ইউক্রেনে যুদ্ধ বন্ধে রাশিয়ার ওপর চাপ প্রয়োগ করতে চীনের সহায়তা চান ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাখোঁ। এ বিষয়ে আলোচনা করতে এপ্রিলের শুরুর দিকে তিনি চীন সফরে যাবেন বলেও ঘোষণা দিয়েছেন। খবর এএফপির।
গত শনিবার ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে এক অনুষ্ঠানের ফাঁকে ম্যাখোঁ এ ঘোষণা দেন।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের এক বছর পূর্তিতে ১২ দফা শান্তি প্রস্তাব দিয়েছে চীন। গত শুক্রবারের ওই প্রস্তাবে জরুরি শান্তি আলোচনা এবং যুদ্ধের সমাপ্তি টানতে ‘রাজনৈতিক সমাধানের’ আহ্বান জানায় রাশিয়ার মিত্র দেশটি। তার পরই চীন সফরের ঘোষণা দিলেন ম্যাখোঁ।
এর আগে এ প্রস্তাবের বিষয়ে চীনা প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের সঙ্গে বৈঠক করতে আগ্রহ প্রকাশ করেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। চীনের শান্তি প্রস্তাবকে সাধুবাদ জানায় মস্কোও।
শনিবার প্যারিসের ওই অনুষ্ঠানে ম্যাখোঁ বলেন, ‘চীন যে শান্তি প্রচেষ্টায় নিযুক্ত হচ্ছে তা একটি ভালো ব্যাপার। রাশিয়া যদি ইউক্রেনে আগ্রাসন বন্ধ করে, তাদের সৈন্য প্রত্যাহার করে নেয় এবং ইউক্রেন ও এর জনগণের আঞ্চলিক সার্বভৌমত্বকে সম্মান করে তাহলেই কেবল শান্তি সম্ভব।’
এদিকে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের দীর্ঘদিনের মিত্র বেলারুশিয়ান নেতা আলেকজান্ডার লুকাশেঙ্কোও চীন সফর করবেন বলে জানিয়েছে বেইজিং। আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি থেকে ২ মার্চ পর্যন্ত চীনে রাষ্ট্রীয় সফর করবেন তিনি।
এএফপি জানায়, গত বছরের ২৪ ফেব্রুয়ারি লুকাশেঙ্কো তার দেশকে ইউক্রেনে আক্রমণের জন্য মস্কোর লঞ্চপ্যাড হিসেবে ব্যবহারে অনুমতি দিয়েছিলেন।
গত বুধবার রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন চীনের শীর্ষ কূটনীতিক ওয়াং ই। তার পরই চীনের পক্ষ থেকে ইউক্রেনের যুদ্ধ বন্ধের জন্য ১২ দফা শান্তি পরিকল্পনা প্রস্তাব করা হয়।
গত বছরের ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে আক্রমণ শুরু করে রাশিয়া। এক বছর পূর্তিতে এসে এই যুদ্ধ বন্ধের আহ্বান জানিয়ে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদেও (ইউএনজিএ) নতুন একটি প্রস্তাব পাস হয়েছে।
চীনের ওই প্রস্তাবে শান্তি আলোচনা এবং জাতীয় সার্বভৌমত্বের প্রতি সম্মান জানানোর কথা বলা হয়েছে। তবে ১২ দফা প্রস্তাবটির কোথাও সুনির্দিষ্টভাবে বলা হয়নি যে, রাশিয়াকে ইউক্রেন থেকে তার সৈন্য প্রত্যাহার করতে হবে।
চীনের শান্তি চুক্তির পরিকল্পনা সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন গত শুক্রবার এবিসি নিউজকে বলেন, ‘পুতিন যেখানে সাধুবাদ জানিয়েছেন, তাহলে এটি কীভাবে ভালো হতে পারে?’
বাইডেন বলেন, ‘চীনের পরিকল্পনায় আমি এমন কিছুই দেখিনি যাতে মনে হয় যে, এমন কিছু আছে, যা রাশিয়া ছাড়া অন্য কারও জন্য উপকার বয়ে আনবে।’
চীনের শান্তি প্রস্তাবে যা আছে
শান্তি প্রস্তাবে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়েছে চীন। দেশটি বলেছে, তারা চায় না রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাক। রাশিয়ার ঘনিষ্ঠ মিত্র দেশটি মনে করে, আলোচনা ও মধ্যস্থতাই এই সংকট সমাধানের দৃশ্যত একমাত্র উপায়।
আল-জাজিরা জানায়, রাশিয়ার ওপর পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার অবসান, পারমাণবিক স্থাপনার নিরাপত্তা, বেসামরিক নাগরিকদের সরিয়ে নিতে মানবিক করিডোর গঠনের প্রস্তাব রাখা হয়েছে চীনের তরফ থেকে। এ ছাড়া শস্য রপ্তানি নিশ্চিত করতে যথাযথ পদক্ষেপ নেয়ার কথাও রয়েছে প্রস্তাবে।
চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, সংঘাত ও যুদ্ধে কারও লাভ নেই। উত্তেজনার আগুনে ঘি না ঢেলে সব পক্ষেরই যুক্তিসংগত ও সংযত আচরণ করা উচিত। এই সংকট যেন আরও মারাত্মক অবস্থায় না যায় কিংবা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে না যায় সেদিকে সবার নজর দেয়া উচিত।
যুক্তরাষ্ট্র চীনের এই পরিকল্পনার কড়া সমালোচনা করেছে। মার্কিন প্রেসিডেন্টের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জেক সালাইভান সিএনএন নেটওয়ার্কে বলেন, ‘রাশিয়া ইউক্রেনের ওপর হামলা বন্ধ করে সেনা প্রত্যাহার করলে আগামীকালই যুদ্ধ বন্ধ হতে পারে। অর্থাৎ ১২ দফা পরিকল্পনার বদলে চীন শুধু একটি বিষয় উল্লেখ করলেই পারত।’
সালাইভানের মতে, সব দেশের সার্বভৌমত্ব মেনে নেয়ার কথা বলাই যথেষ্ট। তিনি মনে করিয়ে দেন যে, ইউক্রেন, ন্যাটো বা যুক্তরাষ্ট্র রাশিয়ার ওপর হামলা চালাচ্ছে না।
এদিকে চীন এখন পর্যন্ত তার মিত্র রাশিয়াকে ইউক্রেনে আক্রমণের জন্য নিন্দা জানায়নি, কিংবা প্রতিবেশী দেশে মস্কোর আক্রমণকে ‘আগ্রাসন’ অ্যাখ্যাও দেয়নি। এমনকি তারা রাশিয়ার ওপর পশ্চিমাদের নিষেধাজ্ঞারও কড়া সমালোচনা করে আসছে। চীনের এমন অবস্থানকে বিশ্বাসযোগ্য নয় উল্লেখ করে যুক্তরাষ্ট্র নেতৃত্বাধীন সামরিক জোট ন্যাটোর প্রধান জেনস স্টলটেনবার্গ বলেন, ‘চীনের খুব বেশি বিশ্বাসযোগ্যতা নেই। কারণ তারা রাশিয়ার অবৈধ আগ্রাসনকে নিন্দা পর্যন্ত জানায়নি।’
১৯৮/সি, তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮
©দৈনিক বাংলা