আপডেট : ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ ১১:৫৬
সাংবাদিকসহ ৩০ শিক্ষার্থীকে মারধর করল ছাত্রলীগ
রাজশাহী ব্যুরো

সাংবাদিকসহ ৩০ শিক্ষার্থীকে মারধর করল ছাত্রলীগ

রাজশাহী কলেজ ছাত্রাবাসে সাংবাদিকসহ ৩০ শিক্ষার্থীকে মারধরের অভিযোগ উঠেছে ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে। গত বুধবার সন্ধ্যায় কলেজের মুসলিম ছাত্রাবাসের ‘ই’ ব্লক ও ‘বি’ ব্লকে এ ঘটনা ঘটেছে।

মারধরের শিকার সংবাদকর্মীরা হলেন, কলেজের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী নাজমুস সাকিব ও শরীফুল ইসলাম। তারা কলেজ রিপোর্টার্স ইউনিটির (আরসিআরইউ) সদস্য। অভিযুক্তরা হলেন, শাহরুখ, রাফি, ইমন, তরিকুল, রাজু, হাসান, আহসান। তারা কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি রাশিক দত্তের অনুসারী।

মারধরের শিকার নাজমুস সাকিব বলেন, ছাত্রলীগের কর্মীরা বিভিন্ন সময় তাদের দলীয় কর্মসূচিতে জোর করে সাধারণ শিক্ষার্থীদের নিয়ে যান। বুধবার বিকেলে ছাত্রলীগের একটা কর্মসূচিতে যাই। সেখান থেকে ছাত্রলীগ নেতা রাফিকে মেডিকেলে যাওয়ার কথা বললে ছাত্রাবাস ছেড়ে দিতে বলে। পরে আমি মেডিকেল যাই। সেখান থেকে সন্ধ্যা ৬টায় ছাত্রাবাসে ফিরে এলে ছাত্রলীগের শাহরুখ, রাজু, রাফি ও হাসানসহ ৮ থেকে ১০ জন আমার রুমে ঢুকে মারধর করতে থাকে।

তিনি আরও বলেন, আমার মোবাইল ফোনসহ বেশ কিছু দামি জিনিসপত্র কেড়ে নেয়। এক পর্যায়ে শিক্ষার্থীদের ব্লকে আটকে রেখে অকথ্য ভাষায় গালাগাল করতে থাকে। এ সময় অনেককে মারধরও করে। পরে সবাইকে টেনেহিঁচড়ে গণরুমে নিয়ে যায়। যদি কারও কাছে এ ঘটনা বলা হয়, তাহলে পরিস্থিতি ভয়াবহ হবে হুমকি দেয়া হয়।

আরেক ভুক্তভোগী শরিফুল ইসলাম বলেন, সকাল সাড়ে ৯টায় বের হয়ে ব্যক্তিগত কাজে সারাদিন ব্যস্ত ছিলাম। সন্ধ্যায় রুমে এসে নিউজ লিখছিলাম। এমন সময় হঠাৎ রাশিক দত্তের কর্মী শাহরুখ রুমে ঢুকে কিছু বুঝে উঠার আগেই হামলা করে। এ সময় সাংবাদিক পরিচয় দিলেও কোনো কর্ণপাত করেননি। এক পর্যায়ে আমাকে টেনে অন্য ব্লকে নিয়ে যায়। সেখানে গিয়ে দেখি অন্তত ৪০ জন শিক্ষার্থীকে আটকে রেখেছে। পরে সবাইকে জোর করে কর্মসূচিতে নিয়ে যায়।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক শিক্ষার্থী বলেন, ঘটনার পরে আমাদের শাসিয়েছেন ছাত্রলীগ সভাপতি রাশিক দত্ত। তিনি বলেন, ‘যাই করো ছাত্রলীগের প্রোগ্রামে নিয়মিত উপস্থিত থাকা লাগবে, না হলে ছাত্রবাস থেকে বের করে দেব।’ ওই ছাত্রের অভিযোগ এর আগেও অনেক বার বাবা-মা গালিগালাজ ও বিভিন্নভাবে নির্যাতন করে ছাত্রলীগকর্মীরা।

মারধরের কথা স্বীকার করে কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি রাশিক দত্ত বলেন, ‘ঘটনাটি শুনেছি। আমার ছেলেরা এই ঘটনা ঘটিয়েছে। আমাদের তো রাজনীতি করতে হয়। বিভিন্ন সংগঠনের ৪-৫ জন করে যদি ২০ জন ছেলে চলে যায়, তাহলে আমরা কীভাবে প্রোগ্রাম চালাব? এরপর থেকে এমন হবে না, তাদের সঙ্গে বসে সমঝোতা করে নেব।’

নগর ছাত্রলীগের সভাপতি ও রাজশাহী কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি নূর মোহাম্মদ সিয়াম বলেন, ‘এ ঘটনায় আমি বিব্রত। এর আগে আমরাও ছিলাম, এমন ঘটনা কখনো ঘটেনি। আমরা খুব আন্তরিকতার সঙ্গে ছিলাম। এখন তাদের সঙ্গে কথা বলে দেখি কী করা যায়।’

কলেজ অধ্যক্ষ অধ্যাপক মোহা. আব্দুল খালেক বলেন, এর আগেও রাশিক দত্ত নেতৃত্বে এমন ঘটনা ঘটেছে। সেসময় এ ঘটনার পুনরাবৃত্তি হবে না বলে আমাদের বলেছিল। আমরা ব্যবস্থা নেব।

রাশিক দত্ত আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপকমিটির বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক এবং রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য আনিকা ফারিয়া জামান অর্ণার অনুসারী। জানতে চাইলে অর্ণা বলেন, ‘রাশিক দত্তর সঙ্গে কথা বলে বিষয়টি দেখছি। এ ঘটনায় কারা কারা জড়িত, তা খতিয়ে দেখা হবে।’

এর আগে ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে রিপোর্টার্স ইউনিটির কার্যালয়ে হামলা চালায় রাশিক দত্তের অনুসারীরা। এরপর দেড় বছর নেতৃত্বহীন থাকার পর গত বছরের ৬ সেপ্টেম্বর কলেজ ছাত্রলীগের নেতৃত্বে আসেন রাশিক দত্ত ও আশরাফুল ইসলাম জাফর। ক্ষমতায় আসার আগে থেকেই নানা অপকর্মে সমালোচিত হন রাশিক।