আপডেট : ২১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ ০৮:২৫
ভাষা আন্দোলন শ্রমজীবী জনগণের অভ্যুত্থান

ভাষা আন্দোলন শ্রমজীবী জনগণের অভ্যুত্থান

বদরুদ্দীন উমর

বদরুদ্দীন উমর লেখক-গবেষক ও বামপন্থি রাজনীতিক। ১৯৬১ সালে যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি দর্শন, রাজনীতি ও অর্থনীতিবিষয়ক পিপিই ডিগ্রি নিয়ে দেশে ফিরে আসেন এবং ১৯৬৩ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাজবিজ্ঞান বিভাগ প্রতিষ্ঠা করেন। গভর্নর মোনায়েম খানের স্বৈরতান্ত্রিক আচরণের প্রতিবাদে ১৯৬৮ সালে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকতা ছেড়ে রাজনীতি এবং লেখালেখিতে আত্মনিয়োগ করেন। তার লেখা ‘পূর্ব বাংলার ভাষা আন্দোলন ও তৎকালীন রাজনীতি’ ভাষা আন্দোলনের ওপর প্রথম গবেষণাগ্রন্থ। ভাষা আন্দোলন ও বাংলা ভাষার বর্তমান ব্যবহার নিয়ে সাক্ষাৎকার নিয়েছেন অনিন্দ্য আরিফ

দৈনিক বাংলা: আপনি ভাষা আন্দোলনের সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ছিলেন। আপনার বাবা আবুল হাশিম তখন সর্বদলীয় কেন্দ্রীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের সদস্য হিসেবে ভাষা আন্দোলনে সম্পৃক্ত ছিলেন। আপনি এই আন্দোলনে কীভাবে যুক্ত ছিলেন?

বদরুদ্দিন উমর: আমি ভাষা আন্দোলনের সময় কোনো নেতৃত্বের পর্যায়ে তো ছিলাম না, এমনকি সেভাবে কোনো কর্মীও ছিলাম না। সে সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা আমতলার বিভিন্ন সভা-সমাবেশে যেত। আমি তাদের মতোই একজন ছিলাম। আমাকে ভাষা আন্দোলনের একজন অবলোকনকারী বলতে পারেন। সে সময় আমতলাতে নানা বিষয়ে সভা-সমাবেশ হতো। তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাসের ফাঁকে আধ ঘণ্টা বা ৪৫ মিনিট বিরতি দেয়া হতো। সেই বিরতিতে আমতলাতে নানা ইস্যুতে সভা-সমাবেশ হতো। সেই সব সভা-সমাবেশে আমি যেতাম। আর ভাষা আন্দোলনের সভা-সমাবেশে তো অবশ্যই যেতাম।

দৈনিক বাংলা: আপনি তো তখন তমুদ্দুন মজলিসের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ ছিলেন…

বদরুদ্দিন উমর: আমি তখন তমুদ্দুন মজলিসের সঙ্গে কিছুটা সম্পৃক্ত থাকলেও খুব একটা সক্রিয় ছিলাম না। আমি আমার জীবনে কোনো ছাত্র সংগঠনের রাজনীতি করিনি।

দৈনিক বাংলা: যতদূর জানা যায়, ভাষা আন্দোলনের সময় ‘আমাদের ভাষার লড়াই’ বলে একটি রাজনৈতিক ইশতেহার প্রকাশিত হয়েছিল। এই ইশতেহারটি ছিল আপনার রচিত। সেই প্রেক্ষাপটটি যদি একটু বলতেন।

বদরুদ্দিন উমর: সর্বদলীয় কেন্দ্রীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের তখন আহ্বায়কের দায়িত্ব পালন করেছিলেন কাজী গোলাম মাহবুব। আমার বাবা আবুল হাশিম সেই পরিষদের সদস্য ছিলেন। খন্দকার গোলাম মাহবুব একদিন আব্বাকে এসে বললেন একটি প্রচারপত্র লিখে দেয়ার জন্য। এই প্রচারপত্রটি লিখতে হবে ভাষা আন্দোলনের ন্যায্যতা, যৌক্তিকতা ইত্যাদি বিষয় নিয়ে। আব্বা তখন আমাকে বললেন, ‘তুমি এটা লিখে দাও। আমি এর আগে কখনো রাজনৈতিক বিষয় নিয়ে রচনা লিখিনি। আব্বা বলার পর আমি চিন্তা করে এক ফর্মার মতো কাগজে ভাষা আন্দোলনের যৌক্তিকতা আর ন্যায্যতা নিয়ে লিখলাম। এই লেখার শিরোনাম দিলাম, ‘আমাদের ভাষার লড়াই’। এটিই আমার জীবনের প্রথম রাজনৈতিক রচনা। এটা লেখা হয়ে যাওয়ার পর কাজী গোলাম মাহবুব সেটা প্রেসে নিয়ে গিয়ে ছাপলেন। সে সময় খন্দকার মোশতাক আহমেদ আমাকে জানিয়েছিলেন যে এই প্রচারপত্রটি ১০ হাজার কপি ছাপা হয়েছিল। কিন্তু এই প্রচারপত্রটির মাত্র দুই-তিনটি কপি এদিক-সেদিক দেয়া গিয়েছিল। বাকি সব কপি প্রেস থেকে জিপে করে নিয়ে যাওয়ার সময় পুলিশ আটক করে এবং প্রচারপত্রের কপিগুলো বাজেয়াপ্ত করে। আমার কাছে যে কপিটি ছিল, সেটি পরে একজন ভয়ে নষ্ট করে ফেলে। পরে পুলিশ আর্কাইভসে গিয়ে খোঁজ নেয়া হয়েছিল, কিন্তু পাওয়া যায়নি। ফলে এই প্রচারপত্রটি প্রায় লুপ্ত হয়ে গেছে বলে ধারণা করা হয়।

দৈনিক বাংলা: এরপর তো আপনি অক্সফোর্ডে পড়ার সময় মার্কসীয় রাজনীতিতে আকৃষ্ট হন এবং দেশে ফিরে এসে বামপন্থি রাজনীতিতে সক্রিয় হন। পরে কীভাবে আপনার মধ্যে ভাষা আন্দোলনের ওপর গবেষণা করার তাগিদ তৈরি হলো?

বদরুদ্দিন উমর: আমি প্রথমেই বলে রাখি, আমি কোনো সাহিত্যিক নই। মূলত রাজনীতি করার জায়গা থেকে আমি লিখে থাকি। তাই আমি যে রাজনৈতিক মতাদর্শের কর্মী হিসেবে কাজ করে থাকি, সেখান থেকে আমার লেখালেখিগুলোকে বিচ্ছিন্ন করার কোনো সুযোগ নেই। আর আমি রাজনীতিতে না এলে এসব লেখা লিখা আমার পক্ষে সম্ভবই হতো না। আমি রাজনৈতিক প্রয়োজনে, রাজনৈতিক আদর্শ থেকে এসব লেখা লিখে থাকি। আমি যখন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করতাম, তখন থেকেই ভাষা আন্দোলনের ওপর লেখার কথা ভাবছিলাম, অন্যরাও লিখতে বলছিল। তখন আমি চিন্তা করেছিলাম তৎকালীন পূর্ব বাংলার রাজনৈতিক ইতিহাসের ওপর একটি কাজ করব। সেই কাজ শুরু করার সময় একজন আমাকে বললেন, ‘আপনি ভাষা আন্দোলনের একটি সংক্ষিপ্ত ইতিহাস লেখেন’। তখন আমি ভাষা আন্দোলনের ওপর কিছু তথ্য সংগ্রহ করার চেষ্টা করলাম। সেই তথ্য সংগ্রহ করতে গিয়ে আমি ভাষা আন্দোলনের অনেকগুলো দিক খুঁজে পেলাম। আমাদের এখানে বেশির ভাগ গবেষক আর লেখক ভাষা আন্দোলনকে একটা ছাত্র আন্দোলন হিসেবে পরিচিত করার অপচেষ্টা করে থাকে। এটা ঠিক যে ভাষা আন্দোলনে ছাত্রদের একটা ভূমিকা রয়েছে। কিন্তু সেটাই ভাষা আন্দোলনের একমাত্র দিক ছিল না। আমি গবেষণা করতে গিয়ে দেখলাম যে ভাষা আন্দোলনের সময় একটি অভ্যুত্থানের পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছিল। তাই ভাষা আন্দোলনের ক্যানভাসে ছাত্ররাই একমাত্র চালিকাশক্তি ছিল না। সেই আন্দোলনের পটভূমি ছিল আরও বিস্তৃত।

দৈনিক বাংলা: আপনার লেখা ‘পূর্ব বাঙলার ভাষা আন্দোলন ও তৎকালীন রাজনীতি’ গ্রন্থে আপনি বিশেষভাবে সেই সময়কার শ্রমজীবী মানুষের ভূমিকা আলাপ করেছেন। ভাষা আন্দোলনের সঙ্গে শ্রমিক-কৃষক আন্দোলনের যোগসূত্র কীভাবে ছিল?

বদরুদ্দিন উমর: ভাষা আন্দোলনে তৎকালীন পূর্ব বাংলার কৃষক-শ্রমিকের বড় ধরনের ভূমিকা ছিল। তাই ভাষা আন্দোলন নিয়ে আমি যে কাজ করেছি, সেখানে এই ভূমিকার কথা বারবার এসেছে। এখানকার মধ্যবিত্ত বুদ্বিজীবীদের দ্বারা ভাষা আন্দোলনের ওপর রচিত বই থেকে আমার বইটি সম্পূর্ণ আলাদা। সেজন্য অনেকে এই বিষয়টি বুঝতে না পেরে বলে থাকেন, এটা ভাষা আন্দোলনের ওপর বই নয়। এ ধরনের নির্বোধ মার্কা কথা তারা বলে থাকেন এইজন্য যে তারা ভাষা আন্দোলনের মূল চরিত্র বুঝতে অক্ষম। আসলে ১৯৪৭-১৯৫২ সাল পর্যন্ত পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠীর ওপর এ দেশের কৃষক-শ্রমিক ও মধ্যবিত্তের মোহভঙ্গ হয়েছিল। তারা এই মোহভঙ্গ থেকেই আন্দোলনে নেমেছিল। যেমন ১৯৪৯ সালে শামসুল হক মুসলিম লীগের প্রার্থীকে পরাজিত করে তার টাকা বাজেয়াপ্ত করে নিয়েছিলেন। এই ঘটনা তো ১৯৫২ সালের বেশ আগেই ঘটেছিল। কাজেই দেখা যাচ্ছে, মাত্র দুই বছরের মাথায় তখনকার ক্ষমতাসীন মুসীলম লীগের রাজনীতি দুরবস্থায় পতিত হচ্ছে। ১৯৫২ সাল আসতেই মানুষের ক্ষোভ প্রতিরোধের ভাষায় রূপান্তরিত হলো। কমরেড মাও সে তুং বলেছিলেন, ‘একটি স্ফূলিঙ্গ দাবানল সৃষ্টি করতে পারে’। সুতরাং, ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি ছাত্রদের ওপর গুলিবর্ষণ সেই রকম স্ফূলিঙ্গই ছিল। আর সেখান থেকে প্রতিরোধের দাবানল সৃষ্টি হয়েছিল। সেই সময় এই প্রতিরোধের দাবানল শুধু ঢাকা শহরেই সীমাবদ্ধ থাকিনি। সুদূর গ্রামে-গঞ্জেও ছড়িয়ে পড়েছিল। আর আমি আমার এই বইটিতে সেই বিষয়গুলোই তুলে ধরেছি। এখানকার বুদ্ধিজীবীরা ভাষা আন্দোলনের এই মূল দিকটাকে সব সময় এড়িয়ে যেতে চান। তারা মূলত ভাষা আন্দোলনকে ছাত্র আর শহুরে বাবু-ভদ্দরলোকদের আন্দোলন বলে চালিয়ে দিতে চান। তারা আসলে এই চেষ্টার মধ্য দিয়ে ভাষা আন্দোলনের ইতিহাসটিকে বিকৃত করতে চান। তার পরিবর্তে আমি ভাষা আন্দোলনটিকে তৎকালীন পূর্ব বাংলার শ্রমজীবী মানুষের প্রতিরোধের ইতিহাস হিসেবে তুলে ধরতে চেয়েছি।

আমি আমার লেখা ‘পূর্ব বাঙলার ভাষা আন্দোলন ও তৎকালীন রাজনীতি’ গ্রন্থের দ্বিতীয় খণ্ডে কৃষকদের নিয়ে প্রায় তিন শত পৃষ্ঠা লিখেছি। সেখানে আমি সে সময়ে জমিদারি প্রথা লোপ, কৃষকদের অবস্থা, ভূমিব্যবস্থা আর কৃষক আন্দোলনের বিষয়গুলো আলোচনা করেছি। অনেকে বলে থাকেন যে, কৃষকদের এই বিষয়গুলোর সঙ্গে ভাষা আন্দোলনের কী সম্পর্ক? এই মূর্খতার কি জবাব দেয়া যাবে? আসলে তারা একটি ঐতিহাসিক ঘটনাকে সমকালীন প্রেক্ষাপট থেকে আলোচনা করার মননশীলতার অভাববোধ থেকেই এ ধরনের মন্তব্য করে থাকেন।

দৈনিক বাংলা: এরপর বাংলা একাডেমি থেকে আপনার সম্পাদিত ও সংকলিত ‘ভাষা আন্দোলন প্রসঙ্গ: কতিপয় দলিল’ শীর্ষক দুই খণ্ডের বই প্রকাশিত হয়েছে। সেই দলিলপত্র সংকলনটি প্রকাশের প্রেক্ষাপটটি যদি একটু সংক্ষেপে বলতেন।

বদরুদ্দীন উমর: আমি ভাষা আন্দোলনের ওপর গবেষণা করার সময় প্রচুর তথ্য সংগ্রহ করেছিলাম। আমার এই গবেষণাটির অন্যতম একটি প্রধান ভিত্তি ছিল তথ্য। আমি সব সময় ঐতিহাসিক বিষয় নিয়ে রচনার সময় তথ্যের বাইরে যাই না। আমার কোনো লেখা সম্পর্কে কেউ বলতে পারবে না যে, আমি তথ্যের বাইরে গিয়ে কোনো রচনা লিখেছি। আন্দাজি কথা দিয়ে আমি কোনো লেখা লিখিনি বা লিখতেও চাই না। আমার ভাষা আন্দোলনের ওপর যে বইটি রয়েছে, সেটার গবেষণা পদ্ধতি একেবারে আমার নিজস্ব। আমি নিজেকে সমকালীন ‘ঐতিহাসিক’ হিসেবে বিবেচনা করতে চাই। ভাষা আন্দোলনের ওপর গবেষণা করতে গিয়ে আমি কোনো গ্রন্থাগারের সাহায্য পাইনি। কেননা এখানকার গ্রন্থাগারগুলোতে ভাষা আন্দোলনের ওপর তেমন কোনো তথ্য সংগৃহীত ছিল না। কেননা এটি তখন সমকালীন ইতিহাসের বিষয় ছিল। তাই এই গবেষণা করতে গিয়ে আমি অনেকের সাক্ষাৎকার গ্রহণ করি। বিশেষ করে যারা ভাষা আন্দোলনের সঙ্গে নানাভাবে সম্পৃক্ত ছিল, তাদের সাক্ষাৎকার গ্রহণ করি। এ ছাড়া আমি তখনকার সময়ের সংবাদপত্রের নানা ক্লিপিংস সংগ্রহ করি। বিভিন্ন লিফলেট, প্লামপেট সংগ্রহ করি। এমনকি সেই সময়কার কমিউনিস্ট পার্টির সার্কুলারও সংগ্রহ করি। এই সার্কুলারটি শহীদ বুদ্ধিজীবী শহীদুল্লাহ কায়সার তাদের পার্টি আর্কাইভস থেকে আমাকে এনে দিয়েছিল। সেটা সে সময় খুব সাহায্যে এসেছিল। এ ছাড়া সে সময় যারা ভাষা আন্দোলন, সেই সময়কার কৃষক আন্দোলন আর শ্রমিক আন্দোলনে যুক্ত ছিলেন, তাদের লেখা বিভিন্ন চিঠিপত্রও সংগ্রহ করি। এভাবে আমি বড় ধরনের তথ্য সংগ্রহ করি। ‘পূর্ব বাঙলার ভাষা আন্দোলন ও তৎকালীন রাজনীতি’ গ্রন্থটি লেখার সময় আমি এগুলোর সব ব্যবহার করেছিলাম না। তখন আমি ভেবেছিলাম যে, আমার সংগৃহীত এই তথ্যকে যেন অন্যরা ব্যবহার করতে পারেন। তাই এই তথ্যগুলো নিয়ে একটি সংকলন প্রকাশ করার চিন্তা আমার মাথায় এলো। ১৯৮০-এর দশকে তখনকার বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক আমাকে জানালেন যে, তারা এই সংকলনটি প্রকাশ করতে চান। খুব সম্ভবত ১৯৮৫-৮৬ সালের দিকে বাংলা একোডেমি থেকে দুই খণ্ডে আমার সম্পাদনায় এই সংগৃহীত তথ্যগুলো বই আকারে প্রকাশিত হয়।

দৈনিক বাংলা: আপনার বইটি ভাষা আন্দোলনের ক্ষেত্রে প্রথম গবেষণা। পরবর্তীকালের গবেষণাগুলোর মধ্যে কোনটিকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করছেন?

বদরুদ্দীন উমর: বশীর আল হেলালের ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস বইটা উল্লেখযোগ্য। সাংস্কৃতিক বিষয়গুলো সেখানে বড় পরিসরে আলোচিত হয়েছে। বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান (বিআইডিএস) থেকে আরেকটা কাজ হয়েছিল কয়েক খণ্ডে। সেটি একটি গবেষণামূলক কাজ, তবে এর একটি খণ্ড আমার বই থেকে তুলে দেয়া হয়েছে। আমি তাদের বলেছিলাম বিভিন্ন গ্রামাঞ্চলে যে আন্দোলন হয়েছিল, সেটি অনুসন্ধান করে বের করে আনেন। আপনাদের রিসোর্স, টাকা-পয়সা ও লোকজন আছে। কিন্তু তারা সেটি করেনি।

দৈনিক বাংলা: আপনি লিখেছেন, ভাষা আন্দোলনের সত্যিকার নায়ক ছিল পূর্ব বাংলার সংগ্রামী জনগণ। আপনার বইটিও তাদের উৎসর্গ করেছেন। ভাষা আন্দোলনের ৭১ বছর পেরিয়ে যাওয়ার পর এই রাষ্ট্রে সেই সংগ্রামী জনগণ কি নায়কের ভূমিকাতেই রয়েছেন?

বদরুদ্দীন উমর: এটা একটি দীর্ঘ আলোচনার বিষয়। তবে এখানে সংক্ষেপে যে কথাটি বলা যায়, এই সংগ্রামী জনগণকে এই ভূখণ্ডের প্রকৃত নায়কে পরিণত করার জন্য দরকার একটি বিপ্লবী পার্টি। সেজন্য সংগঠন দরকার, একগুচ্ছ সংগ্রামী চেতনার মননশীল লোক দরকার। কৃষক-শ্রমিক বা শ্রমজীবী জনগণ তো এমনি এমনি ক্ষমতা নিয়ে নিতে পারবে না। বিশেষ করে আমাদের মতো দেশে যেখানে শিক্ষা-দীক্ষা নেই, সেখানে এই জনগণ নিজে থেকে ক্ষমতা দখল করতে পারবে না। তবে এই জনগণের স্বতঃস্ফূর্তায় অভ্যুত্থান তৈরি হবে। আর আমি মনে করি, এই ভূখণ্ডে নির্বাচনের মধ্য দিয়ে কোনো রাজনৈতিক পরিবর্তন হয়নি। কেবলমাত্র অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে রাজনৈতিক পরিবর্তন হয়েছে। সেটা ভাষা আন্দোলন বলেন, ১৯৬৯ সালের ঘটনা বলেন, ১৯৭১-এর সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের কথা বলেন আর ১৯৯০-এর সামরিক স্বৈরাচারবিরোধী গণঅভ্যুত্থান বলেন, এই সবের মধ্য দিয়েই রাজনৈতিক পরিবর্তন সম্ভব হয়েছে।