সারা দেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ছয় জনের মৃত্যু হয়েছে।
বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা থেকে শুক্রবার সকাল ৮টার মধ্যে তাদের মৃত্যু হয়। এ সময়ে হাসপাতালে ভর্তি হয় ২৫১ জন।
এ নিয়ে চলতি বছর ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে প্রাণহানি হয়েছে এক হাজার ৬৫০ জনের।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম থেকে শুক্রবার পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়।
এতে বলা হয়, বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় হাসপাতালে ভর্তি হয় ২৫১ জন। তাদের মধ্যে ঢাকার বাসিন্দা ৬৪ এবং ঢাকার বাইরের ১৮৭ জন।
চলতি বছরের ৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত তিন লাখ ১৬ হাজার ৪১১ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হন। তাদের মধ্যে ঢাকার বাসিন্দা এক লাখ আট হাজার ৮১৮ জন। ঢাকার বাইরে আরও দুই লাখ ৭ হাজার ৫৯৩ জন আক্রান্ত হন।
এ বছর ডেঙ্গু আক্রান্তদের মধ্যে হাসপাতাল থেকে ছুটি পেয়েছেন তিন লাখ ১২ হাজার ৩৭৭ জন। এর মধ্যে ঢাকার বাসিন্দা এক লাখ ৭ হাজার ২৫০ আর ঢাকার বাইরের দুই লাখ ৫ হাজার ১২৭ জন রয়েছেন।
ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পরিদর্শনে আসা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) মো. আবু জাফরের সঙ্গে তর্কে জড়ানো চিকিৎসককে কারণ দর্শানোর নোটিশ (শোকজ) দেওয়ার পর তিনি নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়েছেন।
রোববার (৭ ডিসেম্বর) বেলা ১১টার দিকে হাসপাতাল পরিচালকের কাছে নোটিশের জবাব দেন চিকিৎসক ধনদেব চন্দ্র বর্মণ।
বিষয়টি নিশ্চিত করে রোববার (৭ ডিসেম্বর) বেলা দুইটার দিকে মুঠোফোনে ধনদেব চন্দ্র বর্মণ বলেন, ‘শোকজের চিঠি হাতে পেয়ে রোববার (৭ ডিসেম্বর) বেলা ১১টার দিকে হাসপাতালের পরিচালকের কাছে জমা দিয়েছি। ডিজি বয়স্ক মানুষ, আমারও বেয়াদবি হয়েছে। শোকজের জবাবে আমি আন্তরিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করে নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়েছি।’
গত শনিবার (৬ ডিসেম্বর) ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজের শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান মিলনায়তনে আয়োজিত একটি সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে আসেন স্বাস্থ্যের ডিজি আবু জাফর। সেমিনারে যোগ দেওয়ার আগে তিনি হাসপাতাল পরিদর্শন করেন। এ সময় হাসপাতালের ক্যাজুয়ালটি অপারেশন থিয়েটার পরিদর্শনে গিয়ে ডিজি কক্ষের ভেতরে টেবিল থাকার কারণ জানতে চান চিকিৎসকদের কাছে। এ সময় জরুরি বিভাগের ক্যাজুয়ালটি ইনচার্জ ধনদেব চন্দ্র বর্মণ তার সঙ্গে তর্কে জড়ান।
ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ান-স্টপ সার্ভিসের ইনচার্জ হিসেবে ২০২৩ সালের ৮ আগস্ট থেকে দায়িত্ব পালন করছেন ধনদেব চন্দ্র বর্মণ। চলতি বছরের জুলাই মাসে আবাসিক সার্জন থেকে সহকারী অধ্যাপক পদে পদোন্নতি পান তিনি। গত শনিবারের ঘটনায় তাকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়ার পাশাপাশি কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়।
স্বাস্থ্যের ডিজির সঙ্গে তর্কে জড়ানো প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ধনদেব চন্দ্র বর্মণ গত শনিবার বলেছিলেন, ‘ডিজির কাছ থেকে গুরুজনের মতো ব্যবহার আশা করেছিলাম। কিন্তু তিনি এসে কী কী সমস্যা, সেগুলো জানতে না চেয়ে ভেতরে কেন টেবিল, এ নিয়ে কথা বলেন।’
আমার বন্ধুরা সব অধ্যাপক হয়ে গেছে। আমার চাকরিজীবন শেষ; কিন্তু আমার হয়নি বিভিন্ন কারণে। এজন্য আমার চাকরি থেকে সাসপেনশন হলে আমি খুশি হই।’
হাসপাতালের সহকারী পরিচালক (প্রশাসন) মাইনউদ্দিন খান বলেন, ‘আমরা ওই চিকিৎসককে শোকজ করেছি, দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দিয়েছি। তার বিষয়ে কী সিদ্ধান্ত হবে, সেটি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ গ্রহণ করবে।
নিয়োগবিধি সংশোধন, বেতনবৈষম্য দূরীকরণ এবং টেকনিক্যাল পদমর্যাদা প্রদানের দাবিতে টানা ৯ম দিন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সামনে অবস্থান করছেন স্বাস্থ্য সহকারীরা। দীর্ঘদিনের বঞ্চনা ও কর্তৃপক্ষের প্রতিশ্রুতি ভঙ্গের প্রতিবাদে স্বাস্থ্য সহকারীরা বিভিন্ন প্রতিবাদী স্লোগানে পুরো স্বাস্থ্য অধিদপ্তর প্রাঙ্গণ উত্তাল করে তুলেছেন।
রোববার (৭ ডিসেম্বর) দিনভর রাজধানীর মহাখালীর স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন তারা। এর আগে গত বৃহস্পতিবার সারাদেশের স্বাস্থ্য সহকারীরা ঢাকায় সমবেত হয়ে দীর্ঘকালীন অবস্থান কর্মসূচি চালানোর ঘোষণা দেন।
স্বাস্থ্য সহকারীদের দাবি, প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্যসেবা বন্ধ করতে তারা চাইতেন না। কিন্তু ২৭ বছরের দীর্ঘ প্রতিশ্রুতির পরও বাস্তব কোনো অগ্রগতি না হওয়ায় আন্দোলনে যেতে বাধ্য হয়েছেন।
তারা অভিযোগ করেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বারবার ভ্রান্ত তথ্য দিয়ে দাবির ফাইল মন্ত্রণালয়ে পাঠাচ্ছেন, যা পুনরায় ফেরত আসে। ১৯৮৫ সালে স্বাস্থ্য সহকারীর পদ সৃষ্টির সরকারি জিও অধিদপ্তরে অদৃশ্য হয়ে গেছে।
ইন-সার্ভিস ডিপ্লোমা (এসআইটি) কোর্স সম্পন্ন স্বাস্থ্য সহকারীরা জানান, প্রায় দুই হাজার ২শ স্বাস্থ্য সহকারী বিভিন্ন সালে এসআইটি কোর্স সম্পন্ন করেছেন, কিন্তু তাদের যোগ্যতা সমমান হিসেবে স্বীকৃত হয়নি। তাদের দাবি, নিয়োগবিধি সংশোধন করে স্নাতক বা সমমানের যোগ্যতা যুক্ত করে ১৪তম গ্রেড, ইন-সার্ভিস ডিপ্লোমাধারীদের ১১তম গ্রেডসহ টেকনিক্যাল পদমর্যাদা, ধারাবাহিক পদোন্নতি, প্রশিক্ষণ ছাড়া স্নাতক স্কেলে অন্তর্ভুক্তি এবং সমমান স্বীকৃতি প্রদানের ব্যবস্থা করতে হবে।
স্বাস্থ্য সহকারীরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধন, নবজাতক ও গর্ভবতী মায়ের নিবন্ধন, যক্ষ্মা রোগী শনাক্তকরণ, ডটস পদ্ধতিতে ওষুধ খাওয়ানো, উঠান-বৈঠক, মা সমাবেশসহ বিভিন্ন সেবা দিয়ে থাকেন। সপ্তাহে ৩ দিন কমিউনিটি ক্লিনিকে নিয়মিত সেবা দেওয়ার পরও তাদের ভ্রমণভাতা মাত্র ৬০০ টাকা এবং বেতন ৯ হাজার ৭০০ টাকা। অন্য গ্রেডের কর্মকর্তা যারা তাদের নিচে শুরু করেছিল, তারা আজ অনেক ওপরে পৌঁছেছে।
আন্দোলন কর্মসূচি প্রসঙ্গে বাংলাদেশ হেলথ অ্যাসিস্ট্যান্ট অ্যাসোসিয়েশনের কেন্দ্রীয় সমন্বয় পরিষদের সদস্য সচিব ফজলুল হক চৌধুরী জানান, তাদের দাবি বাস্তবায়নের জন্য জিও (প্রজ্ঞাপন) প্রকাশ না হওয়া পর্যন্ত এই অবস্থান চলবে।
ফজলুল হক বলেন, আমাদের ফাইল ইতোমধ্যে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। আমরা আশা করি, দেশের তৃণমূল পর্যায়ের স্বাস্থ্যসেবায় নিয়োজিত বৈষম্য শিকার স্বাস্থ্য সহকারীদের দাবিকে গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করা হবে। জিও প্রকাশ হলেই আমরা কর্মস্থলে ফিরে যাব।
এর আগে কর্মবিরতি শুরু হয়েছিল ২৯ নভেম্বর শহীদ মিনারে। পরে তা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সামনে স্থানান্তরিত হয়। দেশব্যাপী ৬৪ জেলার স্বাস্থ্য সহকারী, সহকারী স্বাস্থ্য পরিদর্শক ও স্বাস্থ্য পরিদর্শকরা বাংলাদেশ হেলথ্ অ্যাসিস্ট্যান্ট অ্যাসোসিয়েশনের ব্যানারে এই কর্মবিরতিতে অংশ নিচ্ছেন।
এদিকে কর্মসূচির কারণে দেশের ১ লাখ ২০ হাজার অস্থায়ী টিকাদান কেন্দ্র বন্ধ রয়েছে। টিকা নিতে আসা মা ও শিশুরা ফিরে যাচ্ছেন। পাশাপাশি গ্রামীণ স্বাস্থ্যসেবায় স্থবিরতা দেখা দিয়েছে। স্বাস্থ্য সহকারীরা সতর্ক করেছেন, দ্রুত সমাধান না হলে সংক্রামণ রোগের চরম ঝুঁকির মুখে পড়তে পারে মা ও শিশুরা।
জামালপুরে পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের আওতাধীন পরিবার কল্যাণ পরিদর্শিকা, পরিবার পরিকল্পনা পরিদর্শক ও পরিবার কল্যাণ সহকারীদের নিয়োগ বিধি বাস্তবায়নের দাবিতে কর্মবিরতি ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন কর্মচারীরা। মঙ্গলবার সকাল থেকে উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয়ের সামনে কর্মবিরতি ও অবস্থান কর্মসূচি পালিত হয়। কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে প্রথম দিনে জেলায় পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরে কর্মরত কর্মচারীরা অংশ নেয়। এতে করে মাঠ পর্যায়ে স্বাস্থ্যসেবা ব্যাহত হচ্ছে। অবস্থান কর্মসূচিতে বক্তব্য রাখেন পরিবার পরিকল্পনা মাঠ কর্মচারী সমিতি জামালপুর জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক মুজাহিদুর ইসলাম, সদর উপজেলা শাখার সভাপতি আনোয়ার হোসেন, সাধারণ সম্পাদক সাজিদ হাসান শাকিল, উপদেষ্টা মণ্ডলীর সদস্য জুয়েল রানা, পরিবার কল্যাণ পরিদর্শিকা সাজেদা পারভীন দীপা, পরিবার কল্যাণ পরিদর্শক মাসুদুল ইসলাম খান, পরিবার কল্যাণ সহকারী জান্নাতুলনেছাসহ আরও অনেকে।
এ সময় বক্তারা বলেন, দীর্ঘ ২৬ বছর যাবত একই পদে চাকরি করেও পদোন্নতি না থাকায় তারা বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন। পাশাপাশি স্বাস্থ্যখাতে সব ধরনের সেবা দিয়েও সরকারি সুবিধা বঞ্চিত হচ্ছেন। দ্রুত সময়ের মধ্যে নিয়োগ বিধি পরিবর্তন করে প্রজ্ঞাপন জারির দাবি জানান। আগামী ১১ ডিসেম্বর পর্যন্ত এই আন্দোলন কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে বলে জানান আন্দোলনরত কর্মচারীরা।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া চিকিৎসা নিচ্ছেন এবং চিকিৎসা গ্রহণ করতে পারছেন বলে জানিয়েছেন তার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন।
আজ মঙ্গলবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতাল ফটকের সামনে এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন জাহিদ হোসেন।
এই হাসপাতালে ১০ দিন ধরে চিকিৎসাধীন সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া। শারীরিক অবস্থার হঠাৎ অবনতি হওয়ায় তাকে আইসিইউতে স্থানান্তর করে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
এ জেড এম জাহিদ হোসেন বলেন, আল্লাহর অশেষ মেহেরবানীতে ডাক্তাররা যে চিকিৎসা দিচ্ছেন, সেই চিকিৎসা উনি (বেগম খালেদা জিয়া) গ্রহণ করতে পারছেন, অথবা আমরা যদি বলি উনি মেনটেইন করছেন।
তিনি বলেন- আমরা এই সংকটময় মুহূর্তে আপনাদের মাধ্যমে দেশবাসীর কাছে উনার সুস্থতার জন্য দোয়া চাই। এবং আল্লাহ রাব্বুল আলামীন যাতে দেশবাসীর দোয়া, সারা পৃথিবীর অনেক মানুষের উনার প্রতি ভালোবাসা এবং দোয়ার কারণে হয়তো বা উনি এই যাত্রায় সুস্থ হয়ে উঠবেন বলে আমরা আশা করি।
বেগম খালেদা জিয়ার এই ব্যাক্তিগত চিকিৎসক বলেন, ‘আমরা আপনাদের মাধ্যমে সবাইকে সর্বোচ্চ সংযম প্রদর্শন এবং সেই সঙ্গে কোন ধরনের গুজব ছড়ানো এবং গুজবে কান না দেওয়ার জন্য বিনীতভাবে পরিবারের পক্ষ থেকে, দলের পক্ষ থেকে আপনাদেরকে আমরা অনুরোধ করছি।
আবেগপ্রবণ কণ্ঠে জাহিদ হোসেন বলেন, ‘সম্মানিত সাংবাদিক ভাই ও বোনেরা আপনারা ধৈর্য ধরুন দীর্ঘ ছয় বছর যাবৎ আপনারা আমাদেরকে সহযোগিতা করেছেন। ইনশাআল্লাহ আমরা এই যাত্রাও আপনাদের ভালোবাসা, আপনাদের সহযোগিতা এবং আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের অশেষ মেহেরবানীতে.... আমরা আবারো আমাদের প্রাণপ্রিয় দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া যে আজকে দেশের মানুষের অকৃতিম ভালোবাসার প্রতীক সেটি আজকে প্রমাণিত, সেই লক্ষ্যেই আমরা আপনাদের সহযোগিতা চাই।’
ডা. জাহিদ বলেন, আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান আপনাদের সবাইকে অনুরোধ করেছেন- ধৈর্য ধারণ করার জন্য এবং উনি সার্বক্ষণিকভাবে বিরামহীনভাবে দেশি-বিদেশি চিকিৎসকদের সমন্বয়ে গঠিত মেডিকেল টিমের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখছেন। তিনি বলেন, আপনাদের সহযোগিতা ছাড়া চিকিৎসাকার্য সঠিকভাবে পরিচালনা করা সম্ভব হবে না। কোন ধরনের গুজবে কান না দেওয়ার জন্য আপনাদেরকে অনুরোধ করছি এবং দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার জন্য সুস্থতার জন্য আপনাদের মাধ্যমে দেশ তথা সব ধর্মের মানুষের প্রতি আমরা আহ্বান জানাচ্ছি।
যুক্তরাজ্যের চিকিৎসকরা আজ আসছেন জানিয়ে জাহিদ বলেন, ‘আজকেও ইউকে থেকে উনাকে দেখার জন্য বিশেষজ্ঞরা আসবেন এবং উনারা দেখবেন। দেখার পরবর্তীতে উনাকে যদি ট্রান্সফারেবল হয়, আমাদের যদি ট্রান্সফার করার প্রয়োজন পড়ে, উনার মেডিকেল বোর্ড মনে করে তখনই উনাকে যথাযথ সময়ে উনাকে চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে নিয়ে যাওয়া হবে।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের সকল প্রস্তুতি আছে। কিন্তু সর্বোচ্চটা মনে রাখতে হবে যে রোগীর বর্তমান অবস্থা এবং সর্বোপরি মেডিকেল বোর্ডের পরামর্শের বাইরে কোন কিছু করার সুযোগ এই মুহূর্তে আমাদের নেই।’
দলের নির্ধারিত ব্যক্তি ছাড়া কারো ব্রিফিংয়ে কান দেবেন না এমন আহ্বান জানিয়ে জাহিদ বলেন, ‘আমাদের দলের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে- আমাদের দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ উনার স্বাস্থ্য ব্যতীত অন্যান্য বিষয়ে আপনাদেরকে মাঝে-মাঝে ব্রিফ করবেন। আমি ডাক্তার এসএম জাহিদ হোসেন দলের একজন কর্মী, আমি আপনাদেরকে উনার স্বাস্থ্য নিয়ে ব্রিফ করব।’ এর বাইরে আপনারা অন্য কারো ব্রিফিংয়ের প্রতি কোন ধরনের কান না দেওয়ার জন্য দল আপনাদেরকে অনুরোধ করেছে। আপনারা যদি এটা মানেন, ফলো করেন তাহলে আর কোন গুজব ছড়ানোর সুযোগ থাকে না।
তারেক রহমান সর্বক্ষণ তদারকি করছেন জানিয়ে বেগম খালেদা জিয়ার এই চিকিৎসক বলেন, বিভিন্ন ধরনের গুজব, বিভিন্ন ধরনের বক্তব্য বিভিন্ন জায়গায় দেখার পরিপ্রেক্ষিতে দলের পক্ষ থেকে আমাদের দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সার্বক্ষণিকভাবে উনার চিকিৎসার তদারকি করছেন। চিকিৎসার সমস্ত বিষয়ে তিনি দেশি-বিদেশি চিকিৎসকদের সঙ্গে আমাদের মাধ্যমে যোগাযোগ রাখছেন।’
জাহিদ বলেন, ‘দলের মহাসচিব এবং দলের স্থায়ী কমিটির সদস্যসহ সারা দেশের মানুষের মতো প্রধান উপদেষ্টা উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য এবং অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সার্বক্ষণিকভাবে উনার চিকিৎসার ব্যাপারে যথাযথ সহযোগিতা, এই হাসপাতাল হাসপাতালের চিকিৎসক নার্স এবং সব কর্তৃপক্ষ দিয়ে যাচ্ছেন এবং আমরা সবার প্রতি অত্যন্ত কৃতজ্ঞ।’
তিনি বলেন, আমাদের বন্ধু প্রতীম দেশ যারা অর্থাৎ যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, চীন, কাতার, সৌদি আরব, পাকিস্তান, ভারত, আমাদের সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধান এই চিকিৎসার ব্যাপারে তাদের সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন।
অধ্যাপক জাহিদ জানান, গত ২৩ নভেম্বর থেকে বিএনপি চেয়ারপারসন এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। অধ্যাপক শাহাবুদ্দিন তালুকদারের নেতত্বে দেশি-বিদেশি চিকিৎসকরদের সমন্বয়ে মেডিকেল বেগম জিয়ার চিকিৎসা সেবায় কাজ করছেন। এই মেডিকেল বোর্ড রয়েছেন, অধ্যাপক এফএম সিদ্দিকী, অধ্যাপক নুরুদ্দিন আহমেদ, অধ্যাপক এ কিউ এম মহসিন, অধ্যাপক শামসুল আরেফিন, অধ্যাপক জিয়াউল হক, অধ্যাপক মাসুম কামাল, অধ্যাপক এজেড এম সালেহ অধ্যাপক অবসরপ্রাপ্ত বিগ্রেডিয়ার জেনারেল সাইফুল ইসলাম, ডাক্তার জাফর ইকবাল. বাংলাদেশের বাইরে যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রফেসর হাবিবুর রহমান, প্রফেসর রফিকউদ্দিন আহমেদ, প্রফেসর জন হ্যামিল্টন, প্রফেসর ডক্টর হামিদ রব, যুক্তরাজ্য থেকে প্রফেসর জন পেট্রিক, প্রফেসর জেনিফার ক্রস, ডাক্তার জুবাইদা রহমানসহ যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের এবং বাংলাদেশের চিকিৎসকদের যৌথভাবে গঠিত মেডিকেল টিম কাজ করছেন।
গত ২৭ নভেম্বর থেকে এভার কেয়ার হাসপাতালের ক্রিটিকাল কেয়ার ইউনিটে খালেদা জিয়া চিকিৎসাধীন আছেন বলে জানান অধ্যাপক জাহিদ। সূত্র: বাসস
গাজীপুরের টঙ্গীতে ফের একটি পোষাক কারখানায় ভয় ও আতঙ্কে (ম্যাস প্যানিক ডিজঅর্ডার) প্রায় অর্ধশতাধিক পোশাক শ্রমিক অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাদেরকে উদ্ধার করে শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার জেনারেল হাসপাতালসহ আশপাশের বিভিন্ন হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা দেওয়া হয়।
রোববার সকালে টঙ্গীর মিলগেট এলাকার হামীম গ্রুপের সিসিএল-৩ নামক পোশাক কারখানায় এ ঘটনা ঘটে।
সিসিএল-৩ কারখানার শ্রমিকরা জানান, ‘গত শনিবার সিসিএল-৩ প্লান্টের কোয়ালিটি ইন্সপেক্টর লুৎফর রহমান হঠাৎ অসুস্থ হয়ে ফ্লোরে পড়ে গেলে তাকে উদ্ধার টঙ্গী শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার জেনারেল হাসপাতাল ও পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। এ খবর শ্রমিকদের মাঝে ছড়িয়ে পড়লে সুইং ফ্লোরে কর্মরত অন্তত অর্ধশতাধিক শ্রমিক ভয়ে আতঙ্কিত হয়ে অজ্ঞান হয়ে পড়েন। পরে তাদেরকে উদ্ধার করে শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যায়। এদের মধ্যে অন্তত ২০জনকে আশুলিয়ার কামারপাড়া ইস্ট-ওয়েস্ট হাসপাতালসহ বিভিন্ন হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে। ঘটনার পর কারখানা ওইদিনের জন্য ছুটি ঘোষণা করা হয়।
পরে রোববার সকালে যথারীতি শ্রমিকরা কারখানায় গেলে সিসিএল-৩ প্লান্টের সুইং ফ্লোরে প্রবেশের পর একে একে ৫০-৬০ জনের মতো শ্রমিক অসুস্থ হয়ে পড়েন। এদের মধ্যে শারমিন (২৫), আমেনা (২৯), জুলফা (১৯), জুলেখা (৪০), বিলকিস (৪৩), খাদিজা (২৫), জাকিয়া (২৪), ফারজানা (২৮), বুরিনা (২৬), রমিজা (২৬), সায়মা (২৫), নুর নাহার (৩০), রিনা (৩৫), আসমা (৩৫), বেলায়েত হোসেন (৩০), সবুজ (৪২), আরিফা (২৮), রেনুজা (২৩), আব্দুস সালামকে (৪০) টঙ্গী সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হয়।
এদের মধ্যে গুরতর অসুস্থ জাকিয়া, ফারজানা, রুবিনা, শারমিন, আমেনা, জুলফা, জুলেখা, রেনুজা, রিনা ও শিউলিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে। বাকীদের আশুলিয়ার কামারপাড়া ইস্ট-ওয়েস্টসহ বিভিন্ন হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। এ খবর পুরো কারখানায় ছড়িয়ে পড়লে শ্রমিকদের মাঝে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। কারখানা কর্তৃপক্ষ আজকের (রোববার) মতো কারখানা ছুটি ঘোষণা করেছে।
এ ব্যাপারে কারখানার জেনারেল ম্যানেজার প্রকৌশলী মিজানুর রহমান বলেন, ‘গত শনিবারের আতঙ্ক রেশ ধরে আজও (রোববার) বেশ কয়েকজন শ্রমিক অসুস্থ হয়ে পড়েছে। তাদেরকে উদ্ধার করে টঙ্গী সরকারি হাসপাতালসহ বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। ঘটনার পর আজকের জন্য (রোববার) কারখানা ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে।
এ বিষয়ে টঙ্গী সরকারি হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. ইশরাত জাহান এনি জানান, কারখানার শ্রমিকরা ম্যাস প্যানিক ডিজঅর্ডারের কারণে অসুস্থ হয়ে পড়েন।
১০ম গ্রেড বাস্তবায়নের দাবিতে ঝিনাইদহে কর্মবিরতি পালন করেছেন মেডিকেল টেকনোলজিস্ট ও ফার্মাসিস্টরা। রোববার সকালে ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে এ কর্মসূচির আয়োজন করে ১০ম গ্রেড বাস্তবায়ন পরিষদ জেলা শাখা। রোববার সকাল ৯টা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত দুই ঘন্টা কর্মবিরতি পালন করেন আন্দোলনকারীরা। সেসময় ডিপ্লোমা মেডিকেল টেকনোলজিস্ট ও ফার্মাসিস্টে কর্মরত ও অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীরা কর্মবিরতিতে অংশ নেন।
সেসময় ১০ম গ্রেড বাস্তবায়ন পরিষদ জেলা শাখার সভাপতি রেজাউল আলম, সহ-সভাপতি মাজহারুল ইসলাম, প্রবীর কুমার কুন্ডু, সাধারণ সম্পাদক আরিফুজ্জামানসহ অন্যান্যরা বক্তব্য রাখেন।
কর্মসূচিতে বক্তারা বলেন, দীর্ঘদিন ধরে তারা বেতন বৈষম্যের শিকার। অন্য ডিপ্লোমাধারীরা ১০ম গ্রেড পেলেও তাদের দাবি মানা হচ্ছে না। তাই দ্রুত তাদের দাবি মেনে নেওয়ার আহবান জানান তারা।
দেশের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্যসেবার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান কমিউনিটি ক্লিনিক। প্রান্তিক পর্যায়ের মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে নওগাঁ জেলায় স্থাপন করা হয় ৩০৭টি কমিউনিটি ক্লিনিক। বর্তমানে এসব কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো নানা সমস্যায় জরাজীর্ণ। দীর্ঘদিন ধরে সংস্কার না করায় ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে জেলার অধিকাংশ কমিউনিটি ক্লিনিকের ভবন। কোথায় কোথায় পরিত্যক্ত ঘোষণা করার পরও চলছে স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম। এসব প্রতিকূলতার মধ্যেই জীবনের ঝুঁকি নিয়েই চলছে স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম।
সরেজমিনে জেলার সদর, মহাদেবপুর, নিয়ামতপুর, বদলগাছী উপজেলার ২০টি ক্লিনিক ঘুরে দেখা গেছে, কমিউনিটি ক্লিনিকের ভবনগুলো সংস্কারের অভাবে জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে। ভবনের দেয়াল ও ছাদে ছোট-বড় ফাটল। ছাদসহ বিভিন্ন স্থান থেকে পলেস্তারা খসে পড়ছে। জরাজীর্ণ এসব ভবনে ঝুঁকি নিয়ে চলছে চিকিৎসা। বহু ক্লিনিকে নেই প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যকর্মী। অনেক ক্লিনিকে ওষুধ সংকট। কোথাও কোথাও দেখা গেছে বিদ্যুৎ সরবরাহ ও নিয়মিত পানির সরবরাহ ব্যবস্থা নেই। কোথাও আবার শৌচাগার নষ্ট হয়ে অচল হয়ে আছে। সংস্কার না করায় ব্যবহারের অনুপযোগী এসব ভবনে অবস্থান করার সময় রোগী, চিকিৎসক ও স্বাস্থ্য কর্মীরা আতঙ্কে থাকেন।
জানা গেছে, ক্লিনিকগুলোতে আগে ২৭ ধরনের ওষুধ দেওয়া হতো। তবে বর্তমানে এসব ক্লিনিকে ক্রিমি, স্ক্যাভিস, গ্যাস, চর্মরোগ, প্রজননজনিত রোগসহ বিভিন্ন রোগের ২২ ধরনের ওষুধ সরবরাহ করা হয়। তবে চাহিদার তুলনায় ক্লিনিকগুলোতে ওষুধ সরবরাহ কম দেওয়া হয়। এ কারণে অনেক সময় রোগীরা তাদের প্রয়োজনীয় ওষুধ ক্লিনিকে গিয়ে পান না বলে অভিযোগ রয়েছে। আবার অনেক সময় স্বাস্থ্যকর্মীদের না পেয়ে সেবা না পেয়েই রোগীদের ফিরে আসতে হয় এমন অভিযোগও রয়েছে। এছাড়া সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরের অযন্ত ও অবহেলার কারণে সঠিক সময়ে কমিউনিটি ক্লিনিকের ভবনগুলো সংস্কার না করায় জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে। এসব কারণে ক্লিনিকগুলোর যে মূল উদ্দেশ্য, তা ব্যাহত হচ্ছে।
রোগী ও স্বজনরা জানান, দীর্ঘদিন ধরে এমন অবস্থায় চিকিৎসাসেবা চললেও নতুন ভবন তৈরির উদ্যোগ নেয়া হয়না। এমন ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে চিকিৎসা নিতে এসে আতঙ্কে থাকেন রোগীরা। চিকিৎসাসেবা নিতে এসে ঢালাই পড়ে আহত হওয়ার শঙ্কায় থাকেন রোগী ও স্বজনরা। তারা আশা করছেন, দ্রুত নতুন ভবন নির্মাণ হলে চিকিৎসাসেবার মান যেমন বাড়বে, তেমনি গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর ভোগান্তিও কমবে।
নওগাঁর নিয়ামতপুর উপজেলার হাজীনগর ইউনিয়নের কন্যাপাড়া কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার (সিএইচসিপি) ইমরান হোসেন বলেন, ‘ভবনটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়েছে। বিকল্প ব্যবস্থা না থাকায় এই ভবনেই ঝুঁকি নিয়ে সেবা দিচ্ছি। এই ভবনে যতক্ষণ থাকি ততক্ষণই আতঙ্কে থাকি। মাঝে মাঝে ছাদের পলেস্তারা খসে পড়ে।’
একই উপজেলার পাড়ইল ইউনিয়নের ফুলহারা কমিউনিটি ক্লিনিকের সিএইচসিপি নুরুজ্জামান বুলবুল বলেন, ‘দুই বছর আগে ভবনটি একেবারেই ব্যহারের অনুপযোগী হয়ে পড়ে। ঝুঁকি থাকায় দুই বছর ধরে ফুলহারা বড়সমাসপুর নুরানী হাফেজিয়া মাদ্রাসা ভবনের একটি কক্ষে কমিউনিটি ক্লিনিকের সেবা কার্যক্রম চলছে।’
মহাদেবপুর উপজেলার চান্দাশ কমিউনিটি ক্লিনিকের সিএইচসিপি বিলকিস আক্তার বলেন, ‘এই ক্লিনিকটা অযন্ত-অবহেলায় পরিত্যক্ত হতে বসেছে। ছাদের পলেস্তারা খসে পড়ে। একটু বৃষ্টি হলেই ছাদের চুইয়ে পানি কাগজপত্র, টেবিল-চেয়ারসহ অন্যান্য আসবাবপত্র গিয়ে পড়ে। এ কারণে ক্লিনিকের কক্ষগুলোর ছাদে পলিথিন দিয়ে ঢেকে রাখা হয়েছে। পানি ও বিদ্যুতের ব্যবস্থা থাকলেও ক্লিনিকের একমাত্র টয়লেটটা তিন-চার বছর ধরে ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে আছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ সব জানা সত্ত্বেও এই সমস্যাগুলোর সমাধান হচ্ছে না।’
বিলকিস আক্তার আরও বলেন, ‘একটা কমিউনিটি ক্লিনিকে একজন সিএইচসিপি, একজন স্বাস্থ্য সহকারী ও একজন করে পরিবার পরিকল্পনা সহকারী কর্মকর্তা থাকার কথা। এখানে সিএইচসিপি হিসেবে আমি সপ্তাহের ছয় দিন ক্লিনিকে থাকলেও স্বাস্থ্য সহকারী ও পরিবার পরিকল্পনা সহকারীকে আরও দুটি ক্লিনিকে দায়িত্ব পালন করায় তারা সপ্তাহে দুই কিংবা একদিন এখানে এসে চিকিৎসা সেবা দিয়ে থাকেন। প্রয়োজনীয় জনবল না থাকায় মানুষ মানসম্মত সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
নওগাঁর সিভিল সার্জন ডা. আমিনুল ইসলাম বলেন, জেলার যে কয়েকটি কমিউনিটি ক্লিনিক পরিদর্শন করেছি, তাতে খুবই হতাশাজনক চিত্র চোখে পড়েছে। এখানকার প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ কমিউনিটি ক্লিনিক ভবন জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে। এগুলো সংস্কার করেও কাজ চালানো সম্ভব না। ক্লিনিক ভবনগুলো পুননির্মাণ ও সংস্কারের জন্য স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরে একাধিকবার চিঠি দেওয়া হয়েছে। আশা করছি, চলতি অর্থবছরে কিছু কিছু ভবন সংস্কার বা পুনর্নির্মাণ কাজ হতে পারে।
জামালপুরের সরিষাবাড়ীতে চিকিৎসকের পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও ছাড়পত্র ছাড়াই যত্রতত্র নিজেদের ইচ্ছেমতো জবাই করা হচ্ছে গরু ও ছাগল। এ বিষয়ে কোনো প্রকার কার্যক্রম ও নেই উপজেলা প্রশাসন ও প্রাণিসম্পদ অফিসের। এতে করে অ্যানথ্রাক্স ভাইরাসের ঝুঁকিতে কসাই ও ক্রেতারা। এ বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানান স্থানীয়রা।
জানা যায়, এ উপজেলার সব চেয়ে বড় পশুর হাট পিংনা ইউনিয়নের গোপালগঞ্জ পশুর হাট। সপ্তাহে প্রতি শুক্রবার দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে হাজার হাজার পশু আসে এই হাটে। অনেক অসাধু কসাই (মাংস বিক্রেতা) বেশি লাভের আশায় অসুস্থ গরুগুলো কম দামে কিনে বিভিন্ন স্থানে জবাই করে মাংস বিক্রি করে। এতে করে অ্যানথ্রাক্স ভাইরাসের ঝুঁকিতে রয়েছে সাধারণ মানুষ।
ইতোমধ্যে গবাদিপশুর মাধ্যমে সংক্রমিত মারাত্মক রোগ অ্যানথ্রাক্স পশুর পাশাপাশি মানুষের শরীরেও সংক্রমণ ঘটিয়ে মৃত্যু পর্যন্ত ঘটাচ্ছে। উপজেলা প্রশাসনের মনিটরিংয়ের মাধ্যমে পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও ছাড়পত্রবিহীন অসাধু কসাই যেন কোনো অসুস্থ পশু জবাই করতে না পারে সে বিষয়ে সংশ্লিষ্ট দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তাদের কাছে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন সচেতন মহল।
মাংস ক্রেতা মনি মিয়া, মেহেদী হাসান বাধন, আমজাদ হোসেনসহ একাধিক ক্রেতা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, রাতের আঁধারে বা খুব ভোরে এসব গরু-ছাগল জবাই করা হয়। অন্য জায়গায় জবাই করে ভ্যানের মাধ্যমে মাংস বাজারে আনা হয়। কেমন গরু-ছাগল জবাই হচ্ছে, সেটা অসুস্থ নাকি সুস্থ ছিল সেটাও আমাদের জানার বা দেখার সুযোগ নেই। জবাই করাটাও কী ইসলামিকভাবে হুজুর দিয়ে স্বাস্থ্য সম্মত জায়গা বা স্বাস্থ্য সম্মতভাবে হচ্ছে কিনা। সেটাও জানি না। অনেকে আবার মাংসের সাথে ফ্রিজের মাংস মিশিয়ে বিক্রি করেন। এসব বন্ধে প্রশাসনকে অনুরোধ জানাই।
এ বিষয়ে সরিষাবাড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাক্তার দেবাশীষ রাজবংশী বলেন, অ্যানথ্রাক্স ভাইরাসের বিষয়ে সবাইকে সচেতন হতে হবে। কসাইরা যেন অধিক লাভের আশায় অসুস্থ গরু-ছাগল জবাই না করতে পারে সে বিষয়ে প্রশাসনের পাশাপাশি স্থানীয়দের সচেতন হতে হবে।
এ বিষয়ে উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডাক্তার হাবিবুর রহমান বলেন, আমরা ইতোমধ্যে এসব বিষয় নিয়ে সচেতনতার লক্ষ্যে কাজ করছি। ২৫ জন কসাইকে নিয়ে প্রাণিসম্পদ অফিস থেকে প্রশিক্ষণ কর্মশালা করেছি। তবে সমস্যা হলো পৌরএলাকা বা ইউনিয়নগুলোতে স্বীকৃতিকৃত বা অনুমোদিত কোনো কসাইখানা নেই। এই সুযোগে বিভিন্ন বাজার বা মোড়গুলোতে গরু-ছাগল জবাই করে মাংস বিক্রি হচ্ছে।
বার্ড ফ্লু ভাইরাস নিয়ে নতুন করে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। আমেরিকার সেন্টার ফর ডিজ়িজ় কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশনের (সিডিসি) তথ্য অনুসারে বার্ড ফ্লু ভাইরাসের এক বিরল উপরূপের খোঁজ মিলেছে। অনুমান করা হচ্ছে, সেই উপরূপটির কারণেই দেশটিতে মানুষের মৃত্যু ঘটেছে।
ইউনিভার্সিটি অফ ওয়াশিংটনের গবেষকরা বার্ড ফ্লু বা অ্যাভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসের নতুন উপরূপটিকে চিহ্নিত করেছেন, এর নাম এইচ৫এন৫।
গবেষরা বলছেন, বন্য পাখি, হাঁস-মুরগি এবং স্তন্যপায়ী প্রাণীদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়া বার্ড ফ্লু ভাইরাসটি যদি মানুষের মধ্যে সংক্রমিত, তাহলে এটি করোনাভাইসের (কোভিড-১৯) চেয়েও ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে। এমনটি জানিয়েছেন ফ্রান্সের পাস্তুর ইনস্টিটিউটের শ্বাসতন্ত্রসংক্রান্ত সংক্রমণ কেন্দ্রের পরিচালক মারি-অ্যান রামেইক্স ওয়েল্টি।
মারি-অ্যান রামেইক্স ওয়েল্টি বলেন, আমরা আশঙ্কিত কেননা ভাইরাসটি ইতোমধ্যে স্তন্যপায়ী প্রাণীদের সঙ্গে বিশেষত করে মানুষের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিচ্ছে এবং পরবর্তীতে মানুষ থেকে মানুষে সংক্রমণে সক্ষম হয়ে উঠছে। আর এ কারণেই ভাইরাসটি মহামারি আকার ধারণ করার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
ইউরোপের ল্যাবগুলোর মধ্যে পাস্তুর ইনস্টিটিউটই প্রথম কোভিড-১৯ সনাক্তকরণ পরীক্ষা কিট তৈরি করেছে। পরবর্তীতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং বিশ্বের অন্য ল্যাবগুলো তাদের কাছ থেকে এই কিট সংগ্রহ করে।
ওয়েল্টি আরও বলেন, সাধারণ এইচ-১ এবং এইচ-৩ মৌসুমী ফ্লুর বিরুদ্ধে অ্যান্টিবডি আছে সবার কাছে, কিন্তু পাখি এবং স্তন্যপায়ী প্রাণীদের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে এমন এইচ-৫ বার্ড ফ্লুর বিরুদ্ধে কোনো অ্যান্টিবডি নেই, যেমনটি ছিল না কোভিড-১৯ এর বিরুদ্ধে।
রামেক্স-ওয়েল্টি বলেন, কোভিড-১৯ সাধারণত দুর্বল মানুষকে বেশি প্রভাবিত করলেও ফ্লুও ভাইরাসগুলি শিশু সহ সুস্থ ব্যক্তিদের শরীরে সংক্রমিত হয়ে তাদের মেরে ফেলতে পারে।
একটি বার্ড ফ্লু মহামারি সম্ভবত বেশ তীব্র হবে, সম্ভবত আমরা যে মহামারিটি অনুভব করেছি তার চেয়েও বেশি গুরুতর, তিনি তার প্যারিস পরীক্ষাগারে বলেন।
অতীতে এইচ-৫ বার্ড ফ্লু ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত অনেক লোকের ঘটনা ঘটেছে, যার মধ্যে বর্তমানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে হাঁস-মুরগি এবং দুগ্ধজাত গরুর মধ্যে প্রচলিত এইচ-৫ এন-১ও, যদিও তারা সংক্রামিত প্রাণীদের ঘনিষ্ঠ সংস্পর্শে ছিল। এই মাসে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন রাজ্যে এইচ-৫ এন-৫এর প্রথম মানব কেস পাওয়া গেছে। আক্রান্ত ব্যক্তি গত সপ্তাহে মারা গেছেন।
বার্ড ফ্লু সম্পর্কে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা তাদের সর্বশেষ প্রতিবেদনে জানিয়েছে, ২০০৩ থেকে ২০২৫ সালের মধ্যে মিসর, ইন্দোনেশিয়া এবং ভিয়েতনামের মতো অঞ্চলগুলোতে প্রায় ১,০০০ জনের মধ্যে ফ্লুর প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। যাদের মধ্যে ৪৮ শতাংশ লোকই মারা গেছে।
তবে বিশ্ব প্রাণী স্বাস্থ্য সংস্থার বিজ্ঞান বিভাগের প্রধান গ্রেগোরিও টোরেস রয়টার্সকে বলেছেন, এখনো মানব মহামারি হওয়ার ঝুঁকি কম রয়েছে। তিনি বলেছেন, আমাদের সতর্ক থাকতে হবে। দ্রুত প্রতিক্রিয়া জানাতে প্রস্তুত থাকতে হবে। তবে আপাতত, আপনি আনন্দের সাথে বনে হাঁটতে পারেন, মুরগি এবং ডিম খেতে পারেন এবং আপনার জীবন উপভোগ করতে পারেন। মহামারির ঝুঁকি একটি সম্ভাবনা।’
রামেইক্স-ওয়েল্টি আরও বলেন, যদি বার্ড ফ্লু মানুষের মধ্যে সংক্রামিত হওয়ার জন্য পরিবর্তিত হয়, তবে বিশ্ব কোভিড-১৯ মহামারীর তুলনায় ভালভাবে প্রস্তুত নেওয়ার সুযোগ রয়েছে। কোভিডের তুলনায় ফ্লুর ইতিবাচক দিক হলো, আমাদের কাছে নির্দিষ্ট প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা রয়েছে। আমাদের কাছে ভ্যাকসিন উপাদান রয়েছে এবং এছাড়াও আমরা জানি কিভাবে দ্রুত ভ্যাকসিন তৈরি করতে হয়।’
ওয়েল্টি বলেন, আমাদের কাছে নির্দিষ্ট অ্যান্টিভাইরাল ওষুধও রয়েছে, যা নীতিগতভাবে এই এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসের বিরুদ্ধে কার্যকর হবে।
৬ দফা দাবিতে আবারও কর্মবিরতির ঘোষণা দিয়েছেন স্বাস্থ্য সহকারীদের সংগঠন বাংলাদেশ হেলথ অ্যাসিস্ট্যান্ট অ্যাসোসিয়েশন।
সোমবার জাতীয় প্রেসক্লাবের জহুরুল হক হলরুমে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেন বাংলাদেশ হেলথ অ্যাসিস্ট্যান্ট অ্যাসোসিয়েশন কেন্দ্রীয় সমন্বয় পরিষদের নেতারা।
সংবাদ সম্মেলন থেকে জানানো হয়, আগামী বৃহস্পতিবারের মধ্যে দাবি আদায়ের জিও প্রকাশ না হলে আগামী ২৯ নভেম্বর থেকে ঢাকার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে অনির্দিষ্টকালের শান্তিপূর্ণ অবস্থান কর্মবিরতিতে যাবে সংগঠনটির কেন্দ্রীয় সমন্বয় পরিষদ।
সংবাদ সম্মেলনে কর্মসূচির ঘোষণা দিয়ে বক্তব্য দেন সংগঠনের কেন্দ্রীয় সমন্বয় পরিষদের প্রধান সমন্বয়ক ওয়াসি উদ্দিন রানা। এ সময় উপস্থিত ছিলেন সমন্বয় পরিষদের সদস্য সচিব ফজলুল হক চৌধুরী, মুখ্য সংগঠক জিয়াউল হক কাবুল, আব্দুস সালাম প্রমুখ।
নেতারা জানান, নিয়োগবিধি সংশোধন, বেতন বৈষম্য নিরসন ও টেকনিক্যাল পদমর্যাদা প্রদানসহ ৬ দফা দাবিতে বাংলাদেশ হেলথ অ্যাসিস্ট্যান্ট অ্যাসোসিয়েশন দীর্ঘদিন ধরে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে নিয়মতান্ত্রিকভাবে আবেদন জানিয়ে আসছে। যৌক্তিক ঘোষণা সত্ত্বেও ৫-বার আশ্বাস দেওয়ার পরও এসব দাবি বাস্তবায়ন করেনি কর্তৃপক্ষ।
ফলে সারাদেশের ২৬ হাজার স্বাস্থ্য সহকারীর সংগঠন বাংলাদেশ হেলথ অ্যাসিস্ট্যান্ট অ্যাসোসিয়েশন গত ১ অক্টোবর থেকে দেশের ১ লাখ ২০ হাজার আউটরিচ টিকাকেন্দ্রে সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচি (ইপিআই) এবং সদ্য সমাপ্ত টাইফয়েড কনজুগেট ভ্যাকসিন (টিসিভি) কর্মসূচির সব রিপোর্ট তৈরি ও প্রদান বন্ধ রেখে পূর্ণাঙ্গ কর্মবিরতি শুরু করে।
এ কর্মবিরতির কারণে তৃণমূলের স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম ৬ দিন বন্ধ থাকার পর গত ৬ অক্টোবর স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকসহ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা স্বাস্থ্য সহকারী নেতাদের সঙ্গে আলোচনায় বসেন। আলোচনায় দাবি বাস্তবায়নের আশ্বাসে কর্মবিরতি এক মাসের জন্য স্থগিত করা হয়।
নেতারা জানান, তাদের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী সারাদেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও কমিউনিটি পর্যায়ে প্রায় ৫ কোটি শিশুকে টিসিভি টিকা সফলভাবে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু প্রতিশ্রুতির কোনো দৃশ্যমান বাস্তবায়ন হয়নি। বরং টিসিভি বাজেট বরাদ্দ নিয়ে প্রতিবাদ করায় ২৩ নভেম্বর চাঁদপুর জেলার দুই সহকর্মী- স্বাস্থ্য সহকারী আরিফ মোহাম্মদ রুহুল ইসলাম ও শাহজালালকে কুমিল্লা জেলায় বদলি করেছেন চট্টগ্রাম বিভাগের পরিচালক। এ কারণেই তারা বাধ্য হয়ে আবারও কর্মবিরতির ঘোষণা দিয়েছেন।
নেতারা বলেন, আমরা আমাদের দুই সহকর্মীর বদলির আদেশ প্রত্যাহার চাই। এবং নির্ধারিত সময়ের মধ্যে আমাদের ৬ দফা দাবির জিও প্রজ্ঞাপন আকারে প্রকাশ করা না হলে কর্মসূচি আরও কঠোর করা হবে।
স্বাস্থ্য সহকারীদের ৬ দফা দাবির মধ্যে রয়েছে- নিয়োগবিধি সংশোধন করে স্নাতক বা সমমানের যোগ্যতা যুক্ত করে ১৪তম গ্রেড প্রদান। ইন-সার্ভিস ডিপ্লোমা সম্পন্নকারীদের ১১তম গ্রেডসহ টেকনিক্যাল পদমর্যাদা দেওয়া। পদোন্নতির ক্ষেত্রে ধারাবাহিক উচ্চতর গ্রেড নিশ্চিত করা এবং সকল স্বাস্থ্য সহকারী, সহকারী স্বাস্থ্য পরিদর্শক ও স্বাস্থ্য পরিদর্শককে প্রশিক্ষণ ছাড়াই স্নাতক স্কেলে অন্তর্ভুক্ত করা। অন্যদিকে বেতন স্কেল পুনর্নির্ধারণের সময় প্রাপ্ত টাইম স্কেল বা উচ্চতর স্কেল সংযুক্ত করাসহ ইন-সার্ভিস ডিপ্লোমা (এসআইটি) কোর্স সম্পন্নকারীদের সমমান হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া।
কার্যকারিতা হারাচ্ছে অ্যান্টিবায়োটিক। হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে এখন ৪১ শতাংশ রোগীর ক্ষেত্রে অ্যান্টিবায়োটিক কাজ করছে না। অ্যান্টিবায়োটিকের অযৌক্তিক ও অতিরিক্ত ব্যবহার দিন দিন এই সংকটকে গভীর করছে।
সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণাপ্রতিষ্ঠান আইইডিসিআর সোমবার রাজধানীর মহাখালীতে এক অনুষ্ঠানে অ্যান্টিবায়োটিক নিয়ে এ পর্যবেক্ষণ তুলে ধরেছে। আইইডিসিআর মিলনায়তনে অনুষ্ঠানে অ্যান্টিবায়োটিক নিয়ে এই পর্যবেক্ষণমূলক প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন প্রতিষ্ঠানটির প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা অধ্যাপক জাকির হোসেন।
অ্যান্টিবায়োটিকের অতিরিক্ত ব্যবহার নিয়ে সতর্ক করে অধ্যাপক জাকির হোসেন বলেন, অ্যান্টিবায়োটিকের যথেচ্ছ ও অতিরিক্ত ব্যবহার অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্সকে (এএমআর) বিপজ্জনক পর্যায়ে নিয়ে এসেছে। এটি এখন দেশের জন্য বড় জনস্বাস্থ্যঝুঁকি। সবার প্রতি দায়িত্বশীলতার সঙ্গে অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহার কমিয়ে নিজের জীবন রক্ষার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
অ্যান্টিবায়োটিকের কার্যকারিতা সম্পর্কে জানাবোঝার জন্য আইইডিসিআর ২০২৪ সালের জুলাই থেকে গত জুন পর্যন্ত ৯৬ হাজার ৪৭৭ জন রোগীর নমুনা পরীক্ষা করে। দেশের পাঁচটি হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন রোগীদের শরীরে ৭১ ধরনের অ্যান্টিবায়োটিকের কার্যকারিতা পরীক্ষা করা হয়।
আইসিইউতে ভর্তি রোগীদের চিকিৎসায় ৫টি জীবাণুর ক্ষেত্রে ৭১টি অ্যান্টিবায়োটিকের কার্যকারিতা পরীক্ষা করা হয়। এর মধ্যে ৫টি অ্যান্টিবায়োটিকের সংবেদনশীলতা ৮০ শতাংশের ওপরে। একটির সংবেদনশীলতা ৬০ থেকে ৮০ শতাংশের মধ্যে। বাকিগুলোর সংবেদনশীলতা ৬০ শতাংশের নিচে।
আইইডিসিআরের সময়ে যত রোগীর নমুনা পরীক্ষা করেছে, তার মধ্যে ৭ শতাংশ রোগীর ক্ষেত্রে অ্যান্টিবায়োটিক–প্রতিরোধী অণুজীব প্যান–ড্রাগ–রেজিট্যান্স (পিডিআর) পাওয়া গেছে। প্যান ড্রাগ হচ্ছে একটি নির্দিষ্ট রোগের জন্য ব্যবহৃত সব ধরনের ওষুধ বা অ্যান্টিবায়োটিক। আইসিইউ রোগীদের ক্ষেত্রে পিডিআরের উপস্থিতি ৪১ শতাংশ। অর্থাৎ আইসিইউতে চিকিৎসাধীন রোগীদের ৪১ শতাংশের ক্ষেত্রে কোনো ওষুধ কাজ করছে না।
আইইডিসিআর জানায়, তারা ২০১৬ সাল থেকে বাংলাদেশে এই ‘জাতীয় অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স (এএমআর) সার্ভিলেন্স’ কার্যক্রম বাস্তবায়ন করে আসছে। এর মূল লক্ষ্য হলো, বাংলাদেশে জনস্বাস্থ্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচিত অণুজীব বা প্যাথোজেনগুলোর মধ্যে অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্সের (এএমআর) অবস্থা পর্যবেক্ষণের জন্য একটি শক্তিশালী নজরদারি ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা।
আইইডিসিআর তাদের পর্যবেক্ষণে ১২৩টি ‘ড্রাগ-বাগ কম্বিনেশন’ (অণুজীব ও ওষুধের পারস্পরিক সম্পর্ক) বিশ্লেষণ করেছে। কার্যকারিতা পরীক্ষার জন্য পূর্ববর্তী বছরের প্রতিবেদনের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে। এর মধ্যে ৩৮টি ক্ষেত্রে কার্যকরিতা বেড়েছে, ৭৯টি ক্ষেত্রে কমেছে এবং ৬টির ক্ষেত্রে অপরিবর্তিত রয়েছে।
আইইডিসিআরের পরিচালক অধ্যাপক তাহমিনা শিরিন বলেন, ২০১৭ সাল থেকে প্রতিষ্ঠানটি অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স নিয়ে কাজ করছে। ইতোমধ্যে তারা একটি বড় ডেটাবেস (তথ্যভাণ্ডার) তৈরি করেছে। তিনি বলেন, ‘আমরা মানুষের কাছে এই আহ্বান পৌঁছাতে চাই, যাতে মানুষ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক সেবন না করেন। জনসচেতনতা বৃদ্ধি না পেলে ভবিষ্যতে গুরুতর সংকট তৈরি হবে।’
আইইডিসিআরের তথ্যানুযায়ী, ২০২৪ সালের জুলাই থেকে গত জুন পর্যন্ত সারাদেশে মোট যত অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার হয়েছে, তার ৫৭ শতাংশই হয়েছে ঢাকায়। বিশেষজ্ঞদের মতে, রাজধানীতে রোগীর সংখ্যা বেশি, বিশেষায়িত চিকিৎসাকেন্দ্র ও হাসপাতালের সংখ্যা বেশি এবং স্বাস্থ্যসেবা তুলনামূলক সহজলভ্য হওয়ায় অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহারও বেশি হচ্ছে।
ঢাকার পরের অবস্থানে রয়েছে রাজশাহী, চট্টগ্রাম, খুলনা, বরিশাল, রংপুর ও সিলেট। এছাড়া মূত্রনালি সংক্রমণের (ইউটিআই) রোগীদের মধ্যে অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারের প্রবণতা তুলনামূলক বেশি বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
দেশে সর্বাধিক ব্যবহৃত ১০টি অ্যান্টিবায়োটিক হলো সেফট্রিয়াক্সোন, সেফিক্সিম, মেরোপেনেম, সিপ্রোফ্লক্সাসিন, অ্যাজিথ্রোমাইসিন, অ্যামোক্সিসিলিন, মেট্রোনিডাজল, ক্লক্সাসিলিন, পাইপেরাসিলিন-টাজোব্যাকটাম ও ভ্যানকোমাইসিন। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এগুলোর অযথা ব্যবহারের ফলে কার্যকারিতা দ্রুত কমে যাচ্ছে।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, এখনই অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্সকে (এএমআর) মোকাবিলায় কার্যকর নীতিমালা বাস্তবায়ন প্রয়োজন। তারা বলেন, দ্রুত সময়ে জাতীয় অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার নীতিমালা তৈরির পাশাপাশি জনসচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। মানুষ যেন চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া নিজেদের ইচ্ছেমতো ফার্মেসি (ওষুধের দোকান) থেকে অ্যান্টিবায়োটিক কিনে ব্যবহার করতে না পারেন, সেই ব্যবস্থা করতে হবে। অন্যথায় আগামী এক দশকেই চিকিৎসা খাতকে বড় সংকটে পড়তে হবে। তারা বলেন, অ্যান্টিবায়োটিক যত কম ব্যবহার করবেন, তত বেশি কার্যকর থাকবে।
শরণার্থীশিবিরগুলোতে আশ্রয় নিয়ে থাকা রোহিঙ্গাদের শরীরে অ্যান্টিবায়োটিকের কার্যকারিতা তুলনামূলক বেশি রয়েছে। কারণ হিসেবে আইইডিসিআর জানায়, সেখানে মানুষ তুলনামূলক চিকিৎসকের পরামর্শে ওষুধ সেবন করেন।
প্রতিষ্ঠানটি জানায়, রোহিঙ্গাদের মধ্যে টেট্রাসাইক্লিনের কার্যকারিতা ১০০ শতাংশ, অর্থাৎ সব রোগী এটা সেবন করে সুফল পাচ্ছেন। আর অ্যাজিথ্রোমাইসিন কাজ করছে প্রতি ১০০ জনের মধ্যে ৯৭ জনের শরীরে। সেখানে ডায়রিয়াজনিত রোগ সারাতে অ্যাজিথ্রোমাইসিন সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করা হয়।
নার্সিং ও মিড ওয়াইফারি অধিদপ্তরকে বিলুপ্ত করে তাদের ভিন্ন অধিদপ্তর ও ভিন্ন পেশাজীবীর মাধ্যমে পরিচালনার বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টার হস্তক্ষেপ কামনায় জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে স্মারকলিপি দিয়েছে বাংলাদেশ নার্সেস অ্যাসোসিয়েশন মাগুরা জেলা শাখা। সোমবার দুপুরে তারা মাগুরা জেলা প্রশাসক বরাবর স্মারকলিপি দেন।
তাদের অন্য দাবি হলো- স্বাস্থ্য উপদেষ্টার প্রতিশ্রুতি ১৪ মাসেও পূরণ না হওয়া।
বাংলাদেশ নার্সেস অ্যাসোসিয়েশন মাগুরা জেলা শাখার সভাপতি সুফিয়া খাতুন ও সাধারণ সম্পাদক আমিনা খাতুন এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
বাল্যবিয়ে এবং অনিয়মিত বা বিলম্বিত প্রসবের কারণে মারাত্মক স্বাস্থ্য সমস্যা হিসেবে ফিস্টুলা রোগী দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। নারী জীবনে যার শারীরিক, মানসিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিকভাবে অত্যন্ত মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে।
গাইবান্ধার জেলার চিকিৎসা তথ্য অনুযায়ী, ২০১২ সাল থেকে অক্টোবর ২০২৫ পর্যন্ত জেলার সাত উপজেলায় ১৭২ জন নারী ফিস্টুলায় আক্রান্ত হয়েছেন। যার মধ্যে গোবিন্দগঞ্জে ৩৮জন, সদর ৩৪, সুন্দরগঞ্জ ৩১, পলাশবাড়ী ২৭, সাদুল্লাপুর ২২, ফুলছড়িতে ১২ এবং সাঘাটা উপজেলায় রোগী শনাক্ত হয়েছেন ৮ জন। এসবের মধ্যে চলতি বছরের অক্টোবর পর্যন্ত জেলায় আক্রান্ত রোগীর সংখা ১৮ জন।
সোমবার গাইবান্ধার একটি রেস্টুরেন্ট মিলনায়তনে সাংবাদিকদের জন্য নারীদের ফিস্টুলাবিষয়ক অ্যাডভোকেসি সভার আয়োজন করে ফেরি প্রজেক্ট (Elimination of Genital Fistula by Capturing, Treating, Rehabillitating and Reintegrating in Bangladesh) সভায় ল্যাম্ব ও ইউএনএফপিএ-এর উদ্যোগে ফিস্টুলা নির্মূল কার্যক্রমের অগ্রগতি তুলে ধরা হয়। যেখানে মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন গাইবান্ধা জেনারেল হাসপাতালের বিশিষ্ট গাইনী চিকিৎসক ডা. তাহেরা আকতার মনি। তিনি ফিস্টুলা রোগের কারণ, প্রতিকার এবং চিকিৎসা পদ্ধতি বিস্তারিতভাবে আলোচনা করেন।
সভায় ল্যাম্বের ডিস্ট্রিক্ট ফ্যাসিলেটর মো. শরিফুল ইসলাম শরিফ ফিস্টুলা নির্মূল ও সচেতনতা কার্যক্রমের গুরুত্বপূর্ণ দিক তুলে ধরে এ রোগে আক্রান্ত নারীর শারীরিক, মানসিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক নেতিবাচক প্রভাব আলোকপাত করেন।
সভায় গাইবান্ধা প্রেসক্লাবের সভাপতি অমিতাভ দাশ হিমুন ও সাধারণ সম্পাদক ইদ্রিসউজ্জামান মোনাসহ যেখানে জেলার প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকরা অংশ নেন।
ফিস্টুলার কারণ ও লক্ষণ: এদিন মূল আলোচনায় ডা. তাহেরা আক্তার মনি জানান, ফিস্টুলা হলো এমন একটি অবস্থা যেখানে প্রসব বা অন্য কোনো কারণে মূত্রথলী, মলাশয় বা জরায়ুর মধ্যে একটি অস্বাভাবিক ছিদ্র তৈরি হয়। যার ফলে প্রস্রাব বা মল নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনা রোগীরা। প্রস্রাব বা পায়খানার বেগ ছাড়াই প্রস্রাব পায়খানা অনবরত ঝড়তে থাকে। বিশেষ করে মাসিকের রাস্তা দিয়ে অনবরত প্রস্রাব ঝরতে থাকে। সবসময়ই পড়নের কাপড় ভেজা থাকে। ঘন ঘন সংক্রমণ ও পেলভিক অঞ্চলে জ্বালাপোড়া করে।
এর সবচেয়ে বড় কারণ- বাধাগ্রস্ত বা দীর্ঘ প্রসব, যেখানে শিশুর অবস্থান বা মায়ের পেলভিস অপর্যাপ্ত থাকায় প্রসব সঠিকভাবে সম্পন্ন হয় না। আর এসব অদক্ষ ধাত্রী বা প্রতিবেশীর মাধ্যমে প্রসব, জরুরি চিকিৎসার অভাব এবং স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছানোর সীমাবদ্ধতার কারণে হয়ে থাকে। এছাড়া অন্য কারণগুলোর মধ্যে উল্লেখ যোগ্য কারণ হিসেবে রয়েছে কম বয়সে গর্ভধারণ বা বাল্যবিবাহ।
প্রতিরোধ ও চিকিৎসা: ডা. মনি আরও জানান, এই রোগে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা দেশের সব চিকিৎসাকেন্দ্রে পাওয়া যায়না। আমাদের জেলা হাসপাতালেও নেই এই চিকিৎসা। এটি অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটি চিকিৎসা পদ্ধতি।
এ সময় ফিস্টুলা প্রতিরোধে কিশোরী বয়সে গর্ভধারণ এড়িয়ে চলা, নিরাপদ প্রসব ব্যবস্থা, যথাযথ স্বাস্থ্যসেবা ও পুষ্টিকর জীবনযাত্রা গুরুত্বপূর্ণ। চিকিৎসার মধ্যে সবচেয়ে কার্যকর হলো সার্জারি, যা প্রায় ৮০-৯৫% ক্ষেত্রে সফল হয়। ছোট ফিস্টুলা ক্যাথেটার বা অন্যান্য সহজ পদ্ধতিতে চিকিৎসা করা যায়। সার্জারির পর মানসিক, সামাজিক এবং অর্থনৈতিক পুনর্বাসনও অপরিহার্য।
ডা. মনি বলেন, আমাদের কোনোভাবেই ১৮ বছরের আগে নারীদের বিয়ে নয় এবং ২০ বছরের আগে সন্তান নেওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।