আপডেট : ১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ ২২:৪৩
ভূমিকম্পে তুরস্ক-সিরিয়ায় মৃত্যু ৪১০০০ ছাড়াল
দৈনিক বাংলা ডেস্ক

ভূমিকম্পে তুরস্ক-সিরিয়ায় মৃত্যু ৪১০০০ ছাড়াল

তুরস্কের গাজিয়ানতেপের ইসলাহিয়ে জেলায় তুর্কি ত্রাণ সংস্থা এএফএডির সহায়তায় স্থাপিত সিরীয় শরণার্থী শিবিরে শিশুরা। গত সপ্তাহে ভূমিকম্পের কারণে তুরস্কে থাকা বিপুলসংখ্যক সিরীয় শরণার্থী গৃহহীন হয়ে পড়েছে। ছবি: এএফপি

ভূমিকম্পের এক সপ্তাহ পর অবশেষে ত্রাণ তহবিল গঠনের আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘ। সিরিয়ায় ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্তদের সাহায্য করার জন্য ৩৯ কোটি ৭০ লাখ ডলার তহবিল গঠনে দাতা দেশগুলোর কাছে আবেদন জানাতে শুরু করেছে।

গত মঙ্গলবার জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস এই তহবিল গঠনের ঘোষণা দেন। তিনি এই তহবিলকে ‘জীবন বাঁচানোর তহবিল’ বলে আখ্যা দেন। গুতেরেস জানান, এ পরিমাণ অর্থ দিয়ে প্রায় ৫০ লাখ সিরিয়াবাসীর অন্তত তিন মাসের খাবার ও প্রয়োজনীয় সামগ্রীর জোগান দেয়া সম্ভব হবে। ‍

গুতেরেস বলেন, ‘বিধ্বংসী এই ভূমিকম্পের এক সপ্তাহ পর এই অঞ্চলজুড়ে লাখ লাখ মানুষ গৃহহীন অবস্থায় হিমাঙ্কের নিচে তাপমাত্রায় বেঁচে থাকার জন্য লড়াই করছে। আমরা এ অবস্থা পরিবর্তনের জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করছি। তাই বিলম্ব না করে এই প্রচেষ্টাকে পুরোপুরি অর্থায়ন করার জন্য জাতিসংঘের সদস্যদেশগুলোকে অবিলম্বে ত্রাণ তহবিলে সাহায্য পাঠানোর আহ্বান জানাচ্ছি।’

একই সঙ্গে উদ্ধার ও সহায়তাকর্মীদের যুদ্ধবিধ্বস্ত সিরিয়ায় অবাধে কাজ করার অনুমতি দেয়ার জন্যও আসাদ সরকারের কাছে অনুরোধ রেখেছেন জাতিসংঘের মহাসচিব।

এই চলতি শতাব্দীর এখন পর্যন্ত সবচেয়ে প্রাণঘাতী ভূমিকম্পে তুরস্ক ও সিরিয়ায় মৃতের সংখ্যা ৪১ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। গত ৬ ফেব্রুয়ারি স্থানীয় সময় ভোররাতে তুরস্কের দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর গাজিয়ানতেপের কাছে হওয়া ৭ দশমিক ৮ মাত্রার ওই ভূমিকম্পে সিরিয়াসহ দুই দেশের বহু শহর ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়। লাখো মানুষ আহত হওয়ার পাশাপাশি বহু মানুষ প্রচণ্ড শীতে গৃহহীন হয়ে খোলা আকাশের নিচে অবস্থান করছে।

তুরস্কে মৃতের সংখ্যা ৩৫ হাজার ৪১৮ জনে দাঁড়িয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান। সিরিয়ায় মৃতের সংখ্যা ৫ হাজার ৮১৪ বলে সিরিয়ার রাষ্ট্রায়ত্ত বার্তা সংস্থা ও জাতিসংঘের ত্রাণ সংস্থার প্রতিবেদনগুলোর বরাতে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।

ভূমিকম্পের পর প্রাথমিক সাড়ার সময় কিছুটা সমস্যা হয়েছিল বলে স্বীকার করেছেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান। তবে এখন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে বলে দাবি করেছেন তিনি। তুরস্কের রাজধানী আঙ্কারা থেকে জাতির উদ্দেশে দেয়া এক ভাষণে এরদোয়ান বলেছেন, ‘শুধু আমাদের দেশের না, মানবজাতির ইতিহাসের অন্যতম বড় এক প্রাকৃতিক দুর্যোগের মোকাবিলা করছি আমরা।’

ভূমিকম্পের এক সপ্তাহ পরও অবশ্য জীবিত মানুষের সন্ধান মিলছে। তাই উদ্ধার অভিযান অব্যাহত রাখার সিদ্ধান্ত জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ। এখনো উদ্ধার করার মতো আরও মানুষ জীবিত অবস্থায় আটকা পড়ে থাকতে পারেন বলে মন্তব্য করেছেন এক উদ্ধারকর্মী।

অন্যদিকে গৃহহীন বহু মানুষ খোলা আকাশের নিচে তীব্র ঠাণ্ডার মধ্যে আশ্রয় ও খাবারের খোঁজে ছুটে বেড়াচ্ছেন। পরিবার নিয়ে তুরস্কের গাজিয়ানতেপ শহরের একটি খেলার মাঠে আশ্রয়ে থাকা সিরীয় শরণার্থী হাসান সিমা বলেন, ‘লোকজন অনেক দুর্ভোগ পোহাচ্ছে। আমরা একটা তাঁবু ও অন্যান্য সাহায্যের জন্য আবেদন করেছিলাম, কিন্তু এখন পর্যন্ত কিছুই পাইনি।’ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ইউরোপ অঞ্চলের পরিচালক হ্যান্স হেনরি পি ক্লুগ বলেন, ‘চাহিদা বিশাল, ঘণ্টায় ঘণ্টায় বাড়ছে। উভয় দেশের প্রায় ২ কোটি ৬০ লাখ মানুষের মানবিক সহায়তা দরকার।’