আপডেট : ৯ মার্চ, ২০২৩ ১৫:৪৯
আদানির সঙ্গে চুক্তি দেশবিরোধী: ফখরুল

আদানির সঙ্গে চুক্তি দেশবিরোধী: ফখরুল

গোলটেবিল বৈঠকে বক্তব্য রাখছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ছবি: দৈনিক বাংলা

ভারতের আদানি পাওয়ারের সঙ্গে বিদ্যুৎ নিয়ে বাংলাদেশ সরকার যে চুক্তি করেছে, তা ‘দেশবিরোধী’ বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেছেন, আদানি গ্রুপের সঙ্গে যেই চুক্তি করা হয়েছে, সেটা দেশবিরোধী। তাই জনগণবিরোধী এই চুক্তি অবিলম্বে বাতিল করতে হবে।

বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর গুলশানে একটি হোটেলে এক গোলটেবিল বৈঠকে এ কথা বলেন মির্জা ফখরুল। ‘মহা বিপর্যয়ে বিদ্যুৎ খাত: গভীর খাদে অর্থনীতি’ শীর্ষক এ গোলটেবিল বৈঠকটি অ্যাসোসিয়েশন অব ইঞ্জিনিয়ার্স বাংলাদেশ (এ্যাব) আয়োজন করে।

বৈঠকে ফখরুল বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে তারা ঠিক করে নিয়েছে, বিদ্যুৎ খাত থেকে সবচেয়ে বেশি চুরি করবে। তারা যা করে, সেটা পরিকল্পিতভাবেই করে। তারা ক্ষমতায় এসে বলতে শুরু করল, বিদ্যুৎ খাতে বিএনপি সরকার কিছুই করেনি, শুধু খাম্বা তৈরি করেছে। কিন্তু বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। এসব বলে জায়েজ করল তারা বিদ্যুৎ উৎপাদন করবে। কুইক রেন্টাল পাওয়ার প্লান্ট জায়েজ করতে তারা এসব প্রোপাগাণ্ডা শুরু করল।

মির্জা ফখরুল আরও বলেন, আদানি গ্রুপের সঙ্গে করা চুক্তির বিষয়টি তারা গোপন রেখেছে। লুট আর লুট, এখানে আর কিছু নেই। এটাকে (লুট) ঠেকানোর জন্য, বাংলাদেশের মানুষকে বাঁচানোর জন্য সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। সব রাজনৈতিক দলকে এগিয়ে আসতে হবে। সিভিল সোসাইটিকে এগিয়ে আসতে হবে, ব্যক্তিকে এগিয়ে আসতে হবে। এ ছাড়া আমাদের বাঁচার কোনো পথ নেই।

বিএনপি ক্ষমতায় গেলে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের অনিয়ম ও দুর্নীতি তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান মির্জা ফখরুল।

গোলটেবিল আলোচনা থেকে কিছু সুপারিশ তুলে ধরা হয়। সুপারিশগুলো হলো- বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি (বিশেষ বিধান) আইন বাতিল করতে হবে, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের সব দুর্নীতি-অনিয়মের সঙ্গে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে, রেন্টাল বা কুইক রেন্টাল কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি নবায়ন বন্ধ অথবা বাতিল করতে হবে, অতিদ্রুত প্রয়োজনীয় বিদ্যুৎ সঞ্চালন ও বিতরণ লাইন স্থাপন করতে হবে, যাতে ক্যাপাসিটি চার্জ কমানো যায়, সংকট মোকাবিলায় পেট্রোবাংলা ও বাপেক্স ইত্যাদি সরকারি সংস্থার মাধ্যমে দেশীয় খনিজ কয়লা ও গ্যাস উত্তোলনের জন্য যথাযথ পদক্ষেপ নেয়া।

এ ছাড়া দেশীয় প্রকৌশলী ও সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোকে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারে দক্ষ করে তুলতে উপযুক্ত উদ্যোগ গ্রহণ, দেশের বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতকে টেকসই ও নিরাপদ করতে জীবাশ্ম জ্বালানিনির্ভরতা কমিয়ে ক্রমান্বয়ে মোট উৎপাদনের ৫০ শতাংশ নবায়নযোগ্য শক্তি নির্ভর জ্বালানিনীতি গ্রহণ করা, অবৈধ ও অস্বচ্ছ টেন্ডারবিহীন বিদ্যুৎ চুক্তি বাতিল করা, ক্ষেত্রবিশেষে চুক্তি সংশোধন করে দেশের স্বার্থ রক্ষা করা, দেশের শিল্পকারখানা, বাণিজ্যিক অথবা আবাসিক এবং অন্য ক্ষেত্রে বিদ্যুতের চাহিদা নিরূপণ করে আগামী ২৫ বছরের জন্য বিদ্যুৎকেন্দ্র, সঞ্চালন লাইন ও অন্য অবকাঠামো নির্মাণের ধারাবাহিক পরিকল্পনা গ্রহণ করা, বিদ্যুৎ সেক্টরের সব ক্রয়-বণ্টন চুক্তির পূর্ণ তথ্য জনগণের জন্য উন্মুক্ত করতে হবে। বিদ্যুৎ খাতের সব চুক্তি উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক নিয়ম অনুসরণ করে করতে হবে।

গোলটেবিল বৈঠকে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন অ্যাব মহাসচিব হাছিন আহমেদ। এ সময় অ্যাব সভাপতি রিয়াজুল ইসলাম রিজুর সভাপতিত্বে বক্তব্য দেন বিএনপিসহ স্থানীয় সরকারবিষয়ক সম্পাদক শাম্মী আক্তার, সহবিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক আশরাফ উদ্দিন বকুল, বাংলাদেশ পেশাজীবী সমন্বয় পরিষদের সদস্যসচিব ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি কাদের গণি চৌধুরী।