বাংলাদেশের অনেক শিক্ষার্থীর ইচ্ছা থাকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে একটা মাস্টার্স করার। খুবই সুন্দর ইচ্ছা। সেই সুযোগ দিতে একটা দারুণ ইতিবাচক সিদ্ধান্তও নিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। তবে এখানে আমি বেশ কয়েকটি বাধা দেখছি। সেগুলো দূর করতে পারলে এটা অবশ্যই একটা ভালো সিদ্ধান্ত হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেটে গত বছরের ৩০ অক্টোবর একটি নীতিমালা অনুমোদন করেছে। এর ফলে এখন থেকে যেকোনো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে চার বছর মেয়াদি স্নাতক সম্পন্ন করা শিক্ষার্থীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়মিত মাস্টার্স বা স্নাতকোত্তর প্রোগ্রামে ভর্তি হতে পারবেন।
বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮৩টি বিভাগ ও ১৩টি ইনস্টিটিউটে স্নাতকোত্তরের আসন রয়েছে ৬ হাজার ২৭০টি। আসলে স্নাতক সম্পন্ন করার পর অনেক শিক্ষার্থী বিদেশে চলে যান কিংবা চাকরিতে যোগ দেন। ফলে স্নাতকোত্তরের অনেক আসন ফাঁকা থাকে। সে কারণেই বোধহয় এমন সিদ্ধান্ত।
ইতিবাচক বিষয় হলো, নীতিমালায় বয়স ও শিক্ষাবর্ষের বাধ্যবাধকতা রাখা হয়নি। আবার স্নাতকোত্তরের ফি বাইরের শিক্ষার্থী এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক সম্পন্ন করা শিক্ষার্থীদের জন্যও সমান। আমি মনে করি, এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত হলে অনেক ছেলেমেয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে পারবে। বিশেষ করে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
তবে এখানে কিছু প্রতিবন্ধকতা আছে। সবাই ঢাবির নিয়মিত মাস্টার্স বা স্নাতকোত্তর প্রোগ্রামে ভর্তির জন্য আবেদন করতে পারবেন না। আবেদন করতে হলে ভর্তিচ্ছুক শিক্ষার্থীর স্নাতকে অন্তত ৩ দশমিক ২৫ সিজিপিএ থাকতে হবে। আমি জানি না, বাংলাদেশের কত শতাংশ শিক্ষার্থীর স্নাতকে ৩ দশমিক ২৫ থাকে। বিশেষ করে ইংরেজিসহ অনেক বিষয় আছে যেখানে ৩ দশমিক ২৫ পাওয়া কঠিন।
সে ক্ষেত্রে জিপিএর এই বাধ্যবাধকতা কমানো উচিত। এ ক্ষেত্রে ৩ করলে ভালো হয়। না থাকলে আরও ভালো। বিশ্ববিদ্যালয় সবার জন্য উন্মুক্ত করতে পারে। অনার্সের ফলের জন্য ভাইভায় একটা নম্বর যোগ হতে পারে। তাহলে যারা পিছিয়ে আছে তারা ভর্তি পরীক্ষায় নিজেকে প্রমাণ করার সুযোগ পাবে। আর যার অনার্সের ফল ভালো তার তো সুবিধা হলোই।
আরেকটা বিষয়। যতটা জানা গেছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মিত শিক্ষার্থীরা ভর্তি হওয়ার পর যতগুলো আসন ফাঁকা থাকবে, কেবল ওই কয়টি আসনেই বাইরের শিক্ষার্থীদের ভর্তি করা হবে। এখানেও একটু পরিবর্তন করা যেতে পারে। সাধারণত খুব বেশি ছেলেমেয়ে মাস্টার্স মিস করে না, বিশেষ করে ভালো বিষয়গুলোতে যারা পড়ে। কাজেই ফাঁকা আসনে থাকবে খুব অল্প।
ধরুন অর্থনীতি বা আইনে মাস্টার্সে দুটি সিট ফাঁকা থাকল, সে জন্য ভর্তি পরীক্ষার আয়োজন করা হলো। বিপরীতে ক্যান্ডিডেট সংখ্যা ছাড়িয়ে গেল ১০ হাজার! কেউ যেন বলতে না পারে ফরম বাণিজ্যের জন্য এটা করা হয়েছে। আমি মনে করি, শুধু শূন্য আসনে ভর্তি না করে বাইরের ছেলেমেয়েদের ভর্তি পরীক্ষার ফলাফল, কতজন নিয়মিত শিক্ষার্থী ভর্তি হয়নি, বিভাগগুলো কতজন পড়াতে পারবে এসব বিবেচনায় ভর্তি চলতে পারে। তাতে বাইরের ছেলেমেয়েরা উপকৃত হবে।
আসলে শিক্ষার ক্ষেত্রে বয়স বা ফলাফল এগুলো কোনো বাধা না। আর এগুলো বাধা হয় না বলে আমাদের দেশের ছেলেমেয়ে বিশ্বের যেকোনো বিশ্ববিদ্যালয় পড়তে যেতে পারে। আশা করছি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বিষয়গুলো বিবেচনা করবে।
জেলায় জেলায় বিশ্ববিদ্যালয় না করে আমাদের যে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আছে, সেগুলো ভালো করার দিকে নজর দেয়া উচিত এবং সবাইকে সেখানে সুযোগ দেয়া উচিত। শুধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নয়, প্রথম সারির অন্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোও এ নিয়ে ভাবতে পারে।
আরেকটা কথা, শুধু গৎবাঁধা বিষয় নয়, সময়ের চাহিদা ও প্রয়োজনে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর উচিত নতুন নতুন কোর্স খোলা। মনে রাখতে হবে, বিশ্ববিদ্যালয় জ্ঞান চর্চার জায়গা। সেখানে কোনো বিষয়ে অনড় না থেকে সবার মঙ্গলের জন্য এবং সবার সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেয়া উচিত। তাতে দেশেরই উপকার!
সেই সঙ্গে শিক্ষার উদ্দেশ্য কিন্তু শুধু ডিগ্রি বা চাকরি নয়, শিক্ষার উদ্দেশ্য মানুষ তৈরি করা। যে শিক্ষা শুধু সনদ দেয়, নৈতিক ও মূল্যবোধসম্পন্ন মানুষ তৈরি করে না, সেই শিক্ষায় মানবজাতির খুব একটা উপকার হয় না। কাজেই সবার আগে মানুষ হওয়া জরুরি।
(ফেসবুক থেকে)
লেখক: কলামিস্ট
১৯৮/সি, তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮
©দৈনিক বাংলা