আমেরিকান সংগীত ব্যক্তিত্ব লেডি গাগার একটা বিখ্যাত উক্তি- ‘কিছু নারী পুরুষদের অনুসরণ করেন আর কিছু নারী তাদের স্বপ্নকে অনুসরণ করেন। তবে কোনদিকে যাবেন এ নিয়ে দ্বিধায় থাকলে মনে রাখবেন, এক দিন ঘুম থেকে উঠে আপনার ক্যারিয়ার কখনো বলবে না, আমি তোমাকে আর ভালোবাসি না।’ অন্যদিকে একদমই বিপরীতমুখী কথা বলেছেন বলিউড অভিনেত্রী কাজল। তার মতে, ‘বিয়ের আগে ক্যারিয়ারই আমার প্রায়োরিটি ছিল। কিন্তু বিয়ের পর দায়িত্ব, প্রায়োরিটি- সবই বদলে গেছে। ক্যারিয়ার আমার জীবনের একটি অংশ, কিন্তু আমার স্বামী আর সন্তানদের প্রতি ভালোবাসাই আমার গোটা জীবন।’
সম্পূর্ণ বিপরীত ধর্মী দুটো কথার দুটোই সত্য হতে পারে। যেমন ছোটবেলায় পড়া, ‘নাই মামার চেয়ে কানা মামা ভালো’ এবং ‘দুষ্ট গরুর চেয়ে শূন্য গোয়াল ভালো’ বিপরীতমুখী দুটো কথা, কিন্তু দুটোই সমানভাবে প্রচলিত।
প্রেম আর ক্যারিয়ারের দ্বৈরথের যেন বিরাম নেই। ক্যারিয়ার মেয়েদের জীবনের একটা অঙ্গ বলে মনে করেন প্রায় সবাই। আর সেখানেই বিপত্তি হয়-ক্যারিয়ারকে সময় দিলে অভিমান জমে প্রেমের সম্পর্কে। আর নিজের ইচ্ছাকে কষ্ট দিয়ে অন্যের আকাঙ্ক্ষা পূরণ ও সহজ নয়। যা-ই বাছাই করা হোক, সে ক্ষেত্রে অন্যটা কেন করলাম না, তা নিয়ে অনুশোচনা করার সুযোগ নেই। আর দুই দিকের খুঁটিনাটি ভালো করে ভেবে সিদ্ধান্ত নিলে এই অনুশোচনা কম হবে। তবে সবচেয়ে ভালো দুটোকেই ভারসাম্য করে চলার শিল্প রপ্ত করে ফেললে।
ভালোবাসা ছাড়া যেমন জীবনটা ফাঁকা লাগে, ঠিক তেমনই জীবনে একটা কিছু করার ইচ্ছেটাকেও দমিয়ে রাখা কঠিন। সেই ছোটবেলা থেকে ভালো রেজাল্টের পেছনে ছোটা, রাতের পর রাতে জেগে ডিগ্রি নেয়া, অফিস পলিটিক্স সহ্য করে খেটে প্রমোশন পাওয়া- সব আজ নতুন সম্পর্ক বা সম্পর্কের মোড় বদলানোর কারণে বাদ দিতে হবে, এসবেরও কোনো মানে নেই।
একজন ব্যক্তি তার জীবনের স্বপ্ন, আকাঙ্ক্ষা, বাস্তবায়ন করতে পারলে তাতে সবচেয়ে বেশি খুশি হওয়ার কথা প্রিয়জনেরই। তা ছাড়া আর্থিক স্বনির্ভরতাও থাকে। কিন্তু পার্টনারের সঙ্গে পারস্পরিক বোঝাপড়া না থাকলে ক্যারিয়ার আর প্রেমকে একসঙ্গে নিয়ে চলা মুশকিল। ক্যারিয়ার থেকে সিদ্ধান্ত গ্রহণের দক্ষতা, পরিকল্পনা আর পরিবারের থেকে ইমোশনাল ইন্টেলিজেন্স, দুটোই ঘর-অফিস দুই জায়গায়ই কাজে দেয়। ক্যারিয়ারে সফল হওয়া মানেই শুধু স্যালারিতে অতিরিক্ত সংখ্যা যোগ হওয়া না। এতে আত্মবিশ্বাস, নেটওয়ার্কিং বৃদ্ধি পায়, নিজস্ব পরিচিতি তৈরি হয়। আবার ব্যস্ততা না থাকলে অলস মস্তিষ্কেও দুশ্চিন্তা, ডিপ্রেশন ভর করে। তার মানে এই নয়, বড় কোনো অফিসেই কাজ করতে হবে। মূল বিষয় কোনো কাজে নিজেকে ব্যস্ত রাখা। কারণ, কাছের মানুষ যখন ব্যস্ততা বা অন্য কোনো কারণে পাশে থাকতে পারে না, তখন ক্যারিয়ারই জীবনের মানে খুঁজতে সাহায্য করে। তবে যেকোনো ক্ষেত্রে নিজের ১০০ শতাংশ দেয়ার আগে নিজেকে প্রশ্ন করুন, ট্রান্সফার হলে বা অন্য ডিপার্টমেন্টে কাজ করতে হলে তখনো কী একই রকম কেরিয়ারিস্ট থাকবেন কি না, কলিগদের আড্ডা আর অফিস পার্টি দারুণ লাগে বলেই ক্যারিয়ারকে বেছে নিচ্ছেন কি না। আবার আর্থিকভাবে পার্টনারের ওপর নির্ভরশীল হলে যদি কখনো বিচ্ছেদ হয়ে যায়, তখন বিকল্প কিছু কাজের কথা ভেবে রেখেছেন কি না।
১৯৮/সি, তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮
©দৈনিক বাংলা