমানে বিশ্বের উন্নত প্রযুক্তির মেশিনে চোখের ছানি অপারেশন বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালে বিনামূল্যে করা হয়ে থাকে। এ ছাড়া বিভিন্ন এনজিও বিনামূল্যে ছানি শনাক্ত ও অপারেশন করে থাকে। তবে নির্ভরযোগ্য প্রতিষ্ঠান ছাড়া ছানি অপারেশন করানো উচিত না। অপারেশন এবং হাসপাতালের সার্বিক মান ভালো না হলে বরং আরও ক্ষতি হতে পারে।
২. রিফ্যাক্টিভ এরর বা চোখের পাওয়ারের সমস্যা- এই সমস্যার কারণেও দৃষ্টিশক্তি কমে যেতে পারে, যা অতি সহজেই চশমা ব্যবহারের মাধ্যমে সমাধান করা সম্ভব। প্রায় প্রতিটি মানুষের বয়স ৪০ পার হলেই কাছের দৃষ্টিশক্তি ধীরে ধীরে কমে যেতে থাকে। এটি একটি বয়সজনিত সাধারণ সমস্যা। এটাও চশমার মাধ্যমে সমাধান করা সম্ভব।
৩. ডায়াবেটিস ও হাইপারটেনসিভ রেটিনোপ্যাথি- যাদের দীর্ঘদিন অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস এবং হাইপারটেনশন বা উচ্চ রক্তচাপ রয়েছে, তাদের চোখের রেটিনা ধীরে ধীরে ক্ষতিগ্রস্ত হতে থাকে। এগুলো পুরোপুরিই প্রতিরোধযোগ্য অসুখ। সঠিক সময়ে রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা না করালে পুরোপুরি অন্ধত্বও হতে পারে। তাই যাদের ডায়াবেটিস ও উচ্চরক্তচাপ রয়েছে তাদের বছরে অন্তত একবার চোখ পরীক্ষা করানো বাধ্যতামূলক। প্রাথমিক অবস্থায় ধরা পড়লে ডায়াবেটিস রেটিনোপ্যাথির অগ্রগতি থামানো সম্ভব। এ ছাড়া কিছুটা মারাত্মক অবস্থায় চলে গেলেও লেজার, ইনজেকশন ইত্যাদির মাধ্যমে আরও মারাত্মক ক্ষতি থেকে চোখকে রক্ষা করা সম্ভব। ডায়াবেটিস রেটিনোপ্যাথি স্ক্রিনিং প্রোগ্রাম জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটে বিনামূল্যে করা হয়ে থাকে। এই রোগের চিকিৎসা অত্যন্ত ব্যয়বহুল হলেও এ হাসপাতালে তা প্রায় বিনামূল্যে করা হয়ে থাকে।
৪. গ্লুকোমা- এটি চোখের ভেতরের প্রেশার বৃদ্ধিজনিত একটি রোগ। একে বলা হয়ে থাকে নীরব ঘাতক। কারণ একদম মারাত্মক অবস্থায় না গেলে রোগী বুঝতেও পারেন না যে তার এই রোগটি রয়েছে। এটি চোখের স্থায়ী অন্ধত্বের একটি কারণ, যা প্রতিরোধযোগ্য। বিশেষ করে যাদের পরিবারে এই রোগের হিস্ট্রি রয়েছে, নিকটাত্মীয় যেমন, বাবা-মা ও ভাই-বোনের কারো এই রোগ থাকলে তাদের উচিত গ্লুকোমা স্ক্রিনিং নিয়মিত করানো। কারণ প্রাথমিক অবস্থায় ডায়ালোসিস ও নিয়মিত চিকিৎসা গ্রহণের মাধ্যমে অন্ধত্ব প্রতিরোধ করা সম্ভব।
৫. কর্নিয়ার অসুখ- আলসার বা ক্ষত তৈরি হওয়া কর্নিয়ার একটি মারাত্মক অসুখ। আঘাতের কারণে, বিশেষ করে যারা কৃষিকাজ করেন, তাদের কর্নিয়ায় ছত্রাক দ্বারা আলসার তৈরি হতে পারে যা অন্ধত্বের কারণ হতে পারে। এ ছাড়া যারা ওয়েল্ডিংয়ের কাজ করেন, তারা প্রায়ই ওয়েল্ডিংয়ের লোহার টুকরার আঘাত পান কর্নিয়ায়, যাতে কর্নিয়ায় স্থায়ী দাগ পড়াসহ আলসার বা ক্ষত তৈরির ঝুঁকি রয়ে যায়। তাই সংশ্লিষ্টদের মাঝে ব্যাপক সচেতনতা তৈরি এবং প্রটেকটিভ চশমা ব্যবহার করে কাজ করার উৎসাহ প্রদান করতে হবে। কর্নিয়ার অসুখের কারণে অনেক মানুষ অন্ধত্বের শিকার হন, যা কর্নিয়া প্রতিস্থাপনের মাধ্যমে নিরাময় সম্ভব। কিন্তু ধর্মীয়সহ নানা কারণে আমাদের দেশের মানুষ মরণোত্তর চক্ষুদানে তেমন উৎসাহ পান না। এ ব্যাপারে ধর্মীয় নেতাসহ সমাজের সকল স্তরের মানুষের ব্যাপক কাজ করার ক্ষেত্র রয়ে গেছে।
৬. বিবিধ- এ ছাড়া উচ্চরক্তচাপ, ডায়াবেটিস, রক্তে অতিরিক্ত কোলেস্টেরলের কারণে চোখের রেটিনার রক্তনালি ব্লক, চোখের নার্ভের রক্তনালি ব্লকসহ নানান অসুখ হতে পারে। ধূমপান, মদপানের কারণেও এসব রোগ হতে পারে। তাই এ বিষয়ে ব্যাপক সচেতনতা তৈরি করা প্রয়োজন।
চোখ অমূল্য সম্পদ। চোখের যত্ন এবং চোখের নানা প্রতিরোধযোগ্য অসুখের বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার অনেক আগে থেকেই কার্যক্রম চালিয়ে আসছে। এখন সময় এসেছে আমাদের জনগণের নিজেদের সচেতন হওয়ার। আপনার দৃষ্টি, আপনার সম্পদ। তাই আপনার চোখের যত্ন নিন, নিজের চোখ দুটোকে ভালোবাসুন।
লেখক : চক্ষুবিশেষজ্ঞ ও সার্জন,
লং টার্ম ফেলো ইন ভিট্রিও-রেটিনা,
জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল।
দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় ৩১২টি নমুনা পরীক্ষা করে ১৩ জনের শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত করা হয়েছে। তবে এ সময়ের মধ্যে কেউ মারা যায়নি। আজ মঙ্গলবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সমন্বিত নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে পাঠানো প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানানো হয়। এ দিন প্রতি ১০০ নমুনায় শনাক্তের হার ৪ দশমিক ১৭ শতাংশ বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, ‘২০২০ সালের ১৮ মার্চ থেকে এখন পর্যন্ত দেশে করোনায় মৃত্যু ২৯ হাজার ৫২১ জন। এর মধ্যে চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে ২২ জনের। এছাড়া ২০২০ সালের ৮ মার্চ থেকে মোট শনাক্ত হয়েছে ২০ লাখ ৫২ হাজার ১২৭ জন। এর মধ্যে গত জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত শনাক্ত হয়েছেন ৫৮২ জন।
এডিশ মশাবাহিত ডেঙ্গু রোগে আক্রান্তের সংখ্যা ক্রমেই বেড়ে চলেছে। সারা দেশে মশা নিধন কার্যক্রমের দুর্বলতার কারণে ডেঙ্গু পরিস্থিতি উদ্বেগজনক মোড় নিয়েছে। চলতি বছরের মে মাসের তুলনায় জুন মাসে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় তিনগুণ বেড়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দেওয়া পরিসংখ্যান বিশ্লেষণে দেখা যায়, বছরের শুরুর দিকে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা তুলনামূলকভাবে কম ছিল। জানুয়ারিতে ১,১৬১ জন, ফেব্রুয়ারিতে ৩৭৪, মার্চে ৩৩৬ এবং এপ্রিলে ৭০১ জন হাসপাতালে ভর্তি হন। তবে মে মাস থেকে পরিস্থিতির অবনতি হতে শুরু করে এবং জুনে এসে তা ভয়াবহ রূপ নেয়। আশঙ্কার বিষয় হলো, ঢাকার বাইরের জেলাগুলোতে, বিশেষ করে বরগুনায়, ডেঙ্গুর প্রকোপ অনেক বেশি।
এদিকে চলতি বছরের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত দেশে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ১০ হাজার ২৯৬ জনে পৌঁছেছে। সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে আরও ৪২৯ জন আক্রান্ত হয়েছেন। এ সময়ে কারও মৃত্যু হয়নি।
সোমবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম থেকে পাঠানো এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, নতুন শনাক্ত ৪২৯ জন ডেঙ্গুরোগীর মধ্যে— বরিশাল বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ১৪৯ জন; চট্টগ্রাম বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ৫৭ জন; ঢাকা বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ৬১ জন; ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন ৪২ জন; ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন ৪৫ জন; খুলনা বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ২১ জন ও রাজশাহী বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ৫৪ জন।
গত ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়ে হাসপাতাল ছাড়পত্র পেয়েছেন ৩৫৮ জন রোগী। চলতি বছরে এ পর্যন্ত মোট ৯ হাজার ৮৭ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী সুস্থ হয়ে হাসপাতাল ছেড়েছেন।
চলতি বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্তদের মধ্যে পুরুষ ৫৯ দশমিক ১ শতাংশ এবং নারী ৪০ দশমিক ৯ শতাংশ।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে কোনো মৃত্যুর ঘটনা না ঘটলেও চলতি বছরে এখন পর্যন্ত ৪২ জন মারা গেছেন। মৃতদের মধ্যে একজন রাজশাহী বিভাগের বাসিন্দা।
এদিকে বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলছেন, এডিস মশার বিস্তার এখনই নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে পরিস্থিতি নাগালের বাইরে চলে যেতে পারে। বিশেষ করে রাজধানীর বাইরের এলাকাগুলোতে জরুরি ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কীটতত্ত্ববিদ অধ্যাপক কবিরুল বাশার গণমাধ্যমকে বলেন, 'মে মাসের তুলনায় জুনে আক্রান্তের সংখ্যা তিনগুণ হয়েছে। এই ধারা অব্যাহত থাকলে জুলাইয়ে এ সংখ্যা চার থেকে পাঁচগুণ এবং আগস্টে দশগুণ পর্যন্ত বাড়তে পারে।'
প্রসঙ্গত, ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত দেশে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১০ হাজার ২৯৬ জনে। এর আগে ২০২৩ সালের পুরো বছরে দেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত হন ৩ লাখ ২১ হাজার ১৭৯ জন এবং মারা যান ১ হাজার ৭০৫ জন। ২০২৪ সালের পুরো বছরের (১ জানুয়ারি–৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত) সর্বমোট হিসাব অনুযায়ী, ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ১ লাখ ১ হাজার ২১৪ জন এবং মৃতের সংখ্যা ছিল ৫৭৫ জন।
করোনা সংক্রমণের নতুন ঢেউয়ের মধ্যে দেশে আরও ২১ জনের শরীরে প্রাণঘাতী ভাইরাসটি শনাক্ত করা হয়েছে।
রবিবার (২৯ জুন) সকাল ৮টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় এসব শনাক্ত হয়েছে। তবে, নতুন করে কোনো মৃত্যুর ঘটনা ঘটেনি এই সময়ের মধ্যে।
সোমবার (৩০ জুন) স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানিয়েছে।
এতে বলা হয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ৩৮৪ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হার ৫ দশমিক ৪৭ শতাংশ।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, এ পর্যন্ত ২০ লাখ ৫২ হাজার ১১৪ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত মারা গেছেন ২২ জন। আর দেশে ভাইরাসটিতে মোট মৃত্যু হয়েছে ২৯ হাজার ৫২১ জনের।
জনদুভোর্গ এড়াতে চলমান এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষা উপলক্ষে পরীক্ষার্থীদের সকাল সাড়ে ৮টা থেকে কেন্দ্র চত্বরে প্রবেশের জন্য জরুরি নির্দেশনা দিয়েছে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড। তবে পরীক্ষা কক্ষে প্রবেশ-সংক্রান্ত আগে সব নির্দেশনা বহাল থাকবে বলেও জানানো হয়।
গতকাল শনিবার ঢাকা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অধ্যাপক এস এম কামাল উদ্দিন হায়দারের সই করা জরুরি স্মারকে এ নির্দেশনা দেওয়া হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, চলমান এইচএসসি পরীক্ষা ২০২৫-এর পরীক্ষা কেন্দ্রসমূহের আশপাশের যানজট ও জনদুভোর্গ লাঘবের লক্ষ্যে কেবলমাত্র পরীক্ষার্থীদের কেন্দ্র চত্বরে সকাল ৮.৩০ থেকে প্রবেশের ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে বিশেষভাবে অনুরোধ করা হলো।
তবে পরীক্ষা কক্ষে প্রবেশ সংক্রান্ত পূর্বের নির্দেশনা বহাল থাকবে। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো।
বিজ্ঞপ্তিতে ঢাকা বোর্ডের আওতাধীন এইচএসসি পরীক্ষার সব কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে।
সারাদেশে করোনা ভাইরাসের নতুন সাব-ভ্যারিয়েন্ট এর সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ায় পর সিলেট এ ভাইরাসে আক্রান্ত একজনের মৃত্যু হয়েছে।
শনিবার দুপরে এ তথ্যটি নিশ্চিত করেছে সিলেট বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। নতুন করে করোনার আক্রমন শুরুর পর সিলেটে প্রথম এই কোন রোগী মারা গেলেন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, করোনায় আক্রান্ত ৬৯ বছর বয়েসি পুরুষ ১৯ জুন শহীদ শামসুদ্দিন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। বৃহস্পতিবার রাতে মারা যান তিনি। এছাড়া সিলেটে এ পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ২০ জন বলে জানায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন শহীদ শামসুদ্দিন হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডাক্তার মো. মিজানুর রহমান জানান, নিহত ব্যক্তির বাড়ি সিলেট সদর উপজেলায়। তিনি করোনা ছাড়াও আরও অন্যান্য জটিল রোগে আক্রান্ত ছিলেন।
চট্টগ্রামে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে আরও একজনের মৃত্যু হয়েছে; গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে শনাক্ত হয়েছেন আরও ছয়জন। এ নিয়ে চলতি জুন মাসেই জেলায় করোনায় মৃতের সংখ্যা সাতজনে দাঁড়াল।
২৮ জুন চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে পাঠানো সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টার প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, জেলার মিরসরাই উপজেলার বাসিন্দা সালেহা বেগম (৪০) নামে এক নারী শুক্রবার নগরের জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। করোনায় আক্রান্ত হওয়ার আগে থেকেই তিনি হৃদরোগসহ নানা জটিলতায় ভুগছিলেন।
এদিকে, সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় ৯১টি নমুনা পরীক্ষা করে ছয়জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। তাদের মধ্যে চারজন নগরের এবং দুজন বিভিন্ন উপজেলার বাসিন্দা।
শনাক্ত হওয়া রোগীদের মধ্যে নগরের শেভরন ডায়াগনস্টিক সেন্টারে চারজন এবং এভারকেয়ার হাসপাতালে দুজনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছিল।
সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, চট্টগ্রামে চলতি জুন মাসে মোট ১৩০ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। আক্রান্তদের মধ্যে ৬৬ জন পুরুষ, ৬৩ জন নারী ও একজন শিশু রয়েছে।
মশাবাহীত রোগ ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় বরিশালের দুই জেলায় দুজনের মৃত্যু হয়েছে। একই সময় গোটা বিভাগের সরকারি হাসপাতালগুলোতে ভর্তি হয়েছেন আরও ১০৫ জন আক্রান্ত রোগী। এ নিয়ে বর্তমানে বিভাগের ছয় জেলার সরকারি হাসপাতালগুলোতে ভর্তি থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন ৪৩৫ জন। মৃত্যুবরণ করা দুজন হলেন- বরগুনা জেলার বেতাগী উপজেলার কালিকাবাড়ি এলাকার বাসিন্দা আ. করিম (৫০) ও পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার টিয়াখালী ইউনিয়নের রাজপাড়া এলাকার মো. ইউসুফ খন্দকার (৭২)। এর মধ্যে আ. করিম বরিশাল শেরইবাংলা চিকিৎসা মহাবিদ্যালয় হাসপাতালে ও বৃদ্ধ মো. ইউসুফ খন্দকার কলাপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। গতকাল শুক্রবার দুপুরে বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. শ্যামল কৃষ্ণ মণ্ডল এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, বর্তমানে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হওয়ার সংখ্যা উদ্বেগ ও আশঙ্কাজনক। এ পরিস্থিতি থেকে বেরোতে হবে। চিকিৎসার চেয়ে প্রতিরোধ জরুরি। তাই মশার বিস্তার রোধ করতে বাড়ির আশেপাশে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করতে হবে। মশার কামড় থেকে নিজেকে রক্ষায় ব্যবস্থা নিতে হবে।
বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যানুযায়ী, চলতি বছরের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত বরিশাল বিভাগের ছয় জেলার বিভিন্ন হাসপাতালে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছেন ৪ হাজার ৩০৫ জন। এদের মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ১১ জনের। বর্তমানে চিকিৎসা নিচ্ছেন ৪৩৫ জন।
বরগুনায় আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। মৃত ১১ জনের মধ্যে ছয়জনেরই বরগুনার বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয়েছে। শুধু মৃত্যুই নয় এ জেলায় আক্রান্তের সংখ্যাও বেশি, বরগুনা জেলায় এ পর্যন্ত ২ হাজার ৬৩২ জন ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
দেশে গত বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা থেকে গতকাল শুক্রবার সকাল ৮টা পর্যন্ত একদিনে আরও ১০ জনের শরীরে করোনাভাইরাস পাওয়া গেছে। ১৯৯ জনের নমুনা পরীক্ষা করে এই রোগী শনাক্ত হয়। এ নিয়ে মোট আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২০ লাখ ৫২ হাজার ৭৩ জনে। এ সময়ে করোনায় আক্রান্ত হয়ে একজনের মৃত্যু হয়েছে। গতকাল শুক্রবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে পাঠানো করোনাবিষয়ক নিয়মিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, নতুন করে করোনা আক্রান্ত ১০ জনসহ চলতি বছর এখন পর্যন্ত মোট রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫২৮ জনে। এদিকে গত ২৪ ঘণ্টায় করোনায় একজনের মৃত্যু হওয়ায় ভাইরাসটিতে আক্রান্ত হয়ে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ২৯ হাজার ৫১৯ জনে দাঁড়িয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, দেশে করোনাভাইরাস মহামারির শুরু থেকে এখন পর্যন্ত মোট শনাক্তের হার ১৩ দশমিক ৪ শতাংশ। আর গত ২৪ ঘণ্টায় শনাক্তের হার ৪ দশমিক ২ শতাংশ।
প্রসঙ্গত, ২০২০ সালের ৮ মার্চ দেশে প্রথম ৩ জনের দেহে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়। এর ১০ দিন পর ওই বছরের ১৮ মার্চ দেশে এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে প্রথম একজনের মৃত্যু হয়। ২০২১ সালের ৫ ও ১০ আগস্ট দুদিন করোনায় সর্বাধিক ২৬৪ জন করে মারা যান।
গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলায় দিন দিন বাড়ছে ডেঙ্গুরোগীর সংখ্যা। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোতো ডেঙ্গুরোগীর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। গত ৩ দিনে ডেঙ্গুরোগী শনাক্ত হয়েছে ১০ জন। গত ২২ থেকে ২৪ জুন পর্যন্ত এই ৩ দিনে ১০ জন ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়েছেন বলে হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়।
কাপাসিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মো. হাবিবুর রহমান জানান, গত রোববার থেকে আমরা সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে ডেঙ্গুরোগীর তথ্য সংগ্রহ করে জেলা সিভিল সার্জন অফিসে প্রেরণ করেছি। তিনি জানান, আমাদের কাছে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী গত রোববার কাপাসিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১ জন, হেলথ কেয়ার ডায়াগনস্টিক অ্যান্ড ডায়াবেটিক সেন্টারে ২ জন, রেডিয়াম ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ২ জন, হেলথ কেয়ার ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ২ জন ডেঙ্গুরোগী পাওয়া গেছে।
কাপাসিয়া উপজেলার সরকারি - বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে জ্বরে আক্রান্ত হয়ে অনেকেই রক্ত পরীক্ষা করেছেন। রক্ত পরীক্ষার পর এক দিনে ৫ জনের ডেঙ্গু শনাক্ত হয়েছে। ২৩ জুন, সোমবার কাপাসিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১ জন, রেডিয়াম ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ১ জন, ইরাম ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ১জনসহ মোট ৩ জন ডেঙ্গুরোগী শনাক্ত হয়েছে। তাছাড়া গত মঙ্গলবার হেলথ কেয়ার ডায়াগনস্টিক অ্যান্ড ডায়াবেটিক সেন্টারে ২ জন মহিলার রক্ত পরীক্ষার পর ডেঙ্গু শনাক্ত হয়েছে।
করোনা সংক্রমণের নতুন ঢেউয়ের মধ্যে দেশে নতুন করে কারো মৃত্যু হয়নি। বুধবার (২৫ জুন) সকাল ৮টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে ১৯ জনের শরীরে প্রাণঘাতী ভাইরাসটি শনাক্ত করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২৬ জুন) স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানিয়েছে।
এতে বলা হয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ৪১২ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হার ৪ দশমিক ৬১ শতাংশ।
দেশে এখন পর্যন্ত ২০ লাখ ৫২ হাজার ৬৩ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত মারা গেছেন ১৯ জন। আর দেশে ভাইরাসটিতে মোট ২৯ হাজার ৫১৮ জনের মৃত্যু হয়েছে।
গত কয়েক সপ্তাহ ধরে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে এডিশ মশাবাহিত রোগ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ও মুত্যৃর সংখ্যা বেড়েই চলেছে। চলতি বছরে ডেঙ্গু যেনো ভয়বহ রূপ ধারণ করতে যাচ্ছে।
এদিকে গত মঙ্গলবার সকাল ৮টা থেকে গতকাল বুধবার সকাল ৮টা পর্যন্ত একদিনে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে নতুন করে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৩২৬ জন। সবচেয়ে বেশি ১১৮ জন আক্রান্ত হয়েছেন বরিশাল বিভাগে। এই সময়ে ডেঙ্গু আক্রান্ত ২ জনের মৃত্যু হয়েছে।
গতকাল বুধবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোলরুম থেকে পাঠানো ডেঙ্গুবিষয়ক এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে বরিশাল বিভাগে ১১৮ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ৪৩ জন, ঢাকা বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ৪৩ জন, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে ৪৫ জন, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে ২৬ জন, খুলনা বিভাগে ১৬ জন, রাজশাহী বিভাগে ২৯ জন, ময়মনসিংহে ৫ জন ও সিলেট বিভাগে একজন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
এদিকে, গত ২৪ ঘণ্টায় ৩১৯ জন ডেঙ্গুরোগী হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পেয়েছেন। চলতি বছর ছাড়পত্র পেয়েছেন ৭ হাজার ৭৪৯ জন। চলতি বছরের ২৫ জুন পর্যন্ত মোট ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন ৮ হাজার ৮৭০ জন এবং মৃত্যু হয়েছে ৩৬ জনের।
২০২৪ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হন মোট এক লাখ এক হাজার ২১৪ জন এবং মৃত্যুবরণ করেন ৫৭৫ জন। এর আগের বছর ২০২৩ সালে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মোট এক হাজার ৭০৫ জনের মৃত্যু হয়। ওই বছর ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন মোট তিন লাখ ২১ হাজার ১৭৯ জন।
এডিস মশাবাহিত ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্তের হার বেড়েই চলেছে। সোমবার (২৩ জুন) সকাল থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় কারো মৃত্যু হয়নি। আর এই সময়ের মধ্যে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন আরও ৩৯৪ জন। আর চলতি সপ্তাহের এই কয়েকদিনে রোগটিতে মৃত্যু হয়েছে তিনজনের।
সোমবার (২৩ জুন) স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ অ্যান্ড ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের সংবাদ বিজ্ঞপ্তি থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
গত ২৪ ঘণ্টায় বরিশাল বিভাগে সবচেয়ে বেশি আক্রান্তের ঘটনা ঘটে। এ সময়ের মধ্যে বিভাগটিতে আক্রান্ত হয় সর্বোচ্চ ১৫৭ জন।
বিজ্ঞপ্তি থেকে পাওয়া তথ্যানুসারে, গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে দেশের বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি ভর্তি হয়েছেন ৩৯৪ জন। নতুন আক্রান্তের মধ্যে ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ৯২ জন। আর ঢাকার বাইরের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন আরও ৩০২ জন।
বিজ্ঞপ্তি থেকে পাওয়া তথ্য অনুসারে, চলতি বছর আক্রান্ত হয়ে এখন পর্যন্ত ৩৪ জনের মৃত্যু হয়েছে, যাদের মধ্যে ৫০ শতাংশ পুরুষ এবং ৫০ শতাংশ নারী।
বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ২৪ জুন পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন মোট ৮ হাজার ৫৪৪ জন। এর মধ্যে ৫৫ দশমিক ৬ শতাংশ পুরুষ এবং ৪৪ দশমিক ৪ শতাংশ নারী।
বরিশাল বিভাগের বরগুনায় ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে বৃদ্ধা রাবেয়া (১০০) মারা গেছেন। গতকাল সোমবার ভোরে তিনি বরগুনা ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন। সরকারি হিসাব অনুযায়ী এ নিয়ে বিভাগে ডেঙ্গুতে ৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। তাদের মধ্যে বরগুনার বাসিন্দাই রয়েছে ৬ জন। এদিকে গত রোববার সকাল ৮টা থেকে সোমবার সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় বরিশাল বিভাগের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন আরও ১২৬ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী। একই সময়ে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছে ১২৯ জন।
বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. শ্যামল কৃষ্ণ মন্ডল এ তথ্য নিশ্চিত করে জানান, সোমবার ভোরে মৃত্যু হওয়া শতবর্ষী রাবেয়া বেগম বরগুনা সদরের বাসিন্দা। তাকে গত রোববার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল।
স্বাস্থ্য বিভাগে তথ্য মতে, গত ২৪ ঘণ্টায় বরিশাল শেরেবাংলা চিকিৎসা মহাবিদ্যালয় (শেবাচিম) হাসপাতালে ১৩ জন ভর্তি হয়েছে। এছাড়া বরিশাল জেলার বিভিন্ন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হয়েছে ৮ জন।
পটুয়াখালী জেলার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে ৭ জন, পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৪ জন, ভোলা সদর হাসপাতালে ৫ জন ভর্তি হয়েছে। পিরোজপুরে ১৬ জন ও বরগুনায় ৭৩। তবে গত ২৪ ঘণ্টায় ঝালকাঠিতে কেউ আক্রান্ত হয়নি।
বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. শ্যামল কৃষ্ণ মন্ডল বলেন, বর্তমানে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হওয়ার সংখ্যা উদ্বেগ ও আশংকাজনক। এ পরিস্থিতি থেকে বেরুতে হবে। তাই মশার বিস্তার রোধ করতে বাড়ির আশে-পাশে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করতে হবে। মশার কামড় থেকে নিজেকে রক্ষায় ব্যবস্থা নিতে হবে।