চলতি বছর ৫ ভাগ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনে নীতির সংস্কার করবে চীন। এক্ষেত্রে বড় বড় নীতির মধ্যে সমন্বয়, অভ্যন্তরীণ চাহিদা আরও প্রসারিত করা হবে। একই সঙ্গে নতুন নতুন খাতের উদ্ভাবন এবং ঝুঁকিগুলো নিদিষ্ট করে তা প্রতিরোধ ও কমিয়ে আনা হবে।
চীনের নতুন প্রধানমন্ত্রী লি কিয়াং দায়িত্ব নেয়ার পর তার প্রথম সংবাদ সম্মেলনে এমন রূপরেখা তুলে ধরেন। দেশটির চতুর্দশ জাতীয় গণ-কংগ্রেস সোমবার সকালে বেইজিংয়ে শেষ হয়েছে। স্থানীয় সময় সকাল সাড়ে ১০ টায় চীনের প্রধানমন্ত্রী লি কিয়াং গণমহাভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তর দেন।
সংবাদ সম্মেলনে বেসরকারি উদ্যোক্তাদের বিনিয়োগের পরিবেশ আরও উন্নত করার আশ্বাস দেন চীনের প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘সব ধরনের কোম্পানিকে সমান সুযোগ দেয়া হবে।’
বাজার সত্তায় লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করার আশ্বাস দিয়ে তিনি বলেন, ‘বেসরকারি উদ্যোক্তা বা উদ্যোগগুলো যাতে সঠিকভাবে বাস্তবায়ন হয়, তার জন্য একটি ভাল পরিবেশ নিশ্চিত করা হবে। আমরা সব ধরনের বাজার সত্ত্বার জন্য একটি লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করব। বেসরকারি উদ্যোক্তাদের সহায়তা করার জন্য চেষ্টা অব্যাহত থাকবে।’
চীনের অর্থনৈতিক সম্ভাবনার ওপর পূর্ণ আস্থা রেখে লি কিয়াং বলেন, ২০২৩ সালের জন্য অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৫ শতাংশ। এটা পূরণ করা সহজ হবে না বলেও মনে করেন তিনি।
বিশ্বের অর্থনৈতিক পরিস্থিতে তুলে ধরে লি কিয়াং জানান, বর্তমান বিশ্ব অর্থনৈতিক পরিস্থিতি এখনও আশাব্যঞ্জক নয়। অনেক অস্থিতিশীলতা বিদ্যমান। অনিশ্চিত এবং অপ্রত্যাশিত অনেক কারণও সামনে এসেছে। চীন এই বছর অনেক সমস্যার সম্মুখীন হয়েছে। তবে আশার কথা হচ্ছে স্থিতিশীল হচ্ছে অর্থনীতি।
মোট দেশজ উৎপাদন বা প্রবৃদ্ধি কীভাবে স্থিতিশীল করা যায়- তা বিশ্বের সব দেশের জন্যই একটি পরীক্ষা বলে মনে করেন লি কিয়াং। তিনি বলেন, এই বছর চীনের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ৫ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে। এই লক্ষ্য অর্জন করা সহজ হবে না। এই জন্য সব ধরনের প্রচেষ্টাকে দ্বিগুণ করতে হবে বলেও মনে করেন তিনি।
ম্যাক্রো নীতিতে সমন্বয় জরুরি উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘অবশ্যই ম্যাক্রো নীতিগুলোর ভালোভাবে সমন্বয় করা জরুরি। অভ্যন্তরীণ যে বড় চাহিদা তার আরও প্রসারিত করতে হবে।’
লি কিয়াং বলেন, চীনের আছে বিশাল বাজার ও চাহিদা। তবে নতুন খাত নিদিষ্ট করে সেসব ক্ষেত্রে আরও উন্নয়ন করতে হবে। আশা করা যায়, বেসরকারি উদ্যোক্তারা দৃঢ় আত্মবিশ্বাস নিয়ে নতুন ইতিহাস সৃষ্টি করতে পারবেন। বাজারজাত, আইন প্রণয়ন ও আন্তর্জাতিক ব্যবসায়িক পরিবেশ সৃষ্টি করা হবে। এছাড়া সব ধরনের কোম্পানির সঙ্গে সমান আচরণ করবে চীন। আইন অনুযায়ী কোম্পানি ও ব্যবসায়ীদের অধিকার ও স্বার্থ রক্ষা করা হবে।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি আরও বলেন, ন্যায্য প্রতিযোগিতা জোরদার করার পাশাপাশি বেসরকারি কোম্পানির উন্নয়নে জোর দেবে সরকার।
প্রশ্নের জবাবে রূপরেখা নিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বেসরকারি খাতের অর্থনৈতিক উন্নয়ন সম্পর্কে চীনের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিসি) কেন্দ্রীয় কমিটির নীতি স্পষ্ট।’
লি বলেন, গত বছর বেসরকারি অর্থনীতির বিকাশের বিষয়ে কিছু ভুল সিদ্ধান্ত ছিল; যা কিছু উদ্যোক্তাকে উদ্বিগ্ন করেছে। এবার বেসরকারি অর্থনীতির পরিবেশ আরও ভাল থেকে উন্নত হবে এবং এর জন্য আরও নতুন ক্ষেত্র প্রস্তুত করা হবে।
চীনের আজকের যে অর্থনৈতিক উন্নয়ন তার জন্য বেশ কয়েকটি অনুকূল অবস্থার কথাও জানান নতুন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘চীনের রয়েছে একটি অতি-বৃহৎ বাজার। রয়েছে একটি কার্যকরী শিল্প ব্যবস্থা। মানব সম্পদের সমৃদ্ধ সরবরাহ, একটি শক্তিশালী উন্নয়ন ভিত্তি এবং উল্লেখযোগ্য প্রাতিষ্ঠানিক শক্তি। এসব বিষয়ের ওপর ভর করে অর্থনৈতিক শক্তিমত্তা জানান দেবে চীন।’
২০২৩ সালের প্রথম দুই মাসে চীনের অর্থনৈতিক অবস্থার তুলে ধরে লি বলেন, ‘চীনা অর্থনীতি এখন স্থিতিশীল এবং বৃদ্ধি পাচ্ছে। আন্তর্জাতিক কয়েকটি সংস্থাও এই বছর চীনের প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনার জন্য তাদের পূর্বাভাস পরিবর্তন করেছে।’
১৯৮/সি, তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮
©দৈনিক বাংলা