আপডেট : ২ সেপ্টেম্বর, ২০২২ ১৩:৫০
মাছ-সবজি, চাল-ডালের দাম কিছুটা কমেছে

মাছ-সবজি, চাল-ডালের দাম কিছুটা কমেছে

শাকসবজির দাম ধীরে ধীরে কমছে। ছবি: দৈনিক বাংলা

গরুর মাংসের যে চড়া দাম উঠেছিল তা এখনো বহাল আছে। তবে মাছ ও শাকসবজির দাম ধীরে ধীরে কমছে। চাল-ডাল আর খোলা আটার দামও গত সপ্তাহের তুলনায় কিছুটা কমেছে।  

আজ শুক্রবার রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যায়, গরুর মাংস সেই ৭০০ টাকা কেজিতেই বিক্রি হচ্ছে। আর খাসির মাংসও বিক্রি হচ্ছে ৮৫০ থেকে ৯০০ টাকা কেজিতে। 
সবজির দাম কমার পেছনে খুচরা ও পাইকার ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন যুক্তি দিয়েছেন। তারা বলছেন, চাহিদার বিপরীতে পর্যাপ্ত সরবরাহ থাকায় দাম কমেছে। 

দাম কমছে সবজির: গেল সপ্তাহে শিম কেজিপ্রতি বিক্রি হয়েছিল ১৪০ থেকে ১৫০ টাকায়। তা এ সপ্তাহে কমে বিক্রি হচ্ছে ১২০ থেকে ১৩০ টাকায়। টমেটো কেজিতে ২০ টাকা কমে বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকায়, ১০০ টাকা কেজিতে অপরিবর্তিত আছে গাজর, আর ৬০ টাকায় শসার দাম। বেগুন ৫০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে, গত সপ্তাহে এর দাম ৫০ টাকাই ছিল।
অন্যান্য সবজির মধ্যে পেঁপে ২০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে, কাকরোল ৪০ টাকায়। পাঁচ টাকা বেড়েছে পটলের দাম। এ সপ্তাহে পটল ৪০ টাকা যা গত সপ্তাহে ছিল ৩৫ টাকা কেজি। আলুও আছে সেই চিরচেনা ৩০ টাকাতেই।
আগের সপ্তাহের তুলনায় অপরিবর্তিত আছে চিচিঙ্গার দাম। এ সপ্তাহে চিচিঙ্গা ৪৫ টাকা কেজি, করলা ৬০ টাকায় অপরিবর্তিত, ঢেঁড়সের দামও সেই আগের মতো ৪০ টাকায় স্থির আছে, লাউ রকম ভেদে ৪০ থেকে ৫০ টাকায় মিলছে।  
কারওয়ান বাজারের সবজি বিক্রেতা সায়িম আলী বলেন, ‘গত সপ্তাহেও যে দামে সবজি বিক্রি করেছি, তা এ সপ্তাহে বিভিন্ন সবজিতে ১০ থেকে ১৫ টাকা কমে বিক্রি করছি। ধীরে ধীরে সব সবজির দামই কমে আসছে। চাহিদা অনুযায়ী পর্যাপ্ত সরবরাহ আসছে। তাই দাম কমছে।’
দাম কমেছে আদার: গত সপ্তাহে যে আদার কেজি ছিল ১২০ টাকা, তা এ সপ্তাহে মিলছে ১০০ টাকায়। আর ১২০ টাকায় অপরিবর্তিত আছে রসুনের দাম। কেজিতে এক টাকা কমে পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৪৪ টাকায়, জিরার দাম অপরিবর্তিত ৪৬০ টাকায়। শুকনো লাল মরিচের কেজি ৪৫০ টাকা। 

গরুর মাংসের দাম কমেনি: গরুর মাংস আগের মতো ৭০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে, খাসির মাংস মিলছে ৮৫০ টাকা থেকে ৯০০ টাকায়। গরুর মাংস বিক্রেতা জমির মিয়া দৈনিক বাংলাকে বলেন, ‘গরুর মাংসের দাম কবে কমবে তা বলা যাচ্ছে না। বাংলাদেশে যে জিনিসের দাম একবার বাড়ে তা আর কমতে শুনেছেন কখনো?’

ডালের দাম কমেছে: ঢাকার বিভিন্ন বাজারে দেশি মসুর ডালের কেজি ১২০ টাকা। ভারতীয় মসুর ডাল পাঁচ টাকা কমে বিক্রি হচ্ছে ১০৫ টাকায়।

দাম কমল খোলা আটার:  গেল সপ্তাহে খোলা আটার কেজি ৫০ টাকা থাকলেও এ সপ্তাহে খোলা আটা মিলছে ৪৬ থেকে ৪৮ টাকায়। তবে এ দাম এক মাস আগের তুলনায় প্রায় ২২ শতাংশ বেশি। বিপণনকারী দুয়েকটি কোম্পানি আটার দুই কেজির প্যাকেটের নতুন দাম নির্ধারণ করেছে ১২৫ টাকা, যা এ সপ্তাহেও অপরিবর্তিত আছে।
চলতি মাসের শুরুর দিকে বাজারে আটার দুই কেজির প্যাকেটের দাম ছিল ১০৪ টাকার আশপাশে। সে হিসাবে দাম বাড়ল প্রতি কেজিতে ১০ টাকার মতো।

বোতলজাত সয়াবিন তেল ১৯২ টাকা লিটার:  ডলারের বাজারে অস্থিরতার কথা বলে গত ৩ আগস্ট বোতলজাত প্রতি লিটার সয়াবিন তেলের দাম ২০ টাকা বাড়ানোর প্রস্তাব করে ভোজ্যতেল আমদানিকারক ও উৎপাদক সমিতি। ২০ দিন পর লিটারে সর্বোচ্চ ৭ টাকা বাড়াতে সম্মতি দেয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। নতুন দাম অনুযায়ী বাজারে প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন তেল ১৮২ টাকা, বোতলজাত সয়াবিন তেল ১৯২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া পাঁচ লিটারের এক বোতল সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ৯৪৫ টাকায়। পাম তেল লিটারপ্রতি ১৪৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

ডিমের দাম কমলেও খামারের মুরগির দাম কমেনি: ডিমের হালি এ সপ্তাহে খুচরা বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকা তবে পাইকারি কিনলে ডজন মিলবে ১০৮ টাকায়। এদিকে অপরিবর্তিত রয়ে গেছে ব্রয়লারের দাম। এ সপ্তাহেও ব্রয়লার বা খামারের মুরগি বিক্রি হচ্ছে ১৭০ টাকা কেজি দরে। গত সপ্তাহে সোনালী মুরগি ২৮০ টাকায় বিক্রি হলেও এ সপ্তাহে তা বিক্রি হচ্ছে ৩০০ টাকায়। সে হিসেবে কেজিতে বেড়েছে ২০ টাকা। লেয়ার মুরগির কেজি বিক্রি হচ্ছে ২৬০ থেকে ২৭০ টাকায়। আর দেশি মুরগি সেই আগের দাম ৪৫০ থেকে ৫০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।

দাম কমেছে মাছের: গত সপ্তাহে রকমভেদে যে রুই ৩২০ টাকায় কিনতে হয়েছে তা এ সপ্তাহে মিলছে ৩০০ টাকায়। আর ইলিশ রকমভেদে মিলছে ৮৫০ টাকা থেকে। তবে দুই কেজি ওজনের ইলিশ কিনলে প্রতি কেজিতে ১৬০০ টাকা করে গুনতে হচ্ছে। এছাড়া রকমভেদে তেলাপিয়া ও পাঙাশ ১৬০ থেকে ১৯০ টাকা, শিং ৩৫০ থেকে ৪৬০ টাকা, কই ২০০ থেকে ২৫০ টাকা, পাবদা ৩৫০ থেকে ৫০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হয়েছে।

কমল চালের দাম: ভোক্তা অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা নিয়মিত বাজার তদারকি করছেন। ফলে কমে আসছে চালের দাম। কারওয়ান বাজারের ‘সিয়াম রাইস ট্রেডার্স’ নামের প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী রহিম বেপারী তালুকদার দৈনিক বাংলাকে বলেন, চালের দাম ধীরে ধীরে কমছে। গেল সপ্তাহে যে দামে চাল বিক্রি করেছি, তা এ সপ্তাহে ৫-৭ টাকা কম।

রহিম বেপারী আরও বলেন, হুট করে চালের দাম বেড়ে যাওয়ায় সরকার মনিটরিং করছে, যার কারণে কিছুটা দাম কমেছে। তবে যতটা বেড়েছিল, ততটা কমছে না। কয়েক মাসে বস্তাপ্রতি ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা বাড়িয়েছে, কিন্তু বস্তাপ্রতি কমিয়েছে ৫০ থেকে ৬০ টাকা। কোনো জায়গায় হয়তো তার চেয়ে একটু বেশি।

প্রতি কেজি মিনিকেট বিক্রি হচ্ছে ৭০ টাকায়। যা গেল সপ্তাহে ছিল ৭৩ থেকে ৭৫ টাকায়। দাম কমেছে আটাশ চালের। এ সপ্তাহে আটাশ বিক্রি হচ্ছে ৫৩ টাকা কেজি, যা গেল সপ্তাহে ছিল  ৫৫ থেকে ৫৬ টাকায়। নাজিরশাইল চালের দাম কমেছে কেজিতে পাঁচ টাকা। গেল সপ্তাহে যে নাজিরশাইল ছিল ৮০ টাকায়, তা এ সপ্তাহে মিলছে ৭৫ টাকায়। পাইজাম মিলছে ৫৩ টাকা কেজিতে। এ ছাড়া কেজিতে দুই-এক টাকা কমেছে অন্যান্য চালের দাম।

পাইকারি চাল বিক্রেতা মফিজুল আহমেদ বললেন, দাম বাড়লেই ক্রেতা বেশি থাকে। সবাই তখন বেশি বেশি মালামাল কিনতে আসে। আর দাম কমলে ক্রেতাও কমে যায়৷ তারা ভাবে দাম আরও কমবে। তাই সবাই অপেক্ষা করে।