আপডেট : ১৬ জানুয়ারি, ২০২৩ ১৭:২১
বাংলাদেশের মেয়েদের দুইয়ে দুই
ক্রীড়া প্রতিবেদক

বাংলাদেশের মেয়েদের দুইয়ে দুই

বাংলাদেশের মেয়েরা টানা দ্বিতীয় জয় পেয়েছে বিশ্বকাপে। ছবি: বিসিবি

আগের ম্যাচে ফেবারিট অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়েই বাংলাদেশের মেয়েরা বুঝিয়ে দিয়েছিলেন, টুর্নামেন্টে তাদের হালকাভাবে নেয়া যাবে না। টুর্নামেন্ট শুরুর আগে শ্রীলঙ্কাকেও শক্তিতে অনেক এগিয়ে রাখা হলেও অস্ট্রেলিয়া-বাংলাদেশ ম্যাচের পর হিসেব পাল্টে গিয়েছিল। তখন বাংলাদেশের জয়ের সম্ভাবনাই বেশি মনে হচ্ছিল সবার।

বাংলাদেশই জিতেছে। বেনোনিতে আজ শ্রীলঙ্কাকে ১০ রানে হারিয়েছে বাংলাদেশের মেয়েরা। গ্রুপ পর্বে টানা দুই ম্যাচেই জিতে মেয়েদের অনূর্ধ্ব-১৯ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সুপার সিক্সে ওঠা নিশ্চিত হয়ে গেল বাংলাদেশের, এখন গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার অপেক্ষা। প্রত্যাশা, স্বর্ণাদের দারুণ ফিফটিতে আগে ব্যাট করে বাংলাদেশ করেছে ২ উইকেটে ১৬৫। শ্রীলঙ্কা শুরুতেই দুই উইকেট হারালেও শেষ পর্যন্ত ২০ ওভারই ব্যাটিং করেছে, ইনিংস শেষ করেছে ৪ উইকেটে ১৫৫ রান নিয়ে।

বাংলাদেশের মেয়েদের অনূর্ধ্ব-১৯ এই দলের কোচ দীপু রায় চৌধুরী ম্যাচের আগে বারবার মনে করিয়ে দিয়েছিলেন, শ্রীলঙ্কার এই দলের ব্যাটিং গভীরতা অনেক বেশি। আগের ম্যাচে যুক্তরাষ্ট্রের বিপক্ষে রান তাড়া করে জেতা লঙ্কান মেয়েরা আজও টসে জিতে আগে ফিল্ডিং নিয়েছে। তাদের ব্যাটিং শক্তির দিক বিবেচনায় রেখে বাংলাদেশকে বড় স্কোর করতেই হতো।

বাংলাদেশের মেয়েরা তাতে কী দারুণ সফল! প্রত্যাশা আর প্রাপ্তিতে মিলিয়ে দিল যার ব্যাট, তার ডাকনামও প্রত্যাশা। ইনিংসের ১২তম ওভারের প্রথম বলে মিষ্টি সাহার সঙ্গে আফিয়া প্রত্যাশার উদ্বোধনী জুটি যখন ভাঙে প্রত্যাশার বিদায়ে, দলের রান ৭৫। তার মধ্যে প্রত্যাশারই রান ৫৩! ৫ চার আর ৩ ছক্কায় ৪৩ বলে প্রত্যাশার দারুণ আগ্রাসী ইনিংসে ভিত পেয়ে যায় বাংলাদেশ।

দুই বল পর মিষ্টি (২৪ বলে ১৪) রানআউট হয়ে গেলে মনে হচ্ছিল, বুঝি চাপে পড়বে বাংলাদেশ। কিন্তু দিলারা আক্তার আর স্বর্ণা আক্তার তা হতে দিলে তো! শুরু থেকেই দুজনের ব্যাটে সে কী আগ্রাসন! চোখধাঁধানো সব আক্রমণাত্মক শট খেলার ক্ষমতা যে তার আছে, তা তো স্বর্ণা আগেও দেখিয়েছেন – প্রস্তুতি ম্যাচে ভারতের বিপক্ষে ৪৮ বলে ৭৮ রানের ইনিংসই তার প্রমাণ। আজ তার ব্যাট থেকে এসেছে ২৮ বলে ৩ চার ও ২ ছক্কায় ৫০ রানের ইনিংস। দিলারাও চুপ ছিলেন না, মূলত জুটিতে ‘অ্যাঙ্করের’ ভূমিকা নিলেও ইনিংস শেষে তার নামের পাশেও জ্বলজ্বল করছে ২৭ বলে ৩ চার ও ১ ছক্কায় ৩৬ রানের ইনিংস।

স্বর্ণার ফিফটি অবশ্য হয়েছে বেশ দারুণ ঢংয়ে। ২০তম ওভারের চতুর্থ বলে দিলারা এক রান নেয়ায় যখন স্ট্রাইক পান স্বর্ণা, তার নামের পাশে ২৬ বলে ৪৬ রান। পঞ্চম বলে চার মারলেন স্বর্ণা, আর ১ বলে দরকার ২ রান! এরপর ছোটখাট নাটক! শেষ বলে লেগ সাইডে যেখানে বলটাকে ঠেলেছেন স্বর্ণা, তাতে এক রান হয়, দৌড়ে দুই রান নিতে গিয়েও ফিরে আসেন দুই ব্যাটার। কিন্তু ভাগ্যে থাকলে ঠেকায় কে! লঙ্কান ফিল্ডারের থ্রো ঠিকঠাক হলো না। বা বলা যায়, দ্বিতীয় রান নেয়ার চেষ্টা দেখিয়ে লঙ্কান ফিল্ডারকে দ্রুত থ্রো করতে বাধ্য করেন স্বর্ণা, তাতে ওভারথ্রো হয়ে গেল। দৌড়ে সহজেই আরেকটি রান হয়ে গেল স্বর্ণার। ফিফটিও হয়ে গেল!

১৬৫ রান যেকোনো পর্যায়ের টি-টোয়েন্টিতেই বেশ চ্যালেঞ্জিং স্কোর, বোলিংয়ে শুরুতে বাংলাদেশের দুই পেসার মারুফা আক্তার ও দিশা বিশ্বাস চ্যালেঞ্জটাকে আরও কঠিন বানিয়ে ফেলেন লঙ্কানদের জন্য। মারুফার গতি আর ইনসুইং তো একবার ব্যাটারের পর উইকেটকিপারকেও ফাঁকি দিল! ইনিংসের চতুর্থ বলেই সেনারত্নাকে ফেরান মারুফা, ১৮ বল পর দিশা বোল্ড করে দেন নিসানসালাকে।

কিন্তু তৃতীয় উইকেটে অধিনায়ক ভিস্মি গুনারত্নে ও দেওমি ভিজেরাত্নের দারুণ জুটিতে ঘুরে দাঁড়ায় শ্রীলঙ্কা। দুজনই ফিফটি পেয়েছেন, ভিস্মি তো শেষ পর্যন্ত অপরাজিতই ছিলেন ৫৪ বলে ৬১ রান করে। ১৭তম ওভারে মারুফার বলে ভিজেরাত্নে (৪৪ বলে ৫৫) আউট হলে ভাঙে ৭৬ বলে ৯৬ রানের এই জুটি।

তবে এরপর ভিস্মি গতি বাড়াতে পারেননি। শেষ ওভারের প্রথম বলে নানাইয়াক্কারা রানআউট হওয়ার সময়ও শ্রীলঙ্কার রান ছিল ৪ উইকেটে ১৪০। বাংলাদেশের জয় তখন বলতে গেলে নিশ্চিতই! পাঁচে নামা দিসানায়েকে ৩ বলে ৩ চার মেরে শুধু ব্যবধানই কমিয়েছেন।