আপডেট : ৩১ আগস্ট, ২০২২ ১০:০৮
জিকে প্রকল্প: পাম্প নষ্ট, শ্যালোতে বাড়ছে সেচ খরচ

জিকে প্রকল্প: পাম্প নষ্ট, শ্যালোতে বাড়ছে সেচ খরচ

ঠিকমতো সেচ না পেয়ে বাধ্য হয়ে শ্যালো মেশিন দিয়ে ভূগর্ভস্ত পানি তুলতে হচ্ছে কৃষকের। ছবি: দৈনিক বাংলা

কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা, ঝিনাইদহ ও মাগুরা জেলায় কৃষকদের সেচ দেয়া গঙ্গা-কপোতাক্ষ-জিকে সেচ প্রকল্পের প্রধান তিনটি পাম্পের দুটিই বিকল। এ কারণে কোনোমতে পর্যায়ক্রমে সেচ সরবরাহ চালু রেখেছে কর্তৃপক্ষ।

এবারের আমন মৌসুমে এ অঞ্চলের কৃষকদের জ্বালানি তেল খরচ করে ভূগর্ভস্থ পানি তুলে চাষ করতে হচ্ছে। এতে খরচ, পরিশ্রম ও ভোগান্তি বাড়ছে কৃষকের। উৎপাদনের ওপরও নেতিবাচক প্রভাব পড়ার আশঙ্কা তাদের।

৬৮ বছর আগে শুরু হওয়া গঙ্গা-কপোতাক্ষ সেচ প্রকল্প দক্ষিণ-পশ্চিমের কৃষকের ভাগ্য বদলে দিয়েছিল। শুরুতে ৪ লাখ ৮৮ হাজার হেক্টর জমিতে সেচ দেয়া হতো এ প্রকল্পে। সে সময়ে ৩টি প্রধান পাম্পছাড়া ১০টি সাবসিডারি পাম্প দিয়ে পানি সরবরাহ করা হতো। দিনে দিনে প্রকল্পের পরিসর কমাতে কমাতে ৯৫ হাজার হেক্টর জমিতে সেচ দেয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করে কর্তৃপক্ষ। এবার প্রধান তিনটি পাম্পের দুটিই বিকল থাকায় সাত দিন করে পর্যায়ক্রমে সেচ সরবরাহ চালু রাখা হয়েছে।

কুষ্টিয়ার ভেড়ামারায় জিকে পাম্প হাউসের নির্বাহী প্রকৌশলী মিজানুর রহমান বলেন, ১ নম্বর পাম্প এখন চালু আছে। ২ নম্বর পাম্প নষ্ট হয়ে যায় ২০২১ সালে। ৩ নম্বর পাম্প গত বছর ঠিক করা হলেও আবার সমস্যা দেখা দিয়েছে।

মিজানুর রহমান বলেন, ম্যানুফ্যাকচারিং (জাপানি) কোম্পানির সহায়তা ছাড়া পাম্প মেরামত সম্ভব নয়। জাপানি প্রকৌশলীরা গত মাসে পাম্প হাউস পরিদর্শন করেছেন। তাদের সঙ্গে এ মাসের ৯ ও ২৪ তারিখে ভার্চুয়াল সভা হয়েছে। তারা এখন একটি কারিগরি প্রতিবেদন ও আর্থিক প্রস্তাবনা দেবেন। এর ভিত্তিতেই মেরামতের উদ্যোগ নেয়া হবে।

বর্তমানে একটি পাম্প দিয়ে ১ হাজার ৩৫০ কিউসেক পানি তোলা যাচ্ছে। কিউসেক হলো প্রতি সেকেন্ডে পানিপ্রবাহের পরিমাণের একক। ১ কিউসেক হলো ১ ঘনফুট পানি।

মিজানুর রহমান বলেন, এই পানি দিয়ে পুরো প্রকল্প এলাকায় সেচ দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। এ কারণে ক্যানেলভিত্তিক রোটেশন করে পানি সরবরাহ করতে হচ্ছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডে কুষ্টিয়ার পানি ব্যবস্থাপনা ইউনিটের নির্বাহী প্রকৌশলী রইচ উদ্দিন বলেন, জিকে প্রকল্পের পাম্পের অবস্থা খারাপ। একটি পাম্প দিয়ে প্রকল্প এলাকার ৪টি জেলার ১৩ উপজেলায় একযোগে সেচ দেয়া সম্ভব নয়। এরপরও সেচ চালু রাখার স্বার্থে রোটেশন পদ্ধতি অবলম্বন করা হয়েছে।

রইচ উদ্দিন বলেন, প্রকল্প এলাকায় গঙ্গা, কুষ্টিয়া ও আলমডাঙ্গা নামে তিনটি ক্যানেল সিস্টেম আছে। তিনটি ভাগ করে সাত দিন করে রোটেশনভিত্তিতে সেচ দেয়া হচ্ছে।

এদিকে ঠিকমতো সেচ না পেয়ে বাধ্য হয়ে শ্যালো মেশিন দিয়ে ভূগর্ভস্ত পানি তুলতে হচ্ছে কৃষকের। এতে বাড়ছে খরচ ও ভোগান্তি।

কুষ্টিয়া বাইপাস সড়কের পাশে আমন ধান রোপণ করছিলেন কৃষক সোহেল রানা। তিনি বলেন, এখানে জিকের পানি বেশি আসে না। শ্যালো মেশিন দিয়ে মাটির নিচ থেকে পানি তুলতে হয়। ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধির কারণে এবার খরচ বেশি হচ্ছে।

আরেক কৃষক আলমগীর বলেন, এবার তেমন বৃষ্টি না হওয়ায় মাটি শুকনো। অল্প পানি দিয়ে সেচ হচ্ছে না। সারা দিন ধরে পানি তুলে এক থেকে দেড় একর জমি ভেজানো যাচ্ছে।

এমন পরিস্থিতিতে ধানের দাম বাড়ার কথা বলছেন কৃষকরা। রফিকুল নামে এক কৃষক বলেন, ‘১ হাজার ৫০০ টাকার তেল লাগল ধান লাগাতে। এরপর বৃষ্টি না হলে মৌসুম ধরেই তেল কিনে পানি দিতে হবে। ধানের দাম ১ হাজার ৫০০ টাকা মণ হলেও পোষাবে না।’

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কুষ্টিয়া কার্যালয়ের উপপরিচালক হায়াত মাহমুদ বলেন, শেষদিকে এসে বৃষ্টি হওয়ায় কৃষক আমন রোপণ করতে পেরেছেন। কিন্তু সম্পূরক সেচ নিয়ে দুশ্চিন্তা থেকেই যাচ্ছে।

হায়াত মাহমুদ বলেন, ‘জিকে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে নিয়মিত কথা হচ্ছে। আশা করা হচ্ছে, দ্রুত পাম্প মেরামত করে পর্যাপ্ত সেচ সরবরাহ করবে তারা। তবে আমন উৎপাদনে কোনো নেতিবাচক প্রভাব পড়বে না।’