প্রায় সব মানুষকেই মোহিত করে প্রজাপতির রঙিন ডানা। কিন্তু গায়ের চাষিরা যদি জানত ঝিলমিল ডানার এই অদ্ভুত সুন্দর প্রাণীগুলোই তাদের সবচেয়ে বড় শত্রু- নির্ঘাত তারা প্রজাপতি নিধনে কোমর বেঁধে লেগে পড়ত। অবশ্য কোমর তারা বাঁধে, প্রজাপতির জীবনচক্রের প্রাথমিক পর্বে। বাজারে হাজারও কীটনাশকে সয়লাব। এসব কীটনাশক নিয়ে চাষারা রীতিমতো কামান দাগার মতো করে ঝাঁপিয়ে পড়ে যুদ্ধে। কৃষক কীটনাশক ছিটায়, হাত বেছে পোকা মারে, কিন্তু তাতে কীটের সংখ্যায় কেবল কমে। পুরোপুরি ধ্বংস করা যায় না।
প্রজাপতির জীবনচক্রের চারটি পর্যায়। ডিম, শুঁয়াপোকা আর শূককীট আর পূর্ণাঙ্গ প্রজাপতি। প্রজাপতি গাছের পাতায় স্তূপকারে ডিম পাড়ে। এক সপ্তাহ পর সেই ডিম ফুটে বেরিয়ে আসে শুঁয়াপোকা বা শূককীট। শূককীট খুব দ্রুত বাড়ে। এ সময় এদের প্রচুর খাদ্যের দরকার হয়। তখন গাছের পাতা খেয়ে সাফ করে ফেলে।
শুঁয়াপোকা আকারে শূককীট দুই সপ্তাহ কাটায়। এরপর এরা ঘুমিয়ে পড়ে। একে বলে সুপ্তাবস্থা বা শূককীট। সুপ্তাবস্থায় শুঁয়াপোকার ত্বক শুকনো পাতার মতো দেখায়। মনে হয় মৃত কোনো পোকার খোসা। এ সময় শূককীটের কোনো খাবার দরকার হয় না। এভাবে দুই সপ্তাহ ঘুমিয়ে কাটানোর পর জীবন্ত প্রজাপতি শূককীটের খোলস ফুঁড়ে বেরিয়ে আসে। মাথার দিকে একটা সুতোর মতো তন্তু বেরিয়ে এমনভাবে গাছের ডালে লেপ্টে আছে, দেখলে মনে হয় কে যেন সুতো দিয়ে গাছের সঙ্গে পোকাটাকে গেঁথে রেখেছে।
এভাবেও সপ্তাহখানেক কাটায় শুঁয়াপোকা। এসময় খাবারের দরকার হয় না। ভেতরে প্রজাপতির স্বাভাবিক অঙ্গগুলো জন্মায়। পুরো দেহ, সব অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ তৈরি হলে শুকনো খোলস ফুঁড়ে বেরিয়ে আসে রঙিন প্রজাপতি। এ সময় ডানাগুলো আড়ষ্ট থাকে। কিছুটা ভেজা ভেজাও। তাই প্রজাপতি খোলস থেকে বেরিয়ে মিনিট দশেক ঠাঁই বসে থাকে খোলসের গায়ে। তারার একসময় ফুড়ুত করে উড়ে যায়।
১৯৮/সি, তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮
©দৈনিক বাংলা