টি-টোয়েন্টি ফরম্যাট এখনো বুঝতে পারছে না বাংলাদেশ। এবার এশিয়া কাপ খেলতে যাওয়ার আগে সর্বশেষ ১৫ ম্যাচে মাত্র ২ জয়, হার ১৩। এশিয়া কাপে ভিন্ন বাংলাদেশের আশায় যারা ছিলেন, নির্মম বাস্তবের মুখোমুখি হতে হয়েছে তাদের। ১৩ থেকে হারের সংখ্যাটা ঠেকেছে ১৫-তে। আফগানিস্তানের পর শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে হেরে সবার আগে বাড়ি ফিরছে বাংলাদেশ।
শেষ দুই এশিয়া কাপের রানার্সআপ দলটি এবার গ্রুপ পর্বের বাধা টপকাতে পারেনি। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পরাশক্তি হতে চাওয়া বাংলাদেশের জন্য এটা বড় ধাক্কা। তড়িঘড়ি করে ২০ ওভারের ফরম্যাটে অধিনায়ক আর কোচিং স্টাফে পরিবর্তন এনেও দৃশ্যমান কোনো ফল না মেলায় তাই প্রশ্ন জাগছে, কোথায় ভুল হলো?
ওপেনিং
এশিয়া কাপে নতুন করে ফুটে উঠেছে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের দীনতা। সর্বশেষ ২৪ ইনিংসে ওপেনিং জুটিতে ফিফটি পাচ্ছে না দল। এবারও একই আক্ষেপে পুড়তে হয়েছে। পরশু শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে তবু মান বাঁচিয়েছেন মেহেদী হাসান মিরাজ। প্রায় চার বছর পর টি-টোয়েন্টিতে ফিরে ২৬ বলে ৩৮ রানের ইনিংস নতুন আশার সঞ্চার। কিন্তু বাকিরা?
স্ট্রাইকরেট
প্রশ্ন উঠেছে স্ট্রাইকরেট নিয়ে। ২০ ওভারের ফরম্যাটের সঙ্গে একেবারেই মানিয়ে নিতে পারছেন না মুশফিকুর রহিম, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদরা। ১০০-এর বেশি ম্যাচ খেলা মুশফিকের স্ট্রাইকরেট এখনো ১২০-এর নিচে! আফিফ হোসেন ও মোসেদ্দেক হোসেন সৈকত কিছুটা তাল মেলালেও ব্যর্থতার তালিকায় সাকিবের সঙ্গে নাম আছে মোহাম্মদ নাঈম, এনামুল হক বিজয়, শেখ মেহেদী হাসানের।
জুটি গড়তে না পারা
ওপেনিং থেকে মিডল অর্ডার- পার্টনারশিপটাও জমাতে পারছেন না ব্যাটসম্যানরা। বাংলাদেশের বিপক্ষে বিপর্যয়ে আফগান ব্যাটসম্যান ইব্রাহিম জাদরান এক পাশ আগলে রেখেছেন। পরে ফিনিশিংয়ের কাজটা করেন নাজিবউল্লাহ জাদরান। একই ভূমিকায় বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ভালো স্ট্রাইক রেটেই শ্রীলঙ্কার ইনিংস টেনেছেন কুশল মেন্ডিস। বাংলাদেশ দলে এই দায়িত্ব পালনে কাউকেই পাওয়া যাচ্ছে না। দলের পাওয়ার হিটার নেই, সে আলোচনাতেই দিন কেটে যাচ্ছে।
ব্যাটিং অর্ডার
ব্যাটিং অর্ডার নিয়ে প্রশ্ন থাকছেই। এশিয়া কাপ খেলতে দেশ ছাড়ার আগে টিম ডিরেক্টর খালেদ মাহমুদ সুজন জানান, আফিফ হোসেনকে চারে খেলানো হবে। কিন্তু দেখা গেল ভিন্ন চিত্র। আফগানিস্তান ম্যাচে তাকে চারে দেখা যায়নি। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষেও চার নম্বর ব্যাটসম্যান হিসেবে মাঠে প্রবেশ করার আগমুহূর্তে তাকে থামিয়ে নামানো হয় মুশফিকুর রহিমকে। শুধু ওপেনিংয়ে একটু ভিন্ন পরিকল্পনা দেখা গেলেও বাকি সব পজিশনে গৎবাঁধা নিয়মই মেনেছে দল।
ডেথ বোলিং
আফগানদের বিপক্ষে তাসকিন আহমেদ, মোস্তাফিজুর রহমান, মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন ম্যাচ পরিস্থিতি পড়তে পারেননি। আলগা বলে প্রতিপক্ষ ব্যাটসম্যানদের রানের সহজ রাস্তা দেখিয়ে ম্যাচ থেকে ছিটকে দিয়েছেন বাংলাদেশকে। শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে অভিষিক্ত এবাদত হোসেন প্রথম দুই ওভারে ১৩ রানে ৩ উইকেট নিয়ে স্বপ্নের মতো শুরকে দুঃস্বপ্নে রূপ দিয়েছেন। পরের দুই ওভারে উদার হাতে ওয়াইড নো বলসহ দিয়েছেন ৩৮ রান।
ভুল কৌশল
পরশু অধিনায়ক সাকিব বোলার ব্যবহারে কৌশলী হলে ম্যাচটা বাংলাদেশ জিততে পারত। এমন এক স্কোয়াড নিয়ে মাঠে নেমেছিল বাংলাদেশ, যেখানে উইকেটরক্ষক মুশফিক ছাড়া দশজন ক্রিকেটারের হাত ঘোরানোর অভিজ্ঞতা আছে। নিজের কোটা বহু আগে শেষ করে ফেলেছেন। প্রতিপক্ষকে চাপে রাখতে ইনিংসের ১৭তম ওভারেই দলের মূল দুই পেসার তাসকিন ও মোস্তাফিজের কোটাও শেষ। শেষ তিন ওভারের দুই ওভারতাই খণ্ডকালীন কারও কাছে বল দিতে হতো। সুযোগ বুঝে অফস্পিনার মেহেদীর ওপর চড়াও হন লঙ্কান ব্যাটসম্যানরা। মাঝে এক ওভার মিরাজকে দিয়ে সুবিধা করতে পারেননি বাংলাদেশের অধিনায়ক। বিকল্প হিসেবে থাকা আফিফ, রিয়াদ, সৈকতরাও অফস্পিনার হওয়ায় আক্রমণে বৈচিত্র্য ছিল না।
ক্যাচ মিস
শেষ চার বছর বাংলাদেশ দল গ্রাউন্ডস ফিল্ডিংয়ে যেমন ছন্নছাড়া, তেমনি ক্যাচ ছাড়ার পরিসংখানেও বেশ এগিয়ে। ব্যত্যয় হয়নি এশিয়া কাপেও। পরশু ম্যাচসেরার পুরস্কার পাওয়া কুশল ৩৭ বলে ৬০ রানের যে ইনিংসটি খেলেন, সেখানে গুনে গুনে জীবন পেয়েছেন চারবার। একবার ক্যাচ ফেলেছেন তাসকিন, একবার ভাগ্যের সহায় নো বলেও আউট হয়েছেন, রান আউট থেকেও বেঁচেছেন একবার। একবার তো কিপার মুশফিক বুঝতেই পারেননি কুশলের গ্লাভস ছুঁয়ে বল জমা পড়ে তার হাতে।
দুই ম্যাচে এত ভুলের পরেও যদি সুপার ফোরের টিকিট পেত বাংলাদেশ, তবে সেটি মনে হয় দীর্ঘ মেয়াদে দেশের ক্রিকেটের জন্য বাজে ফলই আনত।
১৯৮/সি, তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮
©দৈনিক বাংলা