একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত পলাতক আসামি মো. জাছিজার রহমান ওরফে খোকাকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)। গত বৃহস্পতিবার রাতে রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
র্যাব বলছে, আত্মগোপনে থাকাকালে গ্রেপ্তার এড়াতে নিয়মিত বাসা পরিবর্তন করতেন জাছিজার রহমান। ছেলেরা আর্থিকভাবে স্বচ্ছল হওয়ায় তাকে নিয়মিত অর্থ দিতেন। এভাবেই দীর্ঘ ৭ বছর পলাতক থাকার পর র্যাবের হাতে গ্রেপ্তার হলেন তিনি।
শুক্রবার রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র্যাব মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র্যাব-২ এর অধিনায়ক অতিরিক্ত উপ-মহাপরিদর্শক মো. আনোয়ার হোসেন খান।
র্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধকালে রাজাকার বাহিনীর সদস্য ছিলেন গ্রেপ্তার জাছিজার রহমান। তিনি যুদ্ধকালীন রাজাকার, আলবদর এবং পিস কমিটির সক্রিয় সদস্য ছিলেন। রাজাকারদের সহযোগিতায় একাত্তরের ১৮ অক্টোবর পাকিস্তানিদের পক্ষ নিয়ে গাইবান্ধার সদরের সাহাপাড়া ইউনিয়নের নান্দিনা গ্রামসহ ৮টি গ্রামের ১৪ জন নিরীহ মানুষকে মেরে ফেলা হয়। পরে ওমর ফারুক, ইসলাম উদ্দিন ও নবীর হোসেনসহ ৭ জন মুক্তিযোদ্ধাকে ধরে নিয়ে গিয়ে হত্যা করা হয়। এই রাজাকাররা ২১ জনকে হত্যাসহ শতাধিক বাড়ি-ঘর লুটপাট, অগ্নিসংযোগ ও কয়েকটি গ্রামের সাধারণ মানুষের ওপর নৃশংস হামলা চালায়। এছাড়া, ভয়-ভীতি এবং আতঙ্ক ছড়িয়ে ৩-৪টি হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকদের ধর্মান্তর ও দেশান্তরে বাধ্য করাসহ বিভিন্ন মানবতাবিরোধী কাজ করে রাজাকাররা। যুদ্ধের সময় জাছিজারের বাবা গাইবান্ধা ৪ নম্বর সাহাপাড়া ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বর ছিলেন। যুদ্ধের সময় তিনিও রাজাকার বাহিনীতে যোগ দিয়ে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীকে সহায়তা করেন।
আনোয়ার হোসেন খান বলেন, এসব ঘটনায় ২০০৯ সালে হত্যা, গণহত্যা, ধর্ষণ, আটক, অপহরণ, নির্যাতন, বাড়িঘরে হামলা, লুটপাট-অগ্নিসংযোগ, ভয়-ভীতি এবং আতঙ্ক ছড়িয়ে হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকদের ধর্মান্তর ও দেশান্তরে বাধ্য করাসহ বিভিন্ন মানবতাবিরোধী কাজে জড়িত থাকার অপরাধে খোকা ও তার বাবাসহ ৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়। মামলাটি ২০১৭ সালে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তর করা হয়। বিচার শেষে ২০১৯ সালের ১৫ অক্টোবর আদালত মো. জাছিজার রহমান ওরফে খোকাকে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেন। মামলা হওয়ার পর তিনি ২০১৬ সাল পর্যন্ত জামিনে ছিলেন। পরে আদালতে হাজির না হয়ে আত্মগোপন করেন।
র্যাবের এই কর্মকর্তা আরও বলেন, ঢাকা মহানগরীর বিভিন্ন এলাকায় আত্মগোপনে ছিলেন জাছিজার রহমান। গ্রেপ্তার এড়াতে নিয়মিত বাসা বদল করতেন তিনি। তার ছেলেরা আর্থিকভাবে স্বচ্ছল হওয়ায় প্রয়োজনীয় চাহিদা পূরণের জন্য তাকে নিয়মিত অর্থ প্রদান করতো।
১৯৮/সি, তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮
©দৈনিক বাংলা