আপডেট : ১১ সেপ্টেম্বর, ২০২২ ১০:৪৫
রানির স্মৃতি ধরে রেখেছে ‘প্রেসিডেন্ট সেলুন’

রানির স্মৃতি ধরে রেখেছে  ‘প্রেসিডেন্ট সেলুন’

ইতিহাসসমৃদ্ধ এই সেলুনটি বর্তমানে সংরক্ষিত আছে নীলফামারীর সৈয়দপুরে রেলওয়ে কারখানায়। দৈনিক বাংলা

১৯৮১ সালে কোচটিকে ব্যবহার অনুপযোগী ঘোষণা করে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। এর আগে ১৯৪৮ সালের ২৮ জুন ভারত-পাকিস্তান ভাগ হওয়ার পর তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান রেলওয়ে সেলুনটি ব্রিটিশ সরকারের কাছ থেকে উত্তরাধিকার সূত্রে পায় ও ১৯৭১ সালে যুদ্ধের পর বাংলাদেশের অনেক রাষ্ট্রপ্রধান এই প্রেসিডেন্ট সেলুনে ভ্রমণ করেছেন।

ভারতবর্ষের বিভিন্ন এলাকা ভ্রমণে ব্রিটেনের রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের জন্য ১৯২৭ সালে তৈরি করা হয় ১২৬৫ (আরএ) নম্বরের একটি রেলকোচ। এর নামকরণ করা হয় প্রেসিডেন্ট সেলুন। ইতিহাস সমৃদ্ধ এই সেলুনটি বর্তমানে    সংরক্ষিত আছে নীলফামারীর সৈয়দপুরে দেশের বৃহত্তম রেলওয়ে কারখানায়।

সর্বশেষ কোচটিতে ভ্রমণ করেছেন প্রয়াত রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ।

সম্প্রতি সৈয়দপুর কারখানায় সরেজমিনে দেখা গেছে, সম্পূর্ণ শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কাঠের তৈরি কোচটিতে প্রেসিডেন্টের শয়নকক্ষ, সহযাত্রীদের জন্য দুটি কক্ষ, রান্নাঘর ও বাবুর্চিদের জন্য আছে পৃথক কক্ষ। এ ছাড়া ঝাড়বাতিসহ হাইকমোড, ফোল্ডিং ওয়াশ বেসিন, বাথটাব ও শাওয়ারসহ বিলাসবহুল শৌচাগার। সভা করার জন্য আছে পৃথক একটি কনফারেন্স কক্ষ।

সাধারণ কোচে আটটি চাকা থাকলেও এই কোচে চাকার সংখ্যা ১২টি। এর আসবাবপত্র, বৈদ্যুতিক ফিটিংস, অভ্যন্তরীণ সাজসজ্জায় আছে রাজকীয় ও আভিজাত্যের ছাপ। কয়লার চুল্লিতে এখানে বাবুর্চিরা রান্না করতেন।

সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানার ক্যারেজ শপের উপসহকারী প্রকৌশলী মোমিনুল ইসলাম বলেন, ‘কোচটির বয়স প্রায় ৯৫ বছর। সেগুন কাঠের তৈরি এই কোচটি আগের মতোই আছে। ৫৪ বছর চলাচলের পর ১৯৮১ সালে কোচটি ব্যবহার না করার ঘোষণা দেয়া হয়। এরপর ১৯৮৪ সাল থেকে কোচটি সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানায় আছে।’

মোমিনুল ইসলাম বলেন, ‘বেলজিয়ামের আয়না, টেবিল, আলমারি, গোপনীয় ড্রয়ার ছাড়া বুকসেলফ আছে ভেতরে।’

কারখানার বগি শপের উপসহকারী প্রকৌশলী শাহিনুর আলম বলেন, ‘সাধারণ বগিতে আটটি চাকা থাকে। কিন্তু এই কোচটিতে ১২টি চাকা আছে। কারণ এটি বেশি ওজন বহনকারী হিসেবে তৈরি করা হয়।’

শাহিনুর আলম আরও বলেন, ‘আট চাকার কোচে ৪২ মেট্রিক টন বহন করা গেলেও ১২ চাকার কোচে ৫২ মেট্রিক টন বহন করা যায়।’

সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানার বিভাগীয় তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী সাদেকুর রহমান বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট সেলুনটিতে আলোকসজ্জাসহ কিছুটা পরিবর্তন এনে কারখানায় নির্মিত জাদুঘরের পাশে রেলট্রাক বসিয়ে সংরক্ষণ করা হবে। অথবা পাঠানো হবে চট্টগ্রামে রেল জাদুঘরে।’