ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইলে মেঘনার শাখা নদী বরইচারার প্রবেশমুখে জমেছে পলি। নদীর বুকে জেগে উঠেছে চর। নাব্য কমে সরু ও মরা খালে পরিণত হয়েছে নদীটি। পানির অভাবে নদীর দুই তীরের কয়েক শ একর কৃষিজমিতে আবাদ করা যাচ্ছে না।
এতে দুর্ভোগে পড়েছেন ৫ গ্রামের প্রায় ২০ হাজার মানুষ। স্থানীয়রা বলছেন, দ্রুত প্রবেশমুখ খনন করা না হলে নদীটি একেবারেই মরে যাবে। স্থানীয়দের দাবির মুখে অবশ্য নদী খননের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে প্রশাসন।
স্থানীয়রা জানান, উপজেলার পাকশিমুল ইউনিয়নের বরইচারা এলাকায় একসময় নিয়মিত নৌকা চলত। নদীর দুই পাশের কৃষিজমি থেকে শস্য সংগ্রহ করে নদীপথে বিভিন্ন স্থানে নিয়ে বিক্রি করতেন চাষিরা। এ ছাড়া ওই নদীতে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করতেন বরইচারা, কাকরিয়া, চর কাকরিয়া, রানীদিয়া ও রাজাপুর গ্রামের বাসিন্দারা। নদীর মুখে পলি জমায় এখন নৌপথটি বন্ধপ্রায়। নদীতে পানি না থাকায় পাঁচ গ্রামের জেলে পরিবারদের এলাকা ছাড়ার দশা তৈরি হয়েছে।
কৃষকরা জানান, প্রতিবছর চৈত্র মাসে নদীর পানি শুকিয়ে যায়। এ কারণে নদীর দুই পাশের কয়েক শ একর কৃষিজমি পানির অভাবে অনাবাদি থাকে। নদীটির এই করুণ দশার কারণে এটি এখন মরা নদী নামেই সবার কাছে পরিচিত। এলাকার কৃষিকে বাঁচাতে নদীটির প্রবেশমুখ খননের দাবি জানান তারা।
স্থানীয় কৃষক হরিবিন্দু দাস বলেন, নদীতে পানি নেই বললেই চলে। জোয়ারের জন্য বসে থাকতে হয়। জোয়ার এলে জমিতে পর্যায়ক্রমে পানি দিতে হয়। তাই নদীটি খনন করা জরুরি।
বরইচারা ঘাট থেকে ভৈরব বাজারে মালামাল ও যাত্রী বহন করে জিয়ন মাঝির নৌকা। ওই নৌকার মাঝি দীন ইসলাম বলেন, ‘ফাল্গুন ও চৈত্র মাসে নদীর মুখ একেবারে শুকিয়ে যায়, পানি থাকে হাঁটু সমান। নৌকা নিয়ে ভেতরে ঢুকতে পারি না। যাত্রী ও মালামাল নিয়ে নদীর মুখে আটকে থাকতে হয়। সেখান থেকে ছোট ছোট নৌকায় মালামাল ও যাত্রী তুলে ঘাটে আনি। ১২-১৩ বছর ধরে এই কষ্ট করছি। নদীটা খনন করলে আমাদের কষ্ট কমত।’
এই নদীতে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করত বরইচারা গ্রামের ১০-১২টি জেলে পরিবার। কিন্তু এখন নদীতে পানি ও মাছ না থাকায় তাদের অনেকে গ্রাম ছেড়েছেন। ওই গ্রামের বাসিন্দা লবণ চন্দ্র বর্মণ বলেন, ‘নদীর মুখ শুকিয়ে যাওয়ায় মেঘনা নদী থেকে এই মরা নদীতে মাছ ঢুকতে পারে না। তাই জেলে পরিবারগুলো খুব কষ্টে আছে। মাছ মারতে না পারলে আমাদের চুলা বন্ধ থাকে। অনেকে তো এলাকাই ছেড়ে দিয়েছেন।’
পাকশিমুল ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান কাউছার হোসেন বলেন, চৈত্র মাসে কাকরিয়া এলাকায় নদীর পানি শুকিয়ে যাওয়ায় কৃষকরা সেচ পানি পান না। এতে অনেকেই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। তাই জরুরি ভিত্তিতে নদীটি খনন করা দরকার।
একই কথা জানিয়ে কাকরিয়া গ্রামের ইউপি সদস্য সুন্দর আলী বলেন, ‘এই নদীতে একসময় এক ছইর পানি থাকত। নৌকা দিয়ে নদী পার হইতাম। নদীতে এখন হাঁটু পানি, কৃষিজমিতে সেচ দেয়ার পানিও নাই। তাই অনেক জমি পতিত-ই রয়ে গেছে।’
সরাইল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মুহাম্মদ সরওয়ার উদ্দীন জানান, নদীটি খননের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। আশা করছেন, দু-এক দিনের মধ্যেই খনন কাজ শুরু হবে।
১৯৮/সি, তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮
©দৈনিক বাংলা