আপডেট : ১৯ জানুয়ারি, ২০২৩ ২২:৪৫
কেন প্রধানমন্ত্রিত্ব ছাড়ছেন জেসিন্ডা আরডার্ন
মৌসুমী সাহা

কেন প্রধানমন্ত্রিত্ব ছাড়ছেন জেসিন্ডা আরডার্ন

নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী জেসিন্ডা আরডার্ন। ছবি: বিবিসি

নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী জেসিন্ডা আরডার্ন আগামী মাসে তার দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়াবেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন। এবারের সাধারণ নির্বাচনেও তিনি অংশ নেবেন না। এমনকি তিনি তার দল লেবার পার্টিরও দায়িত্ব থেকে সরে যাবেন। দেশের জাতীয় নির্বাচনের আগে আরডার্ন কেন আকস্মিকভাবে পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন, তা নিয়ে বিস্তর আলোচনা শুরু হয়েছে।

নিউজিল্যান্ডের নেপিয়ার শহরে বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলন করেন আরডার্ন। তিনি জানান, আগামী ৭ ফেব্রুয়ারি তার প্রধানমন্ত্রিত্বের শেষ কার্যদিবস হবে।

আল-জাজিরা জানায়, আগামী ১৪ অক্টোবর নিউজিল্যান্ডে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এবারের নির্বাচনে আরডার্নের দল কঠিন লড়াইয়ের মুখে পড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এমন পরিস্থিতির মধ্যেই আরডার্নের পদত্যাগের ঘোষণা এল। তবে আরডার্ন এটি স্পষ্ট করেছেন, নির্বাচনে হেরে যাওয়ার ভয়ে নয় বরং তার কাজের স্পৃহা ফুরিয়ে আসছে বলেই তিনি এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

আরডার্ন নিজেও জানেন তার এমন আকস্মিক পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নিয়ে বিস্তর আলাপ-আলোচনা হবে। তিনি বলেছেন, ‘আমি জানি, এ সিদ্ধান্তের পর অনেক আলোচনা হবে। সিদ্ধান্তের নেপথ্যের তথাকথিত সত্যিকারের কারণ নিয়ে কথা হবে।’

আরডার্ন বলেন, ‘রাজনীতিকরাও মানুষ। আমরা যতটা পারি, যতদিন পারি মানুষের জন্য নিজের সর্বোচ্চটুকু দিই। তারপর বিদায় নেয়ার সময় আসে। আর আমার জন্য বিদায় নেয়ার সময় এসে গেছে।’ আরডার্ন তার পরিবারকে সময় দেয়ার ইচ্ছার কথাও ব্যক্ত করেছেন। মেয়ে নেভেকে আগামী বছর স্কুলে ভর্তি করাতে যাচ্ছেন জানিয়ে তিনি বলেন, সন্তানের স্কুলে অভিভাবক হিসেবে উপস্থিত থাকতে চান। এ ছাড়া সঙ্গী ক্লার্ক গেফোর্ডের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার ইচ্ছাও প্রকাশ করেছেন।

বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানায়, ২০১৭ সালে মাত্র ৩৭ বছর বয়সে প্রধানমন্ত্রী হয়ে বিশ্বের সর্বকনিষ্ঠ নারী সরকারপ্রধান হয়েছিলেন আরডার্ন। এর এক বছর পর বিশ্বের দ্বিতীয় নেত্রী হিসেবে ক্ষমতায় থাকাকালীন তিনি মা হন। করোনাভাইরাস মহামারির সফল ব্যবস্থাপনার কারণে দুই বছর আগের নির্বাচনে আরডার্ন বিপুল ভোটে আবারও ক্ষমতায় আসেন।

প্রায় ছয় বছরের শাসনামলে ক্রাইস্টচার্চের মসজিদে বন্দুক হামলা, করোনা মহামারি ও হোয়াইট আইল্যান্ড আগ্নেয়গিরির উদ্‌গিরণের তো সংকটকাল দৃঢ়তার সঙ্গে মোকাবিলা করেছেন আরডার্ন। বিশেষ করে ক্রাইস্টচার্চের হামলায় মুসলিম সম্প্রদায়ের পাশে দাঁড়িয়ে তিনি বিশ্বব্যাপী প্রশংসা কুড়ান। ২০১৯ সালে ক্রাইস্টচার্চের দুটি মসজিদে উগ্র শেতাঙ্গবাদী যুবকের হামলায় ৫১ জন নিহত হন। আরডার্ন একে সন্ত্রাসী হামলা বলে আখ্যায়িত করতে এক মুহূর্ত দ্বিধাবোধ করেননি।

২০২০ সালে দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আরডার্নের নেতৃত্বাধীন পার্লামেন্টে বিভিন্ন সংস্কৃতির প্রতিনিধিত্ব থাকায় বিশ্ব গণমাধ্যমে শিরোনাম হয়। তার পার্লামেন্টে অর্ধেকের বেশি নারী আইনপ্রণেতা এবং সর্বোচ্চসংখ্যক আদিবাসী মাওরি আইনপ্রণেতার উপস্থিতি দেখা যায়। করোনা মহামারির সময়ও তিনি বলিষ্ঠভাবে মোকাবিলা করেছেন। নিউজিল্যান্ডে ভাইরাসের বিস্তার রোধে তিনি জিরো টলারেন্স কৌশল নেন। তার সময়োচিত পদক্ষেপের কারণে অন্যান্য উন্নত দেশের তুলনার নিউজিল্যান্ডে করোনায় মৃত্যুর হারও অনেক কম ছিল।

তবে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে প্রশংসা কুড়ালেও দেশে আরডার্নের জনপ্রিয়তায় ভাটা পড়ে। বিশেষ করে গত বছরের মাঝামাঝি থেকেই গুঞ্জন ছড়ায়, আরডার্নের ক্ষমতার মেয়াদ আর বেশি দিন থাকছে না। জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধি ও রক্ষণশীল বিরোধীদের পুনরুত্থান, সমাজে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড নিয়ে উদ্বেগসহ বিভিন্ন কারণে তার সরকারের প্রতি জনগণের আস্থা কমতে থাকে।

গত বছরের জরিপে আভাস মেলে, ২০২৩ সালের নির্বাচনে আরডার্ন আর তার দল লেবার পার্টিকে বেশ চাপের মুখে পড়তে হবে। গত আগস্টে জরিপে আরডার্নের প্রতি সর্মথন ৩ পয়েন্ট কমে ৩০ শতাংশে নেমে আসে। আরডার্ন প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর এটাই তার সর্বনিম্ন জনপ্রিয়তার নম্বর। তবে এত কিছুর পরও প্রতিদ্বন্দ্বীদের তুলনায় আরডার্নের জনপ্রিয়তা এখনো বেশি রয়েছে।

নিউজিল্যান্ডের রাজনৈতিক বিশ্লেষক বেন থমাস আল-জাজিরাকে জানান, আরডার্নের পদত্যাগের ঘোষণায় তারা ভীষণ অবাক হয়েছেন। তিনি বলেন, বিভিন্ন জরিপে লেবার পার্টির জনপ্রিয়তা কমে গেলেও পছন্দের প্রধানমন্ত্রীর হিসেবে দেশবাসীর কাছে আরডার্নের গ্রহণযোগ্যতা এখনো আছে।

অন্যদিকে নিউজিল্যান্ডের ম্যাসি ইউনিভার্সিটির সিনিয়র লেকচারার ড. সুজ উইলসনকে স্কাই নিউজকে জানান, তিনি মনে করেন, আরডার্ন হয়তো তার দায়িত্ব পালন করতে করতে কিছুটা ক্লান্তবোধ করছেন।