চলমান বন্যায় বহু মানুষের প্রাণহানি ও ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির পর বড় ধরনের অর্থনৈতিক সংকটে পড়েছে পাকিস্তান। খাবারের ঘাটতি এবং জনস্বাস্থ্যের জন্য বিভিন্ন হুমকি ও দুর্যোগের প্রভাবে সৃষ্ট অন্যান্য সমস্যা মোকাবিলায় দেশটির সরকার সহায়তা চেয়ে ইতিমধ্যে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে অনুরোধ জানিয়েছে। তাতে সাড়া দিয়ে ইতিমধ্যে কয়েকটি দেশ সাহায্য পাঠাতে শুরু করেছে।
এএফপি জানায়, পাকিস্তানে গত জুনের মাঝামাঝি সময় থেকে শুরু হওয়া বন্যায় অন্তত ১ হাজার ৩০০ মানুষের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছেন ১২ হাজার ৭০০ মানুষ। প্রায় ১৭ লাখ ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ ছাড়া সাড়ে সাত লাখ গবাদিপশু-পাখি ভেসে গেছে বন্যার পানিতে। দেশটির ১৬০টি জেলার মধ্যে ৮১টি জেলা এখন বন্যাকবলিত।
বার্তা সংস্থা আল-জাজিরাকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে পাকিস্তানের সিন্ধু প্রদেশের কিরাঙ্গি নামে এক কৃষক জানান, ৩০ একর জমিতে ধান, গম ও তুলা চাষ করেছিলেন। কিন্তু বৃষ্টি আর বন্যায় সব নষ্ট হয়ে গেছে। বন্যাদুর্গত অঞ্চলের ৩ কোটি ৩০ লাখ মানুষের সঙ্গে তার পরিবারকেও অন্য স্থানে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
কিরাঙ্গি বলেন, ‘এখানে এত বেশি পানি যে, তা আগামী তিন মাসেও সরবে কি না, জানি না। এখন আমার কিছু বেঁচে যাওয়া গমখেতের জন্য দুশ্চিন্তা হচ্ছে। সেটুকুও নষ্ট হয়ে গেলে, আমাদের না খেয়ে মরতে হবে।’
এমন পরিস্থিতি পাকিস্তানের দক্ষিণাঞ্চলের বন্যাকবলিত কমবেশি সব কৃষকের। এখন দেশের নীতিনির্ধারকদের এই অর্থনৈতিক দুর্দশা থেকে উত্তরণের পথ খুঁজে বের করা কঠিন হবে। বিশাল অঞ্চলজুড়ে ফসলের ক্ষয়ক্ষতি এবং সড়ক ও যোগাযোগ ব্যবস্থা ধসে পড়ায় তীব্র খাদ্যসংকটের মুখে পড়তে যাচ্ছে পাকিস্তান। এ অবস্থায় দেশটির সরকার প্রধান বিদেশি সহায়তা আরো বাড়ানোর অনুরোধ করেছেন। এমনকি বৈরী সম্পর্কের মাঝেও ভারত থেকে খাদ্য আমদানি হতে পারে বলে জানিয়েছেন পাকিস্তানের কৃষিমন্ত্রী।
জাতিসংঘ জানিয়েছে, খাদ্যসংকট ছাড়াও বন্যাদুর্গতরা তীব্র স্বাস্থ্যসংকটের মধ্যে রয়েছে । দেশটির গণমাধ্যম পাকিস্তান টুডে এক প্রতিবেদনে জানায়, দক্ষিণাঞ্চল পাঞ্জাবের একটি আশ্রয় শিবিরে প্রচণ্ড দুর্গন্ধের মাঝে মানুষ বাস করছেন। চারপাশে বন্যার পানির মাঝে একটি সরু রাস্তার পাশে এক টুকরো উঁচু জমিতে কয়েকটি তাঁবুতে শতাধিক মানুষ ও গবাদিপশু একসঙ্গে থাকছে। কোনো ধরনের পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থা না থাকায় তৈরি হয়েছে প্রচণ্ড অস্বাস্থ্যকর এক পরিবেশ।
জেবুন্নেসা বিবি নামে এই আশ্রয়শিবিরে থাকা এক নারী বলেন, ‘আমাদের টয়লেট বা গোসল করার কোনো জায়গা নেই। মুসলিম হিসেবে আমরা সব সময়ই পর্দা করে এসেছি। কিন্তু খোদা আমাদের সেখান থেকে সরিয়ে দিলেন।’
এমন পরিস্থিতিতে শুধু লজ্জা নিবারণ নয়, তৈরি হচ্ছে তীব্র স্বাস্থ্যসংকট। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) জানিয়েছে, অল্প স্থানে বেশি মানুষ, পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থার অভাব ও নোংরা পরিবেশে মানুষ ডায়রিয়া, কলেরা, ডেঙ্গু, ম্যালেরিয়া, এমনকি কোভিড ১৯-এ আক্রান্ত হওয়ার উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে।
১৯৮/সি, তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮
©দৈনিক বাংলা