দীর্ঘ এক মাস ধরে বরগুনা-বাকেরগঞ্জ সড়কে দূরপাল্লার যাত্রীবাহী বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। এ সড়কে ঢাকা-বরগুনা রুটের পারমিট না থাকায় বরিশালের রূপাতলী বাস-মালিক সমিতি বাধা দিয়ে বাস চলাচল বন্ধ রেখেছে। এর ফলে এ রুটের বাসগুলো বিকল্প পথে বরগুনায় যাওয়া-আসা করছে।
সড়ক ও জনপথ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, ২০১৭ সালে বরগুনা থেকে বরিশালের বাকেরগঞ্জ পর্যন্ত ৫৭ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এ সড়কটির সংস্কার কাজ শুরু হয়। ২২ কোটি ৯৩ লাখ ৭০ হাজার ২৯৭ টাকা ব্যয়ে ২০১৯ সালে সংস্কার কাজ শেষ হয়। এরপর থেকে এ সড়ক দিয়ে ঢাকা-বরগুনা রুটে নিয়মিত দূরপাল্লার বাস চলাচল করত।
বরগুনা-বাকেরগঞ্জ-ঢাকা রুটের দূরপাল্লার জনপ্রিয় পরিবহন সাকুরার বরগুনা কাউন্টারের ব্যবস্থাপক নাসির মোল্লা জানান, ‘এই সড়কটিতে তিন বছর ধরে আমাদের বাস চলছে। পদ্মা সেতু চালুর পর আগস্ট মাসের শুরু থেকে এ সড়কে বাস চলাচলে বাধা দেয়া শুরু করেন রূপাতলী বাস-মালিক সমিতির শ্রমিকরা। এরপর সমিতির লোকজন বাকেরগঞ্জে পাহারা বসিয়ে বাস চলাচল বন্ধ করে দেন। তাই এখন বাধ্য হয়েই বাসগুলো বিকল্প পথে চলছে। পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জের পায়রাগঞ্জ ও বরগুনার আমতলী ফেরি পার হয়ে বরগুনা থেকে ঢাকায় যাতায়াত করতে হচ্ছে আমাদের।’
শ্রাবনী পরিবহনের বরগুনার কাউন্টার ম্যানেজার কবির হোসেন বলেন, এই রুটে ঢাকা যেতে আগে সময় লাগত ৬ থেকে ৭ ঘণ্টা। আর এখন বিকল্প রুটে সময় লাগছে ১০ ঘণ্টা। ফলে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে যাত্রীদের। পাশাপাশি পদ্মা সেতুর সুফল থেকেও বঞ্চিত হচ্ছেন এ রুটের যাত্রীরা।
সোহেল নামের এক যাত্রী বলেন, পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর এ সড়কে বরগুনা থেকে ঢাকা পৌঁছাতে সময় লাগত সাড়ে পাঁচ ঘণ্টার মতো। কয়েক দিন ধরে এ সড়ক দিয়ে বাস চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এতে সময় লাগছে ১০ ঘণ্টারও বেশি। ফলে পদ্মা সেতুর সুফল থেকে আমরা এখন বঞ্চিত। তাই এ বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের দ্রুত ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানাই।
তানজিনা নিপা নামের আরেক যাত্রী বলেন, ‘ছোট বাচ্চা নিয়ে বাসে ঢাকা থেকে বরগুনা এসেছি। সড়ক পথে ঢাকার সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ থাকলেও আমতলী ফেরি পার হয়ে বরগুনা আসতে হয়েছে আমাদের। স্বপ্নের পদ্মা সেতুর পরও আমাদের দুর্ভোগ কমেনি।’
রূপাতলী বাস-মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক কাওসার হোসেন শিপন বলেন, সরকারের নীতিমালা অনুযায়ী, গাড়ি চলাচলের অনুমতি যেখানে আছে সেখান দিয়েই চলাচল করবে। তাদের রুট-পারমিট আছে এক সড়কে, তারা যাবে অন্য সড়কে- এটা তো ঠিক না। আগে এই সড়কে গাড়ি চলাচলে বাধা ছিল না, এখন কেন বাধা দিচ্ছেন? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, হাতেগোনা কিছু অসাধু ব্যবসায়ী আছে, যারা এই পথে গাড়ি চলাচল করাচ্ছেন। নিয়ম অনুযায়ী সবকিছু হবে।
জেলা প্রশাসক হাবিবুর রহমান বলেন, ‘বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে বরিশাল মালিক সমিতি যে হয়রানি করে বাসগুলোকে ঘুরিয়ে দেয়ার চেষ্টা করে- এটা জানি। ঢাকা-বরগুনার রুটের গাড়িগুলোর এই পথে অনুমতি না থাকায় তারা এই হয়রানি করে আসছে। এরই মধ্যে বিষয়টি আমি বিভাগীয় কমিশনারকে জানিয়েছে।’
১৯৮/সি, তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮
©দৈনিক বাংলা