আপডেট : ১১ মার্চ, ২০২৩ ১৯:৩৯
এত প্রকল্প কি দেশ ধ্বংসের নমুনা: প্রশ্ন প্রধানমন্ত্রীর
প্রতিনিধি, ময়মনসিংহ

এত প্রকল্প কি দেশ ধ্বংসের নমুনা: প্রশ্ন প্রধানমন্ত্রীর

শনিবার বিকেলে ময়মনসিংহ সার্কিট হাউজ মাঠে ময়মনসিংহ জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ আয়োজিত মহাসমাবেশে বক্তব্য দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ছবি: ফোকাস বাংলা

‘মিথ্যাচার’ ছড়ানোর জন্য বিএনপি নেতাদের সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, মিথ্যা বলা, দুর্নীতি ও লুটপাট করা তাদের অভ্যাস।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শনিবার বিকেলে ময়মনসিংহ সার্কিট হাউজ মাঠে ময়মনসিংহ জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ আয়োজিত মহাসমাবেশে দেয়া ভাষণে এ কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি শুনি, বিএনপির কোনো এক নেতা আছে সারাদিন মাইক লাগিয়ে বসে থাকেন। বাংলাদেশটাকে নাকি আমরা ধ্বংস করে দিয়েছি।’

তিনি ময়মনসিংহবাসীর উদ্দেশে প্রশ্ন করেন, ময়মনসিংহে এক যোগে ১০৩টি বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন কি বাংলাদেশ ধ্বংসের নমুনা?’

এরআগে সার্কিট হাউজ মাঠ থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এক যোগে ১০৩টি বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্থর স্থাপন করেন। এরমধ্যে প্রায় ৫৭০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ সমাপ্ত ৭৩টি উন্নয়ন প্রকল্প উদ্বোধন এবং প্রায় ২ হাজার ৭৬২ কোটি টাকা ব্যয়ে ৩০টি উন্নয়ন প্রকল্পের নির্মাণ কাজের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী এসব উন্নয়ন প্রকল্পকে স্বাধীনতার মাসে ময়মনসিংহবাসীর জন্য উপহার হিসেবে উল্লেখ করে বিভাগীয় শহর ময়মনসিংহে একটি মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় এবং একটি প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় করা হবে বলেও জানান।

উদ্বোধন হওয়া ৭৩টি প্রকল্প এবং ভিত্তিপ্রস্থর স্থাপন করা ১০৩টি প্রকল্প কি ধ্বংসের নমুনা না তাদের কাজের ময়মনসিংহবাসীর কাছে সে প্রশ্ন তোলেন তিনি।

‘মিথ্যা বলাটাই তাদের পেশা’ মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, খালেদা জিয়া এতিমের অর্থ আত্মসাৎ এবং দুর্নীতির দায়ে সাজাপ্রাপ্ত আসামী। আর তার ছেলে ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা এবং ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলা এবং দুর্নীতির দায়ে সাজাপ্রাপ্ত। যেখানে তারেক ও কোকোর দুর্নীতি আমেরিকার গোয়েন্দা সংস্থার তদন্তে বেরিয়েছে। এখন দেশ থেকে ভেগে আছে আর সরকারের করে দেয়া ডিজিটাল বাংলাদেশের সুযোগ নিয়ে দূরে বসে রাজনীতিও করে।’

সরকারপ্রধান বলেন, তার সরকারের দেয়া বিদ্যুৎ ব্যবহার করে ‘তারা কিছুই করেন নাই’ বলে অপবাদ দিয়ে যাচ্ছে।

তিনি বলেন, আসলে লুটপাট, চুরি, দুর্নীতি এটাই তাদের স্বভাব। লুটপাট, সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, বাংলা ভাই এবং বাংলাদেশকে পাঁচ পাঁচ বার দুর্নীতি চ্যাম্পিয়ন করা এবং আন্তর্জাতিকভাবে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করে দেয় তারা।

আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ৯৬ সালে ক্ষমতায় এসে তার সরকার ১৬ শ মেগাওয়াট থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়িয়ে ৪ হাজার ৩ শ মেগাওয়াট করেছিল। স্বাক্ষরতার হারকে ৬৫ ভাগে উন্নীত করেছিল যা পরবর্তী বিএনপি জামাত সরকার না বাড়িয়ে উল্টো কমিয়ে ফেলে। আজকে সেখান থেকে তার সরকার দেশকে টেনে তুলে ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দিয়ে ২৪ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা অর্জন করেছে এবং স্বাক্ষরতার হারও ৭৫ দশমিক ২ ভাগে উন্নীত করেছে।

বিদ্যুৎ উৎপাদন হ্রাসে চুরি ও দুর্নীতি এবং স্বাক্ষরতার হার কমানোর পেছনে বিএনপি নেতৃত্বের শিক্ষাগত যোগ্যতাকে দায়ী করেন প্রধানমন্ত্রী।

শেখ হাসিনা বলেন, আমি জানি খালেদা জিয়া এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছিলেন। অংক এবং উর্দু পরীক্ষায় পাস করেছিলেন। কারণ, উর্দু পাকিস্তানি ভাষা আর অংক হচ্ছে হিসাব করা, যা বিএনপি ভালো করেই বোঝে। জিয়াউর রহমান এসএসসি পাস করে চাকরি নিয়েছিলেন। সে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করে নিয়েছিল। ক্ষমতায় বসে অনিয়ম, দুর্নীতি, হত্যাসহ মানুষের উপর অত্যাচার করত। আর তাদের ছেলে কয়েক স্কুল থেকে বহিষ্কৃত হয়ে কোনো এক অখ্যাত জায়গা থেকে একটি সার্টিফিকেট জোগাড় করেছে বলে শোনা যায়। কিন্তু কি পাশ করেছে তা কেউ বলতে পাওে না। তবে, বোমা মারা, গ্রেনেড হামলা, লুটপাট, মানি লন্ডারিং, টাকা চুরি, দুর্নীতি, এতিমের অর্থ আত্মসাতে তারা সিদ্ধহস্ত। সেজন্য বাংলাদেশের মানুষ লেখাপড়া শিখে উন্নত হবে এটা তারা চায় না।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি যখন ক্ষমতায় ছিল তাদের অত্যাচারে ময়মনসিংহের মানুষ অতিষ্ঠ ছিল। শুধু তাই নয়, বোমা হামলায় অনেক মানুষ মারা গিয়েছিল। সারাদেশে বোমা হামলা, গ্রেনেড হামলা, সত্রাস, জঙ্গিবাদ, দুর্নীতি, লুটপাটই ছিল বিএনপি-জামাত সরকারের কাজ।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সংসদ উপনেতা মতিয়া চৌধুরী, কৃষিমন্ত্রী মোহাম্মদ আবদুর রাজ্জাক ও সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আবদুর রহমান এবং যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম ও শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি, সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল ও মির্জা আজম সমাবেশে বক্তব্য রাখেন। এতে সভাপতিত্ব করেন আওয়ামী লীগের ময়মনসিংহ জেলা শাখার সভাপতি এহতেশামুল আলম।