উচ্চমূল্য ও বেশি পুষ্টিগুণসমৃদ্ধ কালো জাতের ধান চাষ করা হয়েছে খুলনার বটিয়াঘাটা উপজেলায়। এ ধান থেকে পাওয়া কালো চাল সাধারণত প্রতি কেজি ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা দরে বিক্রি করা হয়। বটিয়াঘাটা উপজেলার জলমা ও গঙ্গারামপুর গ্রামের দুই কৃষক চলতি মৌসুমে বেশি লাভের আশায় এ ধান চাষ করেছেন।
উপজেলা কৃষি অফিস বলছে, এ অঞ্চলের এক বিঘা জমিতে ১৫ মণের (৬০০ কেজি) মতো সাধারণ ধান পাওয়া যায়। কালো জাতের ধানেও মোটামুটি একই ফলন পাওয়া যায়। বর্তমানে বাজারে সাধারণ ধানের চালের দাম গড়ে ৬০ টাকা কেজি। অন্যদিকে কালো ধানের চালের দাম কেজিপ্রতি ৩০০ টাকা। সে হিসাবে একই জমিতে কালো ধান চাষে কৃষকরা কমপক্ষে ৫ গুণ বেশি লাভ করবেন।
অন্যদিকে সাধারণ ধান পরিশোধনের (পলিশ) সময় চালের বাইরের আবরণ ছেঁটে ফেলা হয়। চালের বাইরের ভিটামিন বি ও থায়ামিন পলিশের সময়ে হারিয়ে যায়। তবে কালো চাল পলিশ না করায় এর সব পুষ্টিগুণ অক্ষুণ্ন থাকে।
কৃষি কর্মকর্তাদের ভাষ্য, কালো চালের আরেকটি গুণ হলো এটি ক্যানসার প্রতিরোধী অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে। আমিষ, ভিটামিন, জিঙ্ক, ফাইবার, খনিজ পদার্থসহ অন্য উপাদানগুলো সাধারণ চালের চেয়ে অন্তত তিন গুণ বেশি থাকে।
উপজেলার জলমা গ্রামের কৃষক আব্দুর রহিম বলেন, তিনি পরীক্ষামূলকভাবে চলতি বোরো মৌসুমে ১২ কাঠা (১৯.৮ শতক) জমিতে কালো ধান চাষ করেছেন। ৪০০ টাকা দরে স্থানীয় এক ব্যক্তির কাছ থেকে ২ কেজি কালো বীজধান কিনেছিলেন। থাইল্যান্ড থেকে ওই বীজ আনা হয়।
আব্দুর রহিম বলেন, জুলাই মাসে বীজ বপনের পর আগস্টের শেষে চারা রোপণ করা হয়। জানুয়ারি মাসে ধান কাটা হয়েছে। এখান থেকে ১০ মণ ধান পেয়েছেন। যা প্রায় ৮০ হাজার টাকার কাছাকাছি বিক্রি হবে। এ পরিমাণ ধান উৎপাদনে খরচ হয়েছে প্রায় ১০ হাজার টাকা।
তবে খুলনায় এবারই প্রথম কালো জাতের ধান চাষ শুরু হয়েছে, তা নয়। এর আগেও ডুমুরিয়া উপজেলার কৃষকরাও এই ধান চাষ করেছেন। সাধারণ ধান চাষের তুলনায় বেশি লাভও পেয়েছেন। তবে কৃষকদের মাঝে পর্যাপ্ত প্রচার না থাকায় এটি ব্যাপকভাবে চাষ হচ্ছে না।
বটিয়াঘাটা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রবিউল ইসলাম বলেন, চলতি মৌসুমে তাদের আওতাধীন এলাকায় প্রায় ১ দশমিক ৫ একর জমিতে দুই কৃষক কালো ধান চাষ করেছেন। আগামী বছর ৮ একর জমিতে এ ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। ধীরে ধীরে এটি কৃষকদের মাঝে জনপ্রিয়তা পাবে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের খুলনা কার্যালয়ের অতিরিক্ত উপপরিচালক মোছাদ্দেক হোসেন বলেন, একদিকে পুষ্টি বেশি, অন্যদিকে দামও বেশি। তাই এই জাতের ধান চাষে কৃষকরা বেশি লাভবান হন।
মোছাদ্দেক হোসেন বলেন, সাধারণ ধান চাষ করতে ১৬০ দিন সময় লাগে। তবে কালো ধান চাষ করতে লাগে ১২০ দিন। এ ছাড়া কালো ধানগাছে পোকার উপদ্রবও কম হয়। সার ও কীটনাশক কম ব্যবহার করা লাগে। তাই তারা কালো ধান চাষ সম্প্রসারণের উদ্যোগ নিচ্ছেন।
মোছাদ্দেক হোসেন আরও বলেন, জনশ্রুতি রয়েছে, অনেক পুষ্টিগুণ থাকায় একসময় ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ড, ফিলিপাইনসহ কয়েকটি দেশের অভিজাত শ্রেণি এই চালের ভাত খেতেন। দেশগুলোতে সাধারণ কৃষকদের এই ধান চাষ কিংবা এই চালের ভাত খাওয়া নিষিদ্ধ ছিল।
এ ছাড়া ভাত বেশ আঠালো ও সুগন্ধিযুক্ত হয়। পায়েস ও খিচুড়ি রান্নায় এই চাল বেশি ব্যবহৃত হয়। চালে ফাইবার অনেক বেশি থাকায় ভাত শরীরে গ্লুকোজ তৈরি করে খুব ধীর ধীরে। ফলে শরীরে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে। এ চাল ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য খুব কার্যকর বলেও জানান মোছাদ্দেক হোসেন।
১৯৮/সি, তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮
©দৈনিক বাংলা