আপডেট : ২০ জানুয়ারি, ২০২৩ ২৩:৫১
সাত্তারের গণসংযোগে আ.লীগের নেতা-কর্মীরা
মাজহারুল করিম অভি, ব্রাহ্মণবাড়িয়া

সাত্তারের গণসংযোগে আ.লীগের নেতা-কর্মীরা

নির্বাচনী প্রচারণায় মতবিনিময় করেন আব্দুস সাত্তার। ছবি: দৈনিক বাংলা

ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (সরাইল-আশুগঞ্জ) আসন থেকে উকিল আব্দুস সাত্তার ভূঞা পদত্যাগের পর এই আসনে এখন ভোটের হাওয়া বইছে। পদত্যাগ করলেও আব্দুস সাত্তার আবারও এখানে প্রার্থী হয়েছেন। এর জন্য তিনি বিএনপি ছেড়েছেন। এরপর এই নির্বাচন থেকে একে একে সরে গেছেন অন্য প্রার্থীরা। সর্বশেষ আব্দুস সাত্তারের গণসংযোগে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা যোগ দিয়ে নতুন চমক সৃষ্টি করেছেন।

এদিকে উপনির্বাচনে বিএনপির কর্মী-সমর্থকদের ভোটকেন্দ্রে যেতে বারণ করার পর দলটির সাবেক সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানাকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছে স্থানীয় আওয়ামী লীগ। শুক্রবার তাকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়।

গত ১০ ডিসেম্বর বিএনপির ঢাকা বিভাগীয় সমাবেশ থেকে দলটির সাত সংসদ সদস্য পদত্যাগের ঘোষণা দেন। পরদিন আব্দুস সাত্তারসহ ছয়জন জাতীয় সংসদের স্পিকারের কাছে পদত্যাগপত্র জমা দেন। তবে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনে উপনির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর স্বতন্ত্র প্রার্থী হন আব্দুস সাত্তার। এর জন্য তিনি বিএনপি ছেড়েছেন। তিনি এর আগে এই আসন থেকে ধানের শীষ প্রতীকে চারবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। এ ছাড়া একবার স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। ২০০৮ সালের সংসদ নির্বাচনে অবশ্য বিএনপির প্রার্থী হয়ে পরাজিত হয়েছিলেন তিনি। এবার দলের আন্দোলনের সময় দলীয় সিদ্ধান্ত মেনে পদত্যাগ করেও পরে প্রার্থী হয়ে দেশজুড়ে আলোচনার জন্ম দিয়েছেন আব্দুস সাত্তার। তার এমন সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ বিএনপি। দলটির অনেক নেতা-কর্মীর অভিযোগ, আব্দুস সাত্তার বিশ্বাসভঙ্গ করেছেন।

এদিকে উপনির্বাচনে শুরুতে সাত্তারের বেশ কয়েকজন প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন। তবে তারা একে একে সরে গেছেন। সর্বশেষ নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন জিয়াউল হক মৃধা। এখন আব্দুস সাত্তারের বিপক্ষে মাঠে রয়েছেন সম্প্রতি বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত আশুগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি আবু আসিফ আহমেদ, জাতীয় পার্টির আব্দুল হামিদ ভাসানী ও জাকের পার্টির জহিরুল ইসলাম।

এদিকে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ থেকে প্রতীক বরাদ্দ পর্যন্ত ফোনে বা জনসমক্ষে আব্দুস সাত্তারকে পাওয়া না গেলেও গত বৃহস্পতিবার থেকে সরব হয়েছেন তিনি। শুরু করেছেন প্রচারণা। আর এদিন থেকেই তার গণসংযোগ ও সভায় আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতা-কর্মীদের দেখা যাচ্ছে।

আব্দুস সাত্তার বৃহস্পতিবার দুপুরে সর্বপ্রথম সভাটি করেন সরাইল উপজেলার পরমানন্দপুরে নিজের বাবার নামে করা হাজি মকসুদ আলী নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে। সংশ্লিষ্ট সূত্র বলেছে, সভায় উপজেলার অরুয়াইল ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু তালেব, পাকশিমুল ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি সাইফুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক আব্দুল আহাদ অংশ নেন।

বিএনপির একাধিক নেতা-কর্মী বলেছেন, আব্দুস সাত্তার এখন আওয়ামী লীগের প্রার্থী। তাই তার প্রচারণায় আওয়ামী লীগের লোকজন পাশে রয়েছে।

তবে আব্দুস সাত্তার ভূঞা সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘মানুষের কাছে কিছু প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম। সেই প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করতেই নির্বাচন করছি। সরকারের চাপ বা আর্থিক সুবিধার জন্য নয়। উপজেলা বিএনপির অনেক নেতাই আমার পাশে রয়েছেন।’

রুমিন ফারহানা অবাঞ্ছিত

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ মধ্যবাজারে উপজেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে শুক্রবার দুপুরে অনুষ্ঠিত দলটির মতবিনিময় সভায় বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য রুমিন ফারহানাকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা আল মামুন সরকার।

সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আল মামুন সরকার। উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. ছফিউল্লাহ মিয়ার সভাপতিত্বে সভায় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবু নাছের আহমেদ, উপনির্বাচনে দলের নির্দেশে মনোনয়ন প্রত্যাহারকারী জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. মঈন উদ্দিন, কেন্দ্রীয় স্বাধীনতা শিক্ষক পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা ও সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ শাহজাহান আলম সাজু, আইনজীবী কামরুজ্জামান আনসারী, উপজেলা আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ নেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা হেফজুল বারী, জাকির হোসেন, মোশারফ হোসেন, নাছির মিয়া, মনির সিকদার, অধ্যক্ষ শরীফুল ইসলাম, হাজি ইলিয়াছ প্রমুখ।

সভায় আল মামুন সরকার বলেন, রুমিন ফারহানা আশুগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সাম্প্রতিক এক মতবিনিময় সভায় উপনির্বাচন প্রতিহত করার ঘোষণা দিয়েছেন। এতে নির্বাচনের পরিবেশ বিশৃঙ্খল ও সংঘর্ষময় হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তাই উপনির্বাচনটি সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে সম্পন্ন করার স্বার্থে এই নির্বাচন পর্যন্ত আশুগঞ্জ-সরাইল থেকে রুমিন ফারহানাকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হলো।