হাওরের বুকে নির্মিত দৃষ্টিনন্দন সড়ক কিশোরগঞ্জের রূপ বদলে দিয়েছে। বিভিন্ন ঋতুতে বিভিন্ন রূপে ধরা দেয় হাওর এলাকা। বর্ষাকালে চারপাশে অথৈ পানির ওপর সোনালি রোদের কিরণে মুগ্ধ হয় মানুষ। আবার শুকনো মৌসুমে পানি শুকিয়ে গেলে হাওর হয়ে ওঠে সবুজ উদ্যান।
সম্প্রতি সরেজমিনে হাওর এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, বর্ষার পানি শুকিয়ে যাওয়ায় হাওরের জমিতে এখন ধান, শীতকালীন সবজি ও সূর্যমুখীর বাগান করেছেন কৃষকরা। সড়ক থেকে দৃষ্টি যতদূর যায়, শুধু সবুজ আর সবুজ। বিস্তৃত মাঠে দলবেঁধে ঘুরে বেড়াচ্ছে মহিষ ও গরুর পাল। আর সবুজের সে রাজ্য দেখতে সেখানে ভিড় করছেন দর্শনার্থীরা।
২০২০ সালে কিশোরগঞ্জের ইটনা, মিঠামইন ও অষ্টগ্রাম উপজেলার অলওয়েদার সড়কটি উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সড়কটি চালু হওয়ার পর থেকে হাওর এলাকায় পর্যটকদের সংখ্যা বেড়েই চলছে। বর্ষায় সেখানে পর্যটকদের ঢল নামে। তবে শুকনো মৌসুমেও সে সংখ্যা কম নয়। পর্যটকদের কথা মাথায় রেখে সড়কের আশপাশে গড়ে উঠেছে আবাসিক হোটেল ও রেস্তোরাঁ।
সম্প্রতি ঢাকার খিলক্ষেত এলাকা থেকে সপরিবারে ঘুরতে এসেছিলেন ব্যবসায়ী শফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হওয়ায় গত বর্ষায় অলওয়েদার সড়কটি দেখতে এসেছিলেন। তখন চারদিকে শুধু পানি আর পানি ছিল। এবার এখানে এসে সবুজ ফসলের মাঠ দেখে প্রাণভরে নিশ্বাস নিয়েছেন।
শফিকুল ইসলাম আরও বলেন, ‘যারা এখানে আসবে না, তারা বুঝবেন না প্রকৃতির এই দৃশ্য কতটা শান্তি আনে মনে। একই এলাকার দুটি রূপ সত্যিই ভিন্ন। সবুজের এই সমারোহ দেখে মন চায় যেন এখানে সারাক্ষণ শুয়ে থাকি।’
কিশোরগঞ্জ শহরের শিক্ষকপল্লি থেকে বন্ধুদের নিয়ে মোটরসাইকেলে করে ঘুরতে এসেছিলেন গুরুদয়াল সরকারি কলেজের ছাত্র জাকুয়ান আহাম্মেদ। তিনি বলেন, ‘হাওরের এই অপরূপ সৌন্দর্য, মুক্ত বাতাস ও সবুজ প্রকৃতি আমাদের টেনে নিয়ে এসেছে। এখানকার এই সবুজ ঘাসের গালিচা দেখে শুয়ে থাকতে মন চাইছে। এ যেন নিউজিল্যান্ড।’
জেলার জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক সাইফউদ্দীন আহমেদ বলেন, এক সময়ের অবহেলিত হাওরে পর্যটনের অপার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। বর্ষাকালে চারদিকে পানি আর পানি। অপরদিকে শুকনো মৌসুমে ফসলের মাঠ। একই জায়গায় দুটি রূপ। সত্যিই অসাধারণ।
কিশোরগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য ও রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের ছেলে রেজওয়ান আহাম্মদ বলেন, ‘হাওরে যোগাযোগব্যবস্থার অভাবে কেউ আসতে চাইত না। এখন প্রচুর পর্যটক হাওরে আসেন। পর্যটকদের আগমন দেখে আমারও ভালো লাগে।’
হাওর ঘিরে আরও অনেক পরিকল্পনা রয়েছে জানিয়ে রেজওয়ান আহাম্মদ বলেন, ‘সেগুলো বাস্তবায়ন হলে পর্যটকদের সবচেয়ে পছন্দের জায়গায় পরিণত হবে আমাদের এলাকা।’
১৯৮/সি, তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮
©দৈনিক বাংলা