পরিবেশবাদীদের প্রবল আপত্তি উপেক্ষা করে শুক্রবার আটলান্টিক মহাসাগরে একটি পরিত্যক্ত বিমানবাহী যুদ্ধজাহাজ ডুবিয়ে দিয়েছে ব্রাজিল। পরিবেশবাদীদের শঙ্কা, এ ধরনের যুদ্ধজাহাজের নানা বিষাক্ত পদার্থ, ভারী যন্ত্রাংশ মহাসাগরে দূষণ তৈরি করবে।
ব্রাজিল নৌবাহিনী জানায়, সাও পাউলো নামের বিমানবাহী যুদ্ধজাহাজটিকে উপকূল থেকে প্রায় ৩৫০ কিলোমিটার দূরে আটলান্টিক মহাসাগরে ডোবানো হয়। পরিকল্পিত ও নিয়ন্ত্রিতভাবে এত বড় যুদ্ধজাহাজ মহাসাগরের আনুমানিক ৫ হাজার মিটার গভীরে ডুবিয়ে দেয়া হয়।
আল-জাজিরা জানায়, ছয় দশকের পুরোনো সাও পাওলো যুদ্ধজাহাজটিকে প্রথমে ভেঙে ফেলার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল সরকার। ব্রাজিল কর্তৃপক্ষ জাহাজটিকে ভেঙে ফেলার জন্য একটি বন্দর খুঁজে বের করার চেষ্টা করে। কিন্তু কোনো বন্দর কর্তৃপক্ষ এতে রাজি হয়নি। এর পর এটিকে আটলান্টিক মহাসাগরে ডুবিয়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। তবে পরিবেশবাদীরা এমন সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপত্তি জানিয়ে আসছিলেন। ব্রাজিলের প্রতিরক্ষা কর্মকর্তারা বলেছেন, তারা যুদ্ধজাহাজটিকে ‘নিরাপদ এলাকায়’ ডোবাবেন। কিন্তু পরিবেশবাদীরা এমন সিদ্ধান্তের কঠোর সমালোচনা করেন। তারা বলেন, ‘এমন ধরনের বিশাল জলযানে প্রচুর পরিমাণে অ্যাসবেস্টস, ভারী ধাতু ও অন্যান্য বিষাক্ত পদার্থ রয়েছে। এসব পানিতে মিশে এবং সামুদ্রিক খাদ্যশৃঙ্খলকে দূষিত করতে পারে। বাসেল অ্যাকশন নেটওয়ার্ক নামের একটি সংগঠন ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিও লুলা ডা সিলভার কাছে জাহাজটি বিনষ্ট করার পরিকল্পনা বাতিল করার আহ্বান জানিয়েছিল।
১৯৫০ সালে ফ্রান্সে যুদ্ধজাহাজটি নির্মিত হয়েছিল। ফ্রান্সের নৌবাহিনী দীর্ঘ ৩৭ বছর ‘ফো’ নামে এটি ব্যবহার করে। ফ্রান্সের নৌবাহিনীর ২০ শতকের ইতিহাসের পাতায় এটির নাম লেখা হয়ে গেছে। ১৯৬০ সালে ফ্রান্সের প্রথম পরমাণু পরীক্ষায় যুদ্ধজাহাজটি ব্যবহার করা হয়। এ ছাড়া ১৯৭০ সাল থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত এটি আফ্রিকা, মধ্যপ্রাচ্য এবং যুগোস্লাভিয়ায় মোতায়েন করা হয়। ২০০০ সালে ফ্রান্সের কাছ থেকে ১২ মিলিয়ন ডলার দিয়ে ২৬৬ মিটার দীর্ঘ বিমানবাহী রণতরীটি কিনে নেয় ব্রাজিল। ২০০৫ সালে এটিতে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এরপরই এ যুদ্ধজাহাজটি কার্যকারিতা হারাতে থাকে। গত বছর এটিকে ভেঙে ফেলার সিদ্ধান্ত নেয় ব্রাজিল। তবে কোনো বন্দরে ভেড়াতে না পেরে শেষ পর্যন্ত এটিকে মহাসাগরে ডুবিয়ে দেয়া হলো।
১৯৮/সি, তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮
©দৈনিক বাংলা