আপডেট : ১৩ মার্চ, ২০২৩ ১৮:২০
কেএনএর হামলায় এক সেনা সদস্য নিহত

কেএনএর হামলায় এক সেনা সদস্য নিহত

মাস্টার ওয়ারেন্ট অফিসার নাজিম উদ্দিন। ছবি: আইএসপিআর

পার্বত্য জেলা বান্দরবানের রোয়াংছড়ির দুর্গম পাহাড়ে সেনা টহল দলের ওপর কুকি-চিন ন্যাশনাল আর্মির (কেএনএ) সন্ত্রাসীদের অতর্কিত হামলায় গুলিবিদ্ধ এক সেনা সদস্য নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও দুই সেনা সদস্য।

গতকাল রোববার দুপুরে ওই ঘটনা ঘটে বলে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) সোমবার পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে।

আইএসপিআর জানায়, ‘বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে জাতীয় শিশু দিবস-২০২৩ ও মহান স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় মা ও শিশুদের বিনামূল্যে স্বাস্থ্য সেবা প্রদানের উদ্দেশ্যে যাওয়া দলের নিরাপত্তায় থাকা সেনা সদস্যদের ওপর অতর্কিত গুলিবর্ষণ করে কেএনএ-এর সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা। রোববার দুপুর ১টায় এই গুলির ঘটনা ঘটে।

এ ঘটনায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর মাস্টার ওয়ারেন্ট অফিসার নাজিম উদ্দিন গুলিবিদ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলেই মৃত্যুবরণ করেন এবং দুই জন সেনা সদস্য আহত হন। আহতরা চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

মাস্টার ওয়ারেন্ট অফিসার নাজিম উদ্দিন গত ৩০ বছর সেনাবাহিনীর বিভিন্ন পর্যায়ে দায়িত্ব পালন করেছেন। তার পিতার নাম শমসের আলী। তিনি রংপুর সদরের ঘাঘটপাড়া গ্রামের বাসিন্দা।

সেনা সদস্য নিহত হওয়ার ঘটনায় সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ গভীর শোক প্রকাশ করেছেন।

আইএসপিআর জানায়, বিচ্ছিন্নতাবাদী ভাবধারায় বিশ্বাসী কুকি-চিন ন্যাশনাল আর্মি নামের সশস্ত্র সন্ত্রাসী দলটি এর আগে ‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বিয়া’ এর মত একটি জঙ্গী গোষ্ঠীকেও বান্দরবানের পাহাড়ি এলাকায় অর্থের বিনিময়ে অস্ত্র প্রশিক্ষণ প্রদান করেছে। পাহাড়ি এলাকার অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর উন্নয়নের জন্য সরকার নির্মিত বান্দরবানের থানচি সড়ক সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হচ্ছে। সরকারের এই উন্নয়নমূলক কার্যক্রমকে প্রতিহত করার জন্য কেএনএ সন্ত্রাসী দলটি সড়ক নির্মাণ সঙ্গে সম্পৃক্ত অসামরিক ঠিকাদার, মালামাল সরবরাহকারী এবং শ্রমিকদের কাছ থেকে প্রথমে চাঁদা দাবি করে ও পরবর্তীতে কাজ বন্ধ করার হুমকি দেয়।

কেএনএ সন্ত্রাসী দল গত ১১ মার্চ ১২ জন শ্রমিককে অপহরণ করে। এদের মধ্যে একজন শ্রমিক গুলিবিদ্ধ হয় এবং চার জন শ্রমিককে এখনও কেএনএ জিম্মি করে রেখেছে। অপর সাত জন শ্রমিককে মুক্তিপণের বিনিময়ে ছেড়ে দিলেও তাদেরকে সেনাবাহিনীর সাথে সড়ক নির্মাণ প্রকল্পের কাজ না করার জন্য হুমকি দেয়। এছাড়া, কেএনএ গত ১২ মার্চ সেনাবাহিনীর টহল দলের ওপর গুলিবর্ষণ করে।

গত ৮ ফেব্রুয়ারি বান্দরবানের তিন উপজেলায় গাড়ি চলাচল বন্ধের জন্য কেএনএ পরিবহন মালিক সমিতিকে হুমকি প্রদান করে নোটিশ জারি করে। জেলা প্রশাসন গত রোববার কেএনএ সদস্যদের বিভিন্ন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে সৃষ্ট নিরাপত্তাজনিত কারণে ওই এলাকায় অনির্দিষ্টকালের জন্য ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা জারি করে।

এছাড়া, কেএনএ এর নির্যাতনে স্থানীয় বিভিন্ন পাহাড়ী সম্প্রদায়ের জনগোষ্ঠী ঘরছেড়ে অন্য এলাকায় বসবাস করছে। কেএনএ সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর চাঁদাবাজি, মাদকের চোরাচালান, অপহরণ ও নৃশংস হত্যাকান্ডের কারণে বর্তমান সরকারের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড, বেসরকারি বিনিয়োগ ও পর্যটন শিল্প বাধাগ্রস্থ হচ্ছে। কেএনএ এর এই অপতৎপরতা দেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার পাশাপাশি বিশ্ব দরবারে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করছে এবং সর্বোপরি পার্বত্য চট্টগ্রামের বিরাজমান শান্তি-শৃঙ্খলা পরিস্থিতিকে বিঘ্নিত করছে।