আপডেট : ৯ মার্চ, ২০২৩ ০০:০০
বিস্ফোরণের কারণ এখনো অজানা
বিশেষ প্রতিনিধি, দৈনিক বাংলা

বিস্ফোরণের কারণ এখনো অজানা

রাজধানীর অন্যতম ব্যস্ততম এলাকা গুলিস্তান সংলগ্ন সিদ্দিক বাজারের একটি সাত তলা ভবনে ভয়াবহ বিস্ফোরণের দুদিন পেরিয়ে গেলেও এখনো কারণ জানাতে পারেনি কোনো সংস্থাই। বিস্ফোরণে ২০ জন নিহত ও শতাধিক মানুষ আহত হয়েছেন। ঘটনার পর থেকেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন ইউনিট, সেনাবাহিনীর বিশেষজ্ঞ দল, রাজউক ও বুয়েটের বিশেষজ্ঞ দল দফায় দফায় ঘটনাস্থল পরিদর্শন করলেও বিস্ফোরণ প্রকৃত কারণ এখনো জানাতে পারেননি।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিটের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার রহমত উল্লাহ চৌধুরী জানিয়েছেন, প্রাথমিক তদন্তে তারা ধারণা করছেন, ভবনের বেজমেন্টের বদ্ধ কোনো কক্ষে গ্যাস জমে বিস্ফোরণ হতে পারে। তবে সেটি কোথা থেকে নির্গত হয়ে জমা হয়েছে তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। বিস্তারিত পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়া প্রকৃত কারণ বলা সম্ভব নয়।

একই কথা বলেছেন র‌্যাবের বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিটের কর্মকর্তা মেজর মশিউর রহমানও। তিনি জানান, প্রাথমিকভাবে তারা গ্যাস থেকে বিস্ফোরণ হয়েছে বলে মনে করছেন। তবে এই গ্যাস স্যুয়েরাজ লাইন নাকি সেফটি ট্যাংক বা অন্য কোনো উৎস থেকে এসেছিল কিনা তা নির্ণয় করা যায়নি।

তিতাসের পরিচালক (অপারেসন্স) প্রকৌশলী সেলিম মিয়া বলেছেন, তারা ডিটেক্টর দিয়ে পরীক্ষা করেছেন কিন্তু কোনো গ্যাসের উপস্থিতি পাননি। ভবনে একটি রাইজার পাওয়া গেছে, সেটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি। তিতাসের এই কর্মকর্তার দাবি, যদি গ্যাস থেকে বিস্ফোরণ হতো, তাহলে এখানে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটত। তবে এখানে আগুনের কোনো ঘটনা ঘটেনি।

সংশ্লিষ্টরা জানান, গ্যাসের কারণে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটলে সাধারণত প্রত্যক্ষদর্শী পাওয়া যায় না। ফলে দুনিয়া জুড়েই এরকম বিস্ফোরণের শতভাগ নিশ্চিত কারণ জানা যায় না। বিশেষজ্ঞরা পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর সম্ভাব্য কারণ নির্ণয় করে থাকেন। অনেক ক্ষেত্রে সংশ্লিস্ট কর্তৃপক্ষও এসব ঘটনার তদন্তে সহযোগিতা করেন না।

ডিএমপির একজন কর্মকর্তা জানান, বছর খানেক আগে মগবাজারে একটি ভবনে বিস্ফোরণ হয়ে একাধিক মানুষের মৃত্যু হয়। ওই ঘটনার কারণ অনুসন্ধান ও তদন্তের জন্য একাধিকবার তিতাসের সংশ্লিস্ট কর্মকর্তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করতে চিঠি দেয়া হয়েছে। কিন্তু তদন্ত কর্মকর্তার চিঠির প্রেক্ষিতে তিতাসের কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রাজধানী ঢাকা শহরের পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থা ও অন্যান্য গ্যাসের লাইনগুলো অনেক পুরানো। বহু বছর ধরে এগুলো সংস্কারও করা হয় না। যার ফলে পয়োনিষ্কাশন বা লিকেজ লাইন থেকে গ্যাস নির্গত হয়ে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। কোনো ঘটনা ঘটলেই সংশ্লিস্ট কর্তৃপক্ষের দায় এড়ানোর প্রবণতা দেখা যায়। মানুষের মধ্যেও সচেতনতার অভাব রয়েছে। ভেন্টিলেশনের ব্যবস্থা ছাড়াই ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে। এক ভবন থেকে আরেক ভবনের যথাযথ দুরত্ব রাখার যে নিয়ম তা মানা হচ্ছে না। দুর্ঘটনাবশত গ্যাস লিকেজ হয়ে বা অন্য কোনো উৎস থেকে গ্যাস বের হয়ে তা বাতাসে মিশে যেতে পারছে না। কারণ বদ্ধ জায়গায় এরকম গ্যাস জমাটবদ্ধ হলে তা অক্সিজেনের সঙ্গে মিশে ভয়ঙ্কর শক্তি ধারণ করে।

ডিএমপি কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক বলেছেন, আমরা বেশ কিছু পরিকল্পনা গ্রহণ করেছি। ঢাকা শহরের স্যুয়ারেজ লাইন, গ্যাস লাইন এবং অনেক পুরাতন বিল্ডিং রয়েছে; এগুলোর অবস্থা কী তার পরীক্ষা নিরীক্ষা করা প্রয়োজন। পুলিশের পক্ষ থেকে এসব বিষয় অধিকতর গুরুত্ব দিয়ে কার্যকর ব্যবস্থা নেয়ার জন্য সিটি করপোরেশনকে অনুরোধ জানানো হবে।

পুলিশের এই ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, পুলিশ, সেনাবাহিনী, ফায়ার সার্ভিসের বিশেষজ্ঞদের নিয়ে দ্রুত একটি ওয়ার্কশপ করার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। তারা স্যুয়ারেজ লাইন কিংবা গ্যাসের লাইন কোথায় বিপজ্জনক অবস্থায় আছে সেসব স্থান পরিদর্শন করবেন, যাতে করে এ ধরনের দুর্ঘটনা এড়ানো সম্ভব হয়।

এদিকে মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ বলেছেন, একের পর এক ঘটনাগুলো সাধারণ বিস্ফোরণের ঘটনা নাকি অন্তর্ঘাতমূলক কর্মকাণ্ড সেটা তদন্তের প্রয়োজন আছে। আমরা দেখতে পাচ্ছি, একটার পর একটা দূর্ঘটনা ঘটেই চলেছে। এটা আমাদের জন্য অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক। আমরা অনেকগুলো প্রাণ হারিয়েছি। এটি একটি মর্মান্তিক ঘটনা। এ ঘটনার যাতে কোনো পুনরাবৃত্তি না ঘটে সে বিষয়ে সচেতন থাকতে হবে। আমাদের বিভিন্ন বাহিনীর যারা বিশেষজ্ঞ আছে, তারা তদন্ত করে সঠিক ঘটনাটি বের করবে। আমি মনে করি, তারা যথেষ্ট যোগ্য। এগুলো তারা বোঝেন, জানেন, এবং সে অনুযায়ী চেষ্টা করছেন।

এদিকে বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ড অ্যান্ড টেস্টিং ইন্সটিটিউট (বিএসটিআই) এর উপ-পরিচালক এবং মিডিয়া প্রধান রিয়াজুল হক বলেছেন, বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিট ভবনটির নিচ তলায় জমে থাকা ৪ বোতল পানি আমাদের বিএসটিআই ল্যাবে পরীক্ষা করার জন্য সরবরাহ করেছে৷ আমরা এই পানির সাথে কোনো বিস্ফোরক উপাদান আছে কিনা তা পরীক্ষা করে দেখব।