আপডেট : ৯ সেপ্টেম্বর, ২০২২ ২২:৫৯
গাজীপুরের বৈরাগীরচালা: রানির আগমনে বদলে যাওয়া এক গ্রাম

গাজীপুরের বৈরাগীরচালা: রানির আগমনে বদলে যাওয়া এক গ্রাম

১৯৮৩ সালে বাংলাদেশ সফরে গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার বৈরাগীরচালা গ্রাম পরিদর্শন করেন রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ। ছবি: সংগৃহীত

তিন যুগেরও বেশি সময় আগের কথা। দিনটি ছিল ১৯৮৩ সালের ১৬ নভেম্বর। গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার বৈরাগীরচালা গ্রাম পরিদর্শনে এসেছিলেন ব্রিটেনের রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ। তার আগমন উপলক্ষে গ্রামে লাগে বিদ্যুতের ছোঁয়া। শ্রীপুর-বৈরাগীরচালা সড়কের পাশাপাশি শ্রীপুর রেলস্টেশন প্ল্যাটফর্মটিও পাকা করা হয়। আগে থেকেই স্বনির্ভর গ্রাম হিসেবে পরিচিত বৈরাগীরচালাকে রীতিমতো নতুন করে সাজানো হয়। রানির আগমনে গ্রামটি বিশ্বব্যাপীও আলোচনায় আসে। সেই থেকে এই গ্রামের বাসিন্দারাও রানি এলিজাবেথকে শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণে রেখেছেন।

রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ বাংলাদেশ সফর করেছে ওই একবারই। স্বনির্ভর হওয়ায় সেই সফরে রানিকে বৈরাগীরচালা গ্রাম পরিদর্শন করানো হয়। গ্রামের প্রবীণরা বলছেন, তারা ভাবতেও পারেননি তাদের গ্রামে এসে পা রাখবেন রানি। শেষ পর্যন্ত তিনি গ্রামে আসায় তারা অভিভূত হয়ে পড়েছিলেন। আর রানির আগমন উপলক্ষে ঝাঁ চকচকে হয়ে ওঠায় তারা রানির প্রতি কৃতজ্ঞও ছিলেন।

বৈরাগীরচালা গ্রামের বাসিন্দা সাখাওয়াত হোসেন খান দৈনিক বাংলাকে বলেন, ‘১৯৮৩ সালে আমাদের গ্রামটি ছিল স্বনির্ভর। এলাকার মানুষের গোয়ালভর্তি গরু-ছাগল, খামারভর্তি মোরগ-মুরগি, পুকুরভর্তি মাছ, ফসলি জমি, শাকসবজি সবকিছু ছিল। কোনো কিছুর অভাব ছিল না এ গ্রামের মানুষের। বলতে গেলে বাইরে থেকে কিছুই কিনতে হতো না। একটি গ্রাম যে এভাবে স্বনির্ভর হতে পারে, এ বিষয়টি দেখাতেই রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথকে এই গ্রামে নিয়ে আসা হয়। ওই সময় আমার বাবা মিজানুর রহমান খানের বাড়ির চারপাশও ঘুরে স্বনির্ভর গ্রামের প্রকৃত চিত্রটি প্রত্যক্ষ করেন রানি।’

গ্রামের গৃহিণী সালেহা আক্তারের বয়স এখন ৭০ বছর। ব্রিটেনের রানি যখন এই গ্রামে আসেন, তখন তিনি তরুণী। সালেহা বলেন, ‘গ্রামের কাঁঠালবাগানে বসে স্থানীয় নারীদের সঙ্গে গল্প করেন রানি। এ গ্রামের পক্ষ থেকে প্রতীকী হিসেবে রানির হাতে একটি রুপার চাবি তুলে দেয়া হয়েছিল। এর অর্থ হচ্ছে বৈরাগীরচালা গ্রামের দরজা রানির জন্য সব সময় খোলা। তিনি যেকোনো সময় এই গ্রামে আসতে পারবেন।’

রানি এলিজাবেথের মৃত্যুতে বিশ্বের নানা প্রান্তের মানুষের পাশাপাশি শোকাহত বৈরাগীরচালা গ্রামের মানুষজনও। গ্রামের প্রবীণ কয়েকজন বাসিন্দা জানালেন, তাদের কেউ কেউ বৃহস্পতিবার রাতে, কেউ কেউ শুক্রবার সকালে রানির মৃত্যুর সংবাদ শুনেছেন। সে খবর শুনে তাদের রানি এলিজাবেথের এই গ্রাম পরিদর্শনের কথাই বারবার মনে হয়েছে।

গ্রামের বাসিন্দা চাঁন মিয়া বলেন, ‘রানিকে আমরা দেখেছি। রানির সঙ্গে বসে গল্প করেছি। তার কথা আমরা বুঝিনি, তবে তার সঙ্গের লোকজন আমাদের বুঝিয়ে দিয়েছেন কী বলেছেন। আমাদের সৌভাগ্য, আমরা ব্রিটেনের রানিকে খুব কাছ থেকে দেখতে পেয়েছি। ওই সময় রানিকে হাতে ভাজা মুড়ি বানানো, গ্রামীণশিল্পের নানা ধরনের উপকরণ তৈরির নমুনা দেখানো হয়। রানি খুব খুশি হয়েছিলেন সবকিছু দেখে। আজ তার মৃত্যুর খবর পেয়ে খারাপ লাগছে।’

স্থানীয় শিক্ষক মাসুদ ইবনে মোবারক বলেন, ‘রানির আগমন উপলক্ষে বৈরাগীরচালা গ্রামে প্রথমবারের মতো বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়া হয়। রাস্তাও পাকা করা হয়। এর ফলে গ্রামে বেশ কয়েকটি কলকারখানা গড়ে ওঠে। কিন্তু কিছু আক্ষেপও আছে। রানি এলিজাবেথ বৈরাগীরচালা গ্রামে এসে যে পুকুরে মাছ অবমুক্ত করেছিলেন, সে পুকুরটি এখন পরিচর্যা ও রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে পানিশূন্য হয়ে পড়েছে। পুকুরের পাড় ভেঙে যাচ্ছে। এই বিষয়গুলোয় মনোযোগ দেয়া উচিত।’