আপডেট : ২১ জানুয়ারি, ২০২৩ ২৩:৩২
ভারতে রোহিঙ্গারা কি নাশকতার শিকার
দৈনিক বাংলা ডেস্ক

ভারতে রোহিঙ্গারা কি নাশকতার শিকার

ভারতের হরিয়ানা রাজ্যের ফরিদাবাদ জেলায় আগুনে পুড়ে গেছে রোহিঙ্গা শিবির। ছবি: ডয়চে ভেলে

ভারতে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে বেশ কয়েকবার বড় ধরনের অগ্নিকাণ্ড ঘটেছে। এসব ঘটনা রহস্যময় ও নাশকতামূলক বলে রোহিঙ্গারা অভিযোগ করেছে। খবর ডয়চে ভেলের।

ভারতে আনুমানিক ৪০ হাজার রোহিঙ্গা শরণার্থী রয়েছে। অত্যাচার-নিপীড়ন থেকে বাঁচতে তারা মিয়ানমার থেকে পালিয়ে প্রতিবেশী দেশটিতে আশ্রয় নিয়েছে। তাদের মধ্যে প্রায় ২০ হাজার জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক হাইকমিশনের (ইউএনএইচসিআর) তালিকাভুক্ত বলে মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ) জানিয়েছে।

জার্মান বার্তা সংস্থা ডয়চে ভেলের প্রতিবেদন বলছে, হরিয়ানা রাজ্যের ফরিদাবাদ জেলায় রোহিঙ্গাদের একটি বসতি এলাকায় গত ১০ জানুয়ারি আগুন ধরে যায়। জায়গাটি ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লি থেকে ২০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। সেখানে প্রায় ৪০টি রোহিঙ্গা ও আসামীয় পরিবার বসবাস করে। এসব পরিবারের পুরুষদের বেশির ভাগই গাড়িচালক বা ড্রাইভার অথবা দিনমজুরের কাজ করেন। অগ্নিকাণ্ডের ওই ঘটনায় পাঁচটি ঘর পুড়ে ছাই হয়ে যায়। এর মধ্যে দুটি ঘর ছিল নূর কায়েদার পরিবারের।

২০ বছর বয়সী কায়েদা সাত মাসের অন্তঃসত্ত্বা। তিনি তিন বছর বয়সী ছেলেকে নিয়ে অস্থায়ী ঘরে ঘুমাচ্ছিলেন। আচমকা ধোঁয়ায় ঘরটি আচ্ছন্ন হয়ে পড়লে তিনি জেগে ওঠেন। তার স্বামী দৌড়ে ঘরের ভেতরে ঢুকে তাদের টেনে বের করে আনেন।

নূর কায়েদার ভাষ্য, ‘তারপর আমরা তিনজন দাঁড়িয়ে দেখলাম সর্বস্ব পুড়ে যাওয়ার দৃশ্য। কিছুই করার ছিল না তখন।’

ওই অগ্নিকাণ্ডের পর কায়েদার সবচেয়ে বড় আতঙ্ক, তার গর্ভের সন্তান যেকোনো সময় নষ্ট হয়ে যেতে পারে। কারণ গৃহহীন অবস্থায় খোলা আকাশের নিচে ঠাণ্ডা, ক্ষুধা ও উদ্বেগে এমন হওয়াটা বিচিত্র নয়। এ পর্যন্ত তিনি তিনটি সন্তান হারিয়েছেন।

ভারতের সোশ্যাল অ্যান্ড পলিটিক্যাল রিসার্চ ফাউন্ডেশন (এসপিআরএফ) নামের গবেষণা প্রতিষ্ঠানের হিসাবে ২০১৬ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে ভারতের বিভিন্ন স্থানে রোহিঙ্গাদের আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে ১২টি রহস্যজনক অগ্নিকাণ্ড ঘটেছে। এসব ঘটনায় চারজনের মৃত্যু হয়েছে। আরও অনেকে মারাত্মক আহত হয়েছে এবং ওই ১২টি ‍অগ্নিকাণ্ডে প্রায় ৪০০টি অস্থায়ী ঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

এসপিআরএফ জানায়, এসব ঘটনার দুটির সূত্রপাত ছিল শর্ট সার্কিটের আগুন থেকে, পাঁচটি ছিল সম্ভবত ‘উদ্দেশ্যমূলক নাশকতা’ এবং সাতটির কারণ সম্পর্কে কোনো ধারণা মেলেনি।

সরকারি কর্মকর্তারা এসব ঘটনার কারণ হিসেবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে গতানুগতিকভাবে ‘অজানা’ শব্দটি লিখেছেন। এসপিআরএফ বলেছে, কর্মকর্তাদের বয়ান এবং শরণার্থীদের কথাবার্তার মধ্যে প্রচুর অসঙ্গতি রয়েছে।

রোহিঙ্গা হিউম্যান রাইটস ইনিশিয়েটিভ নামের একটি মানবাধিকার সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা ও পরিচালক সাবের কিয়াও মিনের প্রশ্ন: ‘এসব অগ্নিকাণ্ড নিয়মিত বিরতিতে ঘটতে থাকলেও কেন সেগুলোর সুষ্ঠু তদন্ত হচ্ছে না?

২০১৮ সালে নয়াদিল্লির একটি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আগুন লেগে ৫০টি ঘর পুড়ে দিয়েছিল। এটি ছিল এ ধরনের আশ্রয়কেন্দ্রে সংঘটিত সবচেয়ে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডগুলোর একটি। ওই আগুন লাগার কয়েক ঘণ্টা পর ভারতীয় জনতা পর্টির (বিজেপি) যুব শাখার নেতা মনীশ চান্দেলা ঘটনাটির দায় স্বীকার করেন।

২০১৭ সালে ভারতের উত্তরাঞ্চলীয় জম্মু ও কাশ্মীরের বেশ কয়েকজন ডানপন্থি হিন্দু জাতীয়তাবাদী নেতা একাধিক বিলবোর্ড টানিয়ে দেন, যাতে লেখা ছিল, ‘বাংলাদেশিরা, রোহিঙ্গারা জম্মু ছেড়ে চলে যাও’।

ভারতের ক্ষমতাসীন সরকার গত পাঁচ বছর ধরে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠানোর চেষ্টা করছে। নয়াদিল্লির ভাষায় রোহিঙ্গারা ভারতের নিরাপত্তার জন্য হুমকির শামিল। জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেট (আইএস) ও অন্য চরমপন্থি মুসলিম সংগঠনগুলোর সঙ্গে রোহিঙ্গাদের যোগসাজশ রয়েছে বলে ভারত অভিযোগ করেছে।

ভারতের কোনো জাতীয় শরণার্থী নীতি নেই এবং তারা রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ‘অবৈধ বিদেশি’ হিসেবে গণ্য করে।