আপডেট : ৬ মার্চ, ২০২৩ ১৮:৩০
রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আগুন নাশকতা কি না তদন্তে কমিটি
প্রতিনিধি, কক্সবাজার

রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আগুন নাশকতা কি না তদন্তে কমিটি

নেভানোর আগে এই আগুন পুড়িয়ে দেয় রোহিঙ্গা ক্যাম্পের দুই হাজার ঘর। ছবি: দৈনিক বাংলা

কক্সবাজারের উখিয়ার বালুখালীতে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অগ্নিকাণ্ড নাশকতা কি না, তা তদন্তে সাত সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. আবু সুফিয়ানের নেতৃত্বে গঠিত কমিটিকে তিন কর্মদিবসের মধ্যে তদন্ত করে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।

উখিয়ার বালুখালী ১১ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পে রোববার বিকেলে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড ঘটে। প্রাথমিকভাবে বলা হচ্ছে, ১১ নম্বর ক্যাম্পের একটি বাড়ির রান্নাঘর থেকে অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত হয়ে দ্রুত পাশের ৯ এবং ১০ নম্বর ক্যাম্পে ছড়িয়ে পড়ে। তিন ঘণ্টা পর সন্ধ্যা ৬টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা হয়।

নেভানোর আগেই এই আগুন পুড়িয়ে দেয় ক্যাম্পের দুই হাজার ঘর। এতে আশ্রয়হীন হয়ে পড়ে ১২ হাজার রোহিঙ্গা। বর্তমানে তাদের অনেকেই খোলা আকাশের নিচে বসবাস করছেন। সোমবার সকাল থেকে রোহিঙ্গাদের পুনর্বাসন কার্যক্রম শুরু করেছে আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম)।

রোহিঙ্গাদের অনেকের ধারণা, এটি পরিকল্পিত অগ্নিকাণ্ড হতে পারে। বারবার আগুনের ঘটনায় এই অঞ্চলে নিরাপত্তার সংকট দেখা দিতে পারে বলে শঙ্কিত অনেকে।

শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাশন কমিশনার মোহাম্মদ মিজানুর রহমান জানান, ক্যাম্পের অগ্নিকাণ্ডে দুই হাজার শেল্টার (ঘর) পুরোপুরি ভস্মীভূত হয়ে গেছে। এতে প্রায় ১২ হাজার রোহিঙ্গা ঘর হারিয়েছেন। সকাল থেকে তাদের পুনর্বাসনের কাজ শুরু হয়েছে। আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা আইওএম আশ্রয়হীন রোহিঙ্গাদের অস্থায়ী ঘর তৈরি করবে। জাতিসংঘের খাদ্য সংস্থা ডব্লিউএফপি রোহিঙ্গাদের জরুরি খাদ্য সহায়তা দিচ্ছে।

তিনি জানান, অগ্নিকাণ্ডে প্রকৃত ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ করা হচ্ছে। পরে ক্ষতিগ্রস্ত রোহিঙ্গাদের স্থায়ী শেল্টার করে দেয়া হবে। তবে অগ্নিকাণ্ডে নিখোঁজ কিংবা হতাহতের কোনো ঘটনা নেই।

শরণার্থী কমিশনার জানান, ক্যাম্পের অগ্নিকাণ্ড তদন্তে কক্সবাজারের জেলা প্রশাসন সাত সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছে। অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. আবু সুফিয়ানের নেতৃত্বে এই কমিটিতে শরণার্থী কমিশন, এপিবিএন পুলিশ, জেলা পুলিশ, ফায়ার সার্ভিসের প্রতিনিধি রয়েছেন। অগ্নিকাণ্ডের প্রকৃত কারণ অনুসন্ধান ছাড়াও এটি কোনো নাশকতা কি না তা খতিয়ে দেখবে কমিটি। তিন কর্মদিবসের মধ্যে তদন্ত করে তারা রিপোর্ট জমা দেবে। কেউ যদি পরিকল্পিতভাবে এটি করে থাকে তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এদিকে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ঘন ঘন অগ্নিকাণ্ডে উদ্বিগ্ন বিশেষজ্ঞরা। তারা জানিয়েছেন, ক্যাম্পে অগ্নিসংযোগ, গোলাগুলি ও মারামারি কক্সবাজারের জন্য অশনিসংকেত। রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বিভিন্ন ঘটনা এই অঞ্চলের জন্য নিরাপত্তার সংকট ডেকে আনতে পারে।

রোহিঙ্গাদের অনেকের বক্তব্য, ক্যাম্পে হঠাৎ করে আগুন লাগার কারণে অনেকে এক কাপড়েই ঘর ফেলে চলে আসে। ঘর হারিয়ে এখন অনেকেই নিঃস্ব হয়ে গেছে। অনেকেই জানিয়েছে, একটি গ্রুপ রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আগুন লাগিয়ে দিয়েছে। ক্যাম্পে পরিকল্পিতভাবে আগুন লাগার একটা ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরালও হয়েছে। যদিও তা যাচাই করা যায়নি।

আইওএমের কমিউনিকেশন অফিসার তারেক মাহমুদ জানিয়েছেন, সোমবার সকাল থেকে আশ্রয়হীন রোহিঙ্গাদের অস্থায়ী শেল্টার কিট ও অন্যান্য সরঞ্জাম দিয়ে পুনর্বাসন কার্যক্রম শুরু করেছে। এছাড়া পাঁচটি মেডিকেল টিম রোহিঙ্গাদের চিকিৎসা সেবা দিচ্ছে। অগ্নিকাণ্ডে প্রকৃত ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ করার কাজও চলছে।