দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সাবেক কমিশনার হলেও দেশের ২২তম রাষ্ট্রপতি পদে আসীন হতে মো. সাহাবুদ্দিন চুপ্পুর আইনগত কোনো বাধা নেই বলে মন্তব্য করেছেন নির্বাচন কমিশনার (ইসি) মো. আলমগীর। রাষ্ট্রপতি পদকে লাভজনক বলা যাবে না বলেও জানান এই কমিশনার।
মঙ্গলবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে নিজ দপ্তরে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ইসি আলমগীর এ কথা জানান। সাহাবুদ্দিনের রাষ্ট্রপতির পদে আসীন হওয়ায় যে আলোচনা তৈরি হয়েছে, ইসি আলমগীরের এ বক্তব্যে সেই আলোচনায় ইতি টানা হলো।
সাবেক ছাত্রনেতা ও বীর মুক্তিযোদ্ধা সাহাবুদ্দিন এক সময় জেলা ও দায়রা জজ ছিলেন। পরে তিনি দুর্নীতি দমন কমিশনের কমিশনারের দায়িত্ব পালন করেন। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ গত রোববার তাকে রাষ্ট্রপতি পদে মনোনীত করে নির্বাচন কমিশনে মনোনয়নপত্র দাখিল করে। তিনিই একক প্রার্থী হওয়ায় সোমবার সাহাবুদ্দিনকে ২২তম রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত করে ইসি। পরে এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি হয়।
দুদকের আইন অনুযায়ী কমিশনাররা লাভজনক কোনো পদে যেতে পারেন না। রাষ্ট্রপতি পদ লাভজনক, নাকি লাভজনক নয় এ নিয়ে সোমবার থেকেই আলোচনা তৈরি হয়েছে। এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে মো. আলমগীর বলেন, ‘দুদকের আইনে বলা আছে যে, কমিশনাররা লাভজনক পদে যেতে পারবেন না। কিন্তু আপনারা জানবেন যে, নির্বাচন কমিশন যখন এটা করেছে, তখন আইন-কানুন জেনেই এটার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বিচারপতি শাহাবুদ্দিন আহমেদ সাহেব যখন রাষ্ট্রপতি পদে অধিষ্ঠিত হয়েছিলেন, তখন এটি নিয়ে কোর্টে একটি মামলা হয়েছিল। কারণ বিচারপতির ক্ষেত্রেও একই আইন যে, তারা লাভজনক পদে যেতে পারবেন না।’
তৎকালীন সেই মামলার প্রসঙ্গ টেনে এই কমিশনার বলেন, ‘ওই মামলায় হাইকোর্ট একটি রায় দিয়েছিলেন। সেখানে বলে দিয়েছেন যে, এতে (রাষ্ট্রপতি পদে আসীন হতে) কোনো বাধা নেই এবং সেই আদেশের বিরুদ্ধে কোনো আপিলও হয়নি। অতএব যেহেতু আমাদের সামনে উচ্চ আদালতের একটি সুনির্দিষ্ট উদাহরণ রয়েছে যে, মহামান্য রাষ্ট্রপতির পদকে লাভজনক পদ বলা যাবে না এবং ওই রায়ে বলা আছে, লাভজনক পদ বলতে বোঝাবে প্রজাতন্ত্রের যারা কর্মকর্তা-কর্মচারী তাদের...অতএব এটি ওনার (মো. সাহাবুদ্দিন চুপ্পু) জন্য প্রযোজ্য নয়। উনার রাষ্ট্রপতি পদে আসীন হতে আইনগত কোনো বাধা নেই।’
বিচারপতি শাহাবুদ্দিন আহমেদের রাষ্ট্রপতি হওয়ার সেই বিষয়টাকেই সাহাবুদ্দিন চুপ্পুর ক্ষেত্রে দৃষ্টান্ত হিসেবে দেখছেন কি জানতে চাইলে ইসি মো. আলমগীর বলেন, ‘লাভজনক পদের বিষয়ে একেবারে স্পষ্টভাবে বলা আছে যে- প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিয়োজিত এবং কোনো প্রতিষ্ঠানে যদি সরকারের ৫০ ভাগের অধিক অর্থ থাকে, তাহলে সেই পদে নিয়োগকে বলা হবে লাভজনক পদ। রাষ্ট্রপতি বা প্রধানমন্ত্রী বা মন্ত্রী, ওনারা কিন্তু প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিয়োজিত কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারী নন। এগুলো হলো সাংবিধানিক পদ। যেহেতু সাংবিধানিক পদ, অতএব লাভজনক পদের ডেফিনেশনে (সংজ্ঞা) ওনারা পড়েন না। আর যেহেতু এটি নিয়ে একটি মামলাই হয়েছিল এবং আমাদের আইন যেটা বলে- হাইকোর্ট বা আপিল বিভাগের যদি কোনো রায় থাকে, সেই রায় আইন হিসেবে গ্রহণ করা হবে। যেহেতু বিচারপতি শাহাবুদ্দিন আহমেদের ক্ষেত্রেও রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব নেয়ার সময় মামলা হয়, তখন ওই মামলাটা খারিজ হয়ে যায় এবং আদালত স্পষ্টভাবে জানিয়েছেন, মহামান্য রাষ্ট্রপতির পদটি লাভজনক পদ নয়। এটি সাংবিধানিক পদ। অতএব এটি তার (সাহাবুদ্দিন চুপ্পুর) জন্য বার (বাধা) হবে না।’
মঙ্গলবার রাষ্ট্রপতি পদে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন, গতকাল সোমবারই তাকে নির্বাচিত ঘোষণা করে প্রজ্ঞাপন জারি হলো। তিনি যদি আজ মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নেন, এই সুযোগটা বন্ধ করে দেয়া হলো কি না? এটি আইনসিদ্ধ হলো কি না, জানতে চাইলে এই নির্বাচন কমিশনার বলেন, ‘এটি অবশ্যই আইনসিদ্ধ। আইনে স্পষ্ট লেখা আছে যে, যদি একাধিক প্রার্থী না থাকে এবং মনোনয়নপত্র বাছাই করার পরে যদি দেখা যায় যে, ওনার মনোনয়নপত্র সঠিক আছে, বৈধ আছে। তাহলে ওই সময় তাকে নির্বাচিত হিসেবে ঘোষণা দিয়ে দেবেন। এটির জন্য আর (মনোনয়ন) প্রত্যাহার করার জন্য অপেক্ষার প্রয়োজন নেই।’
চলতি বছরের নভেম্বর থেকে ২০২৪ সালের জানুয়ারির ২৯ তারিখের মধ্যে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন করার সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা রয়েছে।
ইসি আলমগীর জানান, ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহ থেকে জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহের মধ্যে জাতীয় সংসদ নির্বাচন করার পরিকল্পনা আছে কমিশনের।
কর্মপরিকল্পনা অনুযায়ী সব কাজ চলছে জানিয়ে আলমগীর বলেন, ‘নির্বাচনের জন্য এগিয়ে যাচ্ছি আমরা। কখন ভোট হবে কমিশন সভায় সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হবে।’
সংসদীয় আসনের খসড়া প্রায় চূড়ান্ত জানিয়ে তিনি বলেন, ‘সামনের সপ্তাহে খসড়া অনুমোদন হবে আশা করা যায়। ২০১৮ সীমানা ওভাবে রাখা হয়েছে, তবে প্রশাসনিক যে পরিবর্তন সেটা হয়েছে। সামনের সপ্তাহে কমিশন সভা অনুমোদন হলে খসড়া গেজেট করবো।’
১৯৮/সি, তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮
©দৈনিক বাংলা