আপডেট : ৮ মার্চ, ২০২৩ ১৫:৫০
বেজমেন্টের ধ্বংসস্তূপ সরালে দুজনকে পাওয়া যেতে পারে, ধারণা স্বজনদের

বেজমেন্টের ধ্বংসস্তূপ সরালে দুজনকে পাওয়া যেতে পারে, ধারণা স্বজনদের

বাঁ থেকে মেহেদী হাসান স্বপন ও মমিনুদ্দিন সুমন

রাজধানীর গুলিস্তান সংলগ্ন সিদ্দিক বাজারে সাততলা ভবনে ভয়াবহ বিস্ফোরণে এখনো দুজন নিখোঁজ রয়েছেন। তাদের খোঁজে সকাল থেকেই ঘটনাস্থলে আছেন স্বজনরা। তাদের ধারণা, ভবনের নিচের (বেজমেন্ট) ধ্বংসস্তূপ সরালে ওই দুজনকে পাওয়া যেতে পারে, কারণ তারা বেজমেন্টের দোকানেই কর্মরত ছিলেন।

এ দুজন হলেন বেজমেন্টের ‘বাংলাদেশ স্যানিটারি’ নামে একটি দোকানের ব্যবস্থাপক মেহেদী হাসান স্বপন ও আনিকা এজেন্সি নামে আরেকটি দোকানের মালিক মমিনুদ্দিন সুমন।

গত মঙ্গলবার বিকেলের ওই বিস্ফোরণের ঘটনায় এখন পর্যন্ত ১৮ জনের মৃত্যুর তথ্য মিলেছে। এদের মধ্যে দুজন নারী এবং ১৬ জন পুরুষ। ভবনটি থেকে ৪০ জনকে জীবিত অবস্থায় উদ্ধার করে ফায়ার সার্ভিস। ভবন ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় রাতে উদ্ধারকাজ স্থগিত করা হয়। বুধবার সকাল থেকে আবার তৎপরতা শুরু করে ফায়ার সার্ভিসসহ নিরাপত্তা বাহিনী। তবে ভবনের বেজমেন্টে এখনো ঢুকতে পারেননি উদ্ধারকর্মীরা। সেখানে আরও মানুষ আটকে থাকতে পারেন বলে ধারণা ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তাদেরও।

বুধবার দুপুর ২টার দিকে সিদ্দিক বাজারের ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে সড়কের দুপাশে উৎসুক জনতার ভিড়। তাদের সরাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের। ভবনের সামনের সড়কে যান চলাচল বন্ধ। সড়ক বিভাজক ও অপর পাশে জটলা বেঁধেছেন লোকজন। সরিয়ে দেয়া হলেও স্বজনেরা আবার ঘটনাস্থলের আশপাশে এসে ভিড় করছেন।

সকাল থেকে ক্ষতিগ্রস্ত ভবনের সামনে অপেক্ষায় তানভীর হাসান সোহাগ। তিনি খুঁজছেন তার ভাই মেহেদী হাসান স্বপনকে। ভাইয়ের কথা বলতে গিয়ে কেঁদে ফেলেন সোহাগ। দৈনিক বাংলাকে তিনি জানান, মঙ্গলবার বিস্ফোরণের ঘটনার পর থেকেই তার ভাই মেহেদীর কোনো খোঁজ তারা পাচ্ছেন না। তার মুঠোফোন নম্বর বন্ধ আছে।’

তানভীর হাসান সোহাগ বলেন, ‘সকাল থেকে উদ্ধার অভিযান শুরু করার কথা বারবার বলেছি। আমার ছোট ভাই ভবনের নিচেই আছেন। একটু খোঁজ করলেই তাকে পাওয়া যাবে। ভাইয়ের খোঁজে মেডিকেলে গেছি, পাইনি। ভাই আমার এখানেই আছেন।’

সকাল থেকে ক্ষতিগ্রস্ত ভবনের সামনে ভাই মেহেদী হাসান স্বপনের অপেক্ষায় তানভীর হাসান সোহাগ। ছবি: দৈনিক বাংলা

মেহেদীর দোকানটি কোথায়, তা উপস্থিত লোকজনকে দেখাচ্ছিলেন সোহাগ। তিনি বলছিলেন, ‘এই সিঁড়িটার নিচেই আমার ভাইয়ের দোকান। ধ্বংসস্তূপ সরালে সিঁড়িটার নিচে ভাইকে পাওয়া যেতে পারে।’

নিখোঁজ মেহেদীর মামা শ্বশুর আব্দুল মান্নান বলেন, ‘মেহেদীর বাড়ি নোয়াখালী। তার এক ছেলে ও মেয়ে আছে। ছেলে ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ে। মেয়ের বয়স ছয় বছর। পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী মেহেদী। তিনি এখানে ম্যানেজার ছিলেন। তার সঙ্গে দুজন ছিলেন। তাদের গতকালই গুরুতর অবস্থায় পাওয়া যায়। কিন্তু মেহেদীকে এখনো পাওয়া যায়নি। গতকাল রাত থেকে তিনি নিখোঁজ।’

মেহেদীর স্বজনদের মতো মমিনুদ্দিন সুমনের স্বজন-সহকর্মীরাও বিস্ফোরণস্থলের সামনে অপেক্ষায় রয়েছেন। মমিনুদ্দিনের আনিকা এজেন্সির কর্মচারী সম্রাটের মরদেহ মঙ্গলবার রাতেই পাওয়া যায়। কিন্তু তার খোঁজ এখনো পাওয়া যায়নি। স্বজনদের ধারণা, মমিনুদ্দিনও ভবনের বেজমেন্টের ভেতর আটকে আছেন।

মমিনুদ্দিনের বন্ধু ব্যবসায়ী মো. আরিফ দৈনিক বাংলাকে বলেন, ‘হাসপাতালে গতকাল থেকে মমিনুদ্দিনকে খুঁজেছি। কোনো খোঁজ পাইনি। নিহত ও আহত—দুই তালিকাই দেখেছি। কোথাও তার নাম নেই। মমিনুদ্দিন হয়তো বেজমেন্টের ভেতর আটকে আছেন।’

এদিকে বিস্ফোরণটি কীভাবে ঘটল, তা নিয়ে এখনো ধোঁয়াশায় সংশ্লিষ্ট সব পক্ষ। র‌্যাবের বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিটের প্রধান মেজর মশিউর রহমান দুপুরে ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা প্রাথমিকভাবে যে আলামত পেয়েছি, তাতে বোঝা যাচ্ছে ভবনের বিস্ফোরণ বেজমেন্ট থেকে হয়েছে। এটা স্বাভাবিক কোনো বিস্ফোরণ নয়। গ্যাস জমে কিংবা অন্য কোনোভাবে বিস্ফোরণ ঘটেছে। এ ঘটনা এসি থেকে ঘটেনি এটা নিশ্চিত হয়েছি।’

অন্যদিকে ঘটনাটি তদন্তে চার সদস্যের কমিটি গঠন করেছে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তর। অধিদপ্তরের পরিচালক (অপারেশন ও মেইনটেন্যান্স) লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম চৌধুরীকে প্রধান করে গঠিত এ কমিটিকে পাঁচ কর্মদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।