বিশ্বব্যাপী নতুন প্রোস্টেট ক্যান্সারের সংখ্যা আগামী দুই দশকে দ্বিগুণেরও বেশি হবে। কারণ, দরিদ্র দেশগুলো ধনী দেশগুলোর বার্ধক্যের সাথে তাল মিলিয়ে চলেছে। শুক্রবার প্রকাশিত ল্যানসেটের প্রতিবেদনে এই কথা বলা হয়েছে।
জনসংখ্যাগত পরিবর্তনের সমীক্ষার ওপর ভিত্তি করে মেডিকেল জার্নালে বলা হয়েছে, ‘আমাদের অনুসন্ধানগুলো বলেছে যে, বার্ষিক নতুন প্রোস্টেট ক্যান্সার আক্রান্তের সংখ্যা ২০২০ সালে ১৪ লক্ষ থেকে ২০৪০ সালের মধ্যে ২৯ লক্ষে দাঁড়াবে।’
সমীক্ষার পিছনে গবেষকরা বলেছেন আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধি সারা বিশ্বে বর্ধিত আয়ু এবং বয়সের পিরামিডের পরিবর্তনের সাথে যুক্ত।
গবেষকরা বলেছেন, প্রোস্টেট ক্যান্সার পুরুষদের মধ্যে সবচেয়ে ব্যাপক। আক্রান্ত প্রায় ১৫ শতাংশ। এটি বেশিরভাগই ৫০ বছর বয়সের পর আবির্ভূত হয় এবং পুরুষদের বয়স হিসেবে এর আশঙ্কা আরও বৃদ্ধি পায়। উন্নয়নশীল দেশগুলোতে আয়ু বৃদ্ধির সাথে সাথে প্রোস্টেট ক্যান্সারের সংখ্যাও বৃদ্ধি পায়।
তারা জোর দিয়েছিলেন, জনস্বাস্থ্য নীতিগুলো ফুসফুসের ক্যান্সার বা হৃদরোগের ক্ষেত্রে পরিবর্তনকে প্রভাবিত করতে পারে না।
গবেষকরা আরও বলেছেন, কার্যকর চিকিৎসা দেওয়ার জন্য স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষকে উন্নয়নশীল দেশগুলোতে আগে স্ক্রীনিংয়ে উৎসাহিত করতে বলা হয়েছে। কারণ, এই রোগটি প্রায়শই খুব দেরিতে নির্ণয় করা হয়।
ডেঙ্গুতে গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। একই সময় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১ হাজার ১০৯ জন। এর ফলে এখন পর্যন্ত চলতি বছরে ডেঙ্গুতে মৃত্যু হয়েছে ৩৩০ জনের। বুধবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম থেকে পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
ওই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, হাসপাতালে নতুন ভর্তিদের মধ্যে বরিশাল বিভাগে ১০৭ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ১৬৬, ঢাকা বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ১৮৮, ঢাকা উত্তর সিটিতে ২৯২, ঢাকা দক্ষিণ সিটিতে ৯৫ ও খুলনা বিভাগে ১৩৯ জন রয়েছেন। এ ছাড়া রাজশাহী বিভাগে ৫২ জন, ময়মনসিংহ বিভাগে ৪৫, রংপুর বিভাগে ২০ এবং সিলেটে ৫ জন নতুন রোগী ভর্তি হয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, এ বছরের জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত সব মিলিয়ে ৬৮ হাজার ২৪৭ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। এর আগে গত বছর ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন ৩ লাখ ২১ হাজার ১৭৯ জন এবং মারা যান ১ হাজার ৭০৫ জন।
এইডিস মশাবাহিত রোগ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে চলতি বছর মশাবাহিত এ রোগে মৃত্যু বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩১০ জনে। এ সময়ে দেশে এ রোগ নিয়ে আরও ৯৬৬ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তাদের নিয়ে এ বছর ভর্তি রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৬৩ হাজার ১৬৫ জনে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, শনিবার সকাল পর্যন্ত যারা মারা গেছেন তাদের মধ্যে চারজন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে, ঢাকা বিভাগে একজন, বরিশাল বিভাগে তিনজন, খুলনা বিভাগে একজন এবং একজন ময়মনসিংহ বিভাগের হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন।
নতুন রোগীদের মধ্যে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন এলাকায় ৪৫২ জন, ঢাকা বিভাগে ১৬৯ জন, ময়মনসিংহে ৪০ জন, চট্টগ্রামে ৭১ জন, খুলনায় ৮১ জন, রাজশাহী বিভাগে ২১ জন, বরিশাল বিভাগে ১২৫ জন, রংপুর বিভাগে ২ জন এবং সিলেট বিভাগের রোগী ৫ জন ভর্তি হয়েছেন।
এ পর্যন্ত হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়েছেন ৫৮ হাজার ৭২৯ জন রোগী। বর্তমানে দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি আছেন ৪ হাজার ১২৬ জন। তাদের মধ্যে ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি ২ হাজার ৫৫ জন এবং ২ হাজার ৭১ জন ঢাকার বাইরের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি। এ বছর মোট ভর্তি রোগীদের মধ্যে ৩৬ হাজার ৭০১ জন ঢাকার বাইরের রোগী। ঢাকার দুই মহানগর এলাকার হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ২৬ হাজার ২৬৪ জন।
এ বছর ডেঙ্গু ভয়াবহ রূপ পেয়েছে বর্ষা মৌসুমের শেষে এসে। শুধু অক্টোবরেই ৩০ হাজার ৮৭৯ জন এ রোগ নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন, যা সারা বছরের মোট ভর্তি রোগীর অর্ধেক। এর অক্টোবরে ডেঙ্গুতে প্রাণ গেছে ১৩৪ জনের, যা বছরের মোট মৃত্যুর ৪৪ শতাংশ।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি ও মৃত্যুর তথ্য রাখে ২০০০ সাল থেকে। এর মধ্যে ২০২৩ সালে এ রোগ নিয়ে সবচেয়ে বেশি ৩ লাখ ২১ হাজার ১৭৯ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়। ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে সবচেয়ে বেশি ১ হাজার ৭০৫ জনের মৃত্যুও হয় ওই বছর।
ফল শরীরের পুষ্টির চাহিদা মেটাতে সাহায্য করে। একেক ফলের কার্যকারিতায় রয়েছে ভিন্নতা। স্বাস্থ্যকর যেসব ফল রয়েছে সেসবের মধ্যে ব্লুবেরি উল্লেখযোগ্য। সম্প্রতি এক গবেষণায় দেখা গেছে, দৈনিক অল্প কিছু ব্লুবেরি খেলে স্বাস্থ্য ভালো থাকবে। কারণ এটি রক্তচাপ ও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে এবং স্মৃতিশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে।
ব্লুবেরির পাশাপাশি স্ট্রবেরি, রাস্পবেরি, ব্ল্যাকবেরি ও চেরির মতো বেরি জাতীয় ফলে অনেক বেশি পরিমাণে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, ভিটামিন ও ফাইবার রয়েছে। ফলগুলোর এসব বৈশিষ্ট্য রোগ প্রতিরোধে এবং সামগ্রিক স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সাহায্য করে।
ইন্টারন্যাশনাল স্পোর্টস নিউট্রিশন সংস্থার জার্নালে প্রকাশিত গবেষণায় বলা হয়, ব্লুবেরি রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ, ধমনির দৃঢ়তা এবং অ্যানডোথেলিয়াল ফাংশন (রক্তনালিগুলো ঘিরে থাকা কোষের একটি স্তর, যা রক্তপ্রবাহ এবং পার্শ্ববর্তী টিস্যুগুলোরর মধ্যে আদান-প্রদান নিয়ন্ত্রণ করে) উন্নত করতে সাহায্য করে।
আবার ২০২১ সালে প্রকাশিত ‘নিউট্রিয়েন্টস’ জার্নালে প্রকাশিত গবেষণায় বলা হয়, ব্লুবেরি রক্তের গ্লুকোজ বা শর্করা পরিচালনা এবং ইনসুলিন স্তর উন্নত করতে সাহায্য করে। গবেষণায় আরও বলা হয়, যারা ১২ সপ্তাহ ধরে প্রতিদিন অর্ধেক কাপ ব্লুবেরি খেয়েছেন, তাদের দ্রুত শেখার ক্ষমতাসহ বিভিন্ন নির্বাহী কার্যক্রমে (যেমন: সিদ্ধান্ত গ্রহণ, পরিকল্পনা, মনোযোগ, কাজ পরিচালনা ইত্যাদি) উন্নতি হয়েছে। গবেষণায় অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে যারা ব্লুবেরি খেয়েছেন, তারা দৈনন্দিন কাজে ভালো পারফরম্যান্স দেখিয়েছেন এবং স্মৃতিশক্তিরও উন্নতি হয়।
আরেক গবেষণা ‘অ্যান্টি-অক্সিডেন্টস’ জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে। সে গবেষণাপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে, ব্লুবেরি ত্বকের ইলাস্টিসিটি বা স্থিতিস্থাপকতা বাড়ায় এবং ত্বকের খসখসে ভাব কমাতে সাহায্য করে। এ প্রমাণগুলো ইঙ্গিত দেয় যে, ব্লুবেরি জ্ঞানীয় দক্ষতা অবক্ষয় প্রতিরোধে সাহায্য করতে পারে। তবে ব্লুবেরি কোনো জাদুকরী খাবার নয় এবং ডিমেনশিয়ার প্রভাবিত হওয়ার ক্ষেত্রে জিনগত উপাদানও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
এছাড়া অনেক গবেষণা জানা যায়, খাদ্য, ব্যায়াম এবং একটি স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন জ্ঞানীয় দক্ষতা এবং স্মৃতির প্রভাব উন্নত বা অন্তত ধরে রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। স্বাস্থ্য ভালো রাখতে অন্যান্য পদক্ষেপও নেওয়া যায়-
ভিডিও গেম, শারীরিক ব্যায়াম ও মস্তিষ্কের স্বাস্থ্যের মধ্যে রোমাঞ্চকর যোগসূত্র খুঁজে পাওয়া গেছে সাম্প্রতিক সময়ের এক গবেষণায়। এ গবেষণায় ইঙ্গিত মিলেছে, ভিডিও গেম খেলা মানুষের বোঝার ক্ষমতা যেমন স্মৃতিশক্তি ও যুক্তিবিচার বাড়িয়ে দিতে পারে, যেখানে নিয়মিত ব্যায়াম মানুষের মানসিক স্বাস্থ্য উন্নত করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তবে প্রতিটি প্রভাব একসঙ্গে নয়, বরং মানসিক স্বাস্থ্যের ভিন্ন ভিন্ন ক্ষেত্রে কাজ করে থাকে।
গবেষণাটি পরিচালিত হয়েছে ‘ম্যানচেস্টার সায়েন্স ফেস্টিভাল’ আয়োজনের কথা মাথায় রেখে, যার প্রিপ্রিন্ট সংস্করণ এখন সবার জন্য উন্মুক্ত। গবেষণায় বিভিন্ন দেশ থেকে দুই হাজারের বেশি মানুষ সাইন আপ করেছেন। প্রথমে তারা নিজেদের দৈনন্দিন জীবন নিয়ে একটি ‘লাইফস্টাইল’ জরিপ পূরণ করেন। এর পর তারা বেশ কিছু অনলাইন ব্রেইন গেম খেলেন, যেগুলো বিভিন্ন মানসিক দক্ষতা যেমন স্মৃতিশক্তি, মনযোগ ও মৌখিক সক্ষমতা পরিমাপ করার উদ্দেশ্যে নকশা করা। এইসব গেম সরবরাহ করেছে ‘ক্রেয়স’, যা মেধা পরীক্ষার সুপরিচিত প্ল্যাটফর্ম।
গেমিং এবং ব্যায়াম কীভাবে বিশ্লেষণক্ষমতা ও মানসিক সাস্থ্য উভয় ক্ষেত্রেই প্রভাব ফেলে, এ গবেষণায় সেদিকটি খতিয়ে দেখেছেন গবেষণাটির প্রধান ও ওয়েস্টার্ন ইউনিভার্সিটি’র নিউরোবিজ্ঞানী আড্রিয়ান ওয়েন। প্রাথমিকভাবে এ গবেষণার প্রায় এক হাজার অংশগ্রহণকারী সব কাজ সম্পন্ন করতে পেরেছিলেন। ফলাফলে দেখা গেছে, যারা প্রতি সপ্তাহে পাঁচ ঘণ্টা বা এর চেয়ে বেশি সময় ভিডিও গেম খেলেছেন, তাদের বিশ্লেষণ ক্ষমতায় উন্নতি লক্ষ্য করা গেছে। এর মানে সমস্যার সমাধান, স্মৃতিশক্তি ও যুক্তিবিচারের মতো কাজে তাদের মস্তিষ্ক আগের চেয়েও দক্ষ উপায়ে কাজ করেছে।
এদিকে, উদ্বেগ বা বিষণ্ণতার মতো মানসিক সমস্যার ক্ষেত্রে গেমিংও কাজে আসেনি। অন্যদিকে, যেসব অংশগ্রহণকারী বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ‘ডব্লিউএইচও’র নির্দেশিকা অনুসরণ করে প্রতি সপ্তাহে অন্তত ১৫০ মিনিট শারীরিক ব্যায়াম করেছেন, তাদের মানসিক স্বাস্থ্যে উন্নতি দেখা গেছে। অংশগ্রহণকারীদের ১২ শতাংশই দাবি করেছেন, তাদের মধ্যে বিষণ্ণতার কোনো লক্ষণ নেই। আর তাদের নয় শতাংশের মধ্যে উদ্বেগের লক্ষণ দেখা যায়নি। তবে তাদের বিশ্লেষণ ক্ষমতায় তেমন উন্নতিও লক্ষ্য করা যায়নি।
যারা এরইমধ্যে উৎকণ্ঠা অথবা বিষণ্ণতায় ভুগছেন, এই গবেষণার ফলাফল শুধু তাদের ওপরই প্রভাব ফেলেনি, বরং যাদের শুরুতে এমন কোনো লক্ষণ ছিল না বা একেবারেই সামান্য ছিল, তাদের ক্ষেত্রেই সবচেয়ে বড় পরিবর্তন লক্ষ্য করা গেছে। এতে দেখা যায়, নিয়মিত ব্যায়াম ভালো মানসিক স্বাস্থ্য রাখার ক্ষেত্রে সাহায্য করতে পারে।
মস্তিষ্ক ও মানবদেহ কীভাবে একে অপরের সঙ্গে সংযুক্ত, তা মানুষের পক্ষে পুরোপুরি বুঝে ওঠা সম্ভব না হলেও এ গবেষণার ফলাফল রোমাঞ্চকর এক দৃষ্টিভঙ্গি দেখাচ্ছে বলে প্রতিবেদনে লিখেছে বিজ্ঞানভিত্তিক সাইট নোরিজ। উদাহরণ হিসেবে, আমরা নিজেদের দৈনন্দিন অভিজ্ঞতা থেকে বুঝতে পারি, ক্ষুধা মানুষের মনোযোগে ব্যাঘাত ঘটাতে পারে বা মানসিক চাপ থেকে শারীরিক উত্তেজনা তৈরি হতে পারে। তবে এসব প্রভাব কীভাবে কাজ করে, তা বোঝা এখনো বড় বৈজ্ঞানিক চ্যালেঞ্জ।
এডিস মশাবাহীত রোগ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় আরও চারজনের মৃত্যু হয়েছে। ফলে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৪১ জনে।
একইসঙ্গে এই সময়ে ভাইরাসটিতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন আরও ১ হাজার ১২১ জন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ডেঙ্গুবিষয়ক বিজ্ঞপ্তি থেকে আজ শনিবার এ তথ্য জানা গেছে।
বিজ্ঞপ্তি থেকে জানা যায়, মৃত চারজনের মধ্যে দুজন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের বাসিন্দা, একজন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের বাসিন্দা এবং একজন খুলনার বাসিন্দা।
অপরদিকে আক্রান্তদের মধ্যে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন এলাকার ৪৪৯ জন রয়েছেন। এছাড়াও ঢাকা বিভাগে ১৮৪ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ১৪৯ জন, বরিশাল বিভাগে ১৪৬ জন, খুলনা বিভাগে ১১২ জন, ময়মনসিংহ বিভাগে ২৫ জন, রাজশাহী বিভাগে ৪৪ জন, রংপুর বিভাগে ১০ জন এবং সিলেট বিভাগে ২ রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ১৯ অক্টোবর পর্যন্ত সারা দেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন মোট ৪৮ হাজার ৫৮২ জন। যাদের মধ্যে ৬৩ দশমিক ২০ শতাংশ পুরুষ এবং ৩৬ দশমিক ৮০ শতাংশ নারী। এছাড়া এখন পর্যন্ত মৃত ২৪১ জনের মধ্যে ৫২ দশমিক ৭০ শতাংশ নারী এবং ৪৯ দশমিক ৩০ শতাংশ পুরুষ।
প্রতি বছর বর্ষাকালে ডেঙ্গুর প্রকোপ দেখা যায়। ২০২৩ সালের জুন মাস থেকে ডেঙ্গু পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করে। গেল বছর দেশে ৩ লাখ ২১ হাজার ১৭৯ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নেন। এর মধ্যে ঢাকায় এক লাখ ১০ হাজার ৮ জন এবং ঢাকার বাইরে চিকিৎসা নিয়েছেন দুই লাখ ১১ হাজার ১৭১ জন।
এর আগে ২০১৯ সালে দেশব্যাপী ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছিলেন ১ লাখ এক হাজার ৩৫৪ জন। ওই সময় চিকিৎসক-স্বাস্থ্যকর্মীসহ প্রায় ৩০০ জনের মৃত্যু হয়েছিল। ২০২০ সালে করোনা মহামারিকালে ডেঙ্গুর সংক্রমণ তেমন একটা দেখা না গেলেও ২০২১ সালে সারাদেশে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হন ২৮ হাজার ৪২৯ জন। ওই বছর ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ১০৫ জনের মৃত্যু হয়েছিল।
এছাড়া ২০২২ সালে ডেঙ্গু নিয়ে মোট ৬২ হাজার ৩৮২ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। ওই বছর মশাবাহিত রোগটিতে আক্রান্ত হয়ে ২৮১ জন মারা যান।
সারা দেশে ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়তে শুরু করেছে। মৃত্যুর পাশাপাশি বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ডেঙ্গুবিষয়ক প্রতিবেদনের তথ্যমতে, চলতি সপ্তাহের শনি থেকে শুক্রবার ডেঙ্গুতে ৩৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া ছয় হাজার ৫৬৬ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
গত সাত দিনের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ১২ অক্টোবর ডেঙ্গুতে মৃত্যু হয় নয়জনের এবং হাসপাতালে ভর্তি হন ৯১৫ জন। ১৩ অক্টোবর চারজনের মৃত্যু এবং ৬৬০ জন হাসপাতালে ভর্তি হন। ১৪ অক্টোবর মৃত্যু হয় একজনের এবং এক হাজার ১৮৬ জন হাসপাতালে ভর্তি হন।
১৫ অক্টোবর আটজনের মৃত্যু হয় এবং এক হাজার ১০৮ জন হাসপাতালে ভর্তি হন, ১৬ অক্টোবর তিনজনের মৃত্যু হয় এবং হাসপাতালে ভর্তি হন এক হাজার ১৮৬ জন। ১৭ অক্টোবর মৃত্যু আটজনের এবং এক হাজার ১০০ জন হাসপাতালে ভর্তি হন ও ১৮ অক্টোবর তিনজনের মৃত্যু হয় এবং ৪১১ জন হাসপাতালে ভর্তি হন।
চলতি বছর এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৪৭ হাজার ৪৬১ জন। এরমধ্যে ছাড়পত্র পেয়েছেন ৪৩ হাজার ৪১৫ জন। মারা গেছেন ২৩৭ জন।
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অধ্যাপক ড. আতিকুর রহমান জানান, ডেঙ্গু এখন সিজনাল নেই, সারা বছরই হচ্ছে। বৃষ্টি শুরু হলে এটা বাড়ছে। ডেঙ্গু প্রতিরোধে মশা নিরোধক ওষুধ ব্যবহারের পাশাপাশি সিটি করপোরেশনে পক্ষ থেকে সব জায়গায় প্রচার-প্রচারণা চালাতে হবে। একইসঙ্গে সবাইকে সচেতন থাকতে হবে।
কীটতত্ত্ববিদ ড. মনজুর চৌধুরী বলছেন, মশা নিধনে শুধু জেল-জরিমানা আর জনসচেতনতা বাড়িয়ে কাজ হবে না। সঠিকভাবে জরিপ চালিয়ে দক্ষ জনবল দিয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে।
উল্লেখ্য, ২০২৩ সালে দেশের ইতিহাসে ডেঙ্গুতে সর্বোচ্চ ৩ লাখ ২১ হাজার ১৭৯ জন রোগী আক্রান্ত এবং ১ হাজার ৭০৫ জনের মৃত্যু হয়।
সুস্থ জীবনের জন্য হৃদপিণ্ড সুস্থ রাখা জরুরি। একটুখানি অবহেলা যেমন হার্টের বড় ক্ষতি করতে পারে, তেমনি সংশয়ে ফেলে দিতে পারে আপনার জীবনকেই। তাই সুস্থ জীবনের হার্ট ভালো রাখার পদ্ধতিগুলো মেনে চলা উচিত। হার্ট ভালো রাখতে কী কী করতে পারেন, আসুন জেনে নেওয়া যাক:
সঠিক খাদ্যাভ্যাস মেনে চলা
সঠিক খাদ্যাভ্যাস ও খাদ্য উপাদান হৃদযন্ত্র ভালো রাখার শ্রেষ্ঠ উপায়।
হৃৎবান্ধব খাদ্যাভ্যাস হলো সঠিক পুষ্টি গ্রহণের প্রথম পদক্ষেপ। যুক্তরাষ্টের মিনোসটার ইউনিভার্সিটি অব রচেস্টরের মায়ো ক্লিনিকের মতে, খাদ্য তালিকায় বেশি করে শাকসবজি, ফল, শস্যদানা রাখা হৃদপিণ্ড সুস্থ থাকার অন্যতম শর্ত। এ ছাড়া স্বাস্থ্যকর চর্বি যেমন অলিভ অয়েল, বাদাম এবং সামুদ্রিক মাছ খাওয়া হার্টের জন্য উপকারী। লাল মাংস, প্রক্রিয়াজাত খাবার এবং অতিরিক্ত লবণ পরিহার করা উচিত।
পর্যাপ্ত ব্যায়াম
অ্যামেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশনের পরামর্শ অনুযায়ী, সপ্তাহে অন্তত ১৫০ মিনিট মাঝারি মাত্রার ব্যায়াম, যেমন হাঁটাহাঁটি, সাইকেল চালানো বা সাঁতার, হার্টের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সাহায্য করে। এর মাধ্যমে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে এবং কোলেস্টেরল কমে যায়।
ধূমপান ত্যাগ
ধূমপান হার্টের জন্য অন্যতম ক্ষতিকর অভ্যাস। ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানাইজশনের মতে, ধূমপান হৃদরোগের প্রধান ঝুঁকি।
ধূমপান বন্ধ করলে ধীরে ধীরে রক্তচাপ ও হৃদরোগের ঝুঁকি কমে আসে এবং শ্বাসপ্রশ্বাসের গুণগত মান উন্নত হয়।
মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ করা
অতিরিক্ত মানসিক চাপ হার্টের ওপর নেতিবাচক প্রভাব সৃষ্টি করে। হার্ভার্ড মেডিক্যাল স্কুলের এক গবেষণায় দেখা গেছে, যোগব্যায়াম এবং নিয়মিত বিশ্রাম মানসিক চাপ কমিয়ে হার্টকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। দীর্ঘস্থায়ী মানসিক চাপ হার্টের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে, তাই মানসিক শান্তি বজায় রাখা জরুরি।
পর্যাপ্ত ঘুম
সুস্থ হার্টের জন্য রাতে পর্যাপ্ত ঘুম অত্যন্ত জরুরি। ন্যাশনাল স্লিপ ফাউন্ডেশনের তথ্য অনুযায়ী, প্রতি রাতে অন্তত ৭-৮ ঘণ্টা ঘুম হার্ট অ্যাটাক এবং স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে। ঘুমের অভাব উচ্চ রক্তচাপ হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বাড়ে।
নিয়মিত রক্তচাপ পরীক্ষা করা
উচ্চ রক্তচাপ নিঃশব্দে হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়। যুক্তরাষ্ট্রের জন হপকিংস বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নিয়মিত রক্তচাপ পরীক্ষা করা এবং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখা হার্ট ভালো রাখার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে স্বাস্থ্যকর খাদ্য ও ব্যায়াম অপরিহার্য।
ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা
অতিরিক্ত ওজন হৃদযন্ত্রকে ওপর অতিরিক্ত চাপে রাখে। ফলে হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ে। যুক্তরাষ্ট্রের ক্লেভল্যান্ড ক্লিনিকের তথ্য অনুযায়ী, নিয়মিত ব্যায়াম এবং সঠিক খাদ্যাভ্যাসের মাধ্যমে স্বাস্থ্যকর ওজন বজায় রাখা সহজ। এর ফরে হৃদরোগের ঝুঁকি অনেকটাই কমে যায়।
অ্যালকোহল নিয়ন্ত্রণ
অতিরিক্ত অ্যালকোহল গ্রহণ হৃদযন্ত্রের ক্ষতি করতে পারে। অতিরিক্ত অ্যালকোহল হার্টের পেশির দুর্বলতা এবং উচ্চ রক্তচাপের কারণ হতে পারে। তাই অ্যালকোহল গ্রহণ কমিয়ে দেওয়া বা একেবারেই বন্ধ করার পক্ষে মত দেন হৃদরোগ বিশেষজ্ঞরা।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ
ডায়াবেটিস এবং হৃদরোগের মধ্যে সরাসরি সম্পর্ক রয়েছে। আমেরিকান ডায়াবেটিস অ্যাসোসিয়েশনের তথ্য অনুযায়ী, ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের হার্ট অ্যাটাক এবং স্ট্রোকের ঝুঁকি বেশি। সঠিক খাদ্যাভ্যাস, ব্যায়াম এবং ওষুধের মাধ্যমে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা হার্ট ভালো রাখার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। হার্ট ভালো রাখতে হলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ রাখুন। প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরিামর্শ নিন।
নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা
প্রতি বছর বা নির্দিষ্ট সময় অন্তর হার্টের জন্য প্রয়োজনীয় পরীক্ষাগুলো করা উচিত, যেমন কোলেস্টেরল পরীক্ষা, ইসিজি ইত্যাদি। নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা আপনার হৃদযন্ত্রের অবস্থা সম্পর্কে আপনি ওয়াকিবহাল থাকবনে, সমস্যার শুরুতেই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পারবেন।
সুতরাং হার্ট ভালো রাখতে হলে স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রা, খাদ্যাভ্যাস এবং নিয়মিত শারীরিক চর্চা মেনে চলা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্য সংস্থাগুলোর এই সুপারিশগুলো হৃদরোগ প্রতিরোধে সহায়তা করতে পারে।
সূত্র: জন হপকিংস মেডিসিন
সুস্থ দাঁত অসুস্থ হতে শুরু করে ক্যাভিটি থেকে। দাঁতের ওপরের স্তরকে বলে অ্যানামেল। মুখে জমে থাকা ব্যাকটেরিয়া এই এনামেলকে সংক্রমিত করে। ধীরে ধীরে এনামেলে ক্ষয়ে যায়। দাঁতে তৈরি হয় গর্ত। শুরু হয় দাঁত ব্যথা।
তীব্র যন্ত্রণা তখন অতিষ্ঠ করে তোলে আপনার জীবনকে। এই যে দাঁতে ক্যাভিটি বা ক্ষত তৈরি হয়, এর পেছনে যতখানি ব্যাকটেরিয়ার ভূমিকা আছে, ঠিক ততখানিই আছে খাবারের ভূমিকা।
বিশেষ করে চিনি ও শর্করা জাতীয় খাবার ব্যাকটেরিয়াদের কাজ সহজ করে দেয়। দাঁতে জমে থাকা খাবার ব্যবহার করে অ্যাসিড তৈরি করে বাকটেরিয়াগুলো। সেই অ্যাসিডই আসলে এনামেলের ক্ষয় করে। ক্যাভিটি বা এনামেলের ক্ষয় থেকে বাঁচতে পারেন সহজই।
এজন্য মেনে চলতে হবে কিছু সহজ নিয়ম। নিয়মিত দাঁত ব্রাশ করুন দিনে অন্তত দুবার ফ্লুরাইডযুক্ত টুথপেস্ট দিয়ে দাঁত ব্রাশ করা উচিত। বিশেষ করে খাবারের পরে ব্রাশ করলে ব্যাকটেরিয়ার বৃদ্ধি কমে।
ব্যবহার করুন ডেন্টাল ফ্লস
শুধু ব্রাশ করলেই দাঁতের সব জায়গা পরিষ্কার হয় না। তাই ফ্লস ব্যবহার করলে দাঁতের ফাঁক থেকে খাবারের কণা এবং প্লাক দূর করা সম্ভব।
চিনি ও মিষ্টি জাতীয় খাবার কম খান
চিনি এবং মিষ্টি জাতীয় খাবার ব্যবহার ব্যাকটেরিয়া দ্বারা দ্রুত অ্যাসিড উৎপন্ন করে। ফলে এতে দাঁতের ক্ষয় হয় বেশি। চিনি বা মিষ্টি জাতীয় খাবার খাদ্যতালিকা থেকে কমিয়ে ফেলুন।
ফ্লুরাইড ব্যবহার
ফ্লুরাইড দাঁতের এনামেল মজবুত করে এবং ক্যাভিটির ঝুঁকি কমায়। তাই ফ্লুরাইডযুক্ত টুথপেস্ট, মাউথওয়াশ ও ডেন্টাস ফ্লস ব্যবহারের দিকে বিশেষ নজর দিন।
ডেন্টিস্টের পরামর্শ
নিয়মিত ডেন্টাল চেকআপ ক্যাভিটির প্রাথমিক লক্ষণ ধরতে সাহায্য করে। এতে সময়মতো চিকিৎসা নেওয়া সম্ভব হয়। তাই নিয়মিত ডেন্টিস্টের পরামর্শ নিন।
সূত্র: অ্যামেরিকান ডেন্টাল অ্যাসোসিয়েশন
ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় আরও আট জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে চলতি বছর ডেঙ্গুতে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ২৩৪ জনে।
এছাড়া ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে গত একদিনে ১ হাজার ১০০ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এ নিয়ে চলতি বছর ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হলেন ৪৭ হাজার ৫০ জন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ডেঙ্গুবিষয়ক বিজ্ঞপ্তিতে আজ বৃহস্পতিবার এসব তথ্য জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে এক হাজার ১০০ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এরমধ্যে মধ্যে ঢাকা সিটি করপোরেশনের ৪০২ জন এবং বাকিরা ঢাকার বাইরের। এ সময়ে হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়েছেন এক হাজার একজন।
চলতি বছর এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৪৭ হাজার ৫০ জন। এর মধ্যে ছাড়পত্র পেয়েছেন ৪৩ হাজার ২৮ জন। মারা গেছেন ২৩৪ জন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, হাসপাতালে নতুন ভর্তিদের মধ্যে বরিশাল বিভাগে ১২১ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ১৪৮ জন, ঢাকা বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ১৮৪, ঢাকা উত্তর সিটিতে ২৪২, ঢাকা দক্ষিণ সিটিতে ১৬০, খুলনা বিভাগে ১৪৩ জন রয়েছেন। এছাড়া ময়মনসিংহ বিভাগে ৩২, রাজশাহী বিভাগে ৪০, রংপুর বিভাগে ২৬ ও সিলেট বিভাগে চারজন ডেঙ্গুরোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
প্রতি বছর বর্ষাকালে ডেঙ্গুর প্রকোপ দেখা দেয়। ২০২৩ সালের জুন মাস থেকে ডেঙ্গু পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করে। গত বছর দেশে তিন লাখ ২১ হাজার ১৭৯ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিয়েছিলেন। যার মধ্যে ঢাকায় এক লাখ ১০ হাজার ৮ জন এবং ঢাকার বাইরে দুই লাখ ১১ হাজার ১৭১ জন।
গত বছর সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন তিন লাখ ১৮ হাজার ৭৪৯ জন ডেঙ্গুরোগী। গত বছর এক হাজার ৭০৫ জন ডেঙ্গুতে মারা যান, যা দেশের ইতিহাসে এক বছরে সর্বাধিক মৃত্যু।
২০১৯ সালে এক লাখ এক হাজার ৩৫৪ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছিলেন এবং প্রায় ৩০০ জন মারা যান। ২০২০ সালে করোনা মহামারির মধ্যে ডেঙ্গুর সংক্রমণ কম ছিল। পরের বছর ২০২১ সালে ২৮ হাজার ৪২৯ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হন এবং ১০৫ জন মারা যান। ২০২২ সালে ডেঙ্গু আক্রান্ত মোট ৬২ হাজার ৩৮২ জন হাসপাতালে ভর্তি হন, যাদের মধ্যে ২৮১ জন মারা যান।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নতুন মহাপরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন পেডিয়াট্রিক সার্জন অধ্যাপক ডা. মো. আবু জাফর। আজ মঙ্গলবার স্বাস্থ্য বিভাগের প্রজ্ঞাপনে এ কথা বলা হয়েছে।
স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের পারসোনেল-২ শাখার জ্যেষ্ঠ সহকারী সচিব মো. আবু রায়হান দোলন স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, বিসিএস (স্বাস্থ্য) ক্যাডারের নিম্নবর্ণিত কর্মকর্তাকে নামের পাশে বর্ণিত পদ ও কর্মস্থলে বদলিপূর্বক পদায়ন করা হলো।
অধ্যাপক ডা. মো. আবু জাফর সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজের (এসএসএমসি) পেডিয়াট্রিক সার্জারি বিভাগের অধ্যাপক। এদিকে একই প্রজ্ঞাপনে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. রোবেদ আমিনকে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগে (পার-১) বদলি করা হয়েছে।
পরবর্তী উপযুক্ত পদায়নের জন্য তাকে এই শাখায় ন্যস্ত করা হয়েছে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ। রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে জনস্বার্থে জারিকৃত এ আদেশ অবিলম্বে কার্যকর হবে বলেও উল্লেখ রয়েছে প্রজ্ঞাপনে।
বাংলাদেশে গত এক দিনে এডিস মশাবাহিত রোগ ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে আটজনের মৃত্যু হয়েছে।
এতে এ বছর এই রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২২৩ জনে। এক বছরে মৃত্যুর এই সংখ্যা তৃতীয় সর্বোচ্চ। এর আগে ২০২৩ সালে ১৭০৫ জন এবং ২০২২ সালে ২৮১ জনের প্রাণ নিয়েছিল ডেঙ্গু। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, আজ মঙ্গলবার হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ১ হাজার ১০৮ জন রোগী। এ নিয়ে এ বছর হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৪ হাজার ৭৬৪ জনে।
গত এক দিনে যারা মারা গেছেন তাদের মধ্যে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকার হাসপাতালে চারজন, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন, চট্টগ্রাম বিভাগ, বরিশাল বিভাগ এবং ঢাকা বিভাগের বিভিন্ন হাসপাতালে মৃত্যু হয়েছে একজন করে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, গতকাল ভর্তি হওয়া নতুন রোগীদের মধ্যে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন এলাকায় ৩৪৯ জন, ঢাকা বিভাগে ২৭০ জন, ময়মনসিংহে ৩০ জন, চট্টগ্রামে ১৬০ জন, খুলনায় ১২২ জন, রাজশাহী বিভাগে ৫২ জন, রংপুর বিভাগে ১৮ জন, বরিশাল বিভাগে ১০১ জন এবং সিলেট বিভাগে ৬ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন।
আজ পর্যন্ত হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়েছেন ৪০ হাজার ৮৬১ জন রোগী। বর্তমানে দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি আছেন ৩ হাজার ৬৮০ জন। তাদের মধ্যে ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি ১ হাজার ৭৬৩ জন; আর ১ হাজার ৯১৭ জন ঢাকার বাইরের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি।
এ বছর মোট ভর্তি রোগীদের মধ্যে ২৫ হাজার ৫৯৭ জন ঢাকার বাইরের রোগী। ঢাকার দুই মহানগর এলাকার হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১৯ হাজার ১৬৭ জন। সেপ্টেম্বর মাসে দেশে সবচেয়ে বেশি ১৯ হাজার ২৪১ জন রোগী ভর্তি হয়েছে। ওই মাসেই সবচেয়ে বেশি ৮৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। অক্টোবরের প্রথম ১৫ দিনে ১৩ হাজার ৮২৮ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। মৃত্যু হয়েছে ৬০ জনের।
এর আগে জানুয়ারি মাসে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন ১ হাজার ৫৫ জন, যাদের মধ্যে ১৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। ফেব্রুয়ারি মাসে হাসপাতালে ভর্তি হয় ৩৩৯ জন, যাদের মধ্যে মৃত্যু হয়েছে তিনজনের। মার্চ মাসে আক্রান্ত হয়েছেন ৩১১ জন; যাদের মধ্যে ৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। এপ্রিল মাসে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৫০৪ জন, যাদের মধ্যে মৃত্যু হয়েছে দুইজনের। মে মাসে ৬৪৪ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন, মৃত্যু হয়েছে ১২ জনের। জুন মাসে ৭৯৮ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন, মৃত্যু হয়েছে ৮ জনের।
জুলাই মাসে ২৬৬৯ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়, তাদের মধ্যে ১২ জনের মৃত্যু হয়। আগস্টে ৬৫২১ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিল, যাদের মধ্যে ২৭ জনের মৃত্যু হয়। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি ও মৃত্যুর তথ্য রাখে ২০০০ সাল থেকে। এর মধ্যে ২০২৩ সালে এ রোগ নিয়ে সবচেয়ে বেশি ৩ লাখ ২১ হাজার ১৭৯ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়। ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে সবচেয়ে বেশি ১৭০৫ জনের মৃত্যুও হয় ওই বছর।
‘কর্মস্থলে মানসিক স্বাস্থ্যকে প্রাধান্য দেওয়ার এখনই সময়’ এই প্রতিপাদ্য নিয়ে পালিত হচ্ছে ‘বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবস-২০২৪’। প্রতিবছরের ১০ অক্টোবর দিবসটি বিশ্বব্যাপী পালিত হয়। এ দিবসটি উপলক্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ক্লিনিকাল সাইকোলজি বিভাগ ও বাংলাদেশ ক্লিনিকাল সাইকোলজি সোসাইটি (বিসিপিএস) সম্প্রতি একটি ওয়েবিনারের আয়োজন করে।
ওয়েবিনারে ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, গবেষক ও বিভিন্ন পেশার মানুষ অংশ নেন। এতে বিশেষ অতিথি ছিলেন সরকারি ডিএনএ ল্যাবের মহাপরিচালক ডা. এ এম পারভেজ রহীম, স্বাস্থ্য অধিপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন) ডা. এবিএম আবু হানিফ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জীববিজ্ঞান অনুষদের ডিন ডক্টর মো. আখতার হোসেন খান।
কি-নোট স্পিকার হিসেবে ওয়েবিনারে অংশ নেন ঢাবির ক্লিনিকাল সাইকোলজি বিভাগের অধ্যাপক ও বিসিপিএসের সভাপতি ড. মুহাম্মদ কামরুজ্জামান মজুমদার। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে যারা মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যায় ভুগছেন তাদের সেবা প্রদান করা অনেক জরুরি। আমরা দেখতে পাই মানসিক স্বাস্থ্য সেবার প্রয়োজন আছে এমন মানুষদের মধ্যে মাত্র ৮ ভাগ মানুষ সেবা নিতে পারছেন, ৯২ শতাংশই মানসিক স্বাস্থ্য সেবার বাইরে রয়ে যান।’
ড. মুহাম্মদ কামরুজ্জামান মজুমদার বলেন, ‘মানসিক স্বাস্থ্য সেবা খাতে আমাদের দেশে যে রিসোর্চের ঘাটতি আছে তা এতেই স্পষ্ট হয়। একইসঙ্গে যদি শিশু-তরুণদের চিত্র দেখি তাদের মধ্যে চিকিৎসা ঘাটতির পরিমাণ ৯৪ শতাংশ, মাত্র ৬ শতাংশ চিকিৎসা নিতে পারছেন।’
তিনি বলেন, ‘আমরা কর্মক্ষেত্রকে চিন্তা করি আর্থিক নিরাপত্তার বিবেচনায়, কিন্তু মানসিক স্বাস্থ্যের বিষয়টি এতটা গুরুত্ব পায় না। মানসিক স্বাস্থ্য একটি স্টেট অব ওয়েল বিং, যেখানে আমরা জীবনকে কীভাবে খাপ খাইয়ে নেই, কীভাবে আমাদের অ্যাবিলিটিগুলোকে ব্যবহার করি, কীভাবে আমরা শিখি, শেখাটাকে কাজে প্রয়োগ করি এবং কীভাবে আমরা চারপাশের কমিউনিটিতে অবদান রাখি এই সব বিষয়গুলোই মানসিক স্বাস্থ্যের অংশ। এই মানসিক স্বাস্থ্যের বিষয়টি আমাদের চারপাশের কমিউনিটিতে অবদান রাখতে, সামগ্রিক বিষয়ের সিদ্ধান্ত গ্রহণে, সম্পর্কগুলোকে জোরালো করতে এবং বজায় রাখতে সাহায্য করে।’
তিনি আরও বলেন, ‘গবেষণা বলছে যদি মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা নিরসনে ১ ডলার বিনিয়োগ করা হয় তবে রিটার্ন আসে ৪ ডলার। খুবই সহজ একটি ব্যবসা। আপনি ১০০ টাকা বিনিয়োগ করলে ৪০০ টাকা রিটার্ন পাবেন। এর চেয়ে সহজ ব্যবসা আর কী আছে! কিন্তু তারপরও মানসিক স্বাস্থ্য সেবা খাতে বিনিয়োগ উল্লেখযোগ্য পরিমাণে হচ্ছে না।’
নিউরোসাইকোলজি ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. এমএম জালাল উদ্দীন বলেন, ‘আমাদের দেশে মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যার রোগী সার্বিক স্বাস্থ্য খাতের ১৩-১৪ শতাংশ। অথচ এর বিপরীতে বাজেট মাত্র ০.৫ শতাংশ। সুতরাং আমাদের রিসোর্চের যেমন ঘাটতি আছে আমাদের বাজেটেরও ঘাটতি আছে।’
ওয়েবিনারে ঢাবির নাসিরুল্লাহ সাইকোথেরাপি ইউনিটের পরিচালক ও ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি বিভাগের অধ্যাপক কামাল আহমেদ চৌধুরী বলেন, ‘কর্মক্ষেত্রে মানসিক স্বাস্থ্য নিশ্চিত করতে হলে ব্যক্তি উদ্যোগের চেয়ে প্রাতিষ্ঠানিক উদ্যোগ বেশি প্রয়োজন। কেননা পরিবেশ থাকলে মানসিক স্বাস্থ্য ভালো থাকবে প্রতিষ্ঠান যদি সেটি নিশ্চিত করতে পারে, মানসিক স্বাস্থ্যকে ব্যাহত করে এমন ঘটনা যদি বন্ধ করা যায় তাহলেই কর্মক্ষেত্রে মানসিক স্বাস্থ্য নিশ্চিত করা সম্ভব।’
আইইউবিএটির উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মাহমুদুর রহমান বলেন, কর্মস্থলে এমন নীতিমালা থাকতে হবে, যাতে কর্মীরা বৈষম্যের শিকার না হন। যাতে কর্তৃত্বের ভারসাম্য থাকে।
জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের সহকারী অধ্যাপক ড. জহির উদ্দিন বলেন, কর্মক্ষেত্রে একটি বৈষম্যহীন পরিবেশ গড়ে তোলা প্রয়োজন। কর্মীর যাতে মনে না হয় তার সাথে যথাযথ ব্যবহার করা হচ্ছে। কর্মদক্ষতার ভিত্তিতে যাতে মূল্যায়ন হয়। শান্তিপূর্ণ পরিবেশ তৈরি করা জরুরি।
ওয়েবিনারে সভাপতিত্ব করেন ঢাবির ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান ও বিসিপিএসের সাধারণ সম্পাদক ড. মো. শাহানূর হোসেন। সরকারি জরিপের সর্বশেষ তথ্য উল্লেখ করে তিনি বলেন, ১৮ দশমিক ১৭ শতাংশ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের মধ্যে মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা আছে। এর মধ্যে ডিপ্রেশন অ্যাংজাইটি, সোমাটাইজেশন ডিসঅর্ডার এগুলো মিলিয়ে ১৩ দশমিক ৯ শতাংশ এবং বাকিগুলো অন্যান্য ডিসঅর্ডারের মধ্যে পড়ে। এতে স্পষ্ট যে, ডিপ্রেসন অ্যাংজাইটি, সোমাটাইজেশন ডিসঅর্ডার বাংলাদেশের প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে প্রধান মানসিক সমস্যা। এ ছাড়া ১২ দশমিক ৬ শতাংশ শিশু-কিশোরদের মানসিক সমস্যা আছে।
তিনি বলেন, ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি বিভাগে এম.এস, এম.ফিল থিসিস মিলিয়ে প্রতিবছরই ২৫/৩৫টি গবেষণা হয়। এর মধ্যে ২০১৬ সালের এক গবেষণায় দেখা গেছে দেশের সরকারি জরিপের তুলনায় তিনগুন বেশি মানুষ মানসিক সমস্যার মধ্যে রয়েছেন। একটা হলো অসুস্থতা আরেকটি হলো তীব্র লেভেলের মানসিক সমস্যা যারা মনে করে তাদের মানসিক স্বাস্থ্য সেবা নেয়া প্রয়োজন। এ রকমের মানুষের মধ্যে দেখেছি প্রায় ৫০ শতাংশ মানুষের মধ্যে মডারেট-২ সিভিয়ার লেভেলের অ্যাংজাইটি কাজ করে এবং এটি তাদের প্রাত্যাহিক জীবনকে প্রভাবিত করে। এছাড়া প্রায় ৩৯ শতাংশ মানুষের মধ্যে ডিপ্রেশন আছে।
তিনি বলেন, এই যে একটা বড় জনগোষ্ঠীর মধ্যে মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা আছে তারা সবাই যে সেবা নিতে পারেন বা সেবা নিতে আসেন তা কিন্তু নয়। এর একটি বড় কারণ হলো, আমাদের দেশে যে প্রফেশনাল গ্রুপ যারা এই মানুষগুলোকে সেবা দিবেন তাদের সংখ্যা খুবই অপ্রতুল। যেমন- আমরা যদি এমবিবিএস ডাক্তারদের লেভেল থেকে দেখি, বাংলাদেশে প্রতি ১ লক্ষ রোগীর জন্য মাত্র ১৩ জন চিকিৎসক আছেন। এর মধ্যে প্রতি লাখ মানসিক সেবা প্রদানের জন্য প্রতি ১ লক্ষ রোগীর বিপরীতে নিউরোলজিস্ট আছেন ০.১ শতাংশ, সাইকিয়াট্রিস্ট ০.২ শতাংশ এবং সাইকোলজিস্ট (প্রশিক্ষণার্থী থেকে প্রশিক্ষিত মিলিয়ে) আছেন ০.৫ শতাংশ। সুতরাং এত বড় একটি অংশ যেখানে মানসিক সমস্যায় ভুগছেন তারা ঠিকভাবে নেয়ার সুযোগ পাচ্ছেন না। ফলে এই মানুষগুলো চিকিৎসা সেবার বাইরে থেকে যাচ্ছেন।
কর্মক্ষেত্রে কমান্ডিং ভয়েজটা চেঞ্জ করে সহকর্মীর সমস্যা বোঝা দরকার বলে মনে করেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক প্রশাসন ডা. এবিএম আবু হানিফ। তিনি বলেন, দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে সৃষ্ট পদে ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্টদের পোস্টগুলো কেন শূন্য হয়ে আছে, সেটা আরও খতিয়ে দেখা প্রয়োজন। সারা দেশব্যাপী বিভিন্ন হাসপাতালেও ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্ট নিয়োগ করা হবে। পলিসি মেকারদের যুক্ত করে এই খাতে বাজেটের বিষয়টাও খতিয়ে দেখার তাগিদ দেন তিনি।
ওয়েবিনারে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে শিশু নিহতের ঘটনা স্মরণ করেন সরকারি ডিএনএ ল্যাবের মহাপরিচালক ডা. এ এম পারভেজ রহিম। পরিবারে মেন্টাল ট্রমা কতটা কষ্টের তা উল্লেখ করে তিনি মানসিক স্বাস্থ্য দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ২০৩০ সালের মধ্যে এসডিজি অর্জন করতে হয় তাহলে মানসিক স্বাস্থ্যকে গুরুত্ব দিতে হবে। প্রতি বছর আত্মহত্যায় অনেক বড় অংশের মানুষ মারা যায়।
ডা. এ এম পারভেজ রহিম জানান, উপজেলা লেভেলে মেন্টাল হেলথ সেবা এখনও জিরো পর্যায়ে আছে। ১৮ কোটি মানুষকে সেবা দিতে ৫ হাজার প্রশিক্ষিত পেশাজীবী দরকার। হাসপাতালে সাইকোলজিস্টদের রেজিস্ট্রেশনের আওতায় আনতে হবে। তড়িৎ গতিতে এই প্রসেস করতে হবে। তা না হলে মেডিক্যাল এবং নন-মেডিকেল প্রফেশনালদের মাঝে বৈষম্য রয়ে যাবে বলে মনে করেন তিনি।
গত ২৪ ঘণ্টায় এডিস মশাবাহিত রোগ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। যা চলতি বছরে এখন পর্যন্ত এক দিনে সর্বোচ্চ মৃত্যু। পাশাপাশি এই সময়ে সারা দেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ৯১৫ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
এ নিয়ে চলতি বছর মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ২১০ জনে। এদের মধ্যে গত সেপ্টেম্বর মাসেই ৮০ জন মারা গেছেন। এদিকে, চলতি মাসের প্রথম ১২ দিনেই ৪৭ জন মারা গেলেন। মারা যাওয়াদের মধ্যে পুরুষের সংখ্যা বেশি। তা ছাড়া, এ বছরে এখন পর্যন্ত ৪১ হাজার ৮১০ জন এই রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
আজ শনিবার সন্ধ্যায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম থেকে পাঠানো প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘শনিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু আক্রান্তদের মধ্যে ৩৩১ জন ঢাকা মহানগরের হাসপাতালগুলোতে ভর্তি হয়েছেন। এর বাইরে (সিটি করপোরেশন বাদে) চট্টগ্রাম বিভাগে ১৯৭ জন, বরিশাল বিভাগে ১০৮ জন, ঢাকা বিভাগে ১০০ জন, খুলনা বিভাগে ৯৭ জন, ময়মনসিংহ বিভাগে ৪৫ জন, রাজশাহী বিভাগে ২৪ জন, রংপুর বিভাগে ৯ জন ও সিলেট বিভাগে ৪ জন ভর্তি হয়েছেন।’
এ ছাড়া, শনিবার সকাল পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ৩৫২২ জন রোগী চিকিৎসা নিচ্ছিলেন।
চলতি বছর ডেঙ্গুতে সর্বোচ্চ আক্রান্ত ও মৃত্যু ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে। ডেঙ্গুতে এই সিটি করপোরেশনে ৯০৩৩ জন আক্রান্ত হয়েছেন এবং মারা গেছেন সর্বোচ্চ ১১২ জন।
উল্লেখ্য, গত বছর ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ১৭০৫ জন মৃত্যুবরণ করেন। ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হন তিন লাখ ২১ হাজার ১৭৯ জন।