আপডেট : ১১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ ১০:৫৪
ময়লার স্তূপ এখন দর্শনীয় স্থান
ইমরোজ খন্দকার, পাবনা

ময়লার স্তূপ এখন দর্শনীয় স্থান

নানা রঙের ফুলে সেজেছে মহাসড়কের বিভাজক। সম্প্রতি পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার দাশুড়িয়া মোড়ের বাইপাস গোলচত্বরে। ছবি: দৈনিক বাংলা

পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার দাশুড়িয়া গোলচত্বর। উত্তর ও দক্ষিণবঙ্গের এ সংযোগস্থলটি একসময় ময়লা-আবর্জনায় পরিপূর্ণ ছিল। মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে এখানে স্থাপন করা হয় বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল। পাশাপাশি সৌন্দর্যবর্ধনের জন্য গড়ে তোলা হয় ফুলবাগান। সেখানকার নানা রঙের ফুল এখন নজর কাড়ছে সবার। সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের ব্যতিক্রমী এমন উদ্যোগে এ সড়কের যানজট নিরসন হয়েছে, সড়ক দুর্ঘটনাও কমেছে।

সওজ সূত্রে জানা যায়, দাশুড়িয়া মোড়ের গুরুত্বপূর্ণ এই বাইপাস গোলচত্বরটিতে মুজিব শতবর্ষে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল স্থাপন করলেও স্থানীয়দের অবহেলা ও অসচেতনতার কারণে চত্বরটি ময়লা-আবর্জনা ও ধুলাবালিতে পূর্ণ থাকত। এ ছাড়াও অনুমতির তোয়াক্কা না করে নানা ধরনের বিলবোর্ড-ফেস্টুন ও ব্যানার দিয়ে ঢেকে রাখা হতো গোলচত্বরটিকে। বিলবোর্ডের কারণে বিপরীত দিকের যানবাহন দেখতে না পাওয়ায় প্রায়ই ঘটত দুর্ঘটনা। স্থানীয়দের বারবার অনুরোধ করেও এর কোনো প্রতিকার করতে পারছিলেন না সওজ কর্মকর্তারা।

স্থানীয়রা জানান, বছর দুয়েক আগেও গোলচত্বর ময়লার স্তূপে পরিণত হওয়ায় মূল সড়ক সংকুচিত হয়ে গিয়েছিল। ফুটপাতে ছিল গাড়ির গ্যারেজ। লোকজন হাঁটার জায়গা পেতেন না। বাতাসে মিশে থাকত দুর্গন্ধ। বর্ষাকালে অসহনীয় জলাবদ্ধতা তৈরি হতো। আর নিত্যদিন যানজট লেগেই থাকত।

সওজ বলছে, একপর্যায়ে পাবনা সড়ক বিভাগের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী সমীরণ রায়ের পরিকল্পনায় গোলচত্বরের চারপাশে দেশি-বিদেশি নানা ফুলের সমারোহে বাগান গড়ে তোলা হয়। স্থানীয়রাও বাগানের সৌন্দর্য রক্ষায় সচেতন হয়ে উঠেছেন। গোলচত্বর এখন পরিণত হয়েছে দর্শনীয় স্থানে।

সরেজমিনে পাবনা-রাজশাহী-কুষ্টিয়া মহাসড়কে দাশুড়িয়া গোলচত্বরে গিয়ে দেখা যায়, গাঁদা, গোলাপ, পিটুনিয়া ও লিলিসহ নানা ফুলের বর্ণিল সমারোহ সেখানে। চত্বরের চারপাশে চোখ জুড়ানো সৌন্দর্য দেখে মনে হয়, যেন শিল্পীর নিপুণ তুলিতে আঁকা বর্ণিল ক্যানভাস। ফুল ছড়াচ্ছে সুবাসও।

মিরকামারী গ্রামের অটোরিকশাচালক আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘একসময় এ স্থানে প্রতিদিন ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজট লেগে থাকত। কিন্তু আজ সেখানে ফুল ফুটেছে। দুর্ভোগের স্থানে এখন অন্য রকম ভালোলাগা। আগের মতো গাড়ি নিয়ে যানজটেও পড়তে হয় না।’

দাশুড়িয়া ডিগ্রিপাড়া মহল্লার আব্দুর রশিদ বলেন, ‘আগে এ সড়ক দিয়ে যেতে খারাপ লাগত। কেমন যেন রুক্ষ পরিবেশ ছিল। আর এখন খুব ভালো লাগে। ফুলের সৌন্দর্য মনটা কেড়ে নেয়। বিকেলে এই ফুলের সৌন্দর্য দেখতে আসেন অনেকেই।’

কলেজছাত্র সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘টেলিভিশনে কিংবা ক্যালেন্ডারের পাতায় দেখেছি, বিদেশে সড়কের পাশে নানা রঙের ফুল সাজানো থাকে। এখন তেমন দৃশ্য আমাদের নিজেদের এলাকায় দেখতে পেয়ে খুবই ভালো লাগছে। দাশুড়িয়ার খুব কাছেই রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প। সেখানে হাজার হাজার বিদেশি কাজ করেন। তারাও এখন এই বাগানের প্রশংসা করছেন, ছবি তুলছেন।’

পাবনা সওজ বিভাগের উপসহকারী প্রকৌশলী আমান উল্লাহ বলেন, ‘মুজিব জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে জেলার গুরুত্বপূর্ণ সড়ককে সুসজ্জিত করার নির্দেশনা ছিল আমাদের প্রতি। তখন থেকেই আমরা এ কাজ শুরু করি। পরে সাধারণ মানুষের সাড়া পাওয়ায় গোলচত্বরে বঙ্গবন্ধুর ম্যুরালের চারদিকে বড় পরিসরে ফুলের বাগান করা হয়।’

প্রকৌশলী আমান উল্লাহ আরও বলেন, ‘সড়ক সংস্কার ও সৌন্দর্যবর্ধনের মাধ্যমে যাত্রী-চালকদের মনে শান্তি আনার চেষ্টা করা হয়েছে। গোলচত্বর থেকে বিলবোর্ড সরিয়ে দেয়ায় এখন সড়ক দুর্ঘটনাও অনেক কমে এসেছে। ভবিষ্যতে এ জেলার অন্য গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলোকেও এভাবে নান্দনিকভাবে সাজানোর পরিকল্পনা রয়েছে আমাদের।’