আপডেট : ১৬ জানুয়ারি, ২০২৩ ১০:০৯
গোখাদ্যের মূল্যবৃদ্ধি লাভে ‘গুড়ে বালি’ খামারিদের
মীর আনোয়ার আলী, রংপুর

গোখাদ্যের মূল্যবৃদ্ধি লাভে ‘গুড়ে বালি’ খামারিদের

বাজারে অন্যান্য পণ্যের মতো চড়া দামের হাওয়া লেগেছে গোবাদিপশুর খাদ্যেও। লোকসান থেকে বাঁচতে খামারিরা গরু বিক্রি করে খামার ছোট করছেন। খামারিরা বলছেন, গোখাদ্যের দাম বাড়ানোর কারণে খামার থেকে মুনাফা অর্জন করা সম্ভব হচ্ছে না। বরং লোকসান গুনতে হচ্ছে প্রতিনিয়ত।

বিভিন্ন উপজেলার অন্তত ২০ জন পশুপালনকারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, খড় ও ঘাসের পাশাপাশি গরু-ছাগলকে গমের ভুসি, ডালের খোসা, চালের খুদ, ধানের কুঁড়া এবং বিভিন্ন কোম্পানির তৈরি কৃত্রিম ফিড (দানাদার খাদ্য) খাওয়ানো হয়। অন্তত সাতজন গোখাদ্য ব্যবসায়ী বলেন, গত ১৫ দিনের ব্যবধানের কেজিপ্রতি গমের ভুসিতে ১০ টাকা, বুটের খোসায় ৮, চালের খুদ ৪, দানাদার ফিড ৬ ও ধানের কুঁড়ায় ২ টাকা বেড়েছে।

রংপুর জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, জেলার ৮ উপজেলায় মোট গাভির খামার রয়েছে ১ হাজার ৬৮৮টি। এ ছাড়া কৃষকের ঘরে গৃহপালিত প্রায় ১০ লাখ গরু রয়েছে।

বিভিন্ন হাটবাজার ঘুরে ক্রেতা ও বিক্রেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২০২০ সালে গোখাদ্য গমের ভুসি বস্তাপ্রতি (৩৭ কেজি) বিক্রি হয়েছে ১ হাজার ২২০ টাকা এবং বুটের খোসা বস্তাপ্রতি (২৫ কেজি) ৯৫০ টাকায়। দানাদার ফিড বস্তাপ্রতি (২৫) ৮২০, চালের খুদ বস্তাপ্রতি (৫০ কেজি) ৮০০, ধানের কুঁড়া (৩৫ কেজি) ৩৬০ টাকায়। আর কেজি হিসাবে প্রতি কেজি গমের ভুসির দাম ছিল ৩২, বুটের খোসা ৩৮, চালের খুদ ১৬, দানাদার ফিড ৩২ ও ধানের কুঁড়া ১০ টাকা।

২০২১ সালে গমের ভুসি বস্তাপ্রতি ১ হাজার ৪০০, বুটের খোসা ১ হাজার ২২০, দানাদার ফিড ৯৫০, চালের খুদ ৮৮০, ধানের কুঁড়া ৪৪০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।

আর গত বছর ২০২২ সালে গমের ভুসি প্রতি বস্তার (৩৭ কেজি) দাম ছিল ১ হাজার ৮৫০ টাকা। বুটের খোসা বস্তাপ্রতি (২৫ কেজি) ১ হাজার ২৫০, দানাদার ফিড বস্তাপ্রতি (২৫ কেজি) ১ হাজার ১৫০, চালের খুদ বস্তাপ্রতি (৫০ কেজি) ১ হাজার ৫০০ ও ধানের কুঁড়া ৪৭০ টাকায় বিক্রি হয়। সেই হিসাবে প্রতি কেজি ভুসি ৫০, ডালের খোসা ৫০, চালের খুদ ৩০ ও দানাদার ফিড ৪৬ টাকা ছিল।

বর্তমানে ভুসি বস্তাপ্রতি ২ হাজার ২৫০, বুটের খোসা ১ হাজার ৪৫০, চালের খুদ ১ হাজার ৭০০, দানাদার ফিড ১ হাজার ৩০০ ও ধানের কুঁড়া ৫৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

এসব গোখাদ্যের দাম বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, গত তিন বছরে কেজিপ্রতি গমের ভুসি ২৮ টাকা, বুটের খোসায় ২০, চালের খুদে ১৮, দানাদার ফিডে ২০ ও ধানের কুঁড়ায় ৫ টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে। কিন্তু দফায় দফায় মূল্যবৃদ্ধি পেলেও দুধের দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে না। এমন অবস্থায় লোকসান দিয়ে অনেকে খামার চালাচ্ছেন।

নগরীর খাসবাগ এলাকার খামারি শাহাদাত ইসলামের খামারে ৮০টি গরু রয়েছে। গাভি রয়েছে ২৫টি। শাহাদাত বলেন, বছরে অন্তত তিন দফায় গোখাদ্যের দাম বাড়ে। কিন্তু দুধের দাম দুই-তিন বছরে একবার বাড়ে। নতুন বছরে ফের ফিড, ভুসি, বুটের খোসা ও খুদের দাম বেড়েছে। প্রতিদিন গড়ে ২৫ হাজার টাকা খরচ কিন্তু দুধ বিক্রি করে পান ১৮ হাজার টাকা। বর্তমানে গাভির খামার করে তেমন লাভ নেই। বরং লোকসানই হচ্ছে।

তারাগঞ্জের ইকরচালী এলাকার খামারি রতন মিয়া বলেন, মাত্রাতিরিক্ত গোখাদ্যের মূল্যবৃদ্ধির কারণে আশানুরূপ খাদ্য জোগান দেয়া সম্ভব হচ্ছে না বলে দুধ উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। বর্তমানে তিনি গোখাদ্যের মূল্যবৃদ্ধির কারণে ভুসি ও ফিডের বিকল্প হিসেবে কচুরিপানা ও ঘাস খাওয়াচ্ছেন। লোকসান থেকে বাঁচতে খামারের কিছু গরু বিক্রি করে খামার ছোট করার চেষ্টায় আছেন।

রংপুর ডেইরি ফার্মার অ্যাসোসিয়শনের সভাপতি লতিফুর রহমান বলেন, বর্তমানে খামারিদের অবস্থা নাভিশ্বাস। খামারিদের বাঁচাতে হলে দুধের দাম বাড়ানো, গোখাদ্যে ভর্তুকি প্রদান, প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় কর্তৃক খামারি পর্যায়ে চিকিৎসাসেবা বৃদ্ধি, নিম্নমানের গুঁড়া দুধ আমদানি বন্ধ করা, গোখাদ্যের সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীদের বিচারের আওতায় আনা ও ভেজাল খাদ্য রোধে কার্যকরী ভূমিকা রাখতে হবে।

জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা সিরাজুল ইসলাম বলেন, গোখাদ্যের দাম বাড়ায় ছোট ও মাঝারি খামারিরা বিপাকে রয়েছেন। তাদের দানাদার খাবারের বিকল্প গড়ে তুলতে পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। গাভিকে খড়ের পাশাপাশি কাঁচা ঘাস বেশি খাওয়াতে হবে। এ ছাড়া সমবায়ের ভিত্তি খামার গড়ার জন্য খামারিদের উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। সমবায়ভিত্তিতে খামার করলে খরচ কমবে।