ইরানের আন্দোলনে গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তিদের নিজেদের মৃত্যুদণ্ডাদেশের বিরুদ্ধে আত্মপক্ষ সর্মথনের জন্য আদালতে মাত্র ১৫ মিনিট সময় দেয়া হচ্ছে । এই সময়ের মধ্যে গ্রেপ্তারকৃতদের তাদের অপরাধের বিরুদ্ধে, তাদের কেন ফাঁসির আদেশ দেয়া হবে না, সেসব বিষয়ে যুক্তি খণ্ডন করতে হবে। বুধবার বিবিসির এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।
চার মাস ধরে ইরানে দেশব্যাপী বিক্ষোভের ঘটনায় চার তরুণের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে এবং অন্য আরও ১৮ জনকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেয়া হয়েছে। মানবাধিকার গোষ্ঠীগুলো বলছে, সরকার চরম অন্যায্যভাবে বিচারের নাম করে নির্দোষ ব্যক্তিদের দোষী সাব্যস্ত করেছে।
গত ৩ নভেম্বর, তেহরানের পশ্চিমে অবস্থিত কারাজ শহরে বিক্ষোভ চলাকালীন আধা সামরিক বাসিজ বাহিনীর একজন সদস্যকে হত্যার ঘটনায় মেহেদি কারামি নামে এক তরুণকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। ২২ বছর বয়সী কারাতে চ্যাম্পিয়ন মোহাম্মদ মেহেদি কারামিকে গ্রেপ্তারের মাত্র ৬৫ দিন পর গত ৭ জানুয়ারি ফাঁসি দেয়া হয়। বিবিসি ফার্সিকে সূত্র জানিয়েছে, আদালতে আত্মপক্ষ সমর্থনের জন্য কারামির কাছে ১৫ মিনিটেরও কম সময় ছিল। কারামিকে ‘পৃথিবীতে দুর্নীতি’ অপরাধে অভিযুক্ত করা হয়। ৩০ নভেম্বর কারাজের একটি আদালতে তিন অপ্রাপ্তবয়স্কসহ ১৬ জন বিক্ষোভকারীর সঙ্গে কারামির বিচার করা হয়।
কারামির ঘটনা অনুযায়ী দেখা যায়, ইরানের কর্তৃপক্ষ নারী স্বাধীনতা ও কঠোর ধর্মীয় শাসনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভকারীদের ভয় দেখানোর জন্য ‘শো ট্রায়াল’ বা লোক দেখানো শুনানি ব্যবহার করছে। ইরানে আইন অনুযায়ী নিজেদের পক্ষে লড়াই করতে আইনজীবী নিয়োগের সুযোগ পেলেও এ ক্ষেত্রে আসামিরা নিজস্ব আইনজীবী বেছে নেয়ার অনুমতি পায়নি। পরিবর্তে আদালত বিচার বিভাগ কর্তৃক অনুমোদিত তালিকা থেকে একজনকে নিয়োগ দেয়। সাংবাদিক এবং আসামির পরিবারের সদস্যদেরও আদালতে উপস্থিত হতে নিষেধ করা হয়েছে। তাই বন্ধ দরজার পেছনে যা ঘটে তার একমাত্র জানালা হলো বিচার বিভাগ থেকে প্রকাশিত অনেকটা সম্পাদিত ভিডিও ফুটেজ।
তেহরানের শাসকরা বর্তমান অস্থিরতাকে ‘দাঙ্গা’ বলে উড়িয়ে দিয়েছেন এবং সহিংস অভিযান অব্যাহত রেখেছেন। নরওয়েভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা ইরান হিউম্যান রাইটস অনুসারে, নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে অন্তত ৪৮১ জন বিক্ষোভকারী নিহত হয়েছে।
গত সেপ্টেম্বরে পুলিশি হেফাজতে মাহসা আমিনির মৃত্যুকে কেন্দ্র করে দেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়া আন্দোলন দমনে সরকার নিরাপত্তা বাহিনীকে সহিংস আচরণে পূর্ণ স্বাধীনতা দিয়ে রেখেছিল। যেমন- গণহারে গ্রেপ্তার ও বিক্ষোভকারীদের ওপর নির্বিচার গুলি। বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন ও আন্তর্জাতিক গোষ্ঠীর দাবি, এতকিছু করেও যখন বিক্ষোভ দমন করা সম্ভব হয়নি, সরকার এখন তাই আতঙ্ক সৃষ্টি করতে গ্রেপ্তারকৃতদের একের পর এক মৃত্যুদণ্ডাদেশ দিচ্ছে।
১৯৮/সি, তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮
©দৈনিক বাংলা