একজন মানুষের কত গুণ থাকতে পারে, সেটা বিতর্কের বিষয়। কিন্তু ফরিদুর রেজা সাগর যে কত গুণের অধিকারী, এটা চট করে বলা সম্ভব নয়। কারণ একজন মানুষের যতগুলো সৎ গুণাবলি থাকা উচিত, তার সবটাই তার আছে।
ফরিদুর রেজা সাগরের নামের আগে অনেক বিশেষণ দেয়া যায়। তিনি বাংলা ভাষার প্রথম ডিজিটাল টেলিভিশন মাধ্যম চ্যানেল আইয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক। দেশবরেণ্য শিশুসাহিত্যিক, চলচ্চিত্র প্রযোজক, মিডিয়া ব্যক্তিত্ব। কিন্তু তার সবচেয়ে বড় পরিচয় তিনি একজন মানবিক মানুষ। দেশ ও দেশের সাংস্কৃতিক উন্নয়ন ভাবনা তাকে সারাক্ষণ ব্যস্ত রাখে। আজকে দেশজুড়ে এই যে টেলিভিশন মাধ্যমের এত জয়জয়কার, তার পেছনে অনেক ভূমিকা আছে ফরিদুর রেজা সাগরের। বন্ধুদের প্রতি তার অকৃত্রিম ভালোবাসা অন্যের কাছে ঈর্ষণীয়। মেধাবী তরুণদের অসম্ভব ভালোবাসেন তিনি।
মিডিয়ায় প্রতিষ্ঠা পাওয়া উল্লেখযোগ্যসংখ্যক তরুণ-তরুণীর আইডল তিনি। আনন্দের সঙ্গে উল্লেখ করতে চাই, আজ এই গুণী মানুষটির শুভ জন্মদিন। এ উপলক্ষে আজ বিকেলে শিশু একাডেমি প্রাঙ্গণে বর্ণাঢ্য শিশু উৎসব অনুষ্ঠিত হবে।
ফরিদুর রেজা সাগরের জন্ম ২২ ফেব্রুয়ারি ১৯৫৫। শিশুসাহিত্যিক, চলচ্চিত্র প্রযোজক ও মিডিয়া ব্যক্তিত্ব হিসেবে তার খ্যাতি প্রায় তিন দশকের বেশি সময় ধরে। বাংলাদেশ টেলিভিশনের জন্মলগ্ন থেকেই তিনি বিভিন্ন অনুষ্ঠানের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। টিভি অনুষ্ঠান উপস্থাপনার পাশাপাশি তার লেখা বেশ কিছু নাটকও টেলিভিশনে প্রচারিত হয়েছে। সেই তরুণ বয়স থেকেই তিনি চলচ্চিত্র ও টেলিভিশনের সঙ্গে জড়িত রয়েছেন।
ফরিদুর রেজা সাগর মিডিয়া ব্যক্তিত্ব হিসেবে একুশে পদক পেয়েছেন ২০১৬ সালে। শিশুসাহিত্যে বাংলা একাডেমি পুরস্কার পেয়েছেন ২০০৪ সালে। তার প্রযোজিত চলচ্চিত্রগুলো শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র প্রযোজনার জন্য ৯ বার পেয়েছে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার এবং বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে এযাবৎ ২০০টি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেছে। মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কারে এ পর্যন্ত সাতবার শ্রেষ্ঠ প্রযোজক হিসেবে পুরস্কৃত হয়েছেন। শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র প্রযোজক ও টেলিভিশন অনুষ্ঠান প্রযোজনার জন্য বাচসাসসহ বিভিন্ন সংগঠন তাকে পুরস্কারে ভূষিত করেছে। শিশুসাহিত্যে অবদানের জন্য তিনি আরও পেয়েছেন অগ্রণী ব্যাংক শিশুসাহিত্য পুরস্কার, রোমেনা আফাজ স্মৃতি স্বর্ণপদক, টেনাশিনাস পদক, ইউরো শিশুসাহিত্য পুরস্কার ও দাদাভাই শিশুসাহিত্য পুরস্কার ২০১৯। শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র প্রযোজনার জন্য ফরিদুর রেজা সাগর বিদেশেও বহুবার নানা পুরস্কার ও সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন।
শতাধিক গ্রন্থের লেখক ফরিদুর রেজা সাগরের লেখা ‘ছোট কাকু সিরিজ’ ছোট-বড় সবার কাছে সমান জনপ্রিয়তা পেয়েছে। এ পর্যন্ত ৩০টির বেশি ছোট কাকু সিরিজের বই প্রকাশিত হয়েছে। বড়দের জন্যও লিখেছেন নানা ধরনের বই। ভ্রমণবিষয়ক গ্রন্থ ‘ভ্রমণ ভ্রমিয়া শেষে’ ছাড়াও বাংলাদেশের টেলিভিশনব্যবস্থা নিয়ে স্মৃতিকথামূলক গ্রন্থ ‘একজীবনে টেলিভিশন’, ‘টেলিভিশন জীবনের সঙ্গী’ ও ‘আরেক জীবনে টেলিভিশন’ বইগুলো ব্যাপকভাবে আলোচিত হয়েছে। তার লেখা ‘একজীবনে টেলিভিশন’ বইটি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে পাঠ্যসূচিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। তার লেখা গল্প ‘অমি ও আইসক্রিমঅলা’ ষষ্ঠ শ্রেণির পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। কিশোরসমগ্র গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে ১৩টি। এ পর্যন্ত তার দেড় শতাধিক গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে দেশ- বিদেশের খ্যাতনামা প্রকাশনা থেকে।
ফরিদুর রেজা সাগরের পিতা ফজলুল হক এ দেশের চলচ্চিত্র নির্মাণ ও সাংবাদিকতার পথিকৃৎ ছিলেন। মা রাবেয়া খাতুন দেশের প্রথিতযশা কথাসাহিত্যিক। ফরিদুর রেজা সাগর বাংলা একাডেমির একজন ফেলো, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের স্থাপনা সদস্য। ছোটবেলা থেকে কেন্দ্রীয় কচি-কাঁচার মেলা, চাঁদের হাট এবং বর্তমানে বিভিন্ন শিশু সংগঠন ও সামাজিক সংগঠনের সঙ্গে জড়িত; এসব সংগঠনের তিনি চ্যারিটি মেম্বার। তার স্ত্রী কনা রেজা। দুই কন্যা মেঘনা ও মোহনা। একজন চিকিৎসক। অন্যজন স্থপতি।
লেখক: সম্পাদক, আনন্দ আলো
১৯৮/সি, তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮
©দৈনিক বাংলা