আপডেট : ২২ জানুয়ারি, ২০২৩ ০৯:৫৮
বোরো মৌসুমের শুরুতেই শঙ্কায় রাজশাহীর কৃষকরা
এনায়েত করিম, রাজশাহী

বোরো মৌসুমের শুরুতেই শঙ্কায় রাজশাহীর কৃষকরা

বোরো মৌসুমে খেতে ব্যস্ত কৃষকরা। গত বুধবার গোদাগাড়ী উপজেলার বাসুদেবপুর এলাকায়। ছবি: দৈনিক বাংলা

বরেন্দ্র অঞ্চলে আমনের পর এখন চলছে বোরো আবাদের ভরা মৌসুম। হাঁড় কাপানো শীত ও পানির শীতলতা উপেক্ষা করেই তাই হিমেল হাওয়া গায়ে মেখে কৃষকরা ব্যস্ত সময় পার করছেন বোরো ধানের খেতে। কিন্তু রাজশাহীতে প্রতিদিন গড়ে তিন থেকে চার ঘণ্টা লোডশেডিংয়ে ভোগান্তিতে পড়েছেন কৃষকরা। মৌসুমের শুরুতেই এমন লোডশেডিংয়ে বোরো আবাদে বিঘ্ন ঘটবে বলেও আশঙ্কা তাদের। বিদ্যুৎ বিভাগের সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চাহিদামতো বিদ্যুৎ না পাওয়ার কারণেই লোডশেডিং করতে হচ্ছে।

কৃষকরা বলছেন, এক থেকে দেড় মাস আগে আমন ধান কাটার পরপরই বোরোর বীজতলার প্রস্তুতি শুরু হয়। সেচ দিয়ে জমি তৈরি করে বীজতলা থেকে চারা এনে এখন রোপণ করা হচ্ছে। বর্তমানে বরেন্দ্র অঞ্চলে মাঠে মাঠে বোরো চারা রোপণের ধুম পড়েছে। তবে সপ্তাহখানেক ধরে রাজশাহীতে প্রতিদিন গড়ে তিন থেকে চার ঘণ্টা লোডশেডিং হচ্ছে। শীত মৌসুমে তুলনামূলক কম বিদ্যুৎ চাহিদার সময়ও এমন লোডশেডিং উদ্বেগ ছড়াচ্ছে কৃষকদের মধ্যে।

রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার মাটিকাটা ইউনিয়নের কৃষক রমজান আলী বলেন, আমাদের উপজেলা সম্পূর্ণ কৃষিনির্ভর। উৎপাদিত ফসলের মধ্যে ধান অন্যতম। বর্তমানে জমিতে বোরো ধান চাষাবাদে সবাই ব্যস্ত। কিন্তু বেশ কিছুদিন ধরে বিদ্যুৎ থাকছে না। ফলে জমিতে পানি দিতে সমস্যা হচ্ছে। শীতের সময় যদি এতে লোডশেডিং হয়, তাহলে পরে কী হবে ভেবে চিন্তায় আছি।

একই উপজেলার বাসুদেবপুর এলাকার কৃষক আসাদুল ইসলাম বলেন, তিন বিঘা জমিতে লাগানো আমন ধান তুলে দুই মাস আগে বোরো রোপণ করেছি। কিন্তু লোডশেডিং এভাবে চলতে থাকলে সেচের পানির অভাবে জমি শুকিয়ে ধান নষ্ট হয়ে যাবে। আমরা কৃষিকাজ করে জীবিকা নির্বাহ করি। আমাদের অন্য কোনো কাজ নেই। এখন পানির অভাবে বোরো ধান নষ্ট হয়ে গেলে পরিবার নিয়ে কষ্টে পড়তে হবে।

লোডশেডিংয়ের তথ্য নিশ্চিত করে নর্দান ইলেকট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানির (নেসকো) রাজশাহী অঞ্চলের বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগের প্রধান প্রকৌশলী মো. আব্দুর রশিদ বলেন, রাজশাহী বিভাগের আট জেলায় দৈনিক বিদ্যুতের চাহিদা ২৫০ থেকে ২৬০ মেগাওয়াট। কিন্তু জাতীয় গ্রিড থেকে চাহিদার তুলনায় বিদ্যুৎ না পেয়ে লোডশেডিং করতে হচ্ছে। কখনো কখনো রাতেও লোডশেডিং করতে হচ্ছে।

এক প্রশ্নের জবাবে প্রকৌশলী আব্দুর রশিদ বলেন, শনিবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত রাজশাহী বিভাগে বিদ্যুতের চাহিদা ছিল ২৪৯ মেগাওয়াট। কিন্তু পাওয়া গেছে ২২১ মেগাওয়াট। অর্থাৎ ২৮ মেগাওয়াট বিদ্যুতের ঘাটতি রয়েছে।

বোরো আবাদে লোডশেডিংয়ে প্রভাব কতটুকু পড়বে- জানতে চাইলে রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মাজদার হোসেন বলেন, ‘রাজশাহীতে বোরো ধান আবাদের জন্য জমি প্রস্তুতের কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকরা। এ এলাকার প্রায় সব জমিই গভীর নলকূপের পানির ওপর নির্ভরশীল। লোডশেডিং হলেও বরেন্দ্র অঞ্চলের জমিতে এখনো পানির তেমন চাহিদা দেখা দেয়নি।’ আগামী সময়গুলোতেও বিরূপ প্রভাব দেখা দেয়ার আশঙ্কা নেই বলে দাবি করেন তিনি।