ভারতের পশ্চিমবঙ্গের শিলিগুড়ির নুমালীগড় থেকে পাইপলাইনের মাধ্যমে আগামী ১৮ মার্চ ডিজেল আসবে বাংলাদেশের দিনাজপুরে। ভারত থেকে আসা এই তেল আন্তর্জাতিক বাজারের চেয়ে কম দামে মিলবে। নিরবচ্ছিন্ন এই তেল সরবরাহ হবে উত্তরবঙ্গের ১৬ জেলায় ও সৈয়দপুর ১৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্রে। ফলে ওই জেলাগুলোর জমিতে সেচসংকট কেটে যাবে এবং উন্নতি হবে বিদ্যুৎ পরিস্থিতিরও।
দক্ষিণ এশিয়াতে পাইপলাইনের মাধ্যমে এক দেশ থেকে আরেক দেশে এই প্রথম তেল আসছে। শুক্রবার দিনাজপুরের পার্বতীপুরে পাইপলাইনের তেল রিসিভ পয়েন্টে এক সমাবেশে এ কথা বলেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ।
আরও পড়ুন: ভারত থেকে পাইপলাইনে ডিজেল আসবে ১৮ মার্চ
১৮ মার্চ ইন্ডিয়া-বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ পাইপলাইনের উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এটি উদ্বোধন করা হবে। এর আগে প্রায় এক দশক আগে ভারত থেকে বিদ্যুৎ আমদানি করেছে সরকার।
২০১৮ সালে পাইপলাইন নির্মাণের জন্য বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে সমঝোতা স্মারক সই হয়। ভারত অংশে পাঁচ কিলোমিটার ও বাংলাদেশ অংশে ১২৬ দশমিক পাঁচ কিলোমিটার। সব মিলিয়ে পাইপলাইনের দৈর্ঘ্য ১৩১ দশমিক পাঁচ কিলোমিটার।
এটি বাংলাদেশ অংশে বাস্তবায়ন করছে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি) ও ভারত অংশে দেশটির সরকারি প্রতিষ্ঠান নুমালীগড় রিফাইনারি লিমিটেড। পাইপলাইন নির্মাণের কাজ করেছে ভারতের দীপন গ্যাস।
তেলের দাম আন্তর্জাতিক বাজার থেকে কম হবে
রাশিয়া থেকে কম দামে তেল কিনছে ভারত। সেই দামের সুযোগ নিতে পারবে না বাংলাদেশ। বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক দামেই তেল কিনতে হবে ভারতের কাছ থেকে। এর পরও আন্তর্জাতিক বাজার থেকে কম দামে তেল পাবে বাংলাদেশ। বিপিসি সিঙ্গাপুরের ম্যাগাজিন প্লেটসে প্রকাশিত দামে তেল কিনে। যেদিন বিপিসির জাহাজে তেল ভর্তি করে, সেদিন প্লেটসে প্রকাশিত দাম, তার আগের দিনের দাম ও জাহাজ ছাড়ার পরের দিনের দাম; এই তিনদিনের দামের গড় হলো জ্বালানি তেলের দাম। এর বাইরে জাহাজ খরচ ইন্স্যুরেন্সসহ অন্য ব্যয়কে প্রিমিয়াম বলা হয়।
প্রিমিয়াম ও প্লেটসে প্রকাশিত তেলের দাম পরিশোধ করতে হয় বিপিসিকে। বর্তমানে আন্তর্জাতিক বাজার থেকে তেল কেনার প্রিমিয়াম খরচ প্রতি ব্যারেলে ১১ ডলার।
ভারত থেকে পাইপলাইনে আসা তেলের প্রিমিয়াম পড়বে পাঁচ দশমিক পাঁচ ডলার। এতে প্রতি ব্যারেলে পাঁচ দশমিক পাঁচ ডলার সাশ্রয়ী হবে। পূর্ণ সক্ষমতায় পাইপলাইনে তেল সরবরাহ হলে বছরে ৮০ কোটি টাকা সাশ্রয়ী হবে।
তেলের মানও আন্তর্জাতিক মানের হবে বলেও প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ দাবি করেন। বলেন, ভারত থেকে আসা তেলের মান আমরা ঠিক করে দেব। তেলে সালফারের মান ১০ পিপিএমের নিচে থাকবে, আন্তর্জাতিক সূচক অনুযায়ী এটি অত্যন্ত ভালো মানের তেল।
১৬ জেলায় সরবরাহ
ইন্ডিয়া-বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ পাইপলাইনের (আইবিএফপিএল) মাধ্যমে আসা ডিজেল দিনাজপুর, লালমনিরহাট, পঞ্চগড়, রংপুর ও নীলফামারীসহ উত্তরাঞ্চলের ১৬ জেলায় সরবরাহ করা হবে। আগে এই জেলাগুলোতে সিরাজগঞ্জের বাঘাবাড়ি থেকে ট্রাকে করে তেল আসত। প্রথম তিন বছরে এই পাইপলাইনের মাধ্যমে বছরে দুই লাখ টন তেল আসবে। চতুর্থ বছর থেকে পাঁচ লাখ টন ও বাকি ১০ বছরে ১০ লাখ টন করে তেল আসবে। ১৫ বছর ধরে ভারত থেকে তেল কিনবে বাংলাদেশ। এরপর চুক্তি নবায়ন না হলে পাইপ লাইনের মালিকানা ও কর্তৃত্ব বাংলাদেশের কাছে এককভাবে থাকবে।
দিনাজপুরের পার্বতীপুরে পাইপলাইনের রিসিপশন সেন্টার বা তেলগ্রহণ কেন্দ্র করা হয়েছে। এখানে আগেই তেল মজুতের একটি ডিপো রয়েছে। সেখানে ১৪ হাজার টন তেল সংরক্ষণ করা যেতে। নতুন করে ২৯ হাজার টন তেল মজুতের ব্যবস্থা করা হয়েছে। সব মিলিয়ে এই ডিপোতে এখন ৪৩ হাজার টন তেল মজুত করা যাবে, যা দিয়ে উত্তরের ১৬ জেলায় ৬০ দিন চলবে। পাইপলাইন নির্মাণে খরচ পড়েছে ৬০০ কোটি টাকা। এর অর্ধেক দিয়েছে বাংলাদেশ। এ ছাড়া এখানকার ডিজেল দিয়ে সৈয়দপুর ১৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্র চলবে।
১৯৮/সি, তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮
©দৈনিক বাংলা