আপডেট : ৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ ১৯:১১
সাজে ফাগুনের ছোঁয়া
নাহিন আশরাফ

সাজে ফাগুনের ছোঁয়া

বসন্তে পোশাকের আয়োজনে সব সময় ফুলের মোটিফ রাখা হয়ে থাকে এবারও তার ব্যতিক্রম দেখা যায়নি। মডেল: অন্বেষা ও অতুল, পোশাক: সূঁচ, ছবি: রাকিবুল ইসলাম

আজি দখিন-দুয়ার খোলা-

এসো হে, এসো হে, এসো হে আমার বসন্ত এসো।

দিব হৃদয়দোলায় দোলা,

এসো হে, এসো হে, এসো হে আমার বসন্ত এসো ॥

শীত বিদায় নেয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। গাছের ঝরে যাওয়া শুকনো পাতা আবার যেন একটু একটু করে প্রাণ ফিরে পাচ্ছে। বাগানে হরেক রকমের ফুল জানান দিচ্ছে ফাগুনের আগমনী বার্তা। কিন্তু ফুল ফোঁটা দিয়েও কিন্তু খুব একটা যায়-আসে না। কারণ কথাই তো আছে, বসন্তের আগমন মানুষকে অনুপ্রাণিত করে, শুষ্কতা শেষে হঠাৎ চারপাশ সতেজ হয়ে ওঠে। মানুষের জীবনটাও হয়তো তাই শুষ্কতায় ভরে ওঠার পর একসময় প্রাণ ফিরে পায়। প্রকৃতির রং যেন মানুষের মনকেও রাঙিয়ে তোলে। বসন্ত এলেই বাঙালি সাজপোশাকের আয়োজনে কোনো কমতি রাখতে চায় না। তাই আমাদের বসন্তের সাজপোশাক নিয়ে আজকের আয়োজন-

পোশাকে ফাগুনের ছোঁয়া

বসন্তকে কেন্দ্র করে দেশের ফ্যাশন হাউসগুলো থেকে শুরু করে লোকাল মার্কেটসহ সব স্থানে পোশাকের পসরা সাজানো হয়েছে। ফ্যাশন হাউসগুলোর ভেতরে ঢুকলেই হারিয়ে যেতে হচ্ছে হলুদ, কমলা, লালসহ হরেক রকম রঙের মেলায়। সব বয়সী ক্রেতাদের কথা মাথায় রেখে পোশাকের কালেকশন সাজানো হয়েছে। মেয়েদের জন্য রয়েছে শাড়ি, সালোয়ারকামিজ, ফতুয়া, শর্ট কামিজ, কটি ইত্যাদি। ছেলেদের জন্য পাঞ্জাবি, ফতুয়া, শার্ট, টি-শার্ট, শর্ট পাঞ্জাবি। প্রতিটি পোশাকে হলুদের প্রাধান্য দেয়া হলেও রয়েছে অন্যান্য রঙের কাজও। বসন্তে পোশাকের আয়োজনে সব সময় ফুলের মোটিফ রাখা হয়ে থাকে এবারও তার ব্যতিক্রম দেখা যায়নি শাড়ি আঁচল, কামিজের উড়না, ছেলেদের পাঞ্জাবি ও কটিসহ সব পোশাকে। প্রায় সব পোশাকের ওপরেই ফুলের কারুকাজ লক্ষ করা গেছে। এ ছাড়া পোশাকের ওপর রয়েছে এমব্রয়ডারি ও হাতের সুতার কাজ। সুতি, সিল্ক, মসলিন ইত্যাদি কাপড় দিয়ে তৈরি করা হয়েছে পোশাক। কিন্তু প্রতিবারের মতো এবারও সবচেয়ে বেশি চাহিদা দেখা যাচ্ছে সুতির পোশাকের। কারণ, সুতি দামে সাশ্রয়ী এবং পরেও আরাম পাওয়া যায়। পোশাকে রয়েছে বক্ল প্রিন্ট, স্ক্রিন প্রিন্ট, কারচুপির কাজ। পোশাকে লক্ষ করা যাচ্ছে যুগলবন্দি হওয়ার জন্য একই থিমের পোশাক। হুর নুসরাতের কর্ণধার ও ডিজাইনার নুসরাত আক্তার লোপা বলেন, এবার হলুদের পাশাপাশি লাল, বেগুনি, সবুজ, ফিরোজা রঙের চাহিদা রয়েছে। কিন্তু বসন্তের কোনো দিনও হলুদের কদর কমবে না। তাই সব পোশাকেই হলুদের ছোঁয়া রাখা হয়। এবার বসন্তের আবহাওয়া ঠাণ্ডা থাকবে বলেই আশা করা যাচ্ছে। তাই যে কেউ সহজেই শাড়ি পরতে পারবে। নুসরাত আক্তার লোপা মনে করেন, এই দিন বাঙালি মেয়েদের শাড়িকেই বেশি প্রাধান্য দেয়া উচিত। কারণ উৎসবটা যেহেতু বাঙালিদের। আর শাড়ি খুব দারুণভাবে বাঙালিয়ানার বহিঃপ্রকাশ করতে পারে। ফ্যাশনের পাশাপাশি কোন পোশাকে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছি তাকেও গুরুত্ব দিতে হবে। কারণ, কোনো পোশাকে স্বাচ্ছন্দ্য না থাকলে আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে তা বহন করা যায় না। ফাগুনের বাহারি এসব পোশাক পাওয়া যাবে হাতের নাগালের যেকোনো ফ্যাশন হাউসেই। দেশাল, আড়ং, অঞ্জনস, খুঁত, বিবিয়ানা, বিশ্বরঙ, বাংলার মেলা, ইয়েলো ইত্যাদি শো-রুমে। এ ছাড়া অনলাইনেও হুর নুসরাতসহ বেশ কয়েকটি স্বনামধন্য পেজে ফাগুনের পোশাক পাওয়া যাচ্ছে। পোশাকের দাম সাধারণ মানুষের কথা চিন্তা করে যতটা সম্ভব সাশ্রয়ী রাখার চেষ্টা করা হয়েছে। শাড়ি ৫০০ টাকা থেকে ৭,০০০ টাকা, সিংগেল কামিজ ৬০০ টাকা থেকে ২,০০০ টাকা, থ্রি-পিস ২,০০০ টাকা থেকে ৫,০০০ টাকা, পাঞ্জাবি ৮০০ টাকা থেকে ৪,০০০ টাকা। পোশাকের দাম নির্ভর করছে ব্র‍্যান্ড, পোশাকের মান ও ডিজাইনের ওপর।

মডেল: অন্বেষা, পোশাক: সূঁচ, ছবি: রাকিবুল ইসলাম

ফাগুনের সাজসজ্জা

পোশাকের সঙ্গে চাই মানানসই সাজ। তা না হলে যত সুন্দর পোশাকই পরা হোক না কেন তা সম্পূর্ণভাবে ফুটিয়ে তোলা যায় না। ফাগুনে সাজের আয়োজন যেন পুরোটাই মেয়েদের ঘিরে। বসন্তের সাজ নিয়ে মেকওভার বাই আফিরনের প্রতিষ্ঠাতা নেয়না আফরিন বলেছেন, ফাগুনে সাধারণত আমরা দুপুরে কিংবা বিকেলেই বেশি বের হই। তাই আমাদের মেকআপ একটু হালকা হওয়াই ভালো। মেকআপের শুরুতে প্রাইমার ও ময়েশ্চারাইজার লাগিয়ে নিতে হবে। এরপর ফাউন্ডেশনটা হালকা রেখে তার ওপর লুজ পাউডার দিয়ে দেবেন। এরপর গোলাপি রঙের ব্লাশন দিয়ে বেইজ মেকআপের ইতি টানা যেতে পারে। এই দিনে পোশাক যেহেতু কালারফুল হবে। তাই চোখের ভারী সাজ এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করতে হবে। ঠোঁটে গাঢ় লিপস্টিক দিলে সাজটা বেশ ফুটে উঠবে। অবশ্যই ঘর থেকে বের হওয়ার আগে সানস্ক্রিন লাগানোর কথা ভুলে গেলে হবে না। যেহেতু আবহাওয়াতে এখনো কিছুটা শুষ্কতা রয়েছে তাই সঙ্গে রাখুন লিপ বাম। লিপ বাম ঠোঁট কোমল রাখে ও লিপস্টিক দীর্ঘস্থায়ী করে। এ ছাড়া মেকআপ যাতে ঠিকমতো বসে তাই আগের দিন রাতে ঘরোয়া হাইড্রেটিং ক্রিম মাখতে হবে। ফাল্গুনের সাজে ঠোঁট একটু কালারফুল রাখার চেষ্টা করেন সবাই। সেহেতু নিজের পছন্দ ও গায়ের রঙের সঙ্গে মানায় এমন রংয়ে ঠোঁট সাজানো উচিত। ফুল বসন্তের সাজে অন্য মাত্রা যোগ করবে। নিজের পছন্দমতো চুলে খোঁপা বা বেণি করে ফুল পরে নিতে পারেন। কাঠ, পুঁতি বা মাটি দিয়ে দেশজ উপকরণে তৈরি গহনা পরতে পারেন, যা ভিন্নমাত্রা যোগ করবে আপনার ফ্যাশনে। কানে পাতলা দুল আর গলায় হালকা মালা পরতে পারেন। হাতে জামার রঙের সঙ্গে মিল রেখে রেশমি চুড়ি কিংবা কাঠের চুড়ি পরতে পারেন। অবশ্যই কপালে ছোট্ট একটা টিপ পরবেন যা পূর্ণতা দেবে আপনার সাজগোজের।

বেশ কিছু টিপস

ফাগুনের আগের দিন রাতে সেফটিপিন, টিপ, তুলির মতো অনুষঙ্গ গুছিয়ে রাখুন নিজের পার্স ব্যাগে। ফাগুনে খোঁপাতে ফুল পরলে আগের দিন ফুল কিনে ফ্রিজে রেখে দিতে পারেন এতে ফুল কিছুটা তাজা থাকবে, সম্ভব হলে ফাগুনে সকালেই ফুল কেনার চেষ্টা করতে হবে। খোঁপা করতে লাগবে ক্লিপ! আগের দিন রাতে ক্লিপ গুছিয়ে রাখতেও ভুলবেন না। এ ছাড়া বৃষ্টি কিংবা রোদ এড়াতে সঙ্গে ছাতা রাখা বেশ উপকারী।