আপডেট : ২৫ জানুয়ারি, ২০২৩ ০৯:৫৮
নওগাঁয় ধান সংগ্রহ ‘শূন্য’, চালে ‘লোকসান’
প্রতিনিধি, নওগাঁ

নওগাঁয় ধান সংগ্রহ ‘শূন্য’, চালে ‘লোকসান’

বাজারে ধান বিক্রি করছেন কৃষকরা। গতকাল নওগাঁ সদর উপজেলার হাঁপানিয়া হাটে। ছবি: দৈনিক বাংলা

নওগাঁয় খোলাবাজারে ধানের দাম বেশি পাওয়ায় সরকারি খাদ্যগুদামে ধান বিক্রি করছেন না কৃষকরা। ফলে আমন মৌসুমের ধান সংগ্রহ অভিযানের দুই মাসে ধান কেনা হয়েছে মাত্র এক মেট্রিক টন, যা লক্ষ্যমাত্রার শূন্য দশমিক শূন্য এক শতাংশের চেয়েও কম।

এদিকে ৬৭ দিনে চাল সংগ্রহ হয়েছে ১৫ হাজার ৫০০ টন, যা লক্ষ্যমাত্রা ২২ হাজার ১৩৬ টনের ৭০ শতাংশ। সে হিসাবে চাল সংগ্রহে এখনো ঘাটতি রয়েছে ৩০ শতাংশ। মিলাররা বলছেন, প্রতি কেজি চালে তারা চার টাকা করে লোকসান দিচ্ছেন। কিন্তু নিবন্ধন টিকিয়ে রাখতে তারা লোকসান হলেও গুদামে চাল দিতে বাধ্য হচ্ছেন।

কৃষকরা বলছেন, সরকারি গুদামের চেয়ে তারা বাজারে ধানের দাম বেশি পাচ্ছেন। এ কারণে তারা সরকারি গুদামে ধান দিতে রাজি হচ্ছেন না। খাদ্য বিভাগের কর্মকর্তারাও সরকার-নির্ধারিত দামের চেয়ে বাজারে ধানের দাম বেশি থাকার কথা স্বীকার করেছেন।

খাদ্য বিভাগের কর্মকর্তা ও কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রতিবছরই সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে বাজারে দাম বেশি থাকায় কৃষক ও মিল-মালিকদের কাছ থেকে সরকারি গুদামে ধান-চাল সরবরাহে সাড়া পাওয়া যায় না। গত বছর বোরো মৌসুমে লক্ষ্যমাত্রার মাত্র ৪ শতাংশ ধান সংগ্রহ হয়েছিল। এ বছর অবস্থা নাজুক। ১১ হাজার মেট্রিক টন ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করার পর দুই মাস পেরিয়ে গেলেও গতকাল মঙ্গলবার পর্যন্ত সংগ্রহ হয়েছে মাত্র এক মেট্রিক টন ধান।

জেলার রাণীনগর উপজেলার মালশন গ্রামের কৃষক মিজানুর রহমান বলেন, ‘বাজারে তো মণপ্রতি কাটারিভোগ ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ২৩০ টাকা, বিআর-৪৯ (রনজিত) মণপ্রতি ১ হাজার ৩৫০ টাকা আর পাইজাম ধান বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৫০০ টাকা মণ দরে। কিন্তু খাদ্যগুদামে ধানের দাম কম। তাই বাজারে বিক্রি করতে হচ্ছে।’

সদর উপজেলার হাঁপানিয়া গ্রামের কৃষক শরিফুল ইসলাম বলেন, ‘যে ধান বাজারে ১ হাজার ২০০ টাকা মণ, সেই ধান খাদ্যগুদামে ১ হাজার ১২০ টাকা দরে কেনা হচ্ছে। তাহলে কেন খাদ্যগুদামে ধান দেব আমরা? এ ছাড়া আর্দ্রতার কথা বলে প্রতি মণে এক-দুই কেজি করে বেশি ধান নেয়া হয় গুদামে। সেখানেও লস হয়। বাজারে বিক্রি করলে এসব সমস্যা হয় না।’

মহাদেবপুর উপজেলার মহিষবাতান এলাকার কৃষক আব্দুল মজিদ বলেন, ‘খাদ্যগুদামে ধান দিতে ঝামেলা হয়। সিরিয়াল ধরতে হয়, দাম কম দেয়, প্রতি মণে একটু ধান বেশি দিতে হয়। এসব সমস্যার কারণে সেখানে ধান বিক্রি করিনি এবার। বাজারে ধানের দাম মোটামুটি ভালো। তাই বাজারে বিক্রি করছি।’

খাদ্য বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, চাল সংগ্রহের অবস্থা কিছুটা ভালো। গত বছর বোরো মৌসুমে চাল সংগ্রহ হয়েছিল লক্ষ্যমাত্রার প্রায় ৮০ শতাংশ। এ বছর কার্যক্রম শুরুর ৬৭ দিনে সংগ্রহ হয়েছে ৭০ শতাংশের কিছুটা বেশি। তবে মিল-মালিকরা সরকারের নিবন্ধন টিকিয়ে রাখার স্বার্থে লোকসান দিয়ে চাল সরবরাহ করছেন বলে জানিয়েছেন।

নওগাঁ জেলা চালকল মালিক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক ফরহাদ হোসেন চকদার দৈনিক বাংলাকে বলেন, ‘মোকাম থেকে প্রতি কেজি মোটা চাল ৪৪-৪৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। তা ছাড়া বর্তমানে বাজারে কোনো ধানের দামই ৩০ টাকা কেজির নিচে নেই। ৩০ টাকা কেজি দরে ধান কিনে সেখান থেকে চাল উৎপাদন করতে প্রতি কেজি চাল কোনোভাবেই ৪৫ টাকার নিচে বিক্রি করা সম্ভব নয়। তার পরও মিলাররা নিবন্ধন টিকিয়ে রাখতে প্রতি কেজি ৪ টাকা লোকসান দিয়ে গুদামে চাল দিচ্ছে।’

ধানের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ না হলেও চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা পূরণের বিষয়ে আশাবাদী জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক আলমগীর কবির। দৈনিক বাংলাকে তিনি বলেন, ‘চলতি মৌসুমে নওগাঁয় ধান-চাল সংগ্রহ অভিযান শুরু হয় ১৭ নভেম্বর, শেষ হবে আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি। ধান-চাল কেনার সরকার-নির্ধারিত দামের চেয়ে বাজারে দাম বেশি। এ জন্য অধিকাংশ কৃষক গুদামে ধান বিক্রি করছেন না। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ না হলেও চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা শতভাগ পূরণ হবে বলে আশা করছি।’