দেশে এক দিনে ৩৬ জনের দেহে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। মঙ্গলবার সকাল ৮টা থেকে বুধবার সকাল ৮টা পর্যন্ত নমুনা পরীক্ষায় এসব রোগী শনাক্ত হয়। এ নিয়ে মোট আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২০ লাখ ৪৮ হাজার ৪৩ জনে।
বুধবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে পাঠানো করোনাবিষয়ক নিয়মিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ২৪ ঘণ্টায় করোনা থেকে সুস্থ হয়েছেন ৩২ জন। এ পর্যন্ত সুস্থ হয়েছেন ২০ লাখ ১৫ হাজার ১৪৮ জন।
গত ২৪ ঘণ্টায় পরীক্ষা করা হয় ৪০৩টি নমুনা। পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হার ৮ দশমিক ৯৩ শতাংশ। মহামারির শুরু থেকে এ পর্যন্ত মোট শনাক্তের হার ১৩ দশমিক ০৮ শতাংশ।
২০২০ সালের ৮ মার্চ দেশে প্রথম ৩ জনের দেহে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়। এর ১০ দিন পর ওই বছরের ১৮ মার্চ দেশে এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে প্রথম একজনের মৃত্যু হয়। ২০২১ সালের ৫ ও ১০ আগস্ট দুই দিন করোনায় সর্বাধিক ২৬৪ জন করে মারা যান। মোট মৃত্যুর সংখ্যা ২৯ হাজার ৪৮৬ জন।
সারা দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে আরও ৫৩৪ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এ নিয়ে এবছর ডেঙ্গুতে আক্রান্তের মোট রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৬ হাজার ৮১৯ জনে। এসময় নতুন করে আরও পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে। ফলে চলতি বছর রোগটিতে মোট মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১০২ জনে।
আজ মঙ্গলবার সন্ধ্যায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমারজেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম থেকে পাঠানো ডেঙ্গুবিষয়ক নিয়মিত প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানানো হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, সারা দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে ৫৩৪ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। আক্রান্তদের মধ্যে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন এলাকার ১৯৯ জন রয়েছেন। এছাড়া ঢাকা বিভাগে ৯০ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ১১৩ জন, খুলনায় ৫৯ জন, ময়মনসিংহে ১৭ জন ও বরিশালে ৩৭ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সারা দেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন মোট ১৬ হাজার ৮১৯ জন। যাদের মধ্যে ৬৬ দশমিক ১ শতাংশ পুরুষ এবং ৩৩ দশমিক ৯ শতাংশ নারী। ১ জানুয়ারি থেকে ১০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মৃত ১০২ জনের মধ্যে ৫২ শতাংশ নারী এবং ৪৮ শতাংশ পুরুষ।
গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ৬১৫ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এই সময়ের মধ্যে মারা গেছেন ১ জন। চলতি বছর এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে মৃত্যু হয়েছে ৯৭ জনের এবং হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১৬ হাজার ২৮৫ জন।
গতকাল সোমবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের দেওয়া তথ্য থেকে এসব জানা যায়। এ বছর এই প্রথম এক দিনে এত রোগী হাসপাতালে ভর্তি হলেন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, সারা দেশের বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে বর্তমানে ১ হাজার ৫৮২ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি আছেন। যার মধ্যে ঢাকায় ৯২৫ জন, বাকি ৬৫৭ জন ঢাকার বাইরে বিভিন্ন বিভাগে।
এর আগে গত ৭ সেপ্টেম্বরও এডিস মশাবাহিত ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে তিনজনের মৃত্যু হয়। আর ৮ সেপ্টেম্বর মৃত্যু হয় একজনের। তাদের বয়স ১১ থেকে ৬৫ বছরের মধ্যে।
এ বছর গতকাল পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছে ১৫ হাজারের বেশি মানুষ। তাদের বেশির ভাগই পুরুষ। এ ছাড়া নারী ও শিশুরাও মশার কামড়ে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হচ্ছে।
২০২৩ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ১ হাজার ৭০৫ জনের মৃত্যু হয়। পাশাপাশি ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন ৩ লাখ ২১ হাজার ১৭৯ জন।
এডিস মশাবাহিত ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় আরও তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। মারা যাওয়া তিনজনই পুরুষ। তাদের বয়স ১১ থেকে ৬৫ বছরের মধ্যে। এ নিয়ে চলতি বছর এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে মারা গেছেন ৯৫ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে ৪০৩ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
শনিবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম থেকে পাঠানো ডেঙ্গুবিষয়ক এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। এতে বলা হয়, আক্রান্তদের মধ্যে চট্টগ্রাম বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ৯২ জন, ঢাকা বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ৩৬ জন, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে ১১৭ জন, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে ১৩৫ জন, খুলনা বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ১৫ জন ও ময়মনসিংহ বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) আটজন রয়েছেন। গত ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে ২৫২ জন ডেঙ্গুরোগী হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পেয়েছেন।
চলতি বছরের ৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছে ১৫ হাজার ২০৭ জন। এর মধ্যে ৬১.৩ শতাংশ পুরুষ ও ৩৮.৭ শতাংশ নারী রয়েছেন।
২০২৩ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে এক হাজার ৭০৫ জনের মৃত্যু হয়। পাশাপাশি ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন তিন লাখ ২১ হাজার ১৭৯ জন।
এডিস মশাবাহিত ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে গতকাল শনিবার সকাল থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় দেশে ৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। এই সময় ডেঙ্গু নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৪৭৮ জন। আজ রোববার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ অ্যান্ড ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের সংবাদ বিজ্ঞপ্তি থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
বিজ্ঞপ্তি থেকে পাওয়া তথ্য অনুসারে, নতুন করে আক্রান্তদের মধ্যে ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১৫৭ জন, আর ঢাকার বাইরের হাসপাতালগুলোতে ভর্তি হয়েছেন আরও ৩২১ জন রোগী।
চলতি বছর ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে এখন পর্যন্ত ৮৬ জনের মৃত্যু হয়েছে, যাদের মধ্যে ৪৫ দশমিক ৩ শতাংশ পুরুষ এবং ৫৪ দশমিক ৭ শতাংশ নারী।
বিজ্ঞপ্তির তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন মোট ১৩ হাজার ৩১৯ জন। এর মধ্যে ৬১ দশমিক ৪ শতাংশ পুরুষ এবং ৩৮ দশমিক ৬ শতাংশ নারী।
এডিস মশাবাহিত ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় দেশে কারো মৃত্যু হয়নি। তবে এই সময়ে ডেঙ্গু নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১৫৩ জন। আজ শুক্রবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ অ্যান্ড ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের সংবাদ বিজ্ঞপ্তি থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
বিজ্ঞপ্তি থেকে পাওয়া তথ্য অনুসারে, নতুন করে আক্রান্তদের মধ্যে ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৬৮ জন, আর ঢাকার বাইরের হাসপাতালগুলোতে ভর্তি হয়েছেন আরও ৮৫ জন রোগী। চলতি বছর ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে এখন পর্যন্ত ৭৯ জনের মৃত্যু হয়েছে, যাদের মধ্যে ৪৬ দশমিক ৮ শতাংশ পুরুষ এবং ৫৩ দশমিক ২ শতাংশ নারী।
বিজ্ঞপ্তির তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ৩০ আগস্ট পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন মোট ১২ হাজার ৪৯৫ জন। এর মধ্যে ৬১ দশমিক ৪ শতাংশ পুরুষ এবং ৩৮ দশমিক ৬ শতাংশ নারী।
থাইল্যান্ডে মাঙ্কিপক্স বা এমপক্সের নতুন প্রাণঘাতী ধরনের সংক্রমণ শণাক্ত হয়েছে। আজ শুক্রবার বিবিসি বাংলার এক প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে। এশিয়ার ভেতরে এমপক্স ধরা পরার ঘটনা এটিই প্রথম। আর আফ্রিকা মহাদেশের বাইরে এমপক্স শনাক্ত হওয়ার দ্বিতীয় ঘটনা এটি।
থাইল্যান্ডের রোগ নিয়ন্ত্রণ বিভাগ বলছে, এমপক্সে আক্রান্ত ব্যক্তি একজন ইউরোপিয়ান, যার বয়স ৬৬ বছর। তিনি গত ১৪ই অগাস্ট আফ্রিকার একটি দেশ থেকে থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককে পৌঁছান। আফ্রিকান ওই দেশটির নাম জানা যায়নি। পরদিন তার দেহে এমপক্সের কিছু লক্ষণ দেখা দিলে তিনি সঙ্গে সঙ্গে হাসপাতালে যান। তখন জানা যায় যে তিনি এমপক্সের নতুন ধরন ‘ক্লেইড ওয়ানব’ তে আক্রান্ত হয়েছেন। থাইল্যান্ডে অবতরণ করার পর মোট ৪৩ জন ওই আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে এসেছিলো। তাদের সবাইকে এখন ২১ দিনের জন্য পর্যবেক্ষণে রাখা হবে।
বিশ্বের মোট ৪২টি দেশকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসাবে চিহ্নিত করেছে থাইল্যান্ড। তাদের থাইল্যান্ডে আসার ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষার মধ্য দিয়ে যেতে হবে। মূলত, গত বছর গণতান্ত্রিক কঙ্গো প্রজাতন্ত্র থেকে এই রোগের প্রাদুর্ভাব শুরু হয়েছে।
এখন পর্যন্ত সেখানে অন্তত ৪৫০ জন মানুষ এমপক্সে মারা গেছে। এরপর কঙ্গো থেকে এটি আশেপাশের আরও কয়েকটি দেশেও ছড়িয়ে পড়েছে। যেমন– বুরুন্ডি, কেনিয়া, রুয়ান্ডা ও উগান্ডা। এসব দেশে আগে কেউ এমপক্সে আক্রান্ত হয়নি। ক্লেইড ওয়ানবি শুরুতে কঙ্গোর পূর্ব দিকে শনাক্ত হয়েছিলো। কিন্তু এখন তা সীমান্তবর্তী ও আশেপাশের প্রতিবেশী দেশগুলোতেও ছড়িয়ে পড়ছে।
এক সপ্তাহ আগে এশিয়া মহাদেশের বাইরে ক্লেইড ওয়ানবি সর্বপ্রথম ধরা পড়ে সুইডেনে। যে ব্যক্তির দেহে এটি শনাক্ত হয়, তিনিও সম্প্রতি আফ্রিকার কোনও দেশ থেকে সুইডেনে গিয়েছিলেন বলে জানায় দেশটির জনস্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। এবার এশিয়ার দেশ থাইল্যান্ডে প্রথম এমপক্সের ক্লেইড ওয়ানবি ধরনের সংক্রমণ ধরা পড়লো।
২০১৩ সালে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বিভিন্ন পদে তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারীদের লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা সম্পন্ন করে। দুর্নীতি ও আইনগত জটিলতার কারণে এ নিয়োগ পরীক্ষার ফলাফল ২০১৯ সালে প্রকাশিত হয়। আশানুরূপ ফল না পাওয়ায় প্রার্থীরা এবিষয়ে অনুসন্ধান শুরু করেন। অনুসন্ধানে তারা জানতে পারেন, নিয়োগ পরীক্ষায় ফেইল করা প্রার্থীরা (attachment) ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা (সকল প্রমাণ হাইকোর্টে দাখিল করে) কোটাধারীরা নিয়োগের জন্য সুপারিশপ্রাপ্ত হলেও সর্বোচ্চ নাম্বার পাওয়া প্রার্থীরা সুপারিশপ্রাপ্ত হননি (আন্দোলনকারী নিয়োগপ্রার্থীরা)।
এই ফলাফলের বিরুদ্ধে উপযুক্ত সকল প্রমাণ সাপেক্ষে হাইকোর্টে রিট আবেদন করার পর হাইকোর্ট রায় পাওয়ার আগ পর্যন্ত স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে ৬৮ টি পদ রিজার্ভ রাখার নির্দেশ দেয়, যাতে রায়ের ফলাফল প্রার্থীদের পক্ষে এলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর পদ ফাঁকা নেই বা এ প্রকার কোনো অযুহাত দেখাতে না পারে।
২০২২ সালে হাইকোর্ট নিম্নোক্ত রায় প্রদান করে
হাইকোর্ট ৩ মাসের মধ্যে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে রেজাল্ট শিট পুণনিরিক্ষণ করে ৬৮ জন প্রার্থীকে নিয়োগ প্রদান করার নির্দেশ দেয়। পরবর্তীতে ভুক্তভোগীরা আদালত অবমাননার মামলা করলে, আদালত অধিদপ্তরকে ২৮ দিনের সময় বেঁধে দেয়।
দীর্ঘদিন হয়রানি ও মানবেতর জীবনযাপন করায় এবং দায়িত্বে থাকা সকল কর্মকর্তা ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের উপর ভরসা হারিয়ে, ১৮ আগস্ট রোববার ভুক্তভোগী ৬৮ জন পদপ্রার্থী নিয়োগ পাওয়ার আগ পর্যন্ত আমরণ অবস্থান ধর্মঘটের সিদ্ধান্ত নেয়। প্রতিবারের মত এবারেও কিছু নির্দিষ্ট কর্মকর্তা কূটকৌশল ব্যবহার করে তাদের মিথ্যা আশা দেয় এবং পুনরায় কালক্ষেপণের ষড়যন্ত্র করতে থাকে যাতে তাদের অন্যায় প্রতিষ্ঠিত হয়ে যায়।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, বাংলাদেশে এমন আচরণ আমরা মেনে নিতে পারি না। এইরকম ঘটনার পুনরাবৃত্তি যাতে আর না হয় তাই আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি আজ রোববার সকাল ৯টা থেকে, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ডিজি অফিসের(মহাখালী) সামনে আমরণ অবস্থান ধর্মঘট পালন করব।
নতুন এক উদ্বেগের নাম এমপক্স বা মাঙ্কিপক্স। এই রোগে আক্রান্ত হয়ে কঙ্গোতে অন্তত ৪৫০ জনের মৃত্যু হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এমপক্স অত্যন্ত সংক্রামক একটি রোগ। আন্তর্জাতিক উদ্বেগ থেকে আফ্রিকার কিছু অংশে এমপক্সের প্রাদুর্ভাবকে জরুরি জনস্বাস্থ্য অবস্থা ঘোষণা করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বা ডব্লিউএইচও।
এমপক্স কী এবং এর লক্ষণ
প্রথমদিকে প্রাণি থেকে মানুষের শরীরে ছড়ালেও বর্তমানে আক্রান্ত ব্যক্তির থেকেই আক্রান্ত হচ্ছেন অনেকে। এই ভাইরাস গুটিবসন্তের একই গোত্রীয় হলেও তুলনামূলক কম ক্ষতিকারক।
এমপক্সে আক্রান্ত হওয়ার প্রাথমিক লক্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে জ্বর, মাথাব্যথা, ফোলা, পিঠ এবং পেশিতে ব্যথা। এক্ষেত্রে জ্বর হওয়ার পর শরীরে ফুসকুড়ি উঠতে পারে। এসব ফুসকুড়ি মুখ, হাতের তালু, পা এবং শরীরের অন্যান্য অংশে ছড়াতে পারে।
ফুসকুড়িতে ভীষণ চুলকানি হতে পারে এবং সেইসঙ্গে ব্যথা হতে পারে। ফুসকুড়িগুলো পরিবর্তন হয় এবং বিভিন্ন ধাপ পেরিয়ে স্ক্যাব বা গোল গোল পুরু আস্তরে পরিণত হয়ে শেষে পড়ে যায়। যে কারণে দাগ সৃষ্টি হতে পারে।
সংক্রমিত হওয়ার দুই-তিন সপ্তাহের মধ্যে এটি সেরে যেতে পারে। তবে শিশুসহ কারও কারও জন্য এটি মারাত্মক হয়ে উঠতে পারে। সংক্রমণ গুরুতর হলে সেক্ষেত্রে মুখ, চোখ এবং যৌনাঙ্গসহ পুরো শরীরে ক্ষত তৈরি হতে পারে।
এমপক্স কীভাবে ছড়ায়?
আক্রান্ত ব্যক্তির সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা যেমন যৌন সম্পর্ক, সরাসরি সংস্পর্শ কিংবা কাছাকাছি গিয়ে কথা বলার মাধ্যমে এই রোগ ছড়াতে পারে। ভাইরাসটি ফাটা চামড়া, শ্বাসতন্ত্র বা চোখ, নাক বা মুখ দিয়ে শরীরে প্রবেশ করতে পারে। এই ভাইরাসের মাধ্যমে দূষিত হয়েছে এমন জিনিস যেমন বিছানা, পোশাক এবং তোয়ালে স্পর্শ করলে তার মাধ্যমেও এমপক্স ছড়াতে পারে।
বানর, ইঁদুর এবং কাঠবিড়ালির মতো কোনো প্রাণি যদি এতে সংক্রমিত হয় আর কেউ যদি ওই সংক্রমিত প্রাণির সঙ্গে বেশি কাছাকাছি আসে তবে তিনিও এতে আক্রান্ত হতে পারেন। ২০২২ সালের বৈশ্বিক প্রাদুর্ভাবের সময় বেশিরভাগ ক্ষেত্রে যৌন সম্পর্কের মাধ্যমে ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়েছিল।
কঙ্গোর বর্তমান প্রাদুর্ভাবের বড় একটি কারণ আক্রান্ত ব্যক্তির সঙ্গে যৌন সম্পর্ক ও ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ। ছোট শিশুসহ অন্যান্য ঝুঁকিপূর্ন সম্প্রদায়ের মধ্যে এমপক্স পাওয়া গেছে।
মানুষের উপকারে আসবে এমন প্রকল্প গ্রহণ ও হাসপাতাল তৈরি করা হবে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন।
তিনি বলেন, ‘মানুষের উপকারে আসবে এমন প্রকল্প, হাসপাতাল তৈরির কাজই আমি করব। একটা দরিদ্র মানুষ রংপুর থেকে ডায়ালাইসিসের জন্য ঢাকা আসবে সেটা তো হয় না। আমি এমন প্রকল্প নিয়েই কাজ করব যেটা আমি শেষ করতে পারব। সেটা এখন থেকেই করতে হবে। স্বাস্থ্য খাতে যে বরাদ্দ দেওয়া হয় তার সদ্ব্যবহার করতে পারলে অনেক কিছুই করা সম্ভব।’
স্বাস্থ্যমন্ত্রী আজ সোমবার দুপুরে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান (বিআইডিএস) কর্তৃক আয়োজিত ‘বিপর্যয়কর স্বাস্থ্য অভিঘাতের ফলে বাংলাদেশে দারিদ্র্য’ শীর্ষক সেমিনারে এসব কথা বলেন।
সামন্ত লাল সেন বলেন, ‘প্রান্তিক পর্যায়ে জনগণের যথাযথ স্বাস্থ্যসেবা যদি আমি নিশ্চিত করতে না পারি, ঢাকায় বসে যতই লেকচার দিই কোনো লাভ হবে না। গ্রামাঞ্চলে এবং প্রান্তিকপর্যায়ে স্বাস্থ্যসেবা উন্নত করাটাকে আমি সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিচ্ছি।’
অ্যান্টিবায়োটিকের পর্যাপ্ত ব্যবহার প্রসঙ্গে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, প্রেসক্রিপশন ছাড়া সামান্য সর্দি জ্বর হলেই অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করা হচ্ছে। অ্যান্টি মাইক্রোবিয়াল রেসিস্টেন্ট ভয়ানক একটা জিনিস। এ প্রসঙ্গে আমি বলব ডিজি ড্রাগকে আরও শক্ত হতে হবে। ফার্মেসিতে গিয়ে কঠোরভাবে মনিটরিং করতে হবে।
প্রেসক্রিপশন ছাড়াই অ্যান্টিবায়োটিক বিক্রি বন্ধে ডিজিটাল প্রেসক্রিপশন সিস্টেম চালু করার চেষ্টা করা হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, ইলেকট্রনিক প্রেসক্রিপশন সিস্টেম যদি চালু করা যায় তাহলে যথাযথ মনিটরিং করা সম্ভবপর হবে, ওষুধের যথেচ্ছ এবং মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করা যাবে।
স্বাস্থ্য সুরক্ষা আইন নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানান, ‘আমি মন্ত্রী হবার মেয়াদ মাত্র ছয় মাস। এ ছয় মাসে স্বাস্থ্য সুরক্ষা আইন নিয়ে আমি অন্তত সাতটি সভা করেছি। আমি যেভাবেই হোক এটা মহান জাতীয় সংসদে নিয়ে যাব। কারণ রোগী এবং চিকিৎসক উভয়ের সুরক্ষা নিশ্চিত করাটা আমার দায়িত্ব।’
বিআইডিএসের মহাপরিচালক ড. বিনায়ক সেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে গবেষক ড. আব্দুর রাজ্জাক বাংলাদেশ পারিবারিক আয় ব্যয় জরিপের ২০২২ (এইচআইইএস) ভিত্তিতে তার গবেষণা প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।
কোনো ক্লিনিকে অনিয়ম পেলে সেই ক্লিনিক বন্ধ করে দেওয়া হবে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন। আজ রোববার দুপুরে দিনাজপুর এম. আব্দুর রহিম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।
মন্ত্রী আরও বলেন, দিনাজপুর এম. আব্দুর রহিম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সিটিস্ক্যানসহ বেশ কিছু মেশিন নষ্ট রয়েছে। সেগুলো আমরা দ্রুত ঠিক করার ব্যবস্থা করব। আমি প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য চিকিৎসা ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে কাজ করছি। আমি চাই না, দিনাজপুরের কোনো রোগী ঢাকায় যাক। দিনাজপুরে সব ধরনের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হবে। চিকিৎসকরা থাকেন না কেন, বা কোন সমস্যা, সেটা আমি দেখব। আমার একটিই নির্দেশ, যখন যেখানে যেই চিকিৎসককে বদলি করা হবে, তাকে সেখানে থাকতে হবে। আমরা কারো সঙ্গে অন্যায় আচরণ করব না। এর জন্য কোনো ছাড় নেই।
হাসপাতাল পরিদর্শনকালে জাতীয় সংসদের হুইপ ইকবালুর রহিম এমপি ও স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
পরে স্বাস্থ্যমন্ত্রী দিনাজপুর ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের নতুন ভবন, আঞ্চলিক ডায়াবেটিক হাসপাতাল ও পরমাণু চিকিৎসা কেন্দ্র পরিদর্শন করেন।
মন্ত্রী-এমপিরা দেশের হাসপাতালে চিকিৎসা নিলে দেশের স্বাস্থ্য খাতের ওপর সাধারণ মানুষের আস্থা ফিরে আসবে বলে মন্তব্য করেছেন স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন। আজ মঙ্গলবার সচিবালয়ে তার কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এ মন্তব্য করেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী।
তিনি বলেন, আমাদের প্রধানমন্ত্রী তো বিদেশ যাচ্ছেন না। তিনি তার চক্ষু তো বাংলাদেশেই পরীক্ষা করিয়েছেন। এভাবে যদি আমাদের সংসদ সদস্য (এমপি) এবং মন্ত্রীরা দেশের হাসপাতালে চিকিৎসা নেন, তাহলে দেশের চিকিৎসাসেবার প্রতি সাধারণ মানুষের আস্থা ফিরে আসবে।
স্বাস্থ্য সুরক্ষা আইনে রোগীদের বিদেশ যাওয়ার প্রবণতা কমবে কি না জানতে চাইলে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, আমি তো জোর করে কাউকে বিদেশ পাঠাচ্ছি না। কেউ যদি তার বাবা বা স্ত্রীকে নিজের পয়সা দিয়ে বিদেশমুখী করে তাহলে সেখানে তো আমার করার কিছুই নেই। আমার দায়িত্ব হচ্ছে মানুষের আত্মবিশ্বাস ফিরিয়ে আনা। মানুষ যেন আমাদের দেশের হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসা করার ভরসা পায়। তারা যেন মনে করে এদেশেও চিকিৎসা আছে। শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে তো বিদেশ থেকেও রোগী আসছেন।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী আরও বলেন, স্বাস্থ্য সুরক্ষা আইন খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি জিনিস। এটা নিয়ে অনেকদিন ধরেই আমরা কাজ করে আসছি। রোগী এবং চিকিৎসকদের সুরক্ষা দিতেই এ আইনটি করা হচ্ছে। শুধু চিকিৎসকদের সুরক্ষা নয়, বরং রোগীরাও যেনো সঠিক সেবা পায় এবং চিকিৎসায় অবহেলা না হয়; এসব নিয়েই এ আইন করা হচ্ছে। এটা এখনো পর্যালোচনার পর্যায়ে আছে। আমি মনে করি এটা খুব গুরুত্বপূর্ণ জিনিস। এটা নিয়ে কয়েকটি মিটিংও আমি করেছি। আমি চেষ্টা করব, যত দ্রুত সম্ভব এটাকে সংসদে নিয়ে যেতে। সে বিষয়ে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।
ডেঙ্গু প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমাদের সব চিকিৎসক ডেঙ্গু চিকিৎসা সম্পর্কে জানেন। ডেঙ্গু নিয়ে আমাদের একটা গাইডলাইন আছে; সেটাও তারা জানেন। আমাদের পর্যাপ্ত স্যালাইন রয়েছে। এসেনশিয়াল ড্রাগস কোম্পানি লিমিটেড (ইডিসিএল)-সহ বিভিন্ন কোম্পানির সঙ্গে আলোচনা করেছি। এখানে আমার পূর্ণ নির্দেশ দেওয়া আছে, যেন কোনোভাবেই স্যালাইনের ঘাটতি না হয়। ওপরওয়ালা মাফ করুন, আমরা কেউই চাই না ডেঙ্গুতে একটা ভয়াবহ পরিস্থিতি সৃষ্টি হোক। যদি হয়েই যায়, তাহলে আমরা মনে করি ওপরওয়ালার ইচ্ছায় সেটা সামলাতে পারবো।
সম্প্রতি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এক জরিপে বলা হয়েছে, ঢাকা মহানগরীর ১৭টি ওয়ার্ড ডেঙ্গুর জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। সিটি করপোরেশনের সঙ্গে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সমন্বয়টা তাহলে কীভাবে হচ্ছে? এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, সমন্বয়টা করতে আমরা কয়েকটি মিটিং করেছি। আমরা স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় এবং দুই মেয়রের সঙ্গেও কথা বলেছি। মিটিং করে দুই মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজটা করতে হবে। এটা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের একার কাজ নয়। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্থানীয় সরকার—এই দুই মন্ত্রণালয়ের সমন্বিত প্রচেষ্টা দিয়েই কাজটা করতে হবে।
বগুড়া জেলা শহরে জগন্নাথ দেবের রথযাত্রায় বিদ্যুৎস্পৃষ্টে আহত হওয়া দুজনকে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে এনে ভর্তি করা হয়েছে। তারা হলেন- চন্দন কুমার দেব (৬৪) ও রঞ্জন চন্দ্র পাল (৪৮)।
তাদের দুজনকে দেখতে হাসপাতালে এসেছিলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন। আজ সোমবার (৮ জুলাই) সকালে তাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী। এসময় তিনি আহতদের খোঁজ খবর নেন, স্বজনদের সঙ্গে কথাও বলেন।
বার্ন ইনস্টিটিউটের জরুরি বিভাগের আবাসিক সার্জন (ভারপ্রাপ্ত) ডা. আহমেদুর রহমান সবুজ এসব তথ্য নিশ্চিত করেন।
তিনি বলেন, জগন্নাথ দেবের রথযাত্রায় বিদ্যুৎস্পৃষ্টে আহত চন্দন কুমার দেব ও রঞ্জন চন্দ্র পালের অবস্থা আশঙ্কাজনক। চন্দনের শরীরের ২৫ ও রঞ্জনের ৯ শতাংশ পুড়ে গেছে। দুজনের মাথায় আঘাত রয়েছে। বর্তমানে দুজনকে হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। সকালে স্বাস্থ্যমন্ত্রী হাসপাতালে এসেছিলেন। দুই রোগীর সঙ্গে তার দেখা হয়েছে। তাদের স্বজনদেরও সঙ্গেও কথা হয়েছে।
গতকাল রোববার বিকেল সোয়া পাঁচটার দিকে শহরের সেউজগাড়ী আমতলা এলাকায় রথযাত্রা বিদ্যুৎস্পৃষ্টে ৫ জনের মৃত্যু হয়। আহত হন ৩০ জন। তাদের মধ্যে দুজন চন্দন ও রঞ্জন। হাসপাতালে অবস্থানরত চন্দনের ছেলে পরাগ দেব জানান, সদর উপজেলার দত্তবাড়ি এলাকায় তাদের বাড়ি। তার বাবা ইসকনের অনুসারী, তাই রথযাত্রায় অংশ নিয়েছিলেন। দুর্ঘটনার খবর শুনে তিনি তার বাবার খোঁজ নিয়েছিলেন। জানতে পারেন চন্দন আহত হয়ে শহীদ জিয়া মেডিকেলে ভর্তি হয়েছে। সেখানে আশঙ্কাজনক পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ায় বাবাকে নিয়ে ঢাকা এসেছেন পরাগ।
রঞ্জন চন্দ্র পালের মেয়ে রাখি পাল জানান, তার বাবা রথযাত্রার পেছনে ছিলেন। মা ও ছোট দুই বোন ছিলেন সামনে। রথের ওপরের অংশ বিদ্যুতের তারের সঙ্গে সংস্পর্শ হলে রথ ধরে থাকা তার বাবা বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হন। স্থানীয়রা তাকে হাসপাতালে ভর্তি করে। সেখান থেকে তাকে শেখ হাসিনা বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে আনা হয়েছে।
সংসদ সদস্যদের নিজ নিজ এলাকার হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন। মন্ত্রী বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রীও তো দেশেই চিকিৎসা নেন। আপনারা মাননীয় সংসদ সদস্যরা যার যার এলাকার স্থানীয় হাসপাতালে গিয়ে যদি নিয়মিত চেকআপ করান, চিকিৎসা নেন, তাহলে হাসপাতালের চিত্র পাল্টে যাবে। হাসপাতালে চিকিৎসা সেবার মান উন্নত হবে। দেশের চিকিৎসার প্রতি সাধারণ মানুষের আস্থা ফিরে আসবে। মানুষ চিকিৎসার জন্য আর বিদেশে যাবে না।’
শনিবার সকালে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সম্মেলন কক্ষে চিকিৎসক ও কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় স্বাস্থ্যমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘রোগী যেন উপযুক্ত চিকিৎসা পায় সেটি দেখা যেমন আমার দায়িত্ব, তেমনি ডাক্তাররাও যেন চিকিৎসা সেবা দিতে গিয়ে সুরক্ষা পান, সেটি দেখাও আমার দায়িত্ব। রোগী ও ডাক্তার উভয়কেই সুরক্ষা দেওয়ার দায়িত্বটা আমার। একজন চিকিৎসকের জন্য আমি সব ধরনের সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা করতে চাই। মহিলা (নারী) ডাক্তারদের রাতে ডিউটি করার সময় যেন কোনো ধরনের অসুবিধা না হয়, তার জন্য আমি কাজ করছি।’
চিকিৎসকদের যেখানে পদায়ন করা হবে, সেখানে কাজ করার মানসিকতা থাকতে হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী আমাকে একটা অনুশাসন দিয়েছেন। তিনি বলেছেন যার যেখানে পোস্টিং, সেখানেই তাকে চাকরি করতে হবে। কেউ যদি যেতে না চায় বা আসতে না চায়, তাকে বলবেন চাকরি ছেড়ে দিতে। সুতরাং যাকে যেখানে পোস্টিং দেওয়া হবে সেখানে তাকে যেতেই হবে।’
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে গাইনি চিকিৎসকরা ঢাকায় চলে যেতে চান, এটি দুঃখজনক। সবাই যদি ঢাকায় যেতে চান তাহলে চট্টগ্রাম চলবে কেমন করে?’
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক ও কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (হাসপাতাল) ডা. আবু হোসেন মো. মঈনুল আহসান, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ তসলিম উদ্দিন, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক সাহেনা আক্তার, চট্টগ্রাম জেলার সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইলিয়াস চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন।
হাসপাতালে অভিযান নিয়ে মন্ত্রীর ব্যাখ্যা
দেশের বিভিন্ন হাসপাতাল পরিদর্শন প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, ‘আমি ঠিক করেছি, ঢাকায় দুই দিনের বেশি থাকব না। সারা দেশের চিকিৎসাব্যবস্থা আমি নিজে গিয়ে দেখব। সাংবাদিক ভাইয়েরা লেখেন, আমি না কি অভিযান চালাই। আমি অভিযান চালাই না, পরিদর্শন করি। অভিযান তো হয় জঙ্গিদের বিরুদ্ধে, আসামিদের বিরুদ্ধে। আমি কার বিরুদ্ধে অভিযান চালাব? প্রত্যেকটা রোগী সুচিকিৎসা পাচ্ছে কি না, ডাক্তাররা কীভাবে কাজ করছে, তারা সুরক্ষিত আছে কি না সেটা দেখার জন্য আমি পরিদর্শনে যাই।’
হাসপাতালে জনবল ও সরঞ্জাম সংকটে মন্ত্রীর অনুশোচনা
হাসপাতালে জনবল ও সরঞ্জাম সংকটে তথ্য উল্লেখ করে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আমি গতকাল চট্টগ্রামে এসে একটা হাসপাতালে গিয়েছিলাম। সেখানে গিয়ে আমার মন খারাপ হয়ে গেছে। একটা হাসপাতালে যদি ইমার্জেন্সি ডাক্তার না থাকে, অক্সিজেন সিলিন্ডার খালি থাকে তাহলে তারা রোগীকে কী সেবা দেবে? প্রাইভেট ক্লিনিক অবশ্যই চলবে, আমি তার বিরুদ্ধে নই। কিন্তু তাদের সব নিয়মকানুন মেনে চলতে হবে। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এমআরআই মেশিন নষ্ট, সিটি স্ক্যান নষ্ট- এটা শুনতেও আমার কাছে খারাপ লাগে। এগুলো জরুরি ভিত্তিতে ঠিক করার জন্য যা যা করা দরকার, আমি করব।’
‘কিছুদিন আগে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ হয়েছে। আমি অনেক কষ্টে সময় বের করিয়ে মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদেরও নিয়ে গিয়েছিলাম। সেখানে আমরা স্বাস্থ্যখাত নিয়ে প্রেজেন্টেশন মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে দেখিয়েছিলাম। স্বাস্থ্যখাত নিয়ে সেখানে বিস্তারিত খোলামেলা আলোচনা হয়েছে। আমরা যে প্রসিডিওর, মডেল তৈরি করেছি সেটি অনুযায়ী কাজ করতে পারলে স্বাস্থ্যখাতে ভালো কিছু হবে।’
মতবিনিময়ের আগে স্বাস্থ্যমন্ত্রী চমেক হাসপাতালের ইউরোলজি, পেডিয়াট্রিক, শিশু হেমাটোলজি ও অনকোলজি বিভাগ এবং কাজ শুরুর জন্য অপেক্ষমাণ বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের জন্য নির্ধারিত স্থান পরিদর্শন করেন।
শিগগিরই শুরু হচ্ছে বার্ন ইউনিটের কাজ
সভায় বার্ন ইউনিট প্রসঙ্গে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা এখন চূড়ান্ত পর্যায়ে চলে গেছি। এটি যেহেতু একনেকে পাস হয়ে গেছে, আর কোনো সমস্যা নেই। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী চীন সফরে যাচ্ছেন, তিনি দেশে ফিরলে ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের কাজটা করানোর ইচ্ছে আছে আমার। এ মাসেই কিংবা যত দ্রুত সম্ভব এটা করানোর চেষ্টা করব। চীনের প্রতিশ্রুতি হচ্ছে, দেড় থেকে দুই বছরের মধ্যে তারা ভবন নির্মাণের কাজটা শেষ করবে। জনবল-যন্ত্রপাতি নিয়ে আমরা কাজ করছি। আমি যেভাবে শেখ হাসিনা বার্ন ইনস্টিটিউট এক দিনে পুরোপুরি চালু করতে পেরেছিলাম, এক্ষেত্রেও আমার টার্গেট সেটিই।’
অভিযোগের সত্যতা পেলেন না মন্ত্রী
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী যান হাটহাজারী উপজেলার জোবরা গ্রামে একটি কমিউনিটি ক্লিনিকে। সেখানে তিনি নিজের ডায়াবেটিস ও রক্তচাপ পরীক্ষা করেন। এরপর তিনি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স পরিদর্শন করেন। সেখানে সেবা নিতে আসা রোগীরা নানা অভিযোগ করলেও স্বাস্থ্যমন্ত্রী দৃশ্যত সেগুলোর প্রমাণ পাননি।
মন্ত্রী আসার খবরে হাসপাতালের চিত্র পাল্টে যায়। ডাক্তার, নার্স, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উপস্থিতি ছিল শতভাগ। যদিও এর আগে রোগী ও তাদের অভিভাবক এবং স্থানীয়রা দাবি করেন, হাসপাতালে নিয়মিত চিকিৎসক পাওয়া যায় না। পর্যাপ্ত সেবাও মেলে না।
পরিদর্শনের পর স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন এসব অভিযোগ খতিয়ে দেখা হবে জানিয়ে সাংবাদিকদের বলেন, ‘ওভারঅল এখানে চিকিৎসা ব্যবস্থা নিয়ে আমি খুশি মোটামুটি। ১০১টা নরমাল ডেলিভারি হয়েছে। আমার মনে হয় এটা একটা ভালো উদাহরণ। এ উদাহরণ যদি সারা দেশে করতে পারি, তাহলে প্রসূতির স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে ভালো উন্নতি হবে।’
‘এখন থেকে আমি পুরো দেশ ঘুরব। মন্ত্রী হিসেবে তো আমার কিছু কাজ আছে, যখনই ফাঁক পাব, আমি বেরিয়ে পড়ব। বাংলাদেশের প্রান্তিক জনগোষ্ঠী যদি ভালো স্বাস্থ্যসেবা পায়, তাহলে ঢাকা শহরে ভিড় হবে না, চট্টগ্রাম শহরেও ভিড় হবে না। এখানে (উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স) দেখলাম এত রোগীর মধ্যে মাত্র ছয়জন ডাক্তার। আমি এগুলো নিয়ে কাজ করছি। এ হাসপাতালকে এক শ শয্যায় উন্নীত করার চেষ্টা করব।’
‘আমার টার্গেট সবকিছু দেখা, শুধু বেসরকারি হাসপাতাল নয়, সরকারি হাসপাতালও দেখা। আমি মন্ত্রী, আমার কাজ হচ্ছে সারা দেশের মানুষের জন্য। সরকারি চিকিৎসা দেখাও আমার দায়িত্ব, বেসরকারি চিকিৎসা দেখাও আমার দায়িত্ব। মানুষ যেন ভালো চিকিৎসা পায়, সেজন্য আমি মাঠে নেমেছি। এ কার্যক্রম আমি চালিয়ে যাব। প্রান্তিক পর্যায়ে কমিউনিটি, ইউনিয়ন, উপজেলা, জেলা- সবখানে আমি যাব।’