আপডেট : ১২ মার্চ, ২০২৩ ১১:১৫
ঈদযাত্রায় ভোগান্তি কমাতে এলেঙ্গা-রংপুর সড়কে আগাম প্রস্তুতি
তৌফিকুল ইসলাম

ঈদযাত্রায় ভোগান্তি কমাতে এলেঙ্গা-রংপুর সড়কে আগাম প্রস্তুতি

আর মাসদেড়েক পরই আসছে রোজার ঈদ। ঢল নামবে মহাসড়কে। সেই ঢল সামলাতে প্রতিবারই মহাসড়কে হিমশিম খেতে হবে সংশ্লিষ্টদের। তাই ঈদযাত্রায় ভোগান্তি কমাতে এবার আগাম প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। উত্তরবঙ্গে ঢোকার প্রবেশদ্বার টাঙ্গাইলের এলেঙ্গা-হাটিকুমরুল-রংপুর মহাসড়কের ‘বোটলনেক’ এরিয়া চিহ্নিত করার কাজ শুরু হয়েছে। যেসব জায়গায় যানজট হতে পারে, সেই জায়গাতে যান চলাচলা স্বাভাবিক রাখার পথ খোঁজা হচ্ছে।

চন্দ্রা থেকে টাঙ্গাইল পর্যন্ত চার লেন আছে। কিন্তু এলেঙ্গা থেকে রংপুর পর্যন্ত ১৯০ কিলোমিটার সার্ভিস লেনসহ ছয় লেনের সড়ক নির্মাণকাজ চলছে। এর ফলে চার লেনের গাড়িগুলো যখন টাঙ্গাইল থেকে এলেঙ্গাতে ঢুকবে তখনই যানজট তৈরি হবে। এলেঙ্গা থেকে বঙ্গবন্ধু সেতু হয়ে গাড়িগুলো যেন উত্তরবঙ্গে যানজট ছাড়া যেতে পারে, সে জন্য কাজ শুরু করেছেন প্রকল্প-সংশ্লিষ্টরা।

সার্বিক প্রস্তুতির বিষয়ে জানতে চাইলে সাসেক সড়ক সংযোগ-২-এর প্রকল্প পরিচালক ড. মো. ওয়ালিউর রহমান দৈনিক বাংলাকে বলেন, ‘মহাসড়কের নির্মাণকাজ অনেক খানি এগিয়ে গেছে। তবে কোথায় ‘বোটলনেক’ তৈরি হতে পারে যেই জায়গাগুলো আমরা চিহ্নিত করছি। ঈদের আগে এই বোটলনেকগুলো নিয়ে একটি ক্রাশ প্রোগ্রাম নিয়েছি। চেষ্টা করছি রাস্তাগুলোকে যতটা ইজি করা যায়। যাতে যানবাহনগুলো বাধাহীনভাবে চলতে পারে। ঈদের আগে যদি কিছু ব্রিজ, কালভার্ট খুলে দেয়া যায়। তাহলে বোটলনেকগুলো থাকবে না।’

এদিকে গত সপ্তাহে এলেঙ্গা-হাটিকুমরুল এলাকা পরিদর্শন করেছেন সড়ক পরিবহন মহাসড়ক বিভাগের সচিব ও সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী। তারা নানা ধরনের নির্দেশনা প্রধান করেছেন বলে জানা গেছে।

প্রকল্প-সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ঈদের আগে প্রচুর কাজ করতে হবে। এলেঙ্গা অংশে একটা রোড আছে ভূয়াপুর যাওয়ার, আরেকটা আছে জামালপুরের। ফলে কিছু জায়গা চওড়া করা হচ্ছে। এখন মাটি ফেলার কাজ চলছে। এলেঙ্গা অংশে ঠিকাদারের কারণে এই প্যাকেজের কাজ কিছুটা কম হয়েছে। তবে ঠিকাদাররা এখন কাজ করছেন। যেহেতু এখানে জ্যাম হয় । ফলে ক্লোজলি মনিটর করা হচ্ছে।

সওজ সূত্র জানায়, এদিকে গত বছরই ঈদের আগে নলকা সেতুর কাজ শেষ হয়েছে। ফলে সেই জায়গাটায় যান চলাচল স্বাভাবিক থাকবে। এর আগে একটি আন্ডারপাস আছে সেটিও হয়তো ঈদের আগে চালু হবে। এদিকে বঙ্গবন্ধু সেতুর ৭-৮ কিলোমিটার পরে ঝাওয়াল ব্রিজ পড়েছে। সেখানে একটা রেলওয়ে ওভারপাস করা হচ্ছে। এই ওভারপাসের কলামগুলো উঠেছে, এখন সুপারস্টার করা হবে। কিন্তু এটা ঈদের আগে শেষ হবে না, সময় লাগবে। কিন্তু এই ঝাওয়াল ব্রিজ হলো দুই লেন। ব্রিজের আগে-পরে চার লেন আছে। সে ক্ষেত্রে এই ব্রিজে কিছুটা যানজটে সমস্যা হতে পারে। তবে এই ব্রিজের কাছে লোক রাখা হবে, তারা ট্রাফিক যেন বেশি না সেটা কন্ট্রোলে কাজ করবে। তবে ব্যতিক্রমী চিন্তাও রাখা হচ্ছে। এই ব্রিজের কাছে একটি এলজিডির সড়ক আছে। সেটিও কাজে লাগানোর বিষয়ে ভাবছেন সংশ্লিষ্টরা।

এদিকে হাটিুকমরুলেও এবার কোনো খানাখন্দ নেই। ফলে বগুড়ার বনানী থেকে রংপুর পর্যন্ত কোনো সমস্য হবে না যান চলাচলে। শুধু গোবিন্দগঞ্জ এবং পলাশবাড়ীতে প্রকল্পের কাজের জন্য এখনো জমি পাওয়া যায়নি। এই জায়গাটায় কাজ শুরু করা যায়নি। ফলে এখানে যানবাহনের গতি কিছুটা কমতে পারে।

ঈদে আনফিট বাস চলতে না দেয়ার পরামর্শ

সংশ্লিষ্টরা জানান, মোটরসাইকেল মহাসড়কে বন্ধ করে দেয়া হচ্ছে। তাহলে যারা মোটরসইকেলে যেতেন এরা কীভাবে যাবেন। তখন ঢাকা শহরের মুড়ির টিন মার্কা ফিটনেসবিহীন গাড়ি নিয়ে গ্রামে রওনা দেয় এসব লোক। এসব বাস রাস্তার মধ্যে গিয়ে নষ্ট হয়, তখন যানজট তৈরি হয়। যেহেতু মোটরসাইকেল বন্ধ করা হয়। তবে ঈদে আনফিটবাস সড়কে যেন চলতে না পারে সে বিষয়টি নিশ্চিত করা দরকার।

এদিকে বঙ্গবন্ধু সেতুতে গাড়ি নষ্ট হলে পুরো রাস্তাটাই জ্যাম হয়ে যায়। বঙ্গবন্ধু সেতুর দুই পাশের টোল প্লাজার ওপেনিংগুলো আরেকটু বাড়ানো উচিত এবং গাড়িগুলো যেন দ্রুত পার হতে পারে সে বিষয়েও ব্যবস্থা নেয়ার ওপর গুরুত্ব দেয়ার পরামর্শ।

এলেঙ্গা-রংপুর সড়কের ২০০ স্ট্রাকচারের কাজ শেষ

এলেঙ্গা-রংপুর সড়ক প্রকল্পের ছোট-বড় ব্রিজ ও কালভার্ট মিলে প্রায় ২৫০টি স্ট্রাকচার আছে। এর মধ্যে ২০০টির কাজ শেষ গেছে। এসবের ওপর দিয়ে যানবাহন চলাচল করছে।

এদিকে ১৯০.৪০ কিলোমিটার দীর্ঘ এলেঙ্গা-হাটিকুমরুল-রংপুর মহাসড়কটি সাউথ এশিয়ান সাব-রিজিওনাল ইকোনমিক কো-অপারেশন (সাসেক) করিডর সড়ক প্রকল্পের প্রায় ৬২ শতাংশ কাজ শেষ। তবে কিছু কিছু প্যাকেজের ৭০ ভাগ কাজ শেষ। ১৯০ কিলোমিটার সড়কের মধ্যে প্রায় ১২০ কিলোমিটার ৪ লেন সড়কের কাজ শেষ। যাতে মানুষ সুবিধা পাচ্ছে। প্রতিটি বাজার এলাকায় ৪ লেন হয়ে গেছে।

এলেঙ্গা-রংপুর সড়ক প্রকল্পে বিটুমিনের অভাব

গাইবান্ধা জেলায় ভূমি অধিগ্রহণ কার্যক্রমে ধীরগতির কারণে গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ ও পলাশবাড়ীতে ফ্লাইওভার নির্মাণকাজ বিলম্বতি হচ্ছে। নির্মাণসামগ্রীর অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি। পেভমেন্ট নির্মাণের জন্য চাহিদা অনুযায়ী বিটুমিনের সরবরাহ না পাওয়ায় নির্ধারিত সময়ে প্রকল্প সম্পন্ন করার ক্ষেত্রে একটি অন্যতম চ্যালেঞ্জ হচ্ছে। উৎপাদন সক্ষমতার কারণে ইস্টার্ন রিফাইনারি থেকে প্রাপ্ত বিটুমিন চাহিদার তুলনায় অনেক কম।

টাঙ্গাইলের এলেঙ্গা থেকে রংপুর পর্যন্ত ১৯০ দশমিক ৪০ কিলোমিটারের এই প্রকল্প ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বরে একনেকে অনুমোদন পায়। শুরুতে প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছিল ১১ হাজার ৮৯৯ কোটি ১ লাখ টাকা এবং ২০২১ সালের আগস্ট কাজ শেষ করতে বলা হয়েছিল। তবে ২০২০ সালের অক্টোবরে প্রকল্পটি সংশোধন করা হয়। তখন প্রকল্পের ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ১৬ হাজার ৬৬২ কোটি ৩৯ লাখ টাকা। একই সঙ্গে প্রকল্পটির মেয়াদও বাড়ে ২০২৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত। বাংলাদেশ সরকার ও এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) যৌথভাবে এই প্রকল্পে অর্থায়ন করছে।

প্রকল্পের আওতায় ৪ লেনের মহাসড়কসহ সার্ভিস লেনও নির্মাণ করা হচ্ছে। ৬টি ফ্লাইওভার, ১১টি ফুটওভারব্রিজ, ২টি রেলওয়ে ওভারপাস, ২৬টি ছোট সেতু, ১৮০টি কালভার্ট, ৩৯টি আন্ডারপাস, হাটিকুমরুলে দেড় কিলোমিটারের ১টি ইন্টারচেঞ্জ, সড়ক গবেষণাগার ও প্রশিক্ষণকেন্দ্র, এক্সেল লোড কন্ট্রোল স্টেশন ও স্বয়ংক্রিয় ট্রাফিক মনিটরিং ব্যবস্থাপনা নির্মাণ করা হবে। পুরো প্রকল্পটি ১৫টি প্যাকেজের মাধ্যমে শেষ হবে। প্রকল্পে জমি লাগছে প্রায় ৩২৬ হেক্টর।