চরে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিতে ১৯৪৯ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদরের নারায়ণপুর পাবলিক উচ্চ বিদ্যালয়। চরাঞ্চলে আলোকিত মানুষ গড়ার প্রাচীন এই প্রতিষ্ঠানটি সম্প্রতি পদ্মার ভাঙনের মুখে পড়েছে। বর্তমানে যেটুকু অবকাঠামো দাঁড়িয়ে আছে, সরিয়ে না নিলে সেটুকুও বিলীন হতে পারে পদ্মায়।
শুধু এই বিদ্যালয়ই না, ঘরবাড়ি, আবাদি জমি একসময় সবই ছিল নারায়ণপুর ইউনিয়নের বাসিন্দাদের। প্রতিবছর পদ্মার ভাঙনে সম্পদ হারিয়ে নিঃস্ব হওয়ার পথে ইউনিয়নটির বাসিন্দারা। যারা হতে চেয়েছিলেন গৃহস্থ তাদের কাছে পদ্মা এখন কেবলই ‘সর্বনাশা’ এক নদী।
নারায়ণপুরসহ জেলার শিবগঞ্জ উপজেলার পাকা ইউনিয়নেও পদ্মার ভাঙন অব্যাহত আছে। গত কয়েক দিনের ভাঙনের কারণে ইউনিয়ন দুটি পুরোপুরি বিলীনের শঙ্কা তৈরি হয়েছে স্থানীয়দের মাঝে। জেলা প্রশাসকের দেয়া তথ্য অনুযায়ী ভাঙন সৃষ্টি হয়েছে প্রায় পাঁচ কিলোমিটারজুড়ে। এ এলাকায় স্থানীয় বাসিন্দার সংখ্যা ৬০-৬৫ হাজার।
এ শঙ্কা থেকেই সম্প্রতি সরিয়ে নিতে দেখা যায় নারায়ণপুর পাবলিক বিদ্যালয়ের আসবাবসহ নানা সরঞ্জাম। ইউনিয়নের বাসিন্দা সাদ্দাম হোসেন গতকাল শনিবার বলেন, তাদের ইউনিয়নের আটটি, পাশের পাকা ইউনিয়নের চারটি ও দুর্লভপুরের একটি ওয়ার্ড ইতিমধ্যে পদ্মার ভাঙনের কবলে পড়েছে। গত জুলাই থেকে শুরু হওয়া ভাঙনে নারায়ণপুরের তিনটি প্রাথমিক ও একটি উচ্চ বিদ্যালয়সহ বহু স্থাপনা, বাড়িঘর এবং ফসলি জমি নদীতে বিলীন হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্তদের হাহাকার যেন কেউ শুনতে পায় না।
সম্প্রতি পদ্মায় পানি বেড়েছে। সাদ্দাম হোসেনের শঙ্কা এ পানি কমতে শুরু করলে ভাঙনের তীব্রতা আরও বাড়বে।
নারায়ণপুর ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা বশির আহম্মেদ। তিনি বলেন, ‘অ্যাজকে হামারঘে (আমাদের) নারায়ণপুর ও পাশের পাকা ইউনিয়নের পরিবার বাড়িঘর ভ্যাঙ্গে লিয়ে (ভেঙে নিয়ে) কে কোথায় গ্যাছে, কোনো ঠিকানা নাই।’
ইউনিয়নের আরেক বাসিন্দা জেনারুল ইসলাম বলেন, ‘বাপ-দাদার আমল থেকে নদীতে বিলীন হতে হতে অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হামরা। নারায়ণপুর ইউনিয়নটার মানুষ খুবই কষ্টের মাঝে থ্যাকাছে (থেকেছে), এখনো কষ্টের মাঝেই আছে। অনেক জমি-জায়গা যেটা হামারঘে ভাত দেয়, সেগুলো এখন শেষের মুখে।’
বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় ভাঙন রোধে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়ার দাবি জানান জেনারুলসহ ইউনিয়নের বেশ কয়েকজন বাসিন্দা।
ঝুঁকিতে ৩০০ কোটি টাকার প্রকল্প
নারায়ণপুর ইউনিয়ন শতভাগ বিদ্যুৎ-সংযোগের আওতায় আনার জন্য সম্প্রতি ৩০০ কোটি টাকা ব্যয়ে বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন স্থাপন করা হয়। নদীভাঙনের কারণে সেটিও হুমকিতে পড়েছে।
সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান তসিকুল ইসলাম বলেন, ‘এটা (ভাঙন) যদি দ্রুত রোধ করা না যায়, সরকারি ও দেশের সাধারণ মানুষের সম্পদের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হবে।’
এ বিষয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী মোখলেসুর রহমান দৈনিক বাংলাকে বলেন, জিও ব্যাগ বা জিও টিউব দিয়ে ভাঙন রোধের জন্য বরাদ্দ চেয়ে আবেদন করা হয়েছে। তবে এখনো বরাদ্দ মেলেনি।
জেলা প্রশাসক এ কে এম গালিভ খান বলেন, তিনি সরেজমিনে ভাঙনকবলিত এলাকা দেখেছেন। দীর্ঘ পাঁচ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে ভাঙনের সৃষ্টি হয়েছে। অন্তত ৬০-৬৫ হাজার মানুষের বসবাস এখানে। ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো যেন নিরাপদে থাকে, সে জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে।
১৯৮/সি, তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮
©দৈনিক বাংলা