সঞ্চয় এবং ঋণ বিতরণ- দুই ক্ষেত্রেই পুরো দেশের মধ্যে পিছিয়ে দক্ষিণের জেলা বরিশাল। বিভাগটিতে বিনিয়োগ আমানতের অর্ধেক। তবে আমানত এবং ঋণে সবচেয়ে এগিয়ে ঢাকা।
গত বছরের সেপ্টেম্বর শেষে ব্যাংক খাতে মোট আমানতের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৫ লাখ ৭৬ হাজার ৩৭০ কোটি টাকা। এর মধ্যে বরিশাল বিভাগে সঞ্চয়ের পরিমাণ মাত্র ৩০ হাজার ৩৪৯ কোটি টাকা। আর ব্যাংক খাতে মোট ঋণের পরিমাণ ১৩ লাখ ৩২ হাজার ৯০৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে বরিশাল বিভাগে বিতরণ হয়েছে ১৫ হাজার ৩৮২ কোটি টাকার ঋণ।
এ প্রসঙ্গে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা এ বি মির্জ্জা মো. আজিজুল ইসলাম বলেন, ‘সঞ্চয়, আয়বৈষম্য, দারিদ্র্যসীমার নিচের জনগোষ্ঠী- সব কিছুতে উত্তরাঞ্চল ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের লোক অনেক বঞ্চিত। বেশির ভাগ চাকরিজীবী ঢাকায় অবস্থান করায় আমানতও এখানেই বেশি জমা পড়ছে। আর এলাকার চেয়ে ঢাকায় যেকোনো বিষয়ে মিলছে অতিরিক্ত সুযোগ-সুবিধা।’
তিনি বলেন, ‘ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন জেলায় কলকারখানা ও ব্যবসা করলেও ঋণ নিচ্ছেন রাজধানীর ব্যাংকের শাখাগুলো থেকেই। ফলে আঞ্চলিক বৈষম্য প্রকট থেকে আরও প্রকটতর হচ্ছে। কারণ ঢাকায় সহজে ঋণ পাওয়া যায় এবং সমস্যা হলে সমাধানও সহজে হয়।’
বরিশালে কোন জেলায় কত ঋণ ও আমানত
বরিশাল, পটুয়াখালী, ভোলা, পিরোজপুর, বরগুনা ও ঝালকাঠি জেলা নিয়ে বরিশাল বিভাগ। ১৯৯৩ সালে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের এ ছয়টি জেলা নিয়ে এই বিভাগের যাত্রা শুরু হয়। এখানকার আয়তন ১৩ হাজার ২২৫ বর্গকিলোমিটার। লোকসংখ্যা এক কোটির নিচে। গত বছরের সেপ্টেম্বর শেষে বরিশাল বিভাগের সঞ্চয়ের পরিমাণ ছিল ৩০ হাজার ৩৪৯ কোটি টাকা। এর মধ্যে বরিশাল জেলায় সঞ্চয় ১২ হাজার ৭৭০ কোটি টাকা। এরপর ভোলা ৪ হাজার ৫৮৭ কোটি, পটুয়াখালীতে ৪ হাজার ৩৫৭ কোটি, পিরোজপুরে ৪ হাজার ১৪৯ কোটি, ঝালকাঠি ২ হাজার ৩৯৩ কোটি ও বরগুনায় ২ হাজার ৯০ কোটি টাকা আমানত রয়েছে।
এই বিভাগে বিতরণ হয়েছে ১৫ হাজার ৩৮২ কোটি টাকার ঋণ। এর মধ্যে বরিশাল জেলায় ঋণ ৫ হাজার ৬৯৩ কোটি টাকা। এরপর পটুয়াখালীতে ২ হাজার ৭১৬ কোটি, ভোলা ২ হাজার ৬১০ কোটি, পিরোজপুরে ১ হাজার ৭৫৮ কোটি, বরগুনায় ১ হাজার ৫৬৪ কোটি ও ঝালকাঠিতে ১ হাজার ৩৮ কোটি টাকার ঋণ দেয়া হয়েছে।
অর্ধেকেরও বেশি টাকা ঢাকায়
কথায় বলে ‘ঢাকায় নাকি টাকা ওড়ে, শুধু ধরতে জানতে হয়’। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদনেও এই কথার মিল খুঁজে পাওয়া যায়। প্রতিবেদনে দেখা যায়, ঢাকায় যে পরিমাণ টাকা আছে, সারা দেশ মিলিয়েও তা নেই। ক্ষুদ্র সঞ্চয় এবং মেয়াদি আমানত মিলিয়ে সারা দেশের মধ্যে ঢাকার ধারেকাছেও নেই দেশের কোনো অংশ।
সেপ্টেম্বর শেষে ঢাকা বিভাগেই রয়েছে ৯ লাখ ৬৭ হাজার ৮৭০ কোটি টাকার বেশি আমানত; যা দেশের মোট আমানতের প্রায় ৬২ শতাংশ। এই আমানতের শুধু ঢাকা জেলায় ৮ লাখ ১৮ হাজার ৩৬৫ কোটি টাকা। এ ছাড়া নারায়ণগঞ্জে ৩২ হাজার ৭৮৯ কোটি টাকার এবং গাজীপুরে ৩০ হাজার ১১১ কোটি টাকার আমানত রয়েছে।
ঋণ বিতরণের দিক দিয়েও ঢাকা স্বাভাবিকভাবেই এগিয়ে। এই বিভাগে দেশের ব্যাংক-ব্যবস্থার মোট ঋণের প্রায় অর্ধেক ঋণ বিতরণ হয়েছে। সেপ্টেম্বরে ব্যাংক খাতের ১৩ লাখ ৩২ হাজার ৯০৫ কোটি টাকা ঋণের মধ্যে ঢাকা বিভাগেই দেয়া হয়েছে ৯ লাখ ৯ হাজার ২৮৮ হাজার কোটি টাকার ঋণ।
ঢাকা বিভাগের ঢাকা জেলাতেই ৮ লাখ ৪৫ হাজার ৭২৭ কোটি টাকার ঋণ। এরপর নারায়ণগঞ্জে ১৮ হাজার ৮৮ কোটি টাকা, গাজীপুরে ১২ হাজার ৪০৬ কোটি টাকা, নরসিংদীতে ৭ হাজার ৩৫ কোটি টাকা ও টাঙ্গাইলে ৫ হাজার ৬৩২ কোটি টাকার ঋণ দেয়া হয়েছে।
অন্যান্য বিভাগ
আমানতে ঢাকার পরেই রয়েছে চট্টগ্রাম বিভাগ। সেখানে আমানতের পরিমাণ ৩ লাখ ৩০ হাজার ২৭৩ কোটি টাকা। এ টাকার মধ্যে চট্টগ্রাম জেলায় ২ লাখ ৭ হাজার ৮১৫ কোটি টাকার আমানত। এরপর নোয়াখালীতে ১৮ হাজার ৫৬ কোটি টাকা, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ১৫ হাজার ৯৮৩ কোটি টাকা, ফেনীতে ১৪ হাজার ৬৬৫ কোটি টাকা ও চাঁদপুরে ১৩ হাজার ৩১১ কোটি টাকার আমানত রয়েছে।
এর পরের অবস্থানে খুলনা। এই বিভাগে আমানতের পরিমাণ ৬৬ হাজার ৮১৩ কোটি টাকা। এ ছাড়া রাজশাহীতে ৬৪ হাজার ৪৫১ কোটি টাকা, সিলেটে ৬০ হাজার ৯৮২ কোটি টাকা, রংপুরে ৩০ হাজার ৭৫৭ কোটি টাকা ও ময়মনসিংহে ২৪ হাজার ৮৭২ কোটি টাকার আমানত রয়েছে।
চট্টগ্রাম বিভাগে বড় বড় ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান থাকলেও ঋণ সেভাবে বাড়েনি। চট্টগ্রামে ঋণের পরিমাণ ২ লাখ ৩৭ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে চট্টগ্রাম জেলাতেই দেয়া হয়েছে ১ লাখ ৯৫ হাজার কোটি টাকার ঋণ। ঋণ বিতরণে এরপর রয়েছে খুলনা বিভাগ, যার পরিমাণ প্রায় ৫২ হাজার ৭৭৯ কোটি টাকা। এ ছাড়া রাজশাহীতে প্রায় ৫২ হাজার ২২৬ কোটি টাকা, রংপুরে ৩২ হাজার ৫৭৫ কোটি টাকা, ময়মনসিংহে ১৭ হাজার ৯০৩ কোটি টাকা, সিলেটে ১৫ হাজার ৭৩১ কোটি টাকার ঋণ দেয়া হয়েছে।
১৯৮/সি, তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮
©দৈনিক বাংলা