আপডেট : ৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ ২২:৪৮
দুর্গত এলাকায় এরদোয়ান, বাড়ছে জন-অসন্তোষ

দুর্গত এলাকায় এরদোয়ান, বাড়ছে জন-অসন্তোষ

খাহরামানমারাস এলাকা পরিদর্শনে গিয়ে উপস্থিত সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান। ছবি: এএফপি

‘আমার ছোট্ট দুই ভাতিজি ধ্বংসস্তূপে চাপা পড়েছে। দিনভর অপেক্ষা করেও কেউ তাদের উদ্ধার করতে আসেনি। আমি নিশ্চিত, এতক্ষণে তারা আর জীবিত নেই।’ এভাবেই গত মঙ্গলবার রাতে বিবিসির কাছে সরকারি উদ্ধার কার্যক্রম নিয়ে ক্ষোভ আর কষ্টের কথা তুলে ধরেন এক তুর্কি নারী।

তুরস্কের দক্ষিণাঞ্চলীয় ইসকেনদারুন জেলার নুমুনি এলাকায় ধ্বংসস্তূপের সামনে তিনি তার ভাতিজিদের জন্য অপেক্ষার প্রহর গুনছেন। ৬৪ বছর বয়সী আরেক বৃদ্ধা তাঁবু আর খাবারের জন্য চিৎকার করছিলেন। ভূমিকম্পের আঘাত থেকে তিনি প্রাণে বেঁচেছেন। তবে প্রচণ্ড ঠাণ্ডা আর ক্ষুধায় তিনি কাতর হয়ে পড়েছেন।

বুধবার রয়টার্সকে তিনি বলেন, ‘এখানে আমরা কোনো খাবার বিতরণ করতে দেখিনি। আমরা অনেকেই ভূমিকম্প থেকে বেঁচেছি। কিন্তু ক্ষুধা আর ঠাণ্ডায় প্রাণ হারাব।’

ভয়াবহ ভূমিকম্পের পর তুরস্কে সরকারি সহায়তার অপ্রতুলতায় জন-অসন্তোষ বাড়ছে। এমন পরিস্থিতির মধ্যেই তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান বুধবার ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শনে গেছেন। খাহরামানমারাস এলাকা পরিদর্শনে গিয়ে এরদোয়ান স্বীকার করেছেন, ভূমিকম্পের পর প্রাথমিক সরকারি উদ্ধার তৎপরতায় কিছুটা সমস্যা ছিল। তবে তিনি দাবি করেন, এখন উদ্ধার কার্যক্রম স্বাভাবিকভাবে পরিচালিত হচ্ছে। বিবিসি জানায়, এরদোয়ানের কাহরামানমারাস, হাতায়, পাজরারচিক এলাকা পরিদর্শনে যাওয়ার কথা রয়েছে।

বিবিসি জানায়, অনেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সরকারের তৎপরতা অপর্যাপ্ত বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। কেউ কেউ দাবি করেছেন, মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত কয়েকটি এলাকা অবহেলিত অবস্থায় রয়েছে।

ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত তুরস্কের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের ১০টি প্রদেশে জরুরি অবস্থা জারি হয়েছে। শীতকালীন ঝড়ের কারণে তুরস্কের দুর্গম এবং বিচ্ছিন্ন অঞ্চলগুলোতে খাদ্য এবং অন্যান্য সাহায্য পৌঁছানো দুরূহ হয়ে পড়ছে। বিবিসি জানায়, খোলা রাস্তায় আশ্রয় নেয়া মানুষ তীব্র ঠাণ্ডায় জমে যাচ্ছে। ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল গাজিয়ানতেপে তাপমাত্রা মাইনাস ১ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে দাঁড়িয়েছে। উত্তরের দিকে পার্বত্যময় অঞ্চলের নিকটবর্তী এলাকাগুলোয় তাপমাত্রা মাইনাস ৫ ডিগ্রির নিচে দাঁড়িয়েছে।

গত সোমবার স্থানীয় সময় ভোর ৪টা ১৭ মিনিটে ৭ দশমিক ৮ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্পে কেঁপে ওঠে তুরস্ক ও সিরিয়া। লেবানন, ইসরায়েল, ফিলিস্তিন ও সাইপ্রাসেও কম্পন অনুভূত হয়। ১৯৩৯ সালের পর বিগত ৮৪ বছরের মধ্যে এটাই তুরস্কের সবচেয়ে বড় ভূমিকম্প। কিন্তু এরদোয়ান উদ্ধার ও পুনর্বাসন-প্রক্রিয়া বেশ ধীরগতিতে করছেন বলে অনেকে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

ভূমিকম্প কর নিয়ে ক্ষোভ

তুরস্ক সরকারের ধার্য করা ভূমিকম্প করের অর্থ কোথায় গেল, তা নিয়ে অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। দুই দশকের বেশি আগে একটি বিশাল ভূমিকম্পের পরিপ্রেক্ষিতে ‘বিশেষ যোগাযোগ কর’ আরোপ করা হয়। তুরস্কে প্রতিবার ভূমিকম্পের পর জনগণের ওপর এই করারোপ করা হয়ে থাকে। তুর্কি মুদ্রায় করের ৮৮ বিলিয়ন লিরা দুর্যোগ মোকাবিলা ও যোগাযোগব্যবস্থা উন্নয়নে ব্যয় হওয়ার কথা। বিবিসি তুরস্ক জানায়, করের এই বিশাল অর্থ সরকার কোন খাতে কীভাবে ব্যয় করেছে, তা কখনোই সামনে আসেনি।