চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত আট মাসে সারা দেশে ৩৬৪ জন শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছেন। এই হার সবচেয়ে বেশি ১৩ থেকে ২০ বছর বয়সীদের মাঝে। প্রেমঘটিত কারণেই সবচেয়ে বেশি শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছে।
তরুণ প্রজন্মের মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক সংস্থা আঁচল ফাউন্ডেশন গতকাল শুক্রবার এক সংবাদ সম্মেলনে এই সমীক্ষা প্রকাশ করেছে। সংগঠনটি দেশের ১৫০টি জাতীয় ও স্থানীয় পত্রিকা এবং অনলাইন গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য থেকে এই সমীক্ষা করেছে।
আট মাসে আত্মহত্যা করা ৩৬৪ শিক্ষার্থীর মাঝে ১৯৪ জন স্কুলপড়ুয়া, ৭৬ জন কলেজ ও ৫০ জন বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া। এ ছাড়াও মাদ্রাসার শিক্ষার্থী রয়েছেন ৪৪ জন।
সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি বিভাগের অধ্যাপক কামাল উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী, নারায়ণগঞ্জ জেলার অতিরিক্ত উপ-কমিশনার আজিজুল হক মামুন, আঁচল ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি তানসেন রোজ, সাধারণ সম্পাদক সামিরা আক্তার সিয়াম। সমীক্ষার তথ্য তুলে ধরেন ফাউন্ডেশনের গবেষণা বিশ্লেষণ দলের সহকারী পরিচালক ফারজানা আক্তার লাবনী।
অভিমান, প্রেমঘটিত কারণ, সেশনজট, পরীক্ষায় অকৃতকার্য হওয়া, পড়াশোনার চাপ, পারিবারিক কলহ, ধর্ষণ ও যৌন হয়রানিসহ নানা কারণে আত্মহত্যা করেছে শিক্ষার্থীরা। এ ছাড়াও বিয়েতে প্রত্যাখ্যাত হওয়া, স্বামী পছন্দ না হওয়া, বাসা থেকে মোটরবাইক কিনে না দেয়া, মানসিক ভারসাম্যহীনতা, বিষণ্নতা ও আর্থিক সমস্যার কারণেই আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছেন তারা।
তবে এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ২৫ দশমিক ২৭ শতাংশ শিক্ষার্থী প্রেমঘটিত কারণে মারা গেছেন বলে তথ্যে উঠে এসেছে। অভিমান করে আত্মহত্যা করেছেন ২৪ দশমিক ৭৩ শতাংশ শিক্ষার্থী। পারিবারিক কলহে মারা গেছেন ৬ দশমিক ৫৯ শতাংশ শিক্ষার্থী।
সীমক্ষার তথ্যানুসারে, গত আট মাসে ২২১ জন নারী শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছে। অন্যদিকে পুরুষ শিক্ষার্থী রয়েছেন ১৪৩ জন। আট বিভাগের মধ্যে সবচেয়ে বেশি শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছে ঢাকা বিভাগে। সবচেয়ে কম সিলেটে। এরপর রয়েছে চট্টগ্রাম, খুলনা, রংপুর, বরিশাল, ময়মনসিংহ ও রাজশাহী।
সমীক্ষা থেকে জানা যায়, ১৩ থেকে ২০ বছর বয়সীদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা সবচেয়ে বেশি। যা মোট সংখ্যার ৭৮ দশমিক ৬ শতাংশ। এর ১৬ থেকে ২০ বছর বয়সীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ১৬০ জন আত্মহত্যা করেছে। ৬ থেকে ১২ বছর বয়সী শিক্ষার্থীদের মধ্যে ২৯ জন আত্মহত্যা করেন। এ ছাড়াও সর্বনিম্ন সাত বছরের একটি শিশুও আত্মহত্যা করেছে বলে তথ্যে উঠে এসেছে।
আত্মহত্যার ভিন্ন প্রবণতা
কিছু শিক্ষার্থীর মধ্যে আত্মহত্যার আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অবসাদের কথা জানান দেয়ার প্রবণতা দেখা গেছে। ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে আত্মহত্যা করেন আটজন, ভিডিও কলে এসে আত্মহত্যা করেন ২ জন। আর সেলফি ক্যামেরা নিজের দিকে তাক করে আত্মহত্যা করেন শূন্য দশমিক ২৭ শতাংশ প্রেমিক যুগল। এ ছাড়া মৃত্যুর পূর্বে চিরকুট বা সুইসাইড নোট লিখে আটজন আত্মহত্যা করেছেন।
১৯৮/সি, তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮
©দৈনিক বাংলা